সার্বজনীনতাবাদ
From Wikipedia, the free encyclopedia
সার্বজনীনতাবাদ বা বৈশ্বিকতাবাদ হল বৈশ্বিক বা সার্বজনীন প্রয়োগ বা প্রযোজ্যতা-যুক্ত একটি ধর্মীয়, ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিক মতবাদ। সার্বজনীনতাবাদী বিশ্বাস-ব্যবস্থায় সকল শ্রেণির মানুষকে তাদের গঠনতন্ত্রের অন্তর্ভুক্তিতে বিবেচনায় রাখে।
ধর্মীয় পরিভাষার ক্ষেত্রে, একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সার্বজনীনতাবাদ দাবি করে যে ধর্ম হল একটি সার্বজনীন মানব গুণ বা বৈশিষ্ট্য। একে অসার্বজনীন ধর্মসমূহ হতে পৃথকভাবে দেখা যেতে পারে। এই মতবাদ অনুসারে ধর্মকে কার্যকারণ, প্রকৃতি, এবং মহাবিশ্বের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল একগুচ্ছ বিশ্বাস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, বিশেষ করে যখন একে আত্মত্যাগী ভক্তিমূলক ও রীতিনীতিগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অতিমানব সৃষ্টির প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানমালা বলে মনে করা হয়, যার প্রায়শই মানবীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি নৈতিক মানদণ্ড থাকে।[1]
খ্রিষ্টধর্মের কিছু উপদলে, বৈশ্বিক একীভূতকরণ হল এমন একটি বিশ্বাসব্যবস্থা যাতে বলা হয় যে, সকল পাপী ও পথভ্রষ্ট মানবাত্মা স্বর্গীয় ভালোবাসা ও দয়ার কারণে চূড়ান্তভাবে ঈশ্বরের কাছে একীভূত হবে।[2] অদ্বৈত সার্বজনীন একেশ্বরবাদ-এ বিশ্বাস করা হয় যে, সকল ধর্মই হল একটি সার্বজনীন মানব গুণ, যাতে প্রায় সকল ধর্মের বৈশ্বিক মূলনীতিকে তুলে ধরে, অন্যান্য ধর্মকেও নিজেদের অন্তর্ভুক্তিতে গ্রহণ করে, এবং মানবতা ও স্বর্গের মাঝে বৈশ্বিক একীভূতকরণে বিশ্বাস করে। সার্বজনীনতাবাদ আধুনিক হিন্দুধর্মকে এবং এরপর পাশ্চাত্যের আধুনিক আধ্যাত্মিকতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।[3]
নিজেদেরকে সার্বজনীনতাবাদী বলে ডাকা কোন সম্প্রদায় প্রায় সকল ধর্মের বৈশ্বিক মূলনীতিকে তুলে ধরে, অন্যান্য ধর্মকেও নিজেদের অন্তর্ভুক্তিতে গ্রহণ করে, এবং মানবতা ও স্বর্গের মাঝে বৈশ্বিক একীভূতকরণে বিশ্বাস করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু আব্রাহামিক ধর্ম তাদের বিশ্বাসপদ্ধতি ও নৈতিক মূলনীতিসমূহকে সার্বজনীন মূল্যবোধ-সম্পন্ন এবং নিজেদেরকে সকল ধর্মের অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি-সম্পন্ন বলে দাবি করেছিল।[4] পাশাপাশি একটি সাধারণ সত্যের উপর নির্ভরশীল কোন বিশ্বাসও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে বর্তমান সত্যকে জাতীয়, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সীমারেখা থেকেও অনেক বিস্তৃত হিসেবে দেখা হয়।