Loading AI tools
সিরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হাফেজ আল-আসাদ (আরবি: حافظ الأسد, প্রতিবর্ণীকৃত: Ḥāfiẓ al-ʾAsad; ৬ অক্টোবর ১৯৩০ – ১০ জুন ২০০০) প্রায় তিন দশক যাবত সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি ছিলেন। হাফেজ এমন এক সময় সিরিয়ার হাল ধরেন যখন দেশটির প্রশাসন অভ্যুত্থান, পাল্টা-অভ্যুত্থানে জর্জরিত ছিল। হাফেজ রাষ্ট্রপতিত্ব গ্রহণের পর সিরিয়ায় সামরিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। সিরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদ হাফেজ আল-আসাদের পুত্র যিনি ২০০০ সালে পিতার মৃত্যুর পর সর্বসম্মতভাবে দেশটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
হাফেজ আল-আসাদ | |
---|---|
حافظ الأسد | |
সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ – ১০ জুন ২০০০ | |
পূর্বসূরী | আহমাদাল খাতিব |
উত্তরসূরী | আব্দুল হালিম খাদ্দাম (অন্তর্বর্তীকালীন) |
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২১ নভেম্বর, ১৯৭০ – ৩ এপ্রিল, ১৯৭১ | |
পূর্বসূরী | নুরুদ্দীন আল আতাসি |
উত্তরসূরী | আব্দুল রহমান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ৬ অক্টোবর, ১৯৩০ ক্বারদাহা, সিরিয়া |
মৃত্যু | ১০ জুন, ২০০০ দামেস্ক, সিরিয়া |
রাজনৈতিক দল | বাথ পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | আনিসাহ মাখলুফ |
ধর্ম | শিয়া ইসলাম (আলবীয়) |
স্বাক্ষর |
হাফেজ আল-আসাদ তৎকালীন ফ্রান্স-অধ্যুষিত সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে লাতাকিয়া প্রদেশের ক্কারদাহা শহরে একটি সংখ্যালঘু আলওয়াইট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লাতাকিয়ার জুলস জামাল স্কুল হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য যে হাফেজের পূর্বে তার পরিবারের কোন সদস্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেনি।
১৯৪৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে হাফেজ বাথ পার্টিতে যোগ দেন। তার পরিবার তার উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানে সমর্থ্য ছিলনা। স্কুল শেষ করে তাই হাফেজ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সিরীয় মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। এখানে তার সাথে তার পরবর্তী দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সহযাত্রী মুস্তাফা ত’লাসের দেখা হয়। সশস্ত্র বাহিনীতে থাকা অবস্থায় তিনি এর অধীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করেন। দায়িত্ম পালন কালে হাফেজ বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন যার কারণে তাকে উচ্চ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রেরণ করা হয়। ১৯৫০ সালের দিকে হাফেজ আল-আসাদ সিরীয় বাহিনীতে একজন নিয়মিত বৈমানিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন যে সময়ে তিনি মিত্রবাহিনীর প্রথম জেট বিমান গ্লস্টার মিটিয়ার চালিয়েছেন। সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে সময়ের সাথে পদবীর দিক থেকে হাফেজের উল্লেখযোগ্য উত্থান ঘটতে থাকে যার ফলে একটি সময়ে তিনি সিরিয়ার প্রতিরক্ষা কাঠামোতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন।
তৎকালীন মিশরীয় নেতা জামাল আব্দেল নাসেরের পরিকল্পনায় ১৯৫৮ সালে সিরিয়া ও মিশরকে একত্র করে যে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র বা ইউএআর গঠিত হয়েছিল, হাফেজ তার পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি সিরীয় বাহিনীতে তার সমমনা অফিসারদের এই একত্রীকরণের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছিলেন। হাফেজ তার প্যান-আরব আদর্শে স্থির ছিলেন কিন্তু এই একত্রীকরণকে মেনে নিতে পারেননি কারণ তিনি লক্ষ্য করতেন যে ইউনিয়নটির মূল ক্ষমতা জামাল আব্দেল নাসেরের হাতেই থেকে যাচ্ছে। হাফেজ তার এই বিরোধী অবস্থানের কারণে ১৯৬১ সালে ইউনিয়নটির ভেঙ্গে যাবার ঘটনাবহে মিশরীয় কর্তৃপক্ষের হাতে আটকও হয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে হাফেজের আটকাবস্থায় ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুস্তাফা ত’লাস তার পরিবারকে মিশর থেকে সিরিয়ায় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেন। কিছুদিন আটক রাখবার পর হাফেজকে মুক্তি দেয়া হয় এবং তিনি সিরিয়ায় ফিরে আসেন।
ইউএআর ভেঙ্গে যাবার পর মিশরের প্রশাসনে যুগান্তকারী কোন পরিবর্তন না এলেও সিরিয়ায় বামপন্থী শক্তিগুলো বাথ পার্টির সাথে একত্রিত হয়ে সশস্ত্রবাহিনীর সহায়তায় একটি অভুত্থান ঘটায় যার ফলে সিরিয়ার নিয়মিত সরকারের পতন ঘটে। বিপ্লবী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ম নেন সুন্নী নেতা আমিন হাফিজ, কিন্তু মূল ক্ষমতার উৎস প্রকৃতপক্ষে ছিল আলওয়াইট সম্প্রদায়ের কিছু তরুণ বাথ নেতার একটি সংঘবদ্ধ দল। এই অভ্যুত্থানের পর ১৯৬৪ সালে হাফেজ আল আসাদ সিরীয় বিমান বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন।
ইউএআরের পতনকালে অনুষ্ঠিত অভ্যুত্থানের পর ১৯৬৬ বাথ পার্টির নেতৃত্বে সিরিয়াতে আরেকটি অভ্যুত্থান হয় যার মাধ্যমে বাথ পার্টি ক্ষমতাসীন দল হিসেবে তাদের পূর্ববর্তী বামপন্থী সহচরদের ঝেড়ে ফেলে। বিমান বাহিনী প্রধান হাফেজ আল-আসাদ নবগঠিত বাথ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ম প্রাপ্ত হন। মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অর্জনের ফলে হাফেজ সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের একজন হয়ে উঠেন। এতদসত্ত্বেও বাথ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অস্থিরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল কারণ অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী কট্টর বাথ নেতারা খুব দ্রুত সামাজিক সংস্কার ও আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির পক্ষপাতী ছিলেন। এ জাতীয় নীতিমালার ক্ষেত্রে বাথ পার্টির সাধারণ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐকমত্য্য গড়ে উঠেনি। এছাড়া ১৯৬৭ সাল ছয় দিনের যুদ্ধে সিরিয়ার অবদান অনেকটাই ব্যার্থতার পরিচায়ক ছিল। বিশেষ করে ফিলিস্তিন-জর্ডান ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর যুদ্ধে বাথ প্রশাসনের ভূমিকা সাধারণ সিরীয় জনমতের প্রতিফলন ছিলনা। সরকারের প্রতি সাধারণের এই ক্ষোভ যতটা না প্রতিরক্ষা নীতিনির্ধারকদের উপর নির্দিষ্ট হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রকাশিত হয়েছিল রাষ্ট্রপতি নুরুদ্দীন আল-আতাসি ও বাথ পার্টির মহাসচিব সালাহ জাদিদের উপর। এর ফলে সরকারের প্রতিরক্ষা নীতিনির্ধারকগণ যেমন হাফেজ আল-আসাদ, মুস্তাফা ত’লাস সহ সশস্ত্র বাহিনীতে তাদের অনুসারীদের জনপ্রিয়তায় কোন ভাটা তো পড়েইনি বরং সাধারণের মাঝে এই ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল যে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে নি। পরিস্থিতি বিচার করে ১৯৭০ সালে রাষ্ট্রপতি আল-আতাসি হাফেজ ও ত’লাসকে ডেকে সকল সরকারি ও সামরিক দায়িত্ম থেকে অব্যাহতি দানের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরিস্থিতি তখন কোন ভাবেই আর কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আয়ত্তে ছিলনা। তাই সরে দাড়াবার নির্দেশ পাবার পরপর হাফেজ আল-আসাদ ও মুস্তাফা ত’লাস বাথ পার্টির অভ্যন্তরে একটি অভ্যুত্থান ঘটান যার দ্বারা রাষ্ট্রপতি আল-আতাসি, বাথ মহাসচিব সালাহ জাদিদ সহযোগী সমেত কারান্তরীণ হন। এই অভ্যুত্থানটিকে সাধারণ সিরীয়রা স্বাগত জানিয়েছিল যা সিরিয়ার সংশোধনী বিপ্লব (কারেক্টিভ রেভোল্যুশান) নামে খ্যাত হয়।
হাফেজ এমন এক সময় রাষ্ট্রপতিত্ব গ্রহণ করেন যখন সিরিয়ার প্রশাসন অভ্যুত্থান, পাল্টা-অভ্যুত্থান ও একের পর এক অস্থিতিশীল সামরিক-বেসামরিক শাসনে জর্জরিত ছিল। হাফেজ ক্ষমতা গ্রহণের আগেই সিরিয়া বাথ পার্টির একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা রাষ্ট্রভার গ্রহণের পর হাফেজ পরিবর্তন করেননি। বরং হাফেজ সারা দেশে সরকারী গোয়েন্দা ও চরদের এক বিস্তীর্ণ জাল বিছিয়ে দেন যা সরকারের বিরুদ্ধে কোনরূপ কার্যক্রমের খবর সংগ্রহে সদা নিয়োজিত থাকত। তাৎক্ষণের জন্য সিরিয়া একটি কঠোর তত্ত্বাবধানের রাষ্ট্রে পরিণত হয় যেখানে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমে ও সরকারি পর্যায়ে হাফেজকে জাতীয় মহান নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়।
তবে দমননীতির দিক থেকে সিরিয়া কখনওই তার পার্শ্ববর্তী ইরাককে ছাড়িয়ে যায়নি। ইরাক সেসময় হতেই সেখানকার বাথ পার্টি কর্তৃক শাসিত হচ্ছিল যার নেতা ছিলেন সাদ্দাম হুসাইন। সাদ্দাম হুসাইন উদ্দেশ্য বিশেষে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতেন। এক্ষেত্রে হাফজ শাসিত সিরিয়ার কার্যপদ্ধতি ইরাকের তুলনায় কিছুটা সূক্ষ্ম ছিল। হাফেজ প্রশাসন ভিন্ন মতাবলম্বী ও ভিন্ন আদর্শের সিরীয়দের সাথে প্রাথমিক ভাবে সমঝোতায় পৌছবার চেষ্টা করত। সমঝোতা ব্যার্থ হলেই শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগের কথা ভাবা হত, তার আগে নয়।
১৯৪৮ সাল থেকে সিরিয়ায় প্রায় এক ডজনেরও বেশি বার অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে হয়েছে, যার কোনটি সফল ছিল বা কোনটি ছিলনা। সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে কোন কোন অভ্যুত্থানের নায়কগণ রাষ্ট্রক্ষমতা আয়ত্ত করতে পারলেও সিরিয়াকে রাজনৈতিক ভাবে স্থিতিশীল করার প্রক্রিয়ায় কেউই সাফল্য পাননি। বরং অধিকাংশ সফল অভ্যুত্থানকারীই পরবর্তী কোন না কোন অভ্যুত্থানে বিতাড়িত হয়েছেন। কিন্তু হাফজ আল-আসাদের নেতৃত্বে বাথ পার্টির সংশোধনী বিপ্লবের পর সিরিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন শুরু হয়। দীর্ঘকালের অস্থির প্রশাসনে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ফলে সাধারণের সিরীয়দের মাঝে হাফেজ আল-আসাদের নির্ভরযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, কেননা তৎকালীন পরিস্থিতিতে একটি শক্তিশালী সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের কাজ শুরু করা প্রকৃতপক্ষেই হাফেজ আল-আসাদ সহ সরকারে তার অনুসারীদের একটি অনস্বীকার্য সাফল্য ছিল।
সাময়িক কঠোরতা অবলম্বনের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপর হাফেজ আল-আসাদ সিরিয়ার পরিকাঠামোগত সংস্কার শুরু করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ফোরাত নদী অর্থাৎ ইউফ্রেটিসের উপর থাওরা বাঁধ নির্মিত হয়। বহুবছর আগে হাফেজের নির্মিত এই বাঁধ আজও সিরিয়ার অধিকাংশ বিদ্যুতের সরবরাহকারী। হাফেজ প্রশাসন শিক্ষার বিস্তারের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করে। সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয় যার দ্বারা সাধারণ সিরীয় জীবনযাত্রা দৃশ্যতই পরিবর্তন এসেছিল। প্রতিটি পর্যায়েই সরকারের অসাম্প্রদায়িক আদর্শ কঠোর ভাবে বজায় ছিল যার ফলে সরকারের প্রতি সংখ্যালঘু আলওয়াইট, দ্রুজ ও খ্রিষ্টানদের আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
সরকারী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে হাফেজ আল-আসাদ সিরীয়দের মাঝে আরব জাতীয়তাবাদের উপলব্ধিগুলোকে জাগিয়ে রাখতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সরকারী প্রচারমাধ্যম, শিক্ষাব্যবস্থা ও অন্যান্য মাধ্যমগুলোতে জনগণকে প্রতিনিয়ত আরবদের সাংস্কৃতিক বিশেষত্ব ও জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছিল এবং আল-আসাদ সরকারকে উক্ত আদর্শের একজন যোগ্য সেবক হিসেবে চিহ্নিত করা হত।
হাফেজপূর্ব বাথ সরকার সিরিয়ার সামরিক শক্তিবৃদ্ধির জন্য একান্ত প্রতিশ্রুত ছিল, হাফেজ যে নীতির কোন পরিবর্তন করেননি। তিনিও সিরিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন যে কাজে তিনি প্রতিনিয়ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা পেতেন।
১৯৮৩ সালে হাফেজ আল-আসাদ কঠিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সাময়িক ভাবে শারীরিক অক্ষমতার শিকার হন। রাষ্ট্রপতিকে এমতাবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়বার আগ মুহুর্তে হাফেজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও দীর্ঘকালের সহচর মুস্তাফা ত’লাসের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অস্থায়ী পরিষদ গঠন করেন যেটি তার অবর্তমানে সরকার পরিচালনা করবে। উল্লেখ্য যে পরিষদের ছয়জন সদস্যই ছিলেন সুন্নী মুসলমান। হাফেজ জানতেন এই সুন্নী কাউন্সিলাররা চাইলেই একটি অভ্যুত্থান করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেনা কেননা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে আসীন ছিলেন হাফেজের নিজস্ব আলওয়াইট সম্প্রদায়ের মানুষজন যারা সাময়িক ভাবে হাফেজের সম্মতিক্রমে সুন্নী নেতাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলেও সব সময়ের জন্য তা করবে না। এই পরিস্থিতিতে মুস্তাফা ত’লাসের নেতৃত্বে সরকার পরিচালিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে হাফেজ আল-আসাদের শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটেছে ও তার বাঁচার আশা ক্ষীণ। এই পরিস্থিতিতে ১৯৮৪ সালে হাফেজের ছোট ভাই রিফাত আল-আসাদ সশস্ত্র বাহিনীর একটি অংশকে কাজে লাগিয়ে অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেন। তার নেতৃত্বে একটি সৈন্যদল যেটি ডিফেন্স কোম্পানিজ নামে খ্যাত, প্রায় ৫০,০০০ সদস্য, ট্যাংক ও হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে রাজধানী দামেস্কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। সিরিয়াতে হাফেজ ও রিফাতের অনুসারীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয় ও পরিস্থিতি একটি পরিপূর্ণ যুদ্ধের কাছাকাছি চলে যায়। এ অবস্থায় হাফেজ আল-আসাদ গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন ও জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণের দ্বারা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভাবে হাফেজের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। হাফেজ তাৎক্ষণিক ভাবে ডিফেন্স কোম্পানিজের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনেন। ব্যার্থ অভ্যুত্থানের নায়ক রিফাত আল-আসাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন অভিযোগ গঠন বা বিচার হয়নি। হাফেজ সুস্থ হওয়ার পরপর তাকে সিরিয়ার বিশেষ দূত হিসেবে প্যারিসে প্রেরণ করা হয়।
হাফেজ আল-আসাদ উত্তরাধিকারী হিসেবে বড় ছেলে বাসিল আল-আসাদকে বেছে নিয়েছিলেন ও তাকে সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক ও সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।[১] কিন্তু ১৯৯৪ সালের ২১ জানুয়ারিতে একটি মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় দামেস্কে বাসিল আল-আসাদের মৃত্যু ঘটে। এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর পর হাফেজ আল-আসাদ বাসিলের ছোট বাশার আল-আসাদকে উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নেন। বাশার লন্ডনে অফথ্যালমলজি বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন যেখান থেকে তাকে পিতার অধীনে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের জন্য সিরিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়।
২০০০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাফেজ আল-আসাদের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটে। মৃত্যুর পর তার ছেলে বাশার আল-আসাদ সর্বসম্মত ভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশটির দায়িত্ম গ্রহণ করেন।
হাফেজ আল-আসাদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ প্রত্যেকেই সিরিয়ার কোন না কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.