হাথোর
From Wikipedia, the free encyclopedia
হাথোর (প্রাচীন মিশরীয়: ḥwt-ḥr, "হোরাসের গৃহ", গ্রিক: Ἁθώρ Hathōr) ছিলেন প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবী। প্রাচীন মিশরীয়দের ধারণায় তাঁর ভূমিকা ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। আকাশের দেবী হিসেবে হাথোর ছিলেন আকাশ-দেবতা হোরাস ও সূর্যদেবতা রা-এর একাধারে মাতা ও পত্নী। আবার রাজপদের সঙ্গে এই দুই দেবতার সম্পর্কের প্রেক্ষিতে হাথোরকে এঁদের পার্থিব প্রতিনিধি ফ্যারাওদের প্রতীকী মাতা বলে গণ্য করা হত। অন্যদিকে যে সব দেবী "রা-এর চোখ" অর্থাৎ রা-এর নারী প্রতিমূর্তি চক্ষুদেবী হিসেবে বিবেচিত হতেন, হাথোর তাঁদেরও অন্যতম ছিলেন। চক্ষুদেবী রূপে হাথোরের প্রতিহিংসাপরায়ণতা রা-কে তাঁর শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করে বলে মনে করা হত। এর বিপরীতে কল্যাণময়ী রূপে হাথোর ছিলেন সংগীত, নৃত্যকলা, আনন্দ, প্রেম, যৌনতা ও মাতৃস্নেহের প্রতীক। মিশরীয় পুরাণে তাঁকে একাধিক পুরুষ দেবতার দাম্পত্যসঙ্গী এবং সেই সব দেবতার সন্তানের জননী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পত্নী ও মাতা রূপে তাঁর এই দুই দিককে প্রাচীন মিশরে নারীজাতির আদর্শ জ্ঞান করা হত। এছাড়াও মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে, হাথোর ইহলোক ও পরলোকের সীমানা পার হয়ে মৃতের আত্মাকে পরলোকে উপনীত হতে সহায়তা করেন।
হাথোর | |||
---|---|---|---|
চিত্রলিপি | মিশরীয়: ḥwt-ḥr
| ||
প্রধান অর্চনাকেন্দ্র center | দেনদেরা, মেমফিস | ||
মাতাপিতা | রা | ||
সঙ্গী | রা, হোরাস, আতুম, আমুন, খোনসু | ||
সন্তানসন্ততি | হার-পা-খেরেদ (শিশু হোরাস), আইহি, নেফেরহোতেপ |
প্রাচীন মিশরে বহু ক্ষেত্রেই হাথোরকে এক গো-রূপিণী দেবী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। এই রূপটি ছিল তাঁর মাতৃত্ব ও স্বর্গীয় সত্ত্বার প্রতীক। অবশ্য হাথোরের যে রূপটি সর্বাধিক পরিচিত ছিল সেটিতে তাঁকে গোরুর শিং ও সৌর চাকতি-সংবলিত শিরস্ত্রাণ পরিহিত এক নারী হিসেবেই দেখা যায়। এছাড়া সিংহী, গোখরো সাপ ও সাইকামোর গাছকেও তাঁর প্রতীক মনে করা হত।
গবাদি পশুর রক্ষয়িত্রী ও হাথোরের অনুরূপ যে সকল দেবীর পূজা প্রাচীন মিশরীয়রা করত, তাঁদের খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের মিশরীয় শিল্পকলাতেই দেখা যায়। কিন্তু হাথোরের আবির্ভাব সম্ভবত পুরনো রাজ্যের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮৬-২১৮১ অব্দ) পূর্বে ঘটেনি। এই রাজ্যের শাসকবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় মিশরের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দেবদেবীর তালিকায় স্থান পান হাথোর। শুধু তাই নয়, অন্যান্য দেবদেবীদের তুলনায় অধিকতর সংখ্যায় মন্দির উৎসর্গিত হয় হাথোরের উদ্দেশ্যেই। উচ্চ মিশরের দেনদেরায় অবস্থিত হাথোরের প্রধান মন্দিরটি ছাড়াও এই দেবীকে পূজা করা হত তাঁর পুরুষ দাম্পত্যসঙ্গীদের প্রতি উৎসর্গিত মন্দিরগুলিতেও। এছাড়া মিশরীয়রা নুবিয়া ও কনানের মতো বিদেশি রাজ্য এবং সেই সব রাজ্যের ধূপ ও রত্নপাথরের মতো মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীর সঙ্গেও হাথোরকে যুক্ত করায় সেই সব রাজ্যের কিছু অংশেও তাঁর পূজার প্রচলন ঘটেছিল। ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও মানত পূরণের উদ্দেশ্যে পূজিত মিশরীয় দেবদেবীদেরও অন্যতম ছিলেন হাথোর। বিশেষত সন্তানকামনায় মেয়েরা তাঁর কাছে মানত করত।
নতুন রাজ্যের রাজত্বকালে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫৫০-১০৭০ অব্দে) রাজকীয় ভাবাদর্শে হাথোরের স্থানটি দখল করে নেন মুত ও আইসিসের মতো দেবীরা। তা সত্ত্বেও মিশরের সর্বাধিক পূজিত দেবদেবীদের তালিকা থেকে তাঁর নামটি মুছে যায়নি। নতুন রাজ্যের সমাপ্তির পর আইসিসের প্রভাবে হাথোর ক্রমশ ঢাকা পড়ে যেতে থাকেন। কিন্তু খ্রিস্টের জন্মের অব্যবহিত পরের কয়েক শতকে প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের অবলুপ্তির পূর্বাবধি তাঁর পূজা প্রচলিত ছিল বলেই জানা যায়।