হান্স লিপারশাই (Hans Lippershey, বিকল্প বানানে Lipperhey; আনু.১৫৭০ – সমাধিস্থ ২৯ সেপ্টেম্বর ১৬১৯) একজন জার্মান-ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা ছিলেন। তাঁকে সচরাচর দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উদ্ভাবক (১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে) হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনিই প্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্রের একটি কৃতিস্বত্ব অর্জনের চেষ্টা করেন।[1] তবে তিনি ইতিহাসের সর্বপ্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছিলেন কি না, সে ব্যাপারটি এখনও নিশ্চিত নয়।

দ্রুত তথ্য হান্স লিপারশাই, জন্ম ...
হান্স লিপারশাই
Thumb
জন্মআনু.১৫৭০
ভেজেল, ক্লেভেস ডিউকরাজ্য, পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য
মৃত্যুসেপ্টেম্বর ১৬১৯ (বয়স ৪৮৪৯)
মিডেলবুর্গ, ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্র
জাতীয়তাজার্মান, ওলন্দাজ
পেশাচশমা-নির্মাতা
পরিচিতির কারণদূরবীক্ষণ যন্ত্রের উদ্ভাবক (সর্বপ্রথম কৃতিস্বত্বের আবেদনকারী)
বন্ধ

হান্স লিপারশাইয়ের পূর্ণনাম ইয়ান লিপার্সহাইম বা হান্স লিপার্সহাইম। তিনি ১৫৭০ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের ভেজেল শহরে (বর্তমান জার্মানিতে) জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি সংযুক্ত ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্রের জিল্যান্ড প্রদেশের মিডেলবুর্গ শহরে বাস করা শুরু করেন। সেখানে তিনি একজন চশমা নির্মাতা ছিলেন। কিংবদন্তি অনুযায়ী লিপারশাইয়ের দোকানে খেলাচ্ছলে দুইটি শিশু দুইটি পরাকলা বা লেন্স একই রেখায় এনে সেগুলির ভেতর দিয়ে তাকিয়ে বহুদূরের গির্জার বুরূজের হাওয়া নিশানের একটি বিবর্ধিত রূপ দেখতে পায়। লিপারশাই এই কাহিনীটি সম্পর্কে জেনে নিজেই একটি নলের মধ্যে দুইটি পরাকলা বসিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং এভাবে বাণিজ্যিকভাবে দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করা ও বিক্রয় করা শুরু করেন। লিপারশাই ১৬০৮ সালে তাঁর উদ্ভাবিত দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির জন্য নেদারল্যান্ডসের স্টেটস জেনারেল কর্তৃপক্ষের কাছে ৩০ বছর মেয়াদী একটি কৃতিস্বত্বের আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির নাম দিয়েছিলেন "কাইকার" (Kijker) অর্থাৎ "বীক্ষক"। কৃতিস্বত্ব না দেওয়া হলে তিনি এর পরিবর্তে একটি বার্ষিক ভাতার জন্য আবেদন করেন, এবং আবেদন গৃহীত হলে তার বিনিময়ে বিদেশী রাজাদের কাছে তাঁর এই উদ্ভাবনটি বিক্রি না করার প্রতিশ্রুতি প্রস্তাব করেন। কিন্তু লিপারশাইয়ের পাশাপাশি আরও দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বী চশমা নির্মাতা দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উদ্ভাবক হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থিত করেন; এরা ছিলেন ইয়াকব মেতিউস এবং জাকারিয়া জ্যানসেন (জাকারিয়াসকে প্রথম যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের উদ্ভাবক হিসেবে গণ্য করা হয়)। স্টেটস জেনারেল এই সিদ্ধান্ত দেয় কাউকেই কৃতিস্বত্ব প্রদান করা হবে না এই কারণে যে বহুসংখ্যক লোক উদ্ভাবনটি সম্পর্কে অবগত আছে এবং এটিকে নকল করা খুবই সহজসাধ্য। তবে স্টেটস জেনারেল লিপারশাইকে ৯০০ ফ্লোরিন অনুদান হিসেবে প্রদান করে এই শর্তে যে সেটিকে একটি দুই চোখে দেখার দূরবিনে রূপান্তরিত করতে হবে, যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে এটিকে ব্যবহার করা যায়। লিপারশাইয়ের দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলি বানানোর কৌশল ১৬০৯ সালেই ইউরোপের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রাংকফুর্টের বাণিজ্যমেলায় সেটি প্রদর্শিত হয়। প্যারিসে ফ্রান্সের রাজা ৪র্থ হেনরি ও অন্যান্যরা এটি ব্যবহার করার সুযোগ পান। ইতালির মিলান, ভেনিসপাদোয়া শহরেও এগুলি নির্মাণ করা শুরু হয়। ১৬০৯ সালের শেষেই লন্ডনেও এটি নির্মাণ করা শুরু হয়ে যায়। এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলি নির্মাণের আলোকবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলির কোনোই প্রয়োগ করা হয়নি। বরং পরাকলা চেঁছে ও পালিশ করার কৌশলের ভিত্তিতে বাস্তবে কাজ করে নাকি করে না, তার ভিত্তিতে এগুলি নির্মাণ করা হত। এগুলিকে তখন "ওলন্দাজ কাণ্ড", "চোঙ" বা "পার্স্পেকটিভ" নামে ডাকা হত।[2][1]

অনেক বিজ্ঞানী জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণায় এই উপকরণটির সম্ভাব্য গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন, যাদের মধ্যে প্যারিসের ফরাসি বিজ্ঞানী জাক বোভদের ছিলেন অন্যতম। জাক বোভদের এই উদ্ভাবনটির কথা গালিলেও গালিলেইকে বলেন, এবং এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে গালিলেও তাঁর নিজস্ব দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি নির্মাণ করেন।

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.