Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হৃৎ-ধমনীর ব্যাধি (ইংরেজি: Coronary artery disease)[13] হৃৎ-সংবহন ব্যাধিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাধারণ।[14] হৃৎ-ধমনীর ব্যাধিগুলি কয়েকটি প্রকারের হতে পারে, যেমন, স্থিতিশীল বক্ষব্যথা, অস্থিতিশীল বক্ষব্যথা, হৃৎ-পেশীর বিনষ্টি এবং হৃদ্রোগজনিত হঠাৎ মৃত্যু।[15] এই ব্যাধির সাধারণ একটি লক্ষণ বা উপসর্গ হল বুকে ব্যথা বা বুকে অস্বস্তিবোধ যা কাঁধ, বাহু, পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়তে পারে।[4] কদাচিৎ এটিকে বুকজ্বালা বা অম্বল হিসেবেও মনে হতে পারে। সাধারণত ব্যায়ামের সময় বা মানসিক চাপ পড়লে এই লক্ষণগুলি দেখা দেয় এবং কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়; পরে বিশ্রাম নিলে অবস্থার উন্নতি ঘটে।[4] অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে, আবার কখনো কখনো কোনও উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে।[4] অনেক ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষণটিই হলো হৃৎপেশীর বিনষ্টি বা হার্ট অ্যাটাক।[5] অন্যান্য সমস্যার মধ্যে আছে হৃৎপিণ্ডের বৈকল্য বা অনিয়মিত হৃৎ-স্পন্দন।[5]
হৃৎ-ধমনীর ব্যাধি Coronary artery disease | |
---|---|
প্রতিশব্দ | মেদের কঠিনীভবনজাত হৃদ্রোগ,[1] মেদের কঠিনীভবনজনিত রক্তসংবহন রোগ,[2] পরিবেষ্টক হৃদ্রোগ[3] |
একটি হৃৎ-ধমনীর ভেতরে মেদের কঠিনীভবনের চিত্র | |
বিশেষত্ব | হৃৎ-বিজ্ঞান, হৃৎ-শল্যচিকিৎসা |
লক্ষণ | বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট[4] |
জটিলতা | হৃৎপিণ্ডের বৈকল্য, অনিয়মিত হৃৎ-স্পন্দন[5] |
কারণ | হৃৎ-ধমনীসমূহের ভেতরে মেদের কঠিনীভবন[6] |
ঝুঁকির কারণ | উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, মধুমেহ, ব্যায়ামের অভাব, মেদবাহুল্য, উচ্চ কোলেস্টেরল[6][7] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | হৃৎ-তড়িৎলেখ (ইসিজি), হৃৎ-পীড়ন পরীক্ষা, হৃৎ-ধমনী কম্পিউটারায়িত ছেদচিত্রীয় ব্যথালেখ, হৃৎ-ধমনীর ব্যথালেখ[8] |
প্রতিরোধ | স্বাস্থ্যকর পথ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকরণ ওজন ধরে রাখা, ধূমপান বর্জন[9] |
চিকিৎসা | চর্মভেদী হৃৎধমনী নিবেশন (পিসিআই), হৃৎ-ধমনী পার্শ্বপথীয় শল্যচিকিৎসা (সিএবিজি)[10] |
ঔষধ | অ্যাস্পিরিন, বেটা রোধকসমূহ, নাইট্রোগ্লিসারিন, স্ট্যাটিন[10] |
সংঘটনের হার | ১ কোটি ১০ লক্ষ (২০১৫)[11] |
মৃতের সংখ্যা | ৮৯ লক্ষ (২০১৫)[12] |
যেসব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার বা আচরণের কারণে হৃৎ-ধমনীর ব্যাধি হতে পারে, তাদের মধ্যে আছে উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, মধুমেহ (ডায়াবেটিস), ব্যায়ামের অভাব, মেদবাহুল্য, রক্তে কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা, অপুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ, বিষণ্ণতা, এবং অত্যধিক মদপান।[6][7][16] হৃৎ-ধমনীয় ব্যাধি ঘটার অন্তর্নিহিত কারণ হল ঐসব ধমনীর ভেতরে মেদের কঠিনীভবন, যাতে ধমনীর ভেতরে প্লাক বা ধমনীমল নামক কঠিন মেদের স্তর জমা হতে থাকে। এর কারণে ধমনীর ভেতরে রক্তপ্রবাহের পথ সংকুচিত হয়ে যায় এবং হৃৎপেশীতে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না।[6] অনেক দিন ধরে প্লাক জমা হতে থাকলে কখনও কখনও প্লাক ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে, ফলে রক্ত জমাট বেঁধে ধমনী সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব, যেমন হৃৎ-তড়িৎলেখ, হৃৎ-চাপ পরীক্ষা, হৃৎ-ধমনীর কম্পিউটারায়িত ছেদচিত্র ব্যথালেখ এবং হৃৎধমনীর ব্যথালেখ।[8]
হৃৎ-ধমনীর রোগের ঝুঁকি কমানোর কিছু উপায় হল পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখা এবং ধূমপান বর্জন।[9] কখনও কখনও মধুমেহ, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল বা উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়।[9] প্রতিরোধ ও চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই একই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।[10][17] এছাড়া অনুচক্রিকারোধক (যেমন অ্যাসপিরিন), বেটা রোধক বা নাইট্রোগ্লিসারিন অতিরিক্ত ওষুধ হিসেবে দেওয়া হয়।[10] এছাড়া চর্মভেদী হৃৎধমনীতে নিবেশন (পিসিআই) বা হৃৎ-ধমনী পার্শ্বপথীয় শল্যচিকিৎসা গুরুতর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।[10][18]
২০১৫ সালে প্রায় ১১ কোটি লোক হৃৎ-ধমনীর ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং এতে প্রায় ৮৯ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়।[11][12] এই ব্যাধির কারণে বিশ্বের সমস্ত মৃত্যুর ১৫.৬% ঘটে, অর্থাৎ ব্যাধিটি বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে সাধারণ কারণ। [12] তবে সব বয়সের জন্য এই ব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি ১৯৮০ ও ২০১০-এর মধ্যে হ্রাস পেয়েছে।[19] একই সাথে একই সময়ের মধ্যে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে।[20] সাধারণত মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।[21]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.