মির্জা শাহাবুদ্দিন মুহাম্মদ খুররাম (ফার্সি: میرزا شهاب الدین محمد خرم)[৪] এছাড়াও তিনি পরিচিত শাহ জাহান নামে (ফার্সি: شاه ‌جهان), (জানুয়ারি ৫, ১৫৯২ – জানুয়ারি ২২, ১৬৬৬)[৫] মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। শাহ জাহান নামটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে যার অর্থ "পৃথিবীর রাজা"।[৬] তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর এবং জাহাঙ্গীরের পরে পঞ্চম মুঘল সম্রাট।

দ্রুত তথ্য শাহ জাহান شاه جهان, ৫ম মুঘল সম্রাট ...
শাহ জাহান
شاه جهان
আস-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম
মালিক-উল-সালতানাত
সাহিব-এ-কিরান
বাদশাহ্-এ-গাজী
শাহানশাহ্ -এ-হিন্দুস্তান
Thumb
১৬৩০ সালে আঁকা সম্রাট শাহ জাহানের প্রতিকৃতি
৫ম মুঘল সম্রাট
রাজত্ব১৯ জানুয়ারি ১৬২৮ – ৩১ জুলাই ১৬৫৮[১]
রাজ্যাভিষেক১৪ ফেব্রুয়ারি ১৬২৮, আগ্রা[২]
পূর্বসূরিজাহাঙ্গীর (আইনত)
শাহরিয়ার মির্জা (কার্যত)
উত্তরসূরিআওরঙ্গজেব
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গী
    • মোট ৪ জন বিবাহিত স্ত্রী
  • কান্দাহারি বেগম
  • মমতাজ মহল
  • ইজউন্নিশা বেগম
  • লীলাবতীবাই
    • মোট ১১ জন উপপত্নী
  • মানভবতীবাই
  • দুর্গাবতী
  • মোতি বিবি
  • কুদশিয়া বিবি
  • সিরহিন্দিবাই
  • ফারজানা বেগম
  • ফতেহপুরী মহল
  • জামাল খানের বিধবা স্ত্রী
  • ইশরাত বানু বেগম
  • হাসিনা বেগম
  • বিবি নবাববাই
বংশধর
  • পারহেজ বানু বেগম(কান্দাহারি বেগমের কন্যা)
  • হুরউন্নিশা বেগম(মমতাজ মহলের কন্যা)
  • জাহানারা বেগম(মমতাজ মহলের কন্যা)
  • দারাশিকোহ(মমতাজ মহলের পুত্র)
  • শাহ সুজা(মমতাজ মহলের পুত্র)
  • রোশনারা বেগম(মমতাজ মহলের কন্যা)
  • ঔরঙ্গজেব(মমতাজ মহলের পুত্র)
  • ইরাদ বাকশ (মমতাজ মহলের পুত্র)
  • সুরাইয়া বানু বেগম (মমতাজ মহলের কন্যা)
  • মৃত পুত্র (মমতাজ মহলের পুত্র)
  • মুরাদ বাকস(মমতাজ মহলের পুত্র)
  • লুৎফ আল্লাহ(মমতাজ মহলের পুত্র)
  • দৌলত আফজা(মমতাজ মহলের পুত্র)
  • হুশনারা বেগম(মমতাজ মহলের কন্যা)
  • গওহরআরা বেগম(মমতাজ মহলের কন্যা)
  • জাহান আফরোজ মির্জা(ইজউন্নিশা বেগমের পুত্র)
  • হামজা বানু বেগম (মানভবতীবাইয়ের কন্যা)
  • পুরহুনার বানু বেগম(দুর্গাবতীর কন্যা)
  • উমিদ বাক্স(দুর্গাবতীর পুত্র)
  • নজরারা বেগম(কুদশিয়া বেগমের কন্যা)
  • পুরহানারা বেগম(কুদশিয়া বেগমের কন্যা)
  • দহরারা বেগম(কুদশিয়া বেগমের কন্যা)
  • আহমেদ বাক্স(হাসিনা বেগমের পুত্র)
রাজ্যের নাম
শাহ জাহান[৩]
রাজবংশতৈমুরীয়
রাজবংশমুঘল
পিতাজাহাঙ্গীর
মাতারাজকন্যা মানমতি
ধর্মসুন্নি (ইসলাম)
বন্ধ

তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তার হিন্দু রাজপুত স্ত্রী তাজ বিবি বিলকিস মাকানির সন্তান। সিংহাসন আরোহনের পূর্ব পর্যন্ত শাহাজাদা খুররাম নামে পরিচিত ছিলেন। ১৬২৭ সালে পিতা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার শাসনামলে মুঘলরা স্থাপত্য এবং সাংস্কৃতিক গৌরবের শিখরে পৌঁছেছিল। দাদা আকবরের মতো তিনিও তার সাম্রাজ্য প্রসারিত করতে আগ্রহী ছিলেন। ১৬৫৮ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুত্র আওরঙ্গজেব তাকে বন্দী করেন এবং বন্দী অবস্থায় ১৬৬৬ সালে আগ্রা দূর্গে তার মৃত্যু হয়।

তার রাজত্বের সময়কালের মুঘল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগ ছিল। সম্রাট শাহ জাহান লাল কেল্লা, শাহজাহান মসজিদ এবং তার স্ত্রীর সমাধিসৌধ তাজমহল সহ অনেক স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। শাহ জাহান মেওয়ারের রাজপুত ও দাক্ষিণাত্যের লোদিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অংশ নেন। ১৬২৭ সালের অক্টোবরে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর শাহজাহান তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শাহরিয়ার মির্জাকে পরাজিত করে আগ্রার কেল্লায় নিজেকে পরবর্তী মুঘল সম্রাট হিসাবে ঘোষণা করেন। শাহরিয়ার ছাড়াও, শাহজাহান সিংহাসনের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দাবিদারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।

শাহজাহান দাক্ষিণাত্য সালতানাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। তিনি পর্তুগিজ এবং সাফাভিদের সাথে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। সভাপতিত্ব করেন, যখন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখেন।

প্রথম জীবন

সেনাপতি

শাহজাহান মেবারের বিদ্রোহী রাজা রানা অমর সিং কে পরাজিত করেন ও মুঘলদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন। তিনি দাক্ষিণাত্যের লোদীদের দমন করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যর সীমা ঠিক রাখতে পিতা সম্রাট জাহাঙ্গীরকে সাহায্য করেন। জাহাঙ্গীর তার ওপর যারপরনাই খুশি হন। তাকে পরবর্তী সম্রাট ঘোষণা করেন এবং শাহজাদা খুররমকে "শাহজাহান" বা " পৃথিবীর সম্রাট " উপাধি দিয়ে দরবারের স্থায়ী সভ্য করে নেন। ঐতিহাসিকদের মতে, এতে করে মহলের লোকেরা কেউ তাকে হিংসা করতে লাগল, কেউ তাকে তোষামোদ করতে লাগল। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কেউই তাকে ভালবাসত না।

বিদ্রোহী রাজকুমার

শাহজাহান ছিলেন সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের ভাই আসফ খানের জামাতা। তার ছোটভাই শাহজাদা শাহরিয়ার ছিলেন সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের জামাতা, ( শের আফগানের কন্যার স্বামী)। শাহজাহান সন্দেহপ্রবণ ছিলেন যে তার অনুপস্থিতিতে শাহরিয়ারকে নূরজাহান সিংহাসনে বসাবেন। তাই সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন অসুস্থ তখন তিনি পিতা ও ভাইদের এবং সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি যুদ্ধে জয়ী হলেও, এসময় কান্দাহার পারস্যের নিকট মুঘলদের হাতছাড়া হয়।

সম্রাট (১৬২৮-১৬৫৮)

১৬২৮ খৃষ্টাব্দে শাহরিয়ার মিরজার পদত্যাগের পর তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন৷

শাহজাহানের সময় মুঘল বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা দশ লক্ষে উন্নীত হয়। এবং একে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করে। তাজমহল, লাল কেল্লা, দিল্লির শাহজাহানাবাদ শহর (পুরান দিল্লি) প্রভৃতি নির্মাণশৈলীর কারণে তাঁকে " প্রিন্স অফ বিল্ডার্স " বলা হয়ে থাকে।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসন

শাহজাহানের শাসনকালে ভারত বিশ্বের ২৪% জিডিপির যোগান দিত। এবং সমসাময়িক বিশ্বে মুঘল ভারত ছিল সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ। তথাপি ১৬৩০ সালে দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও খরার কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ঐসময়ে শাহজাহান "লঙ্গর" নামে একধরনের " মেকশিফট কিচেন" হাজারে হাজারে স্থাপন করে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করেন। এরকম মেকশিফট কিচেন / লঙ্গরখানার চল এখনও আধুনিক ভারতবর্ষে রয়েছে।

শিল্পকলা পৃষ্ঠপোষকতা

শাহজাহান শিল্পকলার দারুণ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি পৃথিবীর স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সমাধিসৌধ "আগ্রার তাজমহল" নির্মাণ করেন। সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও বিলাসবহুল শাহজাহানাবাদ শহর নির্মাণ করেন দিল্লির বুকে। লাল কেল্লা তৈরি করেন বর্তমানে যেখান থেকে প্রতিবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

পরবর্তী জীবন

শাহজাহানের শেষ জীবন সুখের ছিল না। তিনি তার জীবনের শেষ বিশ বছর আগ্রা দুর্গে পুত্র আওরঙ্গজেব কর্তৃক গৃহবন্দী হয়ে কাটান। তার জীবদ্দশায় আওরঙ্গজেব তার অবশিষ্ট পুত্র ও তাঁদের ঘরের নাতিদের হত্যা করেন।

স্থাপত্য নিদর্শন

সম্রাট শাহজাহান অত্যন্ত শিল্পানুরাগী ছিলেন। তাজমহল ছাড়াও তার অমর কীর্তি গুলো হচ্ছে:-

Thumb
তাজমহল, by artist Edwin Lord Weeks.[৭] The Walters Art Museum.
  • জামা মসজিদ, দিল্লি, ভারত
  • শাহজাহান মসজিদ, সিন্ধু, পাকিস্তান
  • মতি মসজিদ, লাহোর, পাকিস্তান
  • শালিমার গার্ডেন, লাহোর, পাকিস্তান
  • ওয়াজির খান মসজিদ, লাহোর, পাকিস্তান
  • দেওয়ান-ই-আম
  • দেওয়ান-ই-খাস
  • ময়ূর সিংহাসন

অবদান

শাহজাহানের অবদান স্থাপত্যশিল্পে অনস্বীকার্য। তবে এসব স্থাপত্যশৈলি নির্মাণের ব্যয়ভার বহন করার সময় তিনি শাহী খাজনার দরজা খুলে দিতেন যেন কারিগররা ইচ্ছামত মজুরি নিতে পারে। ফলস্বরূপ ১৬৬৫ সাল নাগাদ মুঘল শাহী খাজনা প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। শাহজাহানের এই খামখেয়ালিপনাকে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সূচক কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করেছেন ইতিহাসবিদরা।

মুদ্রা

শাহ জাহান স্বর্ণ (মোহর), রৌপ্য (রুপি) এবং তামা (দাম), এই তিন ধাতুর মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। সিংহাসন আরোহনের পূর্বে প্রচলিত মুদ্রায় তার নাম খুররাম উল্লেখ করা ছিল।

দ্রুত তথ্য শাহ জাহান এর রীতি, উদ্ধৃতিকরণের রীতি ...
শাহ জাহান
এর রীতি
Thumb
উদ্ধৃতিকরণের রীতিশাহেনশাহ
কথ্যরীতিজাঁহাপনা
বিকল্প রীতিআলাম পনা
বন্ধ

সম্পূর্ণ নাম

আবুল মোজাফ্ফর সাহিব উদ্দীন মোহাম্মদ সাহিব-ই কিরান শাহজাহান বাদশা গাজি

আরবী ফার্সী মিশ্রিত সমপূর্ণ শাহী লকব হল আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকান আল মুকর্রম শাহিন শাহ আল সল্তনাত আল হিন্দীয়া ওয়াল মগূলিয়া আবুল মুজফফর সাহিবি কিরান শিহাব উদ্দীন খুর্রম মুহম্মদ শাহ জাহান বাদশাহ গাজী বিন মুহম্মদ জাহান্কীর বিন মুহম্মদ আকবর আল গোরকানী৷ (السُّلطَانُ الأَعظَم والخَاقَانُ المُكرَّم شَاهِنشَاهِ السَّلْطَنَةِ الْهِنْدِيَّةِ والمَغُولِيَّةِ أَبُو الْمُظَفَّرِ صَاحِبقِرَان شِهَابُ الدِّينِ خُرَّم مُحمَّد شَاهجِهَان پَادِشَاه غَازِي بن مُحمَّد (جِهَانكِير بن مُحمَّد أكبر الگوركاني

চিত্রশালা

Thumb
তাজমহলের সর্বনিম্ন তলে শাহজাহান ও মুমতাজের কবর

তথ্যসূত্র

বহি:সংযোগ

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.