কাল্পনিক নাবিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সিন্দাবাদ (আরবি: السندباد البحري, প্রতিবর্ণীকৃত:আস-সিন্দিবাদু আল-বাহরিয়ি, অনুবাদ'নাবিক সিন্দাবাদ') হলো মধ্যপ্রাচ্যের উপকথার এক কাল্পনিক নাবিক। কাল্পনিক এই চরিত্রটি নাবিক সিন্দাবাদ, সিন্দবাদ বা সিনবাদ ইত্যাদি নামেও পরিচিত। উপকথায় সিন্দাবাদকে আব্বাসীয় খেলাফতের সময়ে (খ্রিষ্টীয় ৮ম ও ৯ম শতক) বাগদাদের বাসিন্দা বলে বর্ণনা করা হয়। সাতবার আফ্রিকার পূর্বে এবং এশিয়ার দক্ষিণের সমুদ্রে রোমাঞ্চকর অভিযানের সময় সিন্দাবাদ বিভিন্ন জাদুকরী দুনিয়ার মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করে, অতিপ্রাকৃত নানা ঘটনার মুখোমুখি হয় এবং বহু দানবকে পরাজিত করে।
সিন্দাবাদের কাহিনি এক হাজার এক রজনী উপাখ্যানের পরবর্তী সংযোজন বলে ধারণা করা হয়। আরব্য রজনীর ১৪শ শতাব্দীর পাণ্ডুলিপিতে সিন্দাবাদের উল্লেখ পাওয়া যায় না; বরং ১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে একে স্বতন্ত্র এক উপাখ্যান হিসেবে শনাক্ত করা যায়। উপাখ্যানটিতে আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কার আরব বিশ্বের সামাজিক পরিস্থিতি এবং আরবীয় বণিকদের সমুদ্রযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি সেই সময়কার লোকসাংস্কৃতিক উপাদানও উপাখ্যানে পাওয়া যায়। আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কাল আরবদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের স্বর্ণযুগ হিসেবে গণ্য। আরব ও মুসলিমরা সেই সময় নতুন নতুন পথ, বন্দর ও দেশে তাদের বাণিজ্যের বিস্তার করতে থাকে। সিন্দাবাদের কাহিনিগুলোতে অর্থনৈতিক এই প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন দেখা যায়। সিন্দাবাদের উপাখ্যানে বিভিন্ন থিম বা প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে। ১৩শ শতাব্দীতে আব্বাসীয় খিলাফতের সময়ে ভারত মহাসাগরে আরব বণিকদের বিচরণের ফলে আজাবুল মাখলুকাত প্রভৃতি রচনার প্রভাব এতে দেখা যায়।[1]
সিন্দাবাদের কাহিনি আব্বাসীয় খলিফাহারুনুর রশিদের (৭৮৬–৮০৯) শাসনামলের প্রেক্ষাপটে রচিত। আরব্য রজনীর প্রথন ইউরোপীয় সংস্করণ গার্ল্যান্ডের লে মিল এ উ্যন ন্যুই, কোঁত জারাব ত্রাদ্যুই অঁ ফ্রঁসে-এ (পরবর্তীতে ১৭১১ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজিতে রূপান্তরিত দ্য অ্যারাবিয়ান উইন্টার নাইটস এন্টারটেইনমেন্টস) সিন্দাবাদের গল্পও অন্তর্ভুক্ত হয়।[2] এরপর ১৮শ শতাব্দীব্যাপী বিভিন্ন সংস্করণে আরব্য রজনীর অংশ হিসেবে এটি প্রচলিত হয়ে যায়।
ইংরেজি ভাষায় সিন্দাবাদের সবচেয়ে পুরনো পৃথক সংস্করণ পাওয়া যায় ব্রিটিশ গ্রন্থাগারে ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লেখা দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ হুরান বানো, এট সেটেরা. টেকেন ফ্রম দি অ্যারাবিয়ান নাইটস, বিয়িং দ্য থার্ড অ্যান্ড ফোর্থ ভোয়েজেস অব সিনবাদ দ্য সেইলর. নামক বইয়ে।[3] ১৭৯৪ সালে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রকাশিত দ্য সেভেন ভয়েজেস অব সিনবাদ দ্য সেইলর। অ্যান্ড দ্য স্টোরি অব আলাদিন; অর, দ্য ওয়ান্ডারফুল ল্যাম্প বইটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো বই হিসেবে ধরা হয়।[4] এরপর টমাস টেগের প্রকাশনায় চ্যাপবুক সংস্করণসহ ১৯শ শতাব্দীর শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সিন্দাবাদের কাহিনি নিয়ে বই প্রকাশিত হয়। তবে, ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত রিচার্ড বার্টনেরদ্য বুক অব দ্য থাউজ্যান্ড নাইটস অ্যান্ড অ্যা নাইট বইয়ের ষষ্ঠ বালামের ১২০ নং গল্পকে ইংরেজি ভাষায় এর শ্রেষ্ঠ অনুবাদ হিসেবে ধরা হয়।[5][6][7]
কুলি সিন্দাবাদ ও নাবিক সিন্দাবাদ
আরব্য রজনীর গল্পগুলোর মতোই সিন্দাবাদের গল্পও একটি কাঠামোবদ্ধ গল্প, যার শুরু হয় এভাবে: বাগদাদেরখলিফাহারুনুর রশিদের আমলে এক গরিব কুলি এক ধনী বণিকের বাড়ির সামনে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। সেখানে বসে খোদার কাছে দুনিয়ায় ধনী-গরিবের মাঝে অসমতার জন্য নালিশ জানায়। ধনীরা সারাদিন আরামে-আয়াশে থাকে, কিন্তু তার মতো গরিবদের সারাদিন খাটতে হয় কিন্তু দিনশেষে গরিবই থেকে যায়। বাড়ির মালিক কুলির কথাগুলো শুনতে পায় এবং কুলিকে ডেকে আনে। কাকতালীয়ভাবে তারা জানতে পারে, তাদের দুইজনের নামই সিন্দাবাদ। ধনী সিন্দাবাদ এরপর গরিব সিন্দাবাদকে তার সাতটি রোমাঞ্চকর অভিযানের কথা বলে, যার মাধ্যমে সে অনেক সম্পদ অর্জন করে।
সিন্দাবাদের প্রথম অভিযান
সমস্ত পৈতৃক সম্পত্তি হারানোর পর সিন্দাবাদ ভাগ্যান্বেষণের জন্য সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে পড়ে। মাঝসমুদ্রের একটি দ্বীপে সে নোঙর করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, দ্বীপটি আসলে একটি ঘুমন্ত তিমি, যার দেহে গাছ গজিয়েছে। নাবিকদের জ্বালানো আগুনের জন্য ঘুম ভেঙে গেলে তিমিটি গভীর সমুদ্রে ডুব দেয় এবং নাবিকেরা সিন্দাবাদকে ফেলেই জাহাজ ছেড়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে সিন্দাবাদ এক কাঠের খণ্ডে ভেসে প্রাণ বাঁচায়। সমুদ্রে ভেসে ভেসে সিন্দাবাদ এক ঘন জঙ্গলাকীর্ণ দ্বীপে এসে পৌঁছায়। মানবশূন্য দ্বীপে ঘুরতে ঘুরতে সে এক রাজার সহিসের দেখা পায়। সিন্দাবাদ রাজার ঘোড়াকে এক সামুদ্রিক দানব ঘোড়ার (কাল্পনিক প্রাণী, সিন্ধুঘোটক নয়) থেকে বাঁচায়। সহিস সিন্দাবাদকে রাজার কাছে নিয়ে যায়। সিন্দাবাদ ক্রমে রাজার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সভাসদে পরিণত হয়। একদিন সিন্দাবাদের পণ্যবোঝাই সেই জাহাজটি দ্বীপে ভেড়ে। সিন্দাবাদ তার সমস্ত বাণিজ্য পণ্য রাজাকে প্রদান করে এবং রাজাও বিনিময়ে সিন্দাবাদকে অঢেল পুরস্কার প্রদান করে। সিন্দাবাদ সেসব পুরস্কারের কিছু বিক্রি করে অনেক অর্থ উপার্জন করে। সিন্দাবাদ বাগদাদে ফিরে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতে থাকে। এই গল্পের শেষে নাবিক সিন্দাবাদ কুলি সিন্দাবাদকে একশ সোনার টুকরা উপহার দেয় এবং তার আরও অভিযানের গল্প শোনার জন্য পরের দিন আবার আসতে আমন্ত্রণ জানায়।
সিন্দাবাদের দ্বিতীয় অভিযান
সিন্দাবাদের কাহিনির দ্বিতীয় দিন (কিন্তু শেহরেজাদের গল্পের ৫৪৯তম দিন) সিন্দাবাদ বলে যে সে আরাম-আয়েশের জীবনে আগ্রহ হারিয়ে মানুষের শহর এবং দ্বীপসমূহ দর্শন করতে আবার সমুদ্রে যাত্রা করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তার জাহাজের সহযাত্রীরা রকপাখির ডিমে পূর্ণ এক দ্বীপে তাকে আবার ফেলে যায়। সিন্দাবাদ তার পাগড়ির সাহায্যে একটি রকপাখির দেহে আটকে বিশাল সাপের দ্বীপে পৌঁছে যায়। সেই বিশাল সাপেরা এমনকি আস্ত হাতিও খেয়ে নিতে পারতো। রকপাখিরা আবার এই সাপেদের শিকার করতো। এই উপত্যকার মাটি হীরায় পরিপূর্ণ ছিল। বণিকেরা বিশাল বিশাল মাংসের খণ্ড উপত্যকায় ছুঁড়ে দিয়ে হীরা সংগ্রহ করে: প্রথমে তারা মাংস ছুঁড়ে দেয়, রকপাখিরা সেগুলো বাসায় নিয়ে যায় এবং বণিকেরা পাখিদের তাড়িয়ে মাংসে আটকে থাকা হীরা সংগ্রহ করে। বুদ্ধিমান সিন্দাবাদ নিজের পিঠের ওপর মাংস বেঁধে নেয়; রকপাখিরা তাকে তাদের বাসায় নিয়ে যায় এবং সে ইচ্ছামতো হীরা পকেটে পুরে নেয়। বণিকেরা তাকে উদ্ধারের পর সে বাগদাদে ফিরে আসে এবং হীরাগুলো বিক্রির মাধ্যমে আবার সুখে দিন কাটায়।
সিন্দাবাদের তৃতীয় অভিযান
সিন্দাবাদ বসরা নগরী থেকে আবার অভিযান শুরু করে। দুর্ভাগ্যক্রমে সহযাত্রীদের নিয়ে সিন্দাবাদ এক দ্বীপে আটকা পড়ে এবং এক বিশাল দৈত্যের হাতে বন্দি হয়। দৈত্যটি বিশাল মানুষের মতো, গায়ের রং কালো, চোখ কয়লার আগুনের মতো লাল, শূকরের দাঁতের মতো বিশাল দাঁত এবং বিশাল কুয়ার মতো মুখের হা। তার ওপর ঠোঁটগুলো উটের ঠোঁটের মতো বুকের ওপর ঝুলানো, প্রকাণ্ড ঝাড়বাতির মতো কান কাঁধের ওপর পড়ে আছে আর নখগুলো সিংহের নখরের মতো। দৈত্যটি জাহাজের যাত্রীদের খাওয়া শুরু করে। তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন সবচেয়ে মোটা হওয়ায় তাকে দিয়েই খাওয়া শুরু করে। (বার্টন এখানে মন্তব্য করেন যে দৈত্যটি “নিঃসন্দেহে পলিফেমাস ছিল”।)
সিন্দাবাদ দৈত্যের ভেড়া পোড়ানোর শিক দিয়ে তাকে অন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। দৈত্যের হাত থেকে বেঁচে থাকা সহযাত্রীরা আগের দিন বানানো ভেলায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু দৈত্যের সঙ্গীটি তাদের পাথর ছুঁড়ে মারে আর তাদের অধিকাংশই মারা যায়। এরপর আরও অনেক অভিযানের পর (বিশেষ করে এক বিশাল সাপের থেকে উপস্থিত বুদ্ধির জোরে বেঁচে ফিরে) সিন্দাবাদ আগের চেয়েও অনেক ধনী হয়ে বাগদাদে ফিরে আসে।
সিন্দাবাদের চতুর্থ অভিযান
বাইরে ঘুরে বেড়ানোর তাড়নায় সিন্দাবাদ আবার সমুদ্রে বেড়িয়ে পড়ে এবং আবারও জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হয়। এক নরখাদক জঙ্গলি জাতি তাদের সমুদ্র থেকে তুলে আনে এবং নেশাজাতীয় কিছু পাতা খাওয়ায় (বার্টনের মতে এট সম্ভবত ভাং)। সিন্দাবাদ বুঝতে পারে কী হতে যাচ্ছে; তাই পাতা খেতে অস্বীকৃতি জানায়। নরখাদকেরা যখন তার ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তখন সিন্দাবাদ পালিয়ে যায়। এক ভ্রাম্যমাণ মরিচ সংগ্রাহকের দল সিন্দাবাদকে উদ্ধার করে নিজেদের দেশে নিজে যায়। সেখানকার রাজা সিন্দাবাদের সাথে বন্ধুত্ব করে এবং সিন্দাবাদকে এক সুন্দরী ও ধনবতী নারীর সাথে বিবাহ দেয়।
অনেক দিন পর সিন্দাবাদ সেই দেশের এক অদ্ভুত রীতির কথা জানতে পারে: সেখানকার কারও স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে, অন্যজনকেও সুন্দর ও দামী কাপড় ও গয়না পরিয়ে মৃত স্বামী বা স্ত্রীর সাথে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। সিন্দাবাদের স্ত্রী এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। লোকেরা সিন্দাবাদকে এক জগ পানি আর সাত টুকরা রুটি দিয়ে এক গর্তে ফেলে দেয়। এই সামান্য খাদ্য যখন প্রায় শেষের পথে তখন আরেক দম্পতিকে (স্বামী মৃত, স্ত্রী জীবিত) সেখানে ফেলা হয়। সিন্দাবাদ স্ত্রীটিকে মুগুর দিয়ে হত্যা করে তার খাবার নিয়ে নেয়।
এভাবে চলতে থাকে এবং সিন্দাবাদের কাছে যথেষ্ট খাবার ও পানি জমা হয়। মৃতদেহের থেকে যথেষ্ট ধন-রত্নও লাভ করে; কিন্তু সেই গর্ত থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পায় না। এমনি এক সময় এক বন্য জন্তু সমুদ্র থেকে অনেক উঁচুতে বের হওয়ার পথ দেখায়। সেখান থেকে এক জাহাজ তাকে উদ্ধার করে এবং বাগদাদে ফিরিয়ে আনে। বাগদাদে ফিরে সিন্দাবাদ দান-খয়রাত করে এবং আরাম-আয়েশে দিনযাপন করতে থাকে। (এই গল্পের নিচে বারটন মন্তব্য করেন: “এই গল্পটি দৃশ্যতই মেসীয়অ্যারিস্টোমেনিসের গর্ত থেকে উদ্ধার পাওয়ার কিংবদন্তি থেকে গৃহীত, যেখানে একটি শেয়াল অ্যারিস্টোমেনিসকে পথ দেখিয়েছিল। তৎকালের আরবেরাগ্রিক সাহিত্যের উৎসুক পাঠক ছিলেন।”) অনুরূপভাবে, সিন্দাবাদের চতুর্থ অভিযানের প্রথম অংশটি দ্য ওডিসি-র সার্সি সর্গের সাথে প্রায় সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে, সিন্দাবাদের কাহিনিতে নরখাদকদের দেওয়া গাছের পাতা নাবিকদের মাতাল করে; অন্যদিকে ওডিসিতে সার্সির জাদু অডিসিউসের লোকদের সম্মোহিত করে। এটি একটি আদি সর্গ, যেখানে ‘পদ্মফুল ভক্ষক’দের উল্লেখ পাওয়া যায়। অডিসিউসের লোকদের অনুরূপ কিছু খাওয়ানোয় তারা তাদের জ্ঞান হারায়।
সিন্দাবাদের পঞ্চম অভিযান
“চতুর্থ অভিযানের পর যখন দেশে ফিরলাম আর উপার্জিত ধনরাজি থেকে আরাম-আয়েশে দিন কাটাতে লাগলাম, তখন বিগত অভিযানের সব দুর্দশার কথা আমার মন থেকে চলে গেল আর আমিও সমুদ্রে বেরিয়ে পড়ার জন্য ছটফট করতে লাগলাম।” আবার সমুদ্রে ভেসে পড়ার পর সিন্দাবাদের জাহাজের সহযাত্রীরা এক দ্বীপে বিশাল বিশাল ডিম দেখতে পায়। সিন্দাবাদ বুঝতে পারে, এগুলো রকপাখির ডিম। নিতান্ত কৌতূহল থেকে তারা সেই দ্বীপে নোঙর করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ডিমগুলো ভেঙে খাওয়ার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হয়। সিন্দাবাদ তৎক্ষণাৎ তাদের মূর্খামির পরিচয় পায় আর সবাইকে জাহাজে ফিরে যেতে আদেশ দেয়। কিন্তু রকপাখির শাবকের বাবা-মা তাদের বাসায় ফিরে এসে ক্ষিপ্ত হয় এবং পায়ে করে বিশাল পাথর নিয়ে এসে সিন্দাবাদদের জাহাজে নিক্ষেপ করে।[8]
সিন্দাবাদ আবার জাহাজডুবির কবলে পড়ে। সমুদ্রবুড়ো সিন্দাবাদকে উদ্ধার করে তাকে তার দাসে পরিণত করে। সমুদ্রবুড়ো দিনরাত তার ঘাড়ে চেপে ঘোরে; আর পা দুটো সিন্দাবাদের ঘাড়ের চারপাশে জড়িয়ে রাখে, যাতে সে পালাতে না পারে। (বার্টন এই কাহিনির উৎস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওরাং-ওটাং, গ্রিক পৌরাণিক দেবতা ট্রাইটন কিংবা দাসের ঘাড়ে চেপে ঘুরে বেড়ানোর আফ্রিকান প্রথার উল্লেখ করেন।[9])
এক সময়, সিন্দাবাদ মদ তৈরি করে এবং কৌশলে বুড়োকে কিছুটা পান করায়। বুড়ো লোকটি মাতাল হয়ে পড়ে গেলে সিন্দাবাদ তাকে হত্যা করে এবং পালিয়ে আসে। একটি জাহাজ তাকে উদ্ধার করে উল্লুকদের দেশে নিয়ে আসে। সেখানকার লোকেরা দিনের বেলায় শহরে থাকে আর রাতের বেলায় মানুষখেকো উল্লুকদের ভয়ে জাহাজে বাস করে। তাসত্ত্বেও সেই শহরে থেকে সিন্দাবাদ তার ভাগ্য ঠিক কর নেয় এবং এক সময় অন্য এক জাহাজে করে অনেক ধন-সম্পদ নিয়ে আবার বাগদাদে ফিরে আসে।
সিন্দাবাদের ষষ্ঠ অভিযান
“আমার মন সমুদ্র আর বাণিজ্যের জন্য আকুল হয়ে উঠল।” সমুদ্রে আবার সিন্দাবাদের জাহাজডুবি হলো। এবার বিশাল বিশাল ডুবোপাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়ে জাহাজ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। তীব্র খাবারের অভাবে সিন্দাবাদের সব সহযাত্রী মারা গেলো। সিন্দাবাদ পাহাড়ের নিচে একটি গুহা আবিষ্কার করল, যার মধ্যে একটি নদী বয়ে চলছিল। সে একটি ভেলা তৈরি করল আর গুহায় ঢুকে পড়ল। ক্রমেই সে বুঝতে পারল: নদীর পানি মূল্যবান পাথরে পরিপূর্ণ এবং পানির সাথে অতিমূল্যবান আম্বর ভেসে যায়। অন্ধকারে ভাসতে ভাসতে সিন্দাবাদ একসময় ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঘুম ভেঙে নিজেকে সেরেনদ্বীপের (শ্রীলঙ্কা/সিলন) রাজধানী শহরে আবিষ্কার করে। “সেখানকার নদী হীরায় পূর্ণ আর মাটি মুক্তায় ঝলমল।” সেরেনদ্বীপের রাজা সিন্দাবাদের কাছ থেকে মহান খলিফা হারুনুর রশিদের ব্যাপারে জেনে অভিভূত হয়। রাজার পক্ষ থেকে বাগদাদে খলিফার নিকট পাঠানোর জন্য পদ্মরাগমনিকাটা বাটি, হস্তিভুক সাপের[lower-alpha 1] চামড়া দিয়ে বানানো বিছানা (“যেখানে যে শয়ন করে, সে কখনো অসুস্থ হয় না”), “এক সহস্র মিস্কাল সিন্ধুস্তানি আগর” এবং চাঁদের মতো চেহারার এক দাসী উপহার হিসেবে দেন। সেসব নিয়ে সিন্দাবাদ বাগদাদে ফিরে আসে এবং তার কাছ থেকে সিলন দ্বীপের বর্ণনা শুনে খলিফা অভিভূত হয়ে তাকে অনেক পুরস্কার প্রদান করেন।
সিন্দাবাদের সপ্তম ও শেষ অভিযান
সদা-চঞ্চল সিন্দাবাদ আবার সমুদ্রে ভেসে পড়ে এবং যথারীতি আবার জাহাজডুবি ঘটে। সমুদ্রে ভেসে সিন্দাবাদ এক মানবশূন্য বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ে। বেলাভূমিতে ঘুরতে ঘুরতে সে একটি নদী আবিষ্কার করে এবং একটি ভেলা বানিয়ে তাতে চড়ে এক শহরে উপনীত হয়। শহরের প্রধান বণিক সিন্দাবাদকে তার মেয়ের সাথে বিবাহ দেন এবং সিন্দাবাদকে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার ঘোষণা করে মৃত্যুবরণ করেন। সেই শহরের বাসিন্দারা মাসে একবার পাখির বেশ ধারণ করে। সেই পাখি-মানবদের একজন সিন্দাবাদকে নিয়ে আসমানের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়; সেখানে গিয়ে সিন্দাবাদ আল্লাহ্র প্রশংসারত ফেরেশতাদের দেখতে পায়। যেই-না পাখি-মানবেরা তাদের নিকটবর্তী হয়, তখনই আকাশ থেকে অগ্নিবর্ষণ হতে থাকে। পাখি-মানবেরা সিন্দাবাদের ওপর রুষ্ট হয় এবং তাকে এক পাহাড়ের চূড়ায় ছেড়ে আসে। সেখানে তার সাথে আল্লাহ্র বান্দা দুই যুবকের সাথে দেখা হয়, যারা তাকে অঢেল স্বর্ণ প্রদান করে। শহরে ফিরে সিন্দাবাদকে তার স্ত্রীর জানায় যে এই পাখি-মানবেরা আসলে শয়তান; এই শহরে কেবল সে আর তার বাবাই ছিল মানুষ। তাই স্ত্রীর পরামর্শে সিন্দাবাদ শহরে তাদের সব সম্পত্তি বিক্রি করে বাগদাদে ফিরে আসে এবং সমুদ্র অভিযানের ইতি টেনে স্ত্রীর সাথে চিরস্থায়ীভাবে বাস করতে থাকে।
বার্টন সপ্তম গল্পের কিছু রকমফেরের উল্লেখ করেন। এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, খলিফা হারুনুর রশিদ সেরেনদ্বীপের রাজার কাছে পালটা উপহার নিয়ে যেতে সিন্দাবাদকে অনুরোধ জানায়। সিন্দাবাদ প্রত্যুত্তরে বলে, “সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র কসম! অভিযানের নামে আমার ঘৃণা জন্মে গেছে। যখনই ‘অভিযান’, ‘যাত্রা’ এই শব্দগুলো শুনি, তখনই আমার হাত-পা কাঁপতে থাকে।” এরপর সে খলিফাকে তার সমুদ্র অভিযানে দুর্ভাগ্যের কথা জানায়। হারুনুর রশিদ তার কথা শুনে সমব্যথী হন এবং জানান “যার এমন দুর্ভাগ্য, তার কাছে আর যাত্রার কথা বলা উচিত নয়।” তবুও, খলিফার অনুরোধ রেখে সিন্দাবাদ এবার এক ভিন্ন উদ্দেশ্যে (কূটনৈতিক প্রয়োজনে) সমুদ্রে যাত্রা করে। সেরেনদ্বীপের রাজা খলিফার অসাধারণ উপহার (যার মধ্যে বাদশাহ সুলাইমানের খাবারপাত্রও ছিল) পেয়ে অনেক খুশি হন এবং সিন্দাবাদকে অঢেল উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। ফিরতি পথে সিন্দাবাদ আবারও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং এবার একদল লোক তাকে বন্দি করে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। সিন্দাবাদের প্রভু তাকে তীর-ধনুক দিয়ে হাতি শিকারে পাঠায়। সেখান থেকে হাতিদের রাজা তাকে হাতিদের কবরস্থানে তুলে নিয়ে যায়৷ সিন্দাবাদ সেখান থেকে অনেক হাতির দাঁত নিয়ে এলে, তার প্রভু খুশি হলে সিন্দাবাদকে মুক্ত করে দেয়। সিন্দাবাদ অনেক হাতির দাঁত, সোনা আর ধনরত্ন নিয়ে বাগদাদে ফিরে আসে। এরপর সে খলিফার কাছে যায় এবং তার অভিয়ানের কথা সবিস্তারে বলে এবং এবারও রক্ষা করার জন্য আল্লাহ্কে ধন্যবাদ জানায়। এরপর খলিফা সিন্দাবাদের কাহিনিকে সোনার অক্ষরে লিখে রাখার আদেশ দেন। এরপর সে বাড়ি ফিরে আসে এবং আত্মীয়-পরিজন নিয়ে সুখে ঘর করতে থাকে।
কিছু কিছু বর্ণনায় গল্প আবার মূল সময়ে ফিরে যায়, যেখানে কুলি সিন্দাবাদ নাবিক সিন্দাবাদের কাছ থেকে সর্বশেষ উপহার গ্রহণ করে। আবার কিছু কিছু বর্ণনায় গল্পের শেষে কুলি সিন্দাবাদের উল্লেখ পাওয়া যায় না।
পশ্চিমা বিশ্বে সিন্দাবাদের জনপ্রিয়তার কারণে বিভিন্ন খ্যাত-অখ্যাত স্থানে তার নাম ব্যবহৃত হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই সিন্দাবাদের মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন আবহ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। অদ্যাবধি সিন্দাবাদকে নিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ধারাবাহিক, অ্যানিমেটেড কার্টুন, উপন্যাস ও ভিডিও গেম তৈরি করা হয়েছে, যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিন্দাবাদকে কোনো বণিক হিসেবে নয়, বরং সমুদ্রে দুঃসাহসী অভিযান করে বেড়ানো এক সুদর্শন নাবিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মঞ্চনাটক
ইংরেজি ভাষায় অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র
সিনবাদ দ্য সেইলর (১৯৩৫) হলো উব আইওয়ার্কসের প্রযোজনা ও পরিচালনায় নির্মিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।
পপাই দ্য সেইলর মিটস সিন্দাবাদ দ্য সেইলর (১৯৩৬) হলো পপাই কালার ফিচার ধারাবাহিকের দুই রিলের একটি অ্যানিমেটেডস্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। টেকনিকালারে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ১৯৩৬ সালের ২৭ নভেম্বর প্যারামাউন্ট পিকচার্স কর্তৃক মুক্তি লাভ করে।[10]ফ্লাইশার স্টুডিওজেরম্যাক্স ফ্লাইশার এটি প্রযোজনা করেনেবং ডেভ ফ্লাইশার এটি পরিচালনা করেন।
সিনবাদ (১৯৯২) হলো গোল্ডেন ফিল্মস কর্তৃক প্রযোজিত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র, যা ১৯৯২ সালের ১৮ মে মুক্তি পায়। এটি মূল আরব্য রজনী ও সিন্দাবাদের কাহিনিকে উপজীব্য করে নির্মিত।
সিনবাদ: বেয়ন্ড দ্য ভেইল অব মিস্টস (২০০০) হলো বিশেষত মোশন ক্যাপচার ব্যবহার করে নির্মিত প্রথম ফিচার-দৈর্ঘ্যের কম্পিউটার অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।[11] এই প্রকল্পে অনেক অ্যানিমেটর কাজ করলেও, মানবচরিত্রগুলো মূলত মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত।
সিনবাদ: লিজেন্ড অব দ্য সেভেন সিজ (২০০৩) হলো অ্যাডভেঞ্চারধর্মী মার্কিন অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র। ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন এটির প্রযোজনা করে এবং ড্রিমওয়ার্কস পিকচার্স এটির বিতরণ করে। এই চলচ্চিত্রটির নির্মাণে কম্পিউটার অ্যানিমেশনের পাশাপাশি প্রথাগত অ্যানিমেশনও ব্যবহৃত হয়েছে। টিম জনসন চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন।
অন্যান্য ভাষায় অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র
অ্যারাবিয়ান নাইতো: শিনদোবাদ্দো নো বকেন (আরব্য রজনী: সিন্দাবাদের অভিযান, ১৯৬২) হলো একটি জাপানি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।
অ্যা থাউজ্যান্ড অ্যান্ড নাইটস (১৯৬৯) হলো আরব্য রজনী এবং সিন্দাবাদের কাহিনি ও উপকথার সমন্বয়ে জাপানি শিল্পী ওসামু তেজুকা কর্তৃক নির্মিত একটি গল্পকাহিনি।
পোহাদকি তিসিৎসে আ ইয়েদনে নৎসি (আক্ষরিকভাবে ১০০১ রজনীর উপকথা; ১৯৭৪) হলো কারেন জেমানের সাত-খণ্ডের একটি চেক অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।
সিনবাদ (ট্রিলজি চলচ্চিত্র) (২০১৫–২০১৬) হলো নিপ্পন অ্যানিমেশন ও শিরোগুমি প্রযোজিত একটি জাপানি পারিবারিক অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র ধারাবাহিক।
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব সিনবাদ (২০১৩) হলো শিঞ্জন নিয়োগী ও অভিষেক পাঞ্চাল পরিচালিত একটি ভারতীয় দুই মাত্রার অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ছিলেন আফজাল আহমেদ খান।[13]
সিনবাদ: পাইরেটস অব সেভেন স্টর্ম (২০১৬) হলো রাশিয়ার সিটিবি ফিল্ম কোম্পানির একটি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।
ইংরেজি ভাষার লাইভ-অ্যাকশন মঞ্চ চলচ্চিত্র
অ্যারাবিয়ান নাইটস হলো জন রাউলিনস পরিচালিত ১৯৪২ সালের একটি অ্যাডভেঞ্চারধর্মী চলচ্চিত্র। এতে সাবু, মারিয়া মনতেজ, জন হল ও লেইফ এরিকসন প্রমুখ অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি মূল আরব্য রজনী থেকে উৎসরিত হলেও এর গল্পে আরব্য কাহিনির চেয়ে ইউনিভার্সাল পিকচার্সের কল্পনানির্ভর কাহিনি প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। তবে এই ধারার অন্যান্য চলচ্চিত্রের (দ্য থিফ অব বাগদাদ প্রভৃতি) মতো এতে কোনো দানব বা অতিপ্রাকৃতিক বিষয়াবলির উপস্থিতি নেই।[14]
সিনবাদ দ্য সেইলর (১৯৪৭) হলো টেকনিকালারে নির্মিত একটি মার্কিন কাল্পনিক চলচ্চিত্র, যা পরিচালনা করেন মার্কিন পরিচালক রিচার্ড ওয়ালেস। ডগলাস ফেয়ারব্যাংকস জুনিয়র, মরিন ওহারা, ভাল্টা স্লেজাক ও অ্যান্থনি কুইন প্রমুখ এতে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে সিন্দাবাদের “অষ্টম” অভিযানের কথা বলা হয়, যেখানে সে আলেকজান্ডারের হারানো গুপ্তধন আবিষ্কার করে।
সন অব সিনবাদ (১৯৫৫) হলো টেড টেৎসলাফ পরিচালিত একটি মার্কিন অ্যাডভেঞ্চারধর্মী চলচ্চিত্র। এটি মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপটে এবং ১২৭ জনেরও অধিক নারীসহ প্রচুর চরিত্রের সমন্বয়ে নির্মিত।
দ্য সেভেন্থ ভয়েজ অব সিনবাদ (১৯৫৮) হলো নাথান জুরান পরিচালিত টেকনিকালারে নির্মিত বীরত্বপূর্ণ কাল্পনিক অ্যাডভেঞ্চারধর্মী চলচ্চিত্র। এতে কারউইন ম্যাথিউস, টরিন থ্যাচার, ক্যাথরিন গ্রান্ট, রিচার্ড আয়ার ও অ্যালেক ম্যাঙ্গো প্রমুখ অভিনয় করেন। এটি প্রযোজনা করেন চার্লস এইচ শ্নিয়ার এবং বিতরণ করে কলাম্বিয়া পিকচার্স।[15]
ক্যাপ্টেন সিন্দবাদ (১৯৬৩) হলো ফ্রাঙ্ক কিং ও হারম্যান কিং (কিং ব্রাদার্স প্রোডাকশন) প্রযোজিত ও স্বতন্ত্রভাবে নির্মিত একটি কাল্পনিক ও অ্যাডভেঞ্চারধর্মী চলচ্চিত্র। বায়রন হাস্কিন এটি পরিচালনা করেন এবং গাই উইলিয়ামস ও হাইডি ব্রিল প্রমুখ এতে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি জার্মানির বাভারিয়া ফিল্ম স্টুডিওতে ধারণ করা হয় এবং মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার কর্তৃক বিতরণ করা হয়।[16]
দ্য গোল্ডেন ভয়েজ অব সিনবাদ (১৯৭৩) হলো গর্ডন হেসলার পরিচালিত একটি ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র। এতে রে হ্যারিহাউজেনেরস্টপ মোশন প্রভাবের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। এটি কলাম্বিয়া পিকচার্স থেকে মুক্তি পাওয়া তিনটি সিন্দাবাদ চলচ্চিত্রের দ্বিতীয়টি।
সিনবাদ অ্যান্ড দ্য আই অব দ্য টাইগার (১৯৭৭) হলো স্যাম ওয়ানামেকার পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র। এতেও রে হ্যারিহাউজেনের স্টপ মোশন প্রভাব ব্যবহার করা হয়েছে। এতে প্যাট্রিক ওয়েন, টারিন পাওয়ার, মার্গারেট হোয়াইটিং, জেন মিমুর ও প্যাট্রিক ট্রোটন প্রমুখ অভিনয় করেন। এটি কলাম্বিয়া পিকচার্স থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত সিন্দাবাদের তৃতীয় ও সর্বশেষ চলচ্চিত্র।
ইংরেজি ভাষার লাইভ-অ্যাকশন ডিরেক্ট-টু-ভিডিও চলচ্চিত্র
সিনবাদ: দ্য ব্যাটল অব দ্য ডার্ক নাইটস (১৯৯৮) হলো একটি ডিটিভি চলচ্চিত্র, যেখানে একজন যুবক সিন্দাবাদকে সাহায্য করতে অতীতে যেতে হবে।
দ্য সেভেন অ্যাডভেঞ্চার্স অব সিনবাদ (২০১০) হলো অ্যাডাম সিলভার ও বেন হেফ্লিক পরিচালিত একটি মার্কিন অ্যাডভেঞ্চারধর্মী চলচ্চিত্র। দ্য অ্যাসাইলাম কর্তৃক বিতরণ করা মকবাস্টার হিসেবে এটি দ্য প্রিন্স অব পার্সিয়া: দ্য স্যান্ডস অব টাইম ও ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটানস চলচ্চিত্রকে পুঁজি করে ব্যাবসা করতে সচেষ্ট হয়।[17]
সিনবাদ অ্যান্ড দ্য মাইনোটর (২০১১) হলো কার্ল জুইকি পরিচালিত একটি অস্ট্রেলীয় ফ্যান্টাসি বি মানের চলচ্চিত্র। এতে অভিনয় করেন মানু বেনেট। একে ডগলাস ফেয়ারব্যাংকস জুনিয়রের১৯৪৭-এর চলচ্চিত্র এবং হ্যারিহাউজেনের সিনবাদ ট্রিলজির অপ্রাতিষ্ঠানিক সিকুয়েল হিসেবে গণ্য করা হয়।[18] এতে আরব্য রজনী-র সিন্দাবাদ ও গ্রিক কিংবদন্তি মিনোটরকে একত্রে আনা হয়েছে।[19]
সিনবাদ: দ্য ফিফথ ভয়েজ (২০১৪) হলো একটি স্বল্প-বাজেটের চলচ্চিত্র, যাতে শাহিন শন সলিমন অভিনয় করেন।
সিনবাদ অ্যান্ড দ্য ওয়ার অব দ্য ফিউরিজ (২০১৬) হলো একটি মার্কিন ডিরেক্ট-টু-স্ট্রিমিং অ্যাকশন চলচ্চিত্র, যাতে জন হেনিগান অভিনয় করেন।
অন্যান্য ভাষার লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র
সিন্দাবাদ খালাশি হলো ১৯৩০ সালের ভারতীয় নির্বাক অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চারধর্মী চলচ্চিত্র, যা পরিচালনা করেন রামচন্দ্র গোপাল তোর্ণে (দাদাসাহেব তোর্ণে)।[20]
সিন্দাবাদ জাহাজি হলো ১৯৫২ সালের হিন্দি ভাষার অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র, যা নির্মাণ করেন নানাভাই ভট্ট।[20]
সিন্দাবাদ কে বেটি হলো রতিলালের ১৯৫৮ সালের হিন্দি ভাষার একটি কাল্পনিক চলচ্চিত্র, যেখানে সিন্দাবাদের কন্যা তার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে খুঁজতে বের হয়।[20]
সন অব সিন্দাবাদ হলো নানাভাই ভট্টের ১৯৫৮ সালের একটি হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র। সিন্দাবাদ জাহাজি চলচ্চিত্রের এই সিকুয়েলে মহাসাগরে সিন্দাবাদের পুত্রের অভিযানের কাহিনি দেখানো হয়েছে।[20]
সিন্দবাদ কুন্ত্রো ই সেত্তে সারাচেনি (ইতালীয়: Sindbad contro i sette saraceni) হলো ১৯৬৪ সালের একটি ইতালীয় অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা ও পরিচালক ছিলেন এমিমো সালভি এবং এতে অভিনয় করেন গর্ডন মিচেল।[21][22] চলচ্চিত্রটি ১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন কর্তৃক সরাসরি টেলিভিশনে মুক্তি পায়।
সিন্দাবাদ আলিবাবা অ্যান্ড আলাদিন হলো প্রেমনারায়ণ অরোরার ১৯৬৫ সালের হিন্দি ভাষার ফ্যান্টাসি-অ্যাডভেঞ্চার মিউজিক্যাল চলচ্চিত্র। এতে সিন্দাবাদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রদীপ কুমার।[20]
শেহজাদে সিন্দাবাদ কাফ দাগিন্দা (আক্ষরিকভাবে, “পাহাড়ের রাজকুমার সিন্দাবাদ”, ১৯৭১) হলো একটি তুর্কি চলচ্চিত্র।
সিমবাদ এ ইল কালিফফো দি বাগদাদ (ইতালীয়: Simbad e il califfo di Bagdad, আক্ষরিকভাব, “সিন্দাবাদ ও বাগদাদের খলিফা”, ১৯৭৩) হলো একটি ইতালীয় চলচ্চিত্র।
সিনবাদ অব দ্য সেভেন সিজ (১৯৮৯) হলো এঞ্জো জি কাস্তেল্লারি প্রযোজিত ও পরিচালিত একটি ইতালীয় চলচ্চিত্র। সিন্দাবাদের অভিযানকে কেন্দ্র করে লুইজি কৎজির একটি গল্পকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। এক জাদুকরের দুষ্ট জাদু থেকে বসরা শহরকে মুক্ত করতে সিন্দাবাদকে পাঁচটি জাদুর পাথর উদ্ধার করতে হবে। সিন্দাবাদ রহস্যের দ্বীপে পৌঁছে এবং জাদুকরী প্রাণীদের পরাজিত করে পৃথিবীকে রক্ষা করে।
টেলিভিশন
ইংরেজি ভাষার ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্র
সিনবাদ জুনিয়র অ্যান্ড হিজ ম্যাজিক্যাল বেল্ট (১৯৬৫)
দ্য ফ্রিডম ফোর্স (১৯৭৮)
দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব সিনবাদ (১৯৭৯), অ্যানিমেটেড টেলিভিশন চলচ্চিত্র
দ্য ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজেস অব সিনবাদ দ্য সেইলর (১৯৯৬–১৯৯৮) হলো একটি মার্কিন অ্যানিমেটেড টেলিভিশন ধারাবাহিক। আরব্য রজনী ও সিন্দাবাদের কাহিনিগুলোর উপর নির্মিত ধারাবাহিকটি নির্মাণ করে ফ্রেড উল্ফ ফিল্মস। কার্টুন নেটওয়ার্কে ১৯৯৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এর প্রচার শুরু হয়।[23]
দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব সিনবাদ (১৯৯৬–৯৮) হলো একটি কানাডীয় অ্যাকশন/অ্যাডভেঞ্চার-ফ্যান্টাসিধর্মী টেলিভিশন ধারাবাহিক। সিনবাদ নামের এক পাইলট চরিত্রকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা আবির্ভূত হয়।
দ্য ব্যাকইয়ার্ডিগানস-এর (২০০৭) পর্ব: “সিনবাদ সেইলস অ্যালোন”
সিনবাদ (২০১২) যুক্তরাজ্যের স্কাই ওয়ানে প্রচারিত একটি ধারাবাহিক
সিনবাদ অ্যান্ড দ্য সেভেন গ্যালাক্সিস (২০১৬ সালে সান টিভিতে এবং ২০২০ থেকে টুনাভিশনে) হলো একটি শিশুতোষ কমেডি অ্যাডভেঞ্চারধর্মী টেলিভিশন ধারাবাহিক।[24]রাজা মাসিলামনি এর নির্মাতা এবং ক্রিয়েটিভ মিডিয়া পার্টনার্স এর সত্ত্বাধিকারী।[25]
জেনা: ওয়ারিয়র প্রিন্সেস-এর তৃতীয় মৌসুমের পর্ব “বিন দেয়ার, ডান দেয়ার”-এ সিন্দাবাদের কেবল উল্লেখ করা হয়, কিন্তু সিন্দাবাদ বলে কেউ সেখানে আবির্ভূত হয়নি।
মাঙ্গা সেকাই মুকাশি বানাশি: দ্য অ্যারাবিয়ান নাইটস: অ্যাডভেঞ্চার্স অব সিনবাদ দ্য সেইলর (১৯৭৯), জাপানি অ্যানিমে টেলিভিশন ধারাবাহিক। এটি পরিচালনা করেন সাদাও নোজাকি এবং তাৎসুয়া মাতানো। এর প্রযোজক ইউজি তান্নো। এর উৎস হলো মাঙ্গা হাজিমেতে মনোগাতারি নামের একটি ধারাবাহিক। এটি ইংরেজিতে ডাবকৃত হয়েছে এবং টেলি সাভালাস কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।
আলিফ লায়লা (১৯৯৩–১৯৯৭) হলো আরব্য রাজনীর কাহিনিনির্ভর একটি ভারতীয় টেলিভিশন ধারাবাহিক, যা দূরদর্শন নেটওয়ার্কেরডিডি ন্যাশনাল চ্যানেলে দেখানো হতো। এর একটি পর্ব “সিন্দাবাদ জাহাজি”-তে সিন্দাবাদের অভিযানের কাহিনি দেখানো হয়। এতে সিন্দাবাদের চরিত্রে অভিনয় করেন শাহনওয়াজ প্রধান।[26]
প্রিন্সেস ডলি অউর উসকা ম্যাজিক ব্যাগ (২০০৪–২০০৬) হলো একটি ভারতীয় কৈশোর ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চার টেলিভিশন ধারাবাহিক, যা স্টারপ্লাসে দেখানো হতো। এতে আলিবাবা ও হাতিমের পাশাপাশি সিন্দাবাদকেও অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে রাখা হয়েছে। ধারাবাহিকে সিন্দাবাদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বকর শায়খ।
মাগি: দ্য ল্যাবিরিন্থ অব ম্যাজিক (২০১২), মাগি: দ্য কিংডম অব ম্যাজিক (২০১৩) এবং মাগি: অ্যাডভেঞ্চার অব সিনবাদ (২০১৬)
জানবাজ সিন্দবাদ (২০১৫–২০১৬) হলো সিন্দাবাদের কাহিনিনির্ভর একটি ভারতীয় অ্যাডভেঞ্চার-ফ্যান্টাসিধর্মী টেলিভিশন ধারাবাহিক, যা জি টিভিতে দেখানো হতো। ধারাবাহিকে হর্ষ রাজপুত নামচরিত্রে অভিনয় করেন।
টীকা: অন্তত এক জোড়া বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের ডাবিংকৃত সংস্করণ উত্তর আমেরিকায় মুক্তি পায়, যার মূল চরিত্রকে ডাবে “সিনবাদ” নাম দেওয়া হলেও মূল সিন্দাবাদের সাথে এর কোনো সাযুজ্য ছিল না। ১৯৫২ সালের রাশিয়ান চলচ্চিত্র সাদকো-এর (রিমস্কি-করসাকভের অপেরা সাদকো অবলম্বনে) ইংরেজি অতি-ডাবিংকৃত সংস্করণ ১৯৬২ সালে দ্য ম্যাজিক ভয়েজ অব সিনবাদ নামে মুক্তি পায়। অন্যদিকে ১৯৬৩ সালের জাপানি চলচ্চিত্র দাই তজকু (যার মূল চরিত্র “সুকেজেমন” নামের এক দুঃসাহসী পাইরেট) ইংরেজিতে অতিমাত্রায় ডাবিং করে ১৯৬৫ সালে দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড অব সিনবাদ নামে মুক্তি পায়।
ভিডিও গেম
সনিকের আরব্য রজনী সংস্করণ সনিক অ্যান্ড দ্য সিক্রেট রিংস-এ সিন্দাবাদকে প্রায় নাকলস দ্য একিডনার মতো দেখা যায়।
১৯৭৮ সালে গটলিয়েবসিনবাদ নামের এক পিনবল মেশিন তৈরি করে।[27] মেশিনটির শিল্পকর্মে সিনবাদ অ্যান্ড দ্য আই অব দ্য টাইগার-এর চরিত্রদের দেখা যায়। এছাড়াও তারা আই অব দ্য টাইগার নামেও পিনবল গেম বের করে।[28]
১৯৯৬ সালে সিন্দাবাদকে নিয়ে টেলস অব দ্য অ্যারাবিয়ান নাইটস নামের একটি পিনবল গেম বের হয়।[29]উইলিয়ামস ইলেকট্রনিকস কর্তৃক নির্মিত এই গেমে “জুয়েল” পেতে সিন্দাবাদের সাথে সাইক্লপস ও রকপাখির যুদ্ধকে নিয়ে আসা হয়েছে। এই গেম থেকে ২০০৯ সালে পিনবল হল অব ফেম: দ্য উইলিয়ামস কালেকশন নামে ভিডিও গেমে রূপান্তর করা হয়।
১৯৮৪ সালে আটলান্টিস সফটওয়্যার শুধুমাত্র সিনবাদ নামে একটি গেম প্রকাশ করে।[30]
১৯৮৬ সালে মাস্টারট্রনিক লিমিটেড সিনবাদ অ্যান্ড দ্য গোল্ডেন শিপ নামে গেম প্রকাশ করে।[31]
১৯৮৬ সালেই সুপিরিয়র সফটওয়্যার দ্য লিজেন্ড অব সিনবাদ নামে আরেকটি গেম প্রকাশ করে।[32]
১৯৮৭ সালে সিনেমাওয়্যার সিনবাদ অ্যান্ড দ্য থ্রোন অব দ্য ফ্যালকন নামে একটি গেম প্রকাশ করে।[33]
সঙ্গীত
নিকোলাই রিমস্কি-করসাকভেরশেহেরাজাদা-এর ১ম, ২য় ও ৪র্থ গতিবিধি সিন্দাবাদের কাহিনির অংশবিশেষ থেকে অনুপ্রাণিত। এই কর্মে রকপাখি, উত্তাল সাগর প্রভৃতি বিষয় সহজে লক্ষ্যণীয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে সিন্দাবাদের জাহাজকে (৬ষ্ঠ অভিযান) ডুবোপাহাড়ের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়; নিতান্ত ভাগ্যের জেরেই তারা গুহামুখের স্রোত দেখতে পায় এবং সেরেন্দিবে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পায়।
ভারতীয় চলচ্চিত্র রক অন!!-এর সাউন্ডট্র্যাকের “সিনবাদ দ্য সেইলর” গানে সঙ্গীতের মাধ্যমে সিন্দাবাদের অভিযানের বর্ণনা পাওয়া যায়।
সিনবাদ এ লা লিজঁ দে মিজান (২০১৩) হলো একটি সাঙ্গীতিক মঞ্চ পরিবেশনা। এটি সিন্দাবাদ ও ১০০১ রজনীর নায়কদের কেন্দ্র করে রচিত।
সিন্দাবাদের অভিযান বিভিন্ন অডিও রেকর্ডিংয়ের কথায় বা নাটকীয়তায় নানাভাবে এসেছে। এর মধ্যে আলিবাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস/সিনবাদ দ্য সেইলর (রিভারসাইড রেকর্ডস আরএলপি ১৪৫১/গোল্ডেন ওয়ান্ডারল্যান্ড জিডব্লিউ ২৩১, গায়ক ডেনিস কুইলি), সিনবাদ দ্য সেইলর (টেল স্পিনার ফর চিল্ড্রেন, ইউনাইটেড আর্টিস্টস রেকর্ডস ইউএসি ১১০২০, গায়ক ডেরেক হার্ট), সিনবাদ দ্য সেইলর: অ্যা টেল ফ্রম দি অ্যারাবিয়ান নাইটস (ক্যাডমন রেকর্ডস টিসি-১২৪৫/ফন্টানা রেকর্ডস এসএফএল ১৪১০৫, পাঠক অ্যান্থনি কোয়েল, সিনবাদ দ্য সেইলর /দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব অলিভার টুইস্ট অ্যান্ড ফাগিন (কলাম্বিয়া মাস্টারওয়ার্কস এমএল ৪০৭২, পাঠক বাসিল র্যাথবোন), ১০০১ নাইটস: সিনবাদ দ্য সেইলর অ্যান্ড আদার স্টোরিজ (ন্যাক্সস অডিও ৮.৫৫৫৮৯৯, বর্ণনায় বার্নার্ড ক্রিবিনস) এবং দ্য অ্যারাবিয়ান নাইটস (দ্য ভয়েজেস অব দ্য সিনবাদ দ্য সেইলর) (ডিজনিল্যান্ড রেকর্ডস এসটিইআর-৩৯৮৮) প্রভৃতি অন্যতম।
“নাগিসা নো সিনবাদ” (জাপানি: 渚のシンドバッド) হলো ১৯৭০-এর দশকের শেষভাগ ও ১৯৮০-এর দশকের প্রথমভাগে জনপ্রিয় জাপানি দ্বৈত পিংক ল্যাডির চতুর্থ একক সঙ্গীত। পরবর্তীতে গানটি সাবেক আইডল গ্রুপ ডব্লিউ এবং জাপানি সুপার গ্রুপ মর্নিং মুসুমে কর্তৃক কভার করা হয়।
জেমস জয়েস তার ইউলিসিস উপন্যাসে “সিনবাদ দ্য সেইলর”কে ডব্লিউ বি মার্ফির ছদ্মনাম এবং অডিসিউসের বিকল্প চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এমনকি তিনি এই নামকে নানাভাবে বিকৃতও করেছেন: জিনবাদ দ্য জেইলার, টিনবাদ দ্য টেইলর, হুইনবাদ দ্য হোয়েলার ইত্যাদি।
এডগার অ্যালান পো “দ্য থাউজ্যান্ড-অ্যান্ড-সেকেন্ড টেল অব শেহরেজাদ” নামে একটি গল্প লিখেন। এতে সিন্দাবাদের অষ্টম অভিযানের বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে সিন্দাবাদ ও তার সহযাত্রীরা বিভিন্ন রহস্যের সম্মুখীন হয়। কাহিনির অসঙ্গতিগুলো শেষ পর্যন্ত গল্পের শেষে টীকা আকারে বিবৃত হয়েছে।
পোলীয় কবি বোলেসওয়াফ লেশমিয়ান-রচিত অ্যাডভেঞ্চার্স অব সিনবাদ দ্য সেইলর হলো একগুচ্ছ কাহিনি, যা আরব্য রজনীর সাথে সামান্যই সাযুজ্যপূর্ণ।
হাঙ্গেরীয় লেখক গিউলা ক্রুদিরঅ্যাডভেঞ্চার্স অব সিনবাদ হলো আরব্য রজনী-নির্ভর একগুচ্ছ ছোটগল্প।
জন বার্থের “দ্য লাস্ট ভয়েজ অব সামওয়ান দ্য সেইলর”-এ “সিনবাদ দ্য সেইলর” ও তার অভিযানের প্রথাগত কাহিনিপট ২০শ শতকের নতুন সাংবাদিক সামওয়ান দ্য সেইলরের বিভিন্ন অভিযাত্রার কাহিনিপট নির্ধারণ করে দেয়।
পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী স্টিভেন মিলহাউজারের ১৯৯০ সালের একটি সংকলন দ্য বার্নাম মিউজিয়াম-এ “দি এইথ ভয়েজ অব সিনবাদ” নামে একটি গল্প রয়েছে।
কমিক্স
“সিনবাদ দ্য সেইলর” (১৯২০) হলো পল ক্লিয়ের (সুইস-জার্মান শিল্পী, ১৮৭৯–১৯৪০) একটি শিল্পকর্ম
১৯৫০ সালে সেন্ট জন পাবলিকেশনসন অব সিনবাদ নামে একটি এক শটের কমিক প্রকাশ করে।[34]
১৯৫৮ সালে ডেল কমিক্সদ্য সেভেন্থ ভয়েজ অব সিনবাদ চলচ্চিত্রকে উপজীব্য করে একটি এক শটের কমিক বের করে।[35]
১৯৬৩ সালে গোল্ড কি কমিক্সক্যাপ্টেন সিনবাদ চলচ্চিত্র অবলম্বনে একটি এক শটের কমিক প্রকাশ করে।[36]
১৯৬৫ সালে ডেল কমিক্স সিনবাদ জুনিয়র নামে একটি তিন খণ্ডের ধারাবাহিক কমিক প্রকাশ করে।[37]
১৯৬৫ সালেই গোল্ড কি কমিক্সদ্য ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজেস অব সিনবাদ নামে একটি দুই খণ্ডের স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক কমিক প্রকাশ করে।[38]
১৯৭৪ সালে মার্ভেল কমিক্সদ্য গোল্ডেন ভয়েজ অব সিনবাদ চলচ্চিত্র অবলম্বনে ওয়ার্ল্ডস আননোন ধারাবাহিকের #৭ ও #৮ নং কিস্তিতে দুই খণ্ড কমিক প্রকাশ করে।[39][40] পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে দ্য সেভেন্থ ভয়েজ অব সিনবাদ চলচ্চিত্র অবলম্বনে মার্ভেল স্পটলাইট #২৫ নং কিস্তিতে একটি এক শটের কমিক প্রকাশিত হয়।[41]
১৯৭৭ সালে ব্রিটিশ কমিক কোম্পানি জেনারেল বুক ডিস্ট্রিবিউটর্স সিনবাদ অ্যান্ড দ্য আই অব দ্য টাইগার অবলম্বনে একটি এক শটের কমিক/ম্যাগাজিন প্রকাশ করে।[42]
১৯৮৮ সালে কাতালান কমিউনিকেশনসদ্য লাস্ট ভয়েজ অব সিনবাদ নামে একটি এক শটের গ্রাফিক উপন্যাস প্রকাশ করে।[43]
১৯৮৯ সালে মালিবু কমিক্স শুধুমাত্র সিনবাদ নামে চার খণ্ডের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক কমিক প্রকাশ করে।[44] পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে সিনবাদ বুক ২: ইন দ্য হাউজ অব গড নামে আরেকটি চার খণ্ডের স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক কমিক প্রকাশিত হয়।[45]
২০০১ সালে মার্ভেল কমিক্স ফ্যান্টাস্টিক ফোরের সাথে সিন্দাবাদকে এনে ফ্যান্টাস্টিক ফোর্থ ভয়েজ অব সিনবাদ নামে একটি এক শটের কমিক প্রকাশ করে।[46]
২০০৭ সালে টাইডালওয়েভ প্রোডাকশনসসিনবাদ: রগ অব মার্স নামে একটি তিন খণ্ডের স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক কমিক প্রকাশ করে।[47]
২০০৮ সালে লার্নার পাবলিশিং গ্রুপসিনবাদ: সেইলিং ইনটু পেরিল নামে একটি গ্রাফিক উপন্যাস প্রকাশ করে।[48]
২০০৯ সালে জেনেস্কোপ এন্টারটেইনমেন্ট তাদের গ্রিম ফেইরি টেলস ইউনিভার্সে সিন্দাবাদকে একটি নিয়মিত চরিত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ১০০১ অ্যারাবিয়ান নাইটস: দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব সিনবাদ নামে ১৪ খণ্ডের একটি ধারাবাহিক কমিকের মাধ্যমে তার প্রথম আবির্ভাব ঘটে।[49] পরবর্তীতে ড্রিম ইস্টার সাগা-এর বিভিন্ন খণ্ডে,[50] এমনকি ২০১১ অ্যানুয়াল,[51]জায়ান্ট-সাইজ[52] ও স্পেশাল এডিশন[53] প্রভৃতি এক শটের কমিকেও সিন্দাবাদের আবির্ভাব ঘটে।
২০১২ সালে ক্যাম্পফায়ার বুক সিনবাদ: দ্য লিগ্যাসি নামের গ্রাফিক উপন্যাস মুক্তি দেয়। বিল উইলিংহাম লিখিত ধারাবাহিক কমিক বই ফেবলস বইয়ে সিন্দাবাদের আবির্ভাব ঘটে। রয় থমাস লিখিত অ্যারাক, সন অব থান্ডার বইয়ে কিশোর আলসিন্দ হিসেবে সিন্দাবাদ আবির্ভূত হয়; এই বইয়ের কাহিনি ৯ম শতাব্দীতে সংঘটিত হয়। অ্যালান মুরের দ্য লিগ অব এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেল্টলমেন: ব্ল্যাক ডোজিয়ার-এ সিন্দাবাদ অষ্টম অভিযানে বের হয়ে আর কখনো ফেরে না; এই অভিযানের পূর্বে সিন্দাবাদকে ইম্মর্টাল অর্ল্যান্ডোর ত্রিশ বছরের প্রেমিক হিসেবে সিন্দাবাদকে পাওয়া যায়।
দ্য সিম্পসন্স-এর কমেডি কমিক সিরিজ “গেট সাম ফেন্সি বুক লার্নিন’”-এ “সিনবার্ট দ্য সেইলর” নামে সিন্দাবাদের কাহিনির প্যারোডি প্রকাশ করা হয়।
রিচার্ড করবেন এবং জ্যান স্ট্রন্যাডেরনিউ টেলস অব দ্য অ্যারাবিয়ান নাইটস মূলত হেভি মেটাল ম্যাগাজিনে #১৫–২৮ খণ্ডে (১৯৭৮–৭৯) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এগুলো পরবর্তীতে সংকলিত হয় এবং বাণিজ্যিক পেপারব্যাক বই আকারে প্রকাশিত হয়।
সিন্দাবাদ জাপানি মাঙ্গা সিরিজ মাগি: দ্য ল্যাবিরিন্থ অব ম্যাজিক-এর অন্যতম প্রধান চরিত্র। শিনোবু ওতাকা এটির লেখক ও অঙ্কনশিল্পী।
থিম পার্ক
সিন্দাবাদ টোকিও ডিজনিসিয়েরসিন্দবাদ’স স্টোরিবুক ভয়েজ, নেদারল্যান্ডসের কাতসুভেলেরএফতেলিং থিম পার্কের একটি রোলার কোস্টার এবং ফ্লোরিডার ইউনিভার্সাল অরল্যান্ডো থিম পার্কের লাইভ-অ্যাকশন স্টান্ট দ্য এইথ ভয়েজ অব সিনবাদ-এর মূল উপজীব্য।
অন্যান্য
অভিনেতা ও কমেডিয়ান ডেভিড অ্যাডকিনস মঞ্চনাম হিসেবে সিনবাদ ব্যবহার করেন।
মানবদেহের পরজীবী শিস্টোসোমা ম্যানসনি-র একটি জিনোমের এলটিআর রেট্রোট্রান্সপোসনের নাম সিন্দাবাদের নামে রাখা হয়েছে।[54] ভ্রাম্যমাণ জেনেটিক উপাদানগুলোর নাম পৌরাণিক, ঐতিহাসিক বা সাহিত্যিক অভিযাত্রিকদের নামে করার একটি প্রথা প্রচলিত আছে; উদাহরণস্বরূপ অতিপরিচিত ভ্রাম্যমাণ জেনেটিক উপাদান জিপসি ও মেরিনার-এর নাম উল্লেখ করা যায়।
Marzolph, Ulrich; van Leeuwen, Richard (২০০৪), The Arabian nights encyclopedia, 1, পৃষ্ঠা506–8উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) .
Erickson, Hal (২০০৫)। Television Cartoon Shows: An Illustrated Encyclopedia, 1949 Through 2003 (2nd সংস্করণ)। McFarland & Co। পৃষ্ঠা322। আইএসবিএন978-1476665993।
Pinault, D. (১৯৯৮)। "Sindbad"। Meisami, Julie Scott; Starkey, Paul। Encyclopedia of Arabic Literature। Volume 2। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা721–723। আইএসবিএন9780415185721।
Beazley, Charles Raymond (১৯১১)। "Sindbad the Sailor, Voyages of"। চিসাম, হিউ। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ। Volume 25 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা141–142।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) This includes a detailed analysis of potential sources and comparable tales across contemporaneous and earlier texts.
Favorov, OV; Ryder, D (১২ মার্চ ২০০৪)। "Sinbad: a neocortical mechanism for discovering environmental variables and regularities hidden in sensory input"। Biol Cybern। 90 (3): 191–202। এসটুসিআইডি680298। ডিওআই:10.1007/s00422-004-0464-8। পিএমআইডি15052482।
Marcelli, A; Burattini, E; Mencuccini, C; Calvani, P; Nucara, A; Lupi, S; Sanchez Del Rio, M (১ মে ১৯৯৮)। "Sinbad, a brilliant IR source from the DAPhiNE storage ring"। Journal of Synchrotron Radiation। J Synchrotron Radiat। 5 (3): 575–7। ডিওআই:10.1107/S0909049598000661। পিএমআইডি15263583।.
উইকিমিডিয়া কমন্সে সিন্দাবাদ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।