সুমেরীয় ধর্ম
From Wikipedia, the free encyclopedia
সুমেরীয় ধর্ম ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার প্রথম সাক্ষর সভ্যতা সুমেরের অধিবাসীগণ কর্তৃক আচরিত ও অনুসৃত ধর্ম। সুমেরীয়রা মনে করত, প্রাকৃতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত সকল বিষয়ের জন্য দায়ী তাদের দেবদেবীরা।[3]:৩–৪
সুমেরের রাজপদের সূচনার আগে নগর-রাষ্ট্রগুলি কার্যকরভাবে শাসিত হত পুরোহিত ও ধর্মীয় আধিকারিকদের দ্বারা। পরবর্তীকালে এই শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে রাজশাসনের প্রবর্তন ঘটলেও পুরোহিতরা সুমেরীয় সমাজে এক বিরাট প্রভাবশালী গোষ্ঠী হিসেবেই থেকে যান। প্রথম দিকে সুমেরীয় মন্দিরগুলি ছিল সাদাসিধে এক-কক্ষবিশিষ্ট ভবন, যা কোনও কোনও ক্ষেত্রে উচ্চ বেদির উপর নির্মিত হত। সুমেরীয় সভ্যতার শেষ দিকে এই মন্দিরগুলি বিকাশ লাভ করে জিগুরাটে, যা ছিল উপরিতলে পুণ্যস্থান-সহ এক-একটি দীর্ঘাকৃতি, পিরামিডসদৃশ ভবন।
সুমেরীয়রা বিশ্বাস করত যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক মহাজাগতিক জন্মের মধ্যে দিয়ে। প্রথমে আদ্যকালীন জলরাশি নাম্মু জন্ম দিয়েছিলেন আন (আকাশ) ও কি-র (পৃথিবী)। তাঁদের সংগমের ফলে এনলিল নামে এক পুত্রের জন্ম হয়। এনলিল স্বর্গকে পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেন এবং পৃথিবীকে নিজ রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। মনে করা হয়, আন ও নাম্মুর পুত্র এনকি হলেন মানবজাতির স্রষ্টা। সুমেরীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী, স্বর্গ ছিল শুধুমাত্র দেবদেবীদের জন্যই সংরক্ষিত এবং জীবৎকালে আচরণ যাই হোক না কেন, মৃত্যুর পর সকল নশ্বর ব্যক্তির আত্মাই মৃত্যুর পর মাটির অনেক নিচে অবস্থিত এক শীতল ও অন্ধকার গুহায় গমন করত। এই প্রেতলোকের নাম ছিল কুর এবং এই লোক শাসন করতেন দেবী এরেশকিগাল। কুরে একমাত্র শুকনো ধুলো ছাড়া আর কোনও খাদ্য পাওয়া যেত না। পরবর্তীকালে সুমেরীয়দের ধারণা হয় যে, এরেশকিগাল তাঁর স্বামী নেরগালের সঙ্গে একযোগে প্রেতলোক শাসন করেন।
সুমেরীয় দেবমণ্ডলীর প্রধান দেবদেবীদের অন্যতম ছিলেন স্বর্গের দেবতা আন, বায়ু ও ঝড়ের দেবতা এনলিল, জল ও মানব সংস্কৃতির দেবতা এনকি, উর্বরতা ও পৃথিবীর দেবী নিনহুরসাগ, সূর্য ও ন্যায়বিচারের দেবতা উতু এবং উতুর বাবা তথা চন্দ্রদেবতা নান্না। আক্কাদীয় যুগ ও তার সমগ্র সুমের অঞ্চল জুড়ে যৌনতা, সৌন্দর্য ও যুদ্ধের দেবী ইনান্নার পূজার ব্যাপক প্রচলন ঘটে এবং অনেক পৌরাণিক উপাখ্যানে তাঁর উপস্থিতি লক্ষিত হতে থাকে। উল্লেখ্য, ইনান্নার একটি বিখ্যাত কাহিনি ছিল তাঁর প্রেতলোকে অবতরণের কাহিনি।
সুমেরীয় ধর্ম গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল পরবর্তীকালের মেসোপটেমীয় জাতিগোষ্ঠীগুলির ধর্মবিশ্বাসসমূহকে। এই ধর্মের বিভিন্ন উপাদান হুরীয়, আক্কাদীয়, ব্যাবিলনীয়, আসিরীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পুরাণ ও ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে অব্যাহত থাকে। তুলনামূলক পুরাণবিদ্যার গবেষকেরা প্রাচীন সুমেরীয়দের উপাখ্যানগুলির সঙ্গে পরবর্তীকালে নথিবদ্ধ হিব্রু বাইবেলের প্রথম অংশের কাহিনিগুলির অনেক সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছেন।