সমকামী মহিলা
মানব যৌনাচার / From Wikipedia, the free encyclopedia
সমকামী মহিলা বা লেসবিয়ান মূলত একজন ব্যক্তিকে বোঝায়, যে অন্য নারীর প্রতি ভালবাসা অথবা যৌন আকর্ষণ অনুভব করে।[3][4] এটি মানব যৌনাচারের একটি যৌন অভিমুখিতা। মহিলা সমকামী অথবা সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তির বিশেষণ হিসেবে লেসবিয়ান শব্দটি ব্যবহার করা হয়।[4][5] নারী সমকামী সাহিত্য পশ্চিমা সাহিত্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা।
এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন। |
বিশ শতকে নারীদের যৌন অভিমুখিতা পর্যালোচনা করার সময় লেসবিয়ান বা মহিলা সমকামের ধারণা পাওয়া যায়। ইতিহাস জুড়ে দেখা যায়, নারীদের পুরুষদের মতো একই তালে সমকামী সম্পর্ক রাখার স্বাধীনতা ছিল না। কিন্তু তাদেরকে পুরুষদের মতো নির্মম শাস্তিও ভোগ করতে হত না। সমকামে লিপ্ত নারী যদি তৎকালীন সমাজে পুরুষের মত সুযোগসুবিধা দাবী না করতো তাহলে বরং নারীর সমকামকে খুব একটা দোষ দেওয়া হত না। সেজন্য, নারীর সমকামিতা নিয়ে স্পষ্টভাবে খুব কম তথ্য ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন যৌন বিশেষজ্ঞরা সমকামীসুলভ ব্যবহারগুলিকে বিষয় অনুযায়ী ভাগ ক'রে বর্ণনা দিতে শুরু করলেন, তারা মহিলা সমকামীদের সাধারণ নারীদের থেকে আলাদা ধরনের দেখালেন। তারা জানালেন যে মহিলা সমকামীরা নারীসুলভ আচরণ করে না, নারীর ভূমিকাও পালন করে না। তারা মহিলা সমকামীদের মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে প্রতিপন্ন করলেন এবং এই ধারণার বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বেব্যাপী বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিবর্তন ঘটে।
ইউরোপ এবং আমেরিকার সমকামী মহিলারা এই বিভেদের কারণে নিজেদের পরিচয় ও ব্যক্তিগত জীবন লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেন অথবা সমাজচ্যুত হিসেবে নিজেদের একটা আলাদা সত্তা নিয়েই বাঁচতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে অর্থাৎ অবদমিত সামাজিক অবস্থায় যখন সরকার প্রত্যক্ষভাবে সমকামীদের ওপর নির্যাতন চালায় তখন তৎকালীন নারীরা যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের দ্বারা নিজেদের উন্নতি ও শিক্ষার জন্য একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। এই অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতাই তাদের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী পরিবার গড়ে তোলার ও সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। নারীবাদের দ্বিতীয় উত্থান এবং "নারীর ইতিহাস ও যৌনতা" বিষয়ে পড়াশোনা ও বৃত্তির হার বৃদ্ধির সঙ্গেই 'লেসবিয়ান' তথা 'মহিলা সমকামী'-র বর্ণনা ক্রমাগত উন্মুক্ত হয়ে ওঠে এমনকি শব্দটি ব্যবহারের যুক্তিতে তর্কের সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে লিসা.এম.ডায়মন্ডের (Lisa M. Diamond) গবেষণা মহিলা সমকামীদের মূল বর্ণনা হিসেবে তাদের যৌন আকর্ষণকেই প্রাধান্য দেয়।[6] যেসব মহিলারা সমকামে লিপ্ত তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের সমকামী বা উভকামী হিসেবে পরিচয় দেয় না। আবার বাকিদের সমকামী হিসেবে নিজের পরিচয় তাদের যৌন আচারের সাথে শ্রেণীবদ্ধ না-ও হতে পারে। অর্থাৎ সমকামিতার প্রতি ঘৃণা বহন করে চলা সমাজে নিজের সত্তাকে প্রকাশ করার ভয় থেকেই কারোর যৌন পরিচয় ও তার যৌনতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বা যৌন আচারের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকতে পারে।
প্রচারমাধ্যম অনুযায়ী মহিলা সমকামীদের বর্ণনায় এটাই বোধগম্য যে সমাজের বেশিরভাগই সেসব মহিলাদের প্রতি একটা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে যারা নারীত্বের প্রতি, নারীর সামাজিক সহজাত ভূমিকার প্রতি উল্টোধারার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আবার দুই নারীর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ঘিরে এরা হতবাক ও মুগ্ধ হয়। যেসব মহিলারা নিজেদের সমকামী পরিচয়কে আপন করে নিয়েছে তারা এমনকিছু অভিজ্ঞতা ভাগ করেছে যেখানে তাদের সমকামিতার প্রতি ঘৃণার কারণে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং বাকিদের থেকে বৈষম্য ও নানাবিধ কার্যক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। মহিলা হিসেবে তারা বহু উদ্বেগ ও চিন্তার মুখোমুখি হয়েছে যা পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা। বৈষম্য, পক্ষপাত ও সংখ্যালঘু হওয়ার জন্য মহিলা সমকামীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিন্তা ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন জায়গার রাজনৈতিক অবস্থা এবং সমাজের ধারণা তথা ব্যবহারও মহিলা সমকামীদের খোলামেলা সম্পর্কস্থাপন ও তাদের পরিবার গঠনকে ব্যাপকভাবে প্ররোচিত করে।