Loading AI tools
অস্ট্রেলীয় লেখক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সারু ব্রিয়ারলি (জন্ম ১৯৮১) একজন ভারতীয়বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায়ী যিনি তার জন্মদাত্রী মায়ের থেকে পৃথক হয়ে পড়লে এক অস্ট্রেলীয় দম্পতী তাঁঁকে দত্তক নেন এবং ২৫ বছর পরে তিনি জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হন।তাঁঁর জীবনের এই উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলিতে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতে মনোযোগ আকর্ষণ করে।
তাঁঁর অভিজ্ঞতার, একটি আত্মজীবনীমূলক বিবরণ আ লঙ ওয়ে হোমপ্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে এবং ২০১৬ সালে বইটি চিত্রায়িত হয়। নিকলে কিডম্যান তার দত্তক মায়ের ভূমিকায়, সারু ব্রিয়ারলি এবং দেব প্যাটেল সারুর ভূমিকায় অভিনয় করেন।
সারু, শেরু মুন্সী খান[1]এর নামে , মধ্যপ্রদেশেরখান্দোওয়ার আশপাশে গণেশ তিলাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সে যখন ছোট ছিল তার বাবা, তার মাকে ত্যাগ করে চলে যাওয়ায় , পরিবারটি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে। তার মা স্ংসার চালানোর জন্য গাঁথনীর কাজ করতেন, কিন্তু যথেষ্ট টাকা উপার্জন না হওয়ায়, বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে এবং রোজ খাবার যোগাড় করতে পারতেন না। মাত্র ৫ বছর বয়সে সারু এবং তার বড় দুই ভাই গুড্ডূ এবং কালু রেলওয়ে স্টেশনে খাদ্য এবং অর্থের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করে। গুড্ডু কখনও কখনও রেল বগির মেঝে সাফাইয়ের কাজ পেত।[1][2]
এক সন্ধ্যায়, গুড্ডু বলে যে সে খান্দোওয়া থেকে রেলে, ৭০ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) দক্ষিণে বুরহানপুর শহরে যাচ্ছে। সারু তার সঙ্গে যেতে চাওয়ায়, গুড্ডু সহমত হয়। রেল যখন বুরহানপুর পৌছয়, সারু প্রচণ্ড ক্লান্ত থাকায় প্ল্যাটফর্মে চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়ছিল। গুড্ডু শীঘ্রই ফিরে আসবে বলে তাকে, ওখানেই অপেক্ষা করতে বলে এবং সারু বহুক্ষণ পর্য্যন্ত গুড্ডু ফিরে না আসায় অধীর হয়ে সামনে দাঁঁড়ানো একটি বগীতে উঠে পড়ে। দাদা ফিরে আসবে ভেবে, সে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙতে, দরজা বন্ধ থাকায়, সারু কোথাও নামতে পারে না এবং সে অবশষে কলকাতার হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌছয়। কেউ দরজা খুলে দেয়ায় সারু স্টেশনে নেমে পালায়, কিন্তু জানতে পারে না সে তার আদি শহর থেকে প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার (৯৩০ মাইল) থেকে দুরে পৌছেছে।[1][2]
সারু বিভিন্ন ট্রেনে চেপে বাড়ী ফেরার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু ট্রেনগুলি শহরতলি ট্রেন হওয়ায়, সেগুলি শেষমেস হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনে ফেরত আসত। এক/ দুই সপ্তাহ, হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি থেকে, রাস্তায় ফেলে দেওয়া খাবার খুঁঁজে খেয়ে সারু টিকে থাকে। এইভাবে দিনের পর দিন গৃহহীন হয়ে থাকার পর, কলকাতার রাস্তায় একজন রেলওয়ে কর্মী, তাকে খাদ্য ও আশ্রয় দেয়, রেলওয়ে কর্মীটি যখন সারুকে তার একজন বন্ধুকে দেখায়, সারুর ব্যাপারটি ঠিক লাগেনা, সে সেখান থেকে পালায়। তারা দুজন সারুকে তাড়া করলেও সারু পালাতে সক্ষম হয়[1][2]
অবশেষে সারুর একটি কিশোরের সঙ্গে দেখা হয় যে তাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায় এবং সম্ভাব্য হারানো শিশু হিসাবে রিপোর্ট লেখায়। পুলিশ সারুকে পরিত্যক্ত শিশুদের হোমে পাঠায়, যেখান থেকে সপ্তাহ খানেক পরে ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর স্পনসরশিপ এণ্ড এডোপসানে পাঠান হয়। সেখানে কর্মীরা তাকে তার পরিবারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সারু তার আদি শহরের বিষয়ে বিশেষ না জানার দরুন তাকে নিরুদ্দেশ শিশু হিসাবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকালে তাকে, অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার হোবার্ট নিবাসি ব্রিয়ারলি পরিবার দত্তক নেন।[1]
এরই মধ্যে তার মা কমলা মুন্সি তার দুই নিরুদ্দেশ ছেলের সন্ধান করতে থাকেন। কিছু সপ্তাহে যখন তার ছেলেরা ঘরে ফেরত আসেনা, পুলিশ জানায় বুরহানপুরের অনতিদুরে রেললাইনে গূড্ডুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে।[2] তিনি তখন তাঁঁর সীমিত শক্তি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনে করে গিয়ে সারুকে খুঁজতে থাকেন এবং সারুর ফেরার প্রত্যাশায় প্রত্যেক সপ্তাহে মন্দিরে ধূপ এবং গোলাপের পাপড়ি নিবেদন করতেন।[1]
সারু হোবার্টে তার অস্ট্রেলিয়ান বাবা ও মায়ের দ্বারা দত্তক নেওয়া আরো একটি ভারতীয় ছেলে, মনোতোষের সঙ্গে, একটি গতানুগতিক অস্ট্রেলীয় ছেলে হিসাবে বড় হয়ে ওঠেন। সারু, ইংরেজি শিখে শীঘ্রই হিন্দি ভুলে যান। তিনি ক্যানবেরাতে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল হোটেল স্কুলে ব্যবসা এবং আতিথেয়তা নিয়ে পড়াশুনা করেন।[1] বড় হবার পর, তিনি বহু মাস ধরে অনেক ঘণ্টা ব্যয় করে বুরহানপুরের নিকটবর্তী এলাকার অস্পষ্ট স্মৃতির ও স্যাটেলাইট ছবির সাহায্যে গুগল আর্থএ হাওড়া স্টেশন থেকে বেড়োন রেললাইনগুলি নজর করতে থাকেন। যদিও বুরহানপুর স্টেশনটির নামের শুধুমাত্র আদ্যাক্ষর 'বু' মনেছিল।[2] ২০১১ সালে এক দিন রাতে, তিনি গুগল মানচিত্রে খুঁজতে খুঁজতে একটি ছোট রেলওয়ে স্টেশনে এসে পড়েন যেটি তার শৈশবের মনে থাকা একটি স্টেশন, যেখানে তিনি একটি খালি গাড়িতে আটকা পড়ে ছিলেন, তার ফোনেটিক বানানের কাছাকাছি মিলে যায়; স্টেশনটির নাম ছিল বুরহানপুর। স্যাটেলাইট ইমেজ ধরে উত্তর দিকে এগোতে তিনি খান্দোওয়া স্টেশনটি পান। যদিও এই নামটি তার স্মরণে ছিলনা কিন্তু রেললাইনের কাছে একটি ঝর্ণা যেখানে তিনি খেলা করতেন, সেটি চিনতে পেরে, তার হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সঙ্গে যেখানে থাকতেন সেই রাস্তাটি ছবিতে দেখে চিহ্নিত করতে পারেন। [1][2]
সারু খান্দোওয়া ভিত্তিক একটি ফেসবুক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফেসবুক দলটি প্রত্যয় করে যে খান্দোওয়া প্রকৃতপক্ষে তার আদি শহর হতে পারে।[1]
সারু তখন ভারতের খান্দোওয়াতে আসেন এবং হোবার্টে তোলা, তার শৈশবের ছবি দেখিয়ে ২৫ বছর আগে কোন পরিবারের ছেলের নিখোঁজ সম্পর্কে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করতে থাকেন। তাদের সাহায্যে শীঘ্রই, তিনি তার মায়ের কাছে পৌছন। সেখানে তিনি তার জীবিত ভাই বোন কালু ও সাকিলার সঙ্গে মিলিত হন, যারা তখন একজন ম্যানেজার এবং শিক্ষিকা। সারু ও তার ভাই গুড্ডু নিখোঁজ হওয়ার পর বাকী দু সন্তানকে তাদের মা পড়াতে সমর্থ হয়েছিলেন। পরিবারের এই পূনর্মিলন ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমে খুব সাড়া ফেলেছিল।[1][2]
সারু এখন হোবার্টেই বসবাস করেন। তিনি এবং তার ভারতীয় পরিবার, তার বড় ভাই কালুর প্রতিবেশীর একটি কম্পিউটারের সুবিধা গ্রহণ করে, এখন নিয়মিত যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। তিনি তার মার জন্য একটি বাড়ি কেনার আশা রাখেন, যাতে তার মাকে, যে কাঁচা ঘরটিতে তিনি থাকেন তার ভাড়া দেওয়ার জন্য সাফাইয়ের কাজ করতে না হয়।[1]
সারু তার পরিবারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার মিলিত হন। তিনি পঁঁচিশ বছর আগের যাত্রাটিকে মনে করতে, মুম্বাই, কলকাতার একটি রেল পরিসেবা, কলকাতা মেইলে রেলের প্রথম শ্রেণীতে পুনরায় ভ্রমণ করেন।[1]
২০১২ সালে সারু তার বই 'আ লং ওয়ে হোম', যাতে তিনি তার পাঁচ-বছর-বয়সে হারিয়ে যাওয়ার দুঃসহ অভিজ্ঞতা, পরে একটি অস্ট্রেলিয়ান পরিবার দ্বারা দত্তক নেওয়াএবং তার ভারতীয় পরিবারকে খুজে বের করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন, সেটি সম্পূর্ণ করেন।[1]
২০১৬ সালে, তার জীবনের উপরভিত্তি করে, লায়ন নামক একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ছবিটি গর্থ ডেভিস দ্বারা নির্দেশিত এবং দেব প্যাটেল, নিকলে কিডম্যান এবং রুনিমারা দ্বারা অভিনীত। পর্যালোচনার জন্য প্রিমিয়ার হয় এবং ছবিটিকে ২০১৬ টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সম্ভাব্য অস্কার প্রাপক হিসাবে ধারণা করা হয়েছিল।[3][4][5][6][7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.