হাংচৌ
পূর্ব চীন উপকূলের চচিয়াং প্রদেশের রাজধানী নগরী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পূর্ব চীন উপকূলের চচিয়াং প্রদেশের রাজধানী নগরী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হাংচৌ (চীনা: 杭州; /ˈhɑːŋˈdʒoʊ/ (HAHNG-JOH; টেমপ্লেট:IPA-wuu, Standard Mandarin pronunciation: [xɑ̌ŋ.tʂóʊ] () গণচীনের দক্ষিণ-পূর্বভাগে অবস্থিত চচিয়াং প্রদেশের রাজধানী ও সর্বাধিক জনবহুল শহর। )[2] এটি প্রদেশটির উত্তরাংশে, সাংহাই নগরীর কাছে, ছিয়াংথাং নদীর মোহনার উত্তর তীরে, হাংচৌ উপসাগরের মাথায় অবস্থিত একটি বন্দর শহর। শহরটি নৌপথের মাধ্যমে দক্ষিণদিকে চচিয়াং প্রদেশের অভ্যন্তরভাগের সাথে সংযুক্ত। অন্যদিকে শহরটি চীনের প্রাচীন মহাখালের দক্ষিণ প্রান্তসীমাস্থ বন্দর, ফলে এটি উত্তরের ছাং চিয়াং নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে বিস্তৃত খাল ও জলখাতের আন্তর্জালটির সাথেও সংযুক্ত। মহাখালের হাংচৌ সংলগ্ন অংশটি ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করা হয় এবং এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
হাংচৌ 杭州市 | |
---|---|
জেলা-স্তরের ও উপ-প্রাদেশিক শহর | |
চচিয়াং প্রদেশে হাংচৌ শহরের অবস্থান | |
চীনে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৩০°১৫′ উত্তর ১২০°১০′ পূর্ব | |
রাষ্ট্র | গণচীন |
প্রদেশ | চচিয়াং |
সরকার | |
• ধরন | উপ-প্রাদেশিক শহর |
• দল সচিব | চৌ চিয়াংইউং (周江勇) |
• নগরপাল | শু লিই (徐立毅) |
আয়তন | |
• জেলা-স্তরের ও উপ-প্রাদেশিক শহর | ১৬,৫৯৬ বর্গকিমি (৬,৪০৮ বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ৮,০০০ বর্গকিমি (৩,০০০ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৩৪,৫৮৫ বর্গকিমি (১৩,৩৫৩ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (2018) | |
• জেলা-স্তরের ও উপ-প্রাদেশিক শহর | ৯৮,০৬,০০০ |
• জনঘনত্ব | ৫৯০/বর্গকিমি (১,৫০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ৭৯,৭০,০০০(২,০১৭) |
• মহানগর | ২,২৫,৯৪,০০০ Hangzhou Metropolitan Area (including Hangzhou Shaoxing Jiaxing Huzhou)[1] |
• জাতীয় মর্যাদাক্রম | ৫ম |
বিশেষণ | হাংচৌ জাতি |
সময় অঞ্চল | China Standard (ইউটিসি+8) |
ডাক কোড | 310000 |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | CN-ZJ-01 |
স্থূঅউ (নামিক) (জিডিপি) | ২০১৮ |
- মোট | CNY ১.৩৫০৯২ লক্ষ কোটি (US$ ২০৪.১৫ শত কোটি) |
- মাথাপিছু | CNY¥ ১,৪০,১৮০ (US$ ২১,১৮৪) |
- প্রবৃদ্ধি | ৬.৭% |
- মহানগর (২০১৮) | CNY ২.৬৫১৭ লক্ষ কোটি[1] (US$ ৪০০.৭ শত কোটি) |
লাইসেন্স পাত উপসর্গ | 浙A |
আঞ্চলিক উপভাষা | উ: হাংচৌ উপভাষা |
ওয়েবসাইট | City of Hangzhou |
City tree Camphor laurel (Cinnamomum camphora)City flower Sweet Osmanthus (Osmanthus fragrans) |
হাংচৌ | |||||||||||||||||||||||||
চীনা | 杭州 | ||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
উ | ɦaŋ-tsei (হাংচৌ উপভাষা) | ||||||||||||||||||||||||
পোস্টাল | Hangchow | ||||||||||||||||||||||||
আক্ষরিক অর্থ | "হাং জেলা" | ||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||
Qiantang | |||||||||||||||||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 钱塘 | ||||||||||||||||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 錢塘 | ||||||||||||||||||||||||
|
ইন্টারনেট অনুসন্ধান সরঞ্জাম গুগলে গণচীনের যে শহরটির সম্বন্ধে পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করে থাকেন, তা হল হাংচৌ।[3] এখানে প্রতি বছর ২৫ লক্ষ বিদেশী পর্যটক ও ১৩ কোটি দেশী চীনা পর্যটক বেড়াতে আসেন।[4] হাংচৌ চীনের চা, রেশম, ছুরি, ছাতা, পাখা, কাচি ও চিনামাটির কুটিরশিল্পের প্রধানতম শহর। হাংচৌ চীনের একমাত্র শহর যেটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা ১২ বছর ধরে চীনের সবচেয়ে সুখী দশটি শহরের তালিকাতে স্থান পেয়েছে।[5] এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত একটানা ৫ বছর এটি চীনের সবচেয়ে সুখী শহরের মর্যাদা অর্জন করেছিল।[6] হাংচৌ শহরে উৎপন্ন শি হু লুংচিং চা (Xi Hu Longjing, 西湖龙井) চীনের সবচেয়ে উঁচু মানের চা হিসেবে স্বীকৃত। চা বাগান অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত হাংচৌ চা জাদুঘরটি চৈনিক চায়ের ইতিহাসের উপর উৎসর্গীকৃত চীনের একমাত্র জাদুঘর। হাংচৌ শহরকে চীনা রেশম চাষের আঁতুড়ঘর হিসেবে গণ্য করা হয়।[7] হাংচৌয়ে অবস্থিত চীনের জাতীয় রেশম জাদুঘরটি বিশ্বের বৃহত্তম বস্ত্র জাদুঘরগুলির একটি।[8]
হাংচৌ একটি উপ-প্রাদেশিক শহর হিসেবে শ্রেণীকৃত হয়েছে।[9] এটি হাংচৌ মহানগর এলাকার কেন্দ্রে অবস্থিত,[1] যা সমগ্র চীনের চতুর্থ বৃহত্তম মহানগর এলাকা।[10] ২০১০ সালের চীনা জনগণনা অনুযায়ী হাংচৌ মহানগর এলাকার আয়তন ৩৪,৫৮৫ কিমি২ (১৩,৩৫৩ মা২) এবং এতে প্রায় ২ কোটি ১১ লক্ষ লোক বাস করে।[1] প্রশাসনিকভাবে শহরটিকে ১০টি পৌর জেলা, ১টি কাউন্টি-স্তরের শহর এবং ২টি কাউন্টিতে ভাগ করা হয়েছে। মূল হাংচৌ পৌরজেলাটিতে ২০১৫ সালে প্রায় ৯০ লক্ষ নিবন্ধিত অধিবাসী ছিল।[11]
হাংচৌ শহরে রেশম ও সুতিবস্ত্র, রাসায়নিক দ্রব্য, ইস্পাত, যন্ত্রপাতি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের শিল্পকারখানা আছে। ২০১৮ সালে হাংচৌ শহরের স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ছিল ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি চীনা ইউয়ান (প্রায় ২০ হাজার ১ শত কোটি মার্কিন ডলার), যার সুবাদে এটি চীনের ১০ম বৃহত্তম নগর অর্থনীতিতে পরিণত হয়। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালে হাংচৌয়ের অর্থনীতির আকার দক্ষিণ ইউরোপের রাষ্ট্র গ্রিসের অর্থনীতির সমান ছিল।[12]
চার দিকে ঘিরে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্য ও শিল্পনগরী সাংহাইসহ বেশ কয়েকটি শহর ঘিরে থাকলেও হাংচৌ শহরটি অবসর কাটানোর জন্য শান্তিপূর্ণ একটি শহর। হাংচৌ শহর জাতিসংঘের শ্রেষ্ঠ বসতির পুরস্কার লাভ করেছে এবং বিশ্বের সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক আন্তর্জাতিক 'উদ্যানশহর' হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
শহরটি থিয়েনমু ("স্বর্গের চোখ") নামের এক সুদৃশ্য পর্বতমালার পূর্ব পাদদেশে, বিখ্যাত শি হু ("পশ্চিম হ্রদ") হ্রদের তীরে অবস্থিত। হ্রদটির সৌন্দর্য ৯ম শতক থেকে চীনের অনেক সাহিত্যকর্ম ও চিত্রকর্মে চিত্রিত হয়েছে। এটি চীনের সম্রাটদের একটি পছন্দের অবকাশযাপনস্থল ছিল। পর্যটকেরা সুদৃশ্য শি হু বা পশ্চিম হ্রদের তীরবর্তী বহু প্রাচীন মঠ, মন্দির, উদ্যান, খিলান সেতু ও স্মৃতিবিজড়িত পুণ্যস্থান ঘুরে দেখতে পারেন। হ্রদের ভেতরে অনেক ছোট ছোট দ্বীপে নৌকায় ঘুরে আসা যায়। হ্রদের দক্ষিণ তীরে পাঁচ তলাবিশিষ্ট লেইফেং প্যাগোডাটি অবস্থিত, যার মূল কাঠামোটি ৯৭৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। শি হু হ্রদটি বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা লাভ করেছে।
শি হু হ্রদের পশ্চিমে উলিন পর্বতমালাতে লিংইন মন্দির অবস্থিত যেটির মিলনায়তন কক্ষে ২৫ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট স্বর্ণ দিয়ে গিলটি করা বিরাট একটি বুদ্ধমূর্তি আছে। মন্দিরের কাছে ফেইলাই নামের চুনাপাথরের গুহাগুলিতে প্রস্তরশিলার উপরে খোদাইয়ের কাজ দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলি ১০ম শতকে সৃষ্টি করা হয়েছিল; এদের মধ্যে একটি বিখ্যাত হাস্যরত বুদ্ধও রয়েছে। পাহাড়ি পথ ধরে উত্তর চূড়া পর্বতের উপরে উঠে যাওয়া যায়, যার শীর্ষে লিংশুন মন্দির (“সম্পদের মন্দির”) অবস্থিত। এই এলাকাটি চা ও রেশমের জন্য সুপরিচিত; এখানে জাতীয় চা ও রেশম জাদুঘরগুলি অবস্থিত। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে লুংচিং (ড্রাগনের কুয়া) নামের গ্রামে স্তরে স্তরে বিন্যস্ত বাগানগুলিতে লুংচিং সবুজ চায়ের পাতার চাষ করা হয়। লুংচিং জাতের সবুজ চা চীনের অন্যতম বিখ্যাত চায়ের জাত। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক উদ্যান ও বিনোদন প্রশাসন সংস্থা হাংচৌ শহরকে একটি আন্তর্জাতিক উদ্যান শহর হিসেবে স্বীকৃতি দান করে।
হাংচৌ চীনের অন্যতম একটি প্রাচীন শহর। চীনের সাতটি প্রাচীন রাজধানীর অন্যতম হাংচৌ শহরের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। শহরটি প্রাচীনকালে প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত ছিল। ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে শহরটির বর্তমান নামটি প্রদান করা হয়। ৯০৭-৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে শহরটি চীনের ইতিহাসের পাঁচ রাজবংশ পর্বের সময় উইউয়ে রাজ্যের রাজধানী শহরের ভূমিকা পালন করে। দক্ষিণী সুং রাজবংশের শাসনামলে (১১২৭-১২৭৯) শহরটি রাজধানী হবার পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও সুখ্যাতি অর্জন করে। ইতালির ভেনিস থেকে আগত পর্যটক মার্কো পোলো ১৩শ শতকে শহরটি পরিদর্শন করেন। তিনি হাংচৌকে "মর্ত্যের মাঝে স্বর্গ" এবং "বিশ্বের সবচেয়ে সুসজ্জিত শহর" আখ্যা দেন। ১৪শ শতকে পলি সঞ্চয়ের কারণে হাংচৌ বন্দরের নাব্যতা হ্রাস পেলে শহরটির গুরুত্ব হ্রাস পায়। ১৮৬১ সালে থাইফিং বিদ্রোহীরা পুরাতন হাংচৌ শহরের অধিকাংশ ধ্বংস করে ফেলে। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত শহরটি জাপানের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ১৯৫০-এর দশকে শিল্পকারখানাগুলিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাংচৌ শহরকে ২০২২ সালের এশিয়ান গেমস ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজক শহর হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৯০ সালে বেইজিং শহর এবং ২০১০ সালে কুয়াংচৌ শহরের পরে হাংচৌ তৃতীয় চীনা শহর হিসেবে এশিয়ান গেমসের আয়োজক হবার মর্যাদা লাভ করে।[13]
হাংচৌ চীনের একটি উঠতি প্রযুক্তিকেন্দ্র। এখানেই চীনের সর্ববৃহৎ ইন্টারনেট ব্যবসা বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার প্রধান কার্যালয়টি অবস্থিত। শহরটি ২০১৬ সালে ১১তম জি২০ সম্মেলনটির আয়োজন করে।[14]
হাংচৌয়ের স্থানীয় অধিবাসীরা উ ভাষার একটি উপভাষা হাংচৌ ভাষাতে কথা বলে। তবে সরকারী ভাষা হিসেবে ম্যান্ডারিন ভাষা কথ্য ভাষা হিসেবে বহুল প্রচলিত।
হাংচৌ শহরটিতে একটি ক্ষুদ্র নদী বন্দর আছে। শহরটি হাংচৌ শিয়াওশান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সাথে সংযুক্ত। এছাড়া এটি রেলপথের মাধ্যমে চীনের সমস্ত বড় শহরগুলির সাথে সংযুক্ত। সাংহাই শহর থেকে অত্যন্ত দ্রুতগামী রেলগাড়ি করে মাত্র ১ ঘণ্টায় হাংচৌ শহরে পৌঁছানো যায়। শহরে ৩টি পাতালরেল লাইন আছে এবং ২০২২ সালের এশিয়ান গেমসের আগেই মোট ১৫টি লাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
হাংচৌয়ের জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় ধরনের (কোপ্পেন Cfa)। এখানে চারটি পৃথক ঋতু আছে। গ্রীষ্মকালটি দীর্ঘ, অত্যন্ত উষ্ণ ও আর্দ্র এবং শীতকালটি হিমশীতল (কদাচিৎ তুষারপাত হয়), মেঘাচ্ছন্ন ও শুষ্ক হয়ে থেকে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.