হীনযান
বৌদ্ধধর্মের মহাযান শিক্ষা অগ্রহণকারী অসংখ্য শাখার জন্য ব্যবহৃত একটি বিতর্কিত শব্দ / From Wikipedia, the free encyclopedia
হীনযান হলো একটি সংস্কৃত শব্দ। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘ক্ষুদ্রতর বা হীনতর যান’।[1] বৌদ্ধধর্মে অর্হৎ গণ্য হওয়ার জন্য শ্রাবক যে শ্রাবকযান নামক পথ অনুসরণ করেন, তাকেই ‘হীনযান’ বলা হয়। খ্রিস্টীয় ১ম বা ২য় শতাব্দীতে এই শব্দটির প্রচলন ঘটেছিল। সাধারণভাবে ‘মহাযান’ (আক্ষরিক অর্থে ‘মহৎ যান’) শব্দটির বিপরীত শব্দ হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থেকে।
হীনযানের সংজ্ঞা কী বা হীনযান মতবাদের অনুগামী কারা, তা নিয়ে বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে। কালু রিংপোচের মতে ‘হীন’ বা ‘মহৎ’ শব্দদুটির দ্বারা “আর্থিক বা সামাজিক পরিস্থিতি বোঝায় না। এই শব্দদুটি ধর্মানুশীলনকারীর আধ্যাত্মিক সামর্থ্যের দ্যোতক।”[1]
সংসার যে দুঃখে পরিপূর্ণ, তা আমরা সকলেই অনুভব করি। এই সত্যটি সম্পর্কে অবহিত হওয়াই হীনযান মতবাদের ভিত্তি। এই বিপদ সম্পর্কে সচেতন হলে আমাদের দুঃখ দূর হবে। আমরা ব্যক্তিগত স্তরে মুক্ত হব এবং আনন্দ লাভ করব। আমরা আমাদের নিজেদের স্বার্থে চলি।... [স্বার্থ ত্যাগ করে] ত্যাগ ও তিতিক্ষা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।[2]
খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে ভারত-পর্যটনকারী চীনা ভিক্ষু ই ৎসিং মহাযান ও হীনযান মতের পার্থক্য নিরূপণ করতে গিয়ে লিখেছেন:[3]
উভয় মতবাদই একটি এবং একই বিনয় গ্রহণ করেছে। উভয়েরই পাঁচ অপরাধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উভয়েই চতুরার্য সত্য পালন করে। যাঁরা বোধিসত্ত্বগণের পূজা করেন এবং মহাযান সূত্রাবলি পাঠ করেন, তাঁদের বলা হয় ‘মহাযানী’। অন্যদিকে এগুলি যাঁরা করেন না, তাঁদের বলা হয় ‘হীনযানী’।
অতীতে পাশ্চাত্যের গবেষকরা হীনযান শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করতেন। মনিয়ার-উইলিয়ামস তার সংস্কৃত-ইংরেজি অভিধানে এই শব্দটির অর্থ করেছিলেন “বৌদ্ধ মতবাদের প্রাচীনতম পন্থা” ("the earliest system of Buddhist doctrine")। পাশ্চাত্যের গবেষকরাও সেই অর্থেই এই শব্দটি ব্যবহার করতেন।[4] এই শব্দটিকে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধধর্মের প্রধান শাখা হিসেবে প্রচলিত থেরবাদ প্রথার সমার্থক শব্দ হিসেবেও ব্যবহার করা হত। তবে কোনও কোনও গবেষক থেরবাদ মতটিকে এই শব্দটির সঙ্গে যুক্ত করতে চাননি। ১৯৫০ সালে বিশ্ব বৌদ্ধ ভ্রাতৃসঙ্ঘ ঘোষণা করে যে, বর্তমানে প্রচলিত বৌদ্ধধর্মের কোনও শাখার সঙ্গেই হীনযান শব্দটি যুক্ত করা অনুচিত।