Loading AI tools
কুরআন শরীফের ৯৭তম সূরা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সূরা আল-কদর (বা ক্বদর) (আরবি: سورة القدر) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৯৭ তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৫ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১। আল ক্বদর সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।[1] কদরের এর অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। এর মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে একে "লায়লাতুল-কদর" তথা মহিম্মান্বিত রাত বলা হয়। আবু বকর ওয়াররাক বলেনঃ এ রাত্রিকে লায়লাতুল-কদর বলার কারণ এই যে, আমল না করার কারণে এর পূর্বে যার কোন সম্মান ও মূল্য মহিমান্বিত থাকে না, সে এ রাত্রিতে তওবা-এস্তেগফার ও এবাদতের মাধ্যমে সম্মানিতও হয়ে যায়।
শ্রেণী | মাক্কী সূরা |
---|---|
পরিসংখ্যান | |
সূরার ক্রম | ৯৭ |
আয়াতের সংখ্যা | ৫ |
রুকুর সংখ্যা | ১ |
← পূর্ববর্তী সূরা | সূরা আলাক্ব |
পরবর্তী সূরা → | সূরা বাইয়্যিনাহ |
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ |
হযরত আবু যর গেফারী বর্ণিত রেওয়ায়েতে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ ইবরাহীম-এর সহীফাসমূহ ৩রা রমযানে, তাওরাত ৬ই রমযানে, ইঞ্জিল ১৩ই রমযানে এবং যাবুর ১৮ই রমযানে অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআন পাক ২০শে রমযানুল-মোয়ারকে নাযিল হয়েছে।[2] হাদীসে আছে, শবে-কদরে জিবরাঈল ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামায অথবা যিকরে মশগুল থাকে, তাদের জন্যে রহমতের দোয়া করেন। ফেরেশতাগণ শবে-কদরে সারা বছরের অবধারিত ঘটনাবলী নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে। কোন কোন তফসীরবিদ একে "সালাম্মুন" এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে এ অর্থ করেছেন যে, এ রাত্রিটি যাবতীয় অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে শান্তিস্বরূপ।[3] শবে-কদরের এই বরকত রাত্রির কোন বিশেষ অংশে সীমিত নয়; বরং ফজরের উদয় পর্যন্ত বিস্তৃত।
এর মক্কী বা মাদানী হবার ব্যাপারে দ্বিমত রয়ে গেছে। আবু হাইয়ান বাহরুল মুহীত গ্রন্থে দাবী করেছেন , অধিকাংশ আলেমের মতে এটা মাদানী সূরা । আলী ইবনে আহমাদুল ওয়াহেদী তাঁর তাফসীরে বলেছেন , এটি মদীনায় নাযিলকৃত প্রথম সূরা। অন্যদিকে আল মাওয়ারদী বলেন , অধিকাংশ আলেমের মতে এটি মক্কী সূরা । ইমাম সুয়ূতী ইতকান গ্রন্থে একথাই লিখেছেন। ইবনে মারদুইয়া ইবনে আব্বাস (রা) , ইবনে যুবাইর ( রা) ও হযরত আয়েশা ( রা) থেকে এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে , সূরাটি মক্কায় নাযিল হয়েছিল। সূরার বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলেও একথাই প্রতীয়মান হয় যে , এর মক্কায় নাযিল হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।
ইবনে আবী হাতেম -এর রেওয়ায়েতে আছে, রসূলুল্লাহ্ (সঃ) একবার বনী-ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদ[4] মশগুল থাকে এবং কখনও অস্ত্র সংবরণ করেনি। মুসলমানগণ একথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা কদর অবতীর্ণ হয়। এতে এ উম্মতের জন্যে শুধু এক রাত্রির ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ইবনে জরীর অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী-ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি ইবাদতের মশগুল থাকত ও সকাল হতেই জিহাদের জন্যে বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ্ তাআলা সূরা-কদর নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এ থেকে আরও প্রতীয়মান হয় যে, শবে-কদর উম্মতে মুহাম্মদীরই বৈশিষ্ট্য।[5]
আয়াত [টী 1] | উচ্চারণ | অর্থ[6] |
---|---|---|
○إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْرِ | ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর। | নিঃসন্দেহ আমি এটি অবতারণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। |
○وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ | ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর। | শবে-কদর (মহিমান্বিত রাত) সমন্ধে আপনি কি জানেন? |
○لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ | লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। | শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। |
○تَنَزَّلُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ | তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর। | এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। |
○سَلَٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِ | ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা‘ইল ফাজর। | এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। |
(১) এখানে বলা হয়েছে, আমি কদরের রাতে কোরআন নাযিল করেছি আবার সূরা বাকারায় বলা হয়েছে,
“ | রমযান মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে। ---- (১৮৫ আয়াত) | ” |
এ থেকে জানা যায়, রসূলুল্লাহ্ কাছে হেরা গূহায় যে রাতে আল্লাহর ফেরেশতা অহী নিয়ে এসেছিলেন সেটি রমযান মাসের একটি রাত। এই রাতকে এখানে কদরের রাত বলা হয়েছে। সূরা আদ-দোখানে একে মুবারক রাত বলা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ
“ | অবশ্যই আমি একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি। ---- (৩ আয়াত) | ” |
এই রাতে কোরআন নাযিল করার দুটি অর্থ হতে পারে। প্রথম অর্থ হচ্ছে, এই রাতে সমগ্র কোরআন ওহীর ধারক ফেরেশতাদেরকে দিয়ে দেয়া হয়। অতপর অবস্থা ও ঘটনাবলী অনুযায়ী তেইশ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে জিবরাঈল আল্লাহর হুকুমে তার আয়াত ও সূরাগুলি রসূলুল্লাহ্ -এর ওপর নাযিল করতে থাকেন। ইবনে আব্বাস এ অর্থটি বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এই রাত থেকেই কোরআন নাযিলের সূচনা হয়। এটি ইমাম শা'বীর উক্তি। এটি একটি অভ্রান্ত সত্য, রসূলুল্লাহ্ -এর এবং তঁর ইসলামী দাওয়াতের জন্য কোনো ঘটনা বা ব্যাপারে সঠিক নির্দেশ লাভের প্রয়োজন দেখা দিলে তখনই আল্লাহ কোরআনের সূরা ও আয়াতগুলি রচনা করতেন না। বরং সমগ্র বিশ্ব জাহানের সৃষ্টির পূর্বে অনাদিকালে মহান আল্লাহ পৃথিবতে মানব জাতির সৃষ্টি, তাদের মধ্যে নবী প্রেরণ, নবীদের ওপর কিতাব নাযিল, সব নবীর পরে রসূলুল্লাহ্ -কে পাঠানো এবং তার প্রতি কোরআন নাযিল করার সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছিলেন। কদরের রাতে কেবলমাত্র এই পরিকল্পনার শেষ অংশের বাস্তবায়ন শুরু হয়।
কোনো কোনো তাফসীরকার কদরকে তকদীর অর্থে গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ এই রাতে আল্লাহ তকদীরের ফায়সালা জারী করার জন্য তা ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেন। সূরা দুখানের এ আয়াতটি এই বক্তব্য সমর্থন করেঃ
“ | এই রাতে সব ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ ফয়সালা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। --- (৪ আয়াত) | ” |
অন্যদিকে ইমাম যুহরী বলেন, কদর অর্থ হচ্ছে শ্রেষ্টত্ব ও মর্যাদা। অর্থাৎ এটি অত্যন্ত মর্যাদাশালী রাত। এই অর্থ সমর্থন করে এই সূরার এ আয়াতটি
“ | কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। | ” |
এ ব্যাপারে ব্যাপক মতবিরোধ দেখা যায়। এ সম্পর্কে প্রায় ৪০টি মতের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে আলেম সমাজের সংখ্যাগুরু অংশের মতে রমযানের শেষ দশ তারিখের কোনো একটি বেজোড় রাত হচ্ছে এই কদরের রাত। আবার তাদের মধ্যেও বেশীরভাগ লোকের মত হচ্ছে সেটি সাতাশ তারিখের রাত। হযরত আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ্ লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেনঃ সেটি সাতাশের বা উনত্রিশের রাত (আবু দাউদ)। হযরত আয়েশা বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ্ বলেনঃ কদরের রাতকে রমযানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতগুলির মধ্যে তালাশ করো।[7]
(২) মুফাস্সিরগণ সাধারণভাবে এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎ কাজ হাজার মাসের সৎ কাজের চেয়ে ভালো। রসূলুল্লাহ্ এই রাতের আমলের বিপুল ফযীলত বর্ণনা করেছেন। কাজেই বুখারী ও মুসলীমে হযরত আবু হুরাইরা বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ্ বলেছেনঃ
“ | যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্যে দাঁড়ালো তার পিছনের সমস্ত গুণাহ মাফ করা হয়েছে। | ” |
মুসনাদে আহমদে হযরত উবাদাহ ইবনে সামেত বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ্ বলেছেনঃ
“ | কদরের রাত রয়েছে রমযানের শেষ দশ রাতের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রতিদান লাভের আকাংহ্মা নিয়ে এই সব রাতে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে আল্লাহ তার আগের পিছের সব গুণাহ মাফ করে দেবেন। | ” |
এই একটি রাতে এত বড় নেকী ও কল্যাণের কাজ হয়েছে যা মানবতার সূদীর্ঘ ইতিহাসে কোনো দীর্ঘতম কালেও হয়নি।
(৩) রুহ বলতে জিবরাঈল -কে বুঝানো হয়েছে। তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তার উল্লেখ করা হয়েছে।
(৪) অর্থাৎ তারা নিজেদের তরফ থেকে আসে না। বরং তাদের রবের অনুমতিক্রমে আসে। আর প্রত্যেকটি হুকুম বলতে সূরা দুখানের ৫ আয়াত "আমরে হাকীম" (বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ) বলতে যা বুঝানো হয়েছে এখানে তার কথাই বলা হয়েছে।
(৫) অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু কল্যাণে পরিপূর্ণ। সেখানে ফিতনা, দুস্কৃতি ও অনিষ্টকারিতার ছিঁটেফোটাও নেই।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.