Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ল্যাটার ডেজ (ইংরেজি: Latter Days) হল ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি আমেরিকান রোম্যান্টিক কমেডি-ড্রামা চলচ্চিত্র। এই ছবির বিষয় এক ক্লোসেটেড মর্মন মিশনারি ও তার ঘোষিত সমকামী প্রতিবেশীর মধ্যে পুরুষ সমকামী সম্পর্ক। এই ছবিটির কাহিনিকার ও পরিচালক সি. জে কক্স। এতে অভিনয় করেছেন স্টিভ স্যান্ডভোস (মিশনারি অ্যারন) ও ওয়েস র্যা মসে (অ্যারনের প্রতিবেশী ক্রিস্টিয়ান)। জোসেফ গর্ডন-লেভিট ও রেবেকা জনসন এতে যথাক্রমে এল্ডার রেডার ও জুলি টেলরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। অন্যান্য পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন মেরি কে প্লেস, এরিক প্যালাডিনো, অ্যাম্বার বেনসন ও জ্যাকুলিন বিসেট।
ল্যাটার ডেজ Latter Days | |
---|---|
পরিচালক | সি. জে কক্স |
প্রযোজক | জেনিফার শিফার কার্কল্যান্ড টিবেলস |
রচয়িতা | সি. জে কক্স |
শ্রেষ্ঠাংশে | স্টিভ স্যান্ডভোস ওয়েস র্যােমসে রেবেকা জনসন জ্যাকেলিন বিসেট অ্যাম্বার বেনসন জোসেফ গর্ডন-লেভিট রব ম্যাকএলেনি |
সুরকার | এরিক অ্যালাম্যান |
চিত্রগ্রাহক | কার্ল বার্টেলস |
সম্পাদক | জন কেইটেল |
প্রযোজনা কোম্পানি | ফানি বয় ফিল্মস ডেভিস এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্মওয়ার্ক্স |
পরিবেশক | টিএলএ রিলিজিং |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১০৮ মিনিট |
দেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | ৮৫০,০০০ মার্কিন ডলার[2] |
আয় | ৮৩৪,৬৮৫ মার্কিন ডলার[1] |
২০০৩ সালের ১০ জুলাই ফিলাডেলফিয়া ইন্টারন্যাশানাল গে অ্যান্ড লেসবিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ল্যাটার ডেজ চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী ১২ মাসে এই ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মুক্তি পায়। পরে এটি অন্যান্য কয়েকটি দেশে মুক্তি পায় এবং একাধিক সমকামিতা-ভিত্তিক চলচ্চিত্র উৎসবেও মুক্তি পায়। এটিই প্রথম চলচ্চিত্র যাতে দ্য চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ ল্যাটার-ডে সেন্টস ও সমকামিতার মধ্যে সংঘাতের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এই ছবির প্রদর্শন বিতর্ক সৃষ্টি করে। একাধিক ধর্মীয় গোষ্ঠী এই ছবিটি প্রেক্ষাগৃহ ও ভিডিওর দোকান থেকে তুলে নেওয়ার দাবি জানায় এবং অন্যথায় বয়কটের হুমকি দেয়।
চলচ্চিত্র সমালোচকদের মধ্যে এই ছবিটি সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে অধিকাংশ চলচ্চিত্র উৎসবের দর্শকদের কাছে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। যদিও উত্তর আমেরিকান বক্স অফিসে ল্যাটার ডেজ মাত্র ৮৩৪,৬৮৫ মার্কিন ডলারের ব্যবসা করে। উল্লেখ্য এই ছবির প্রযোজনার খরচ ছিল আনুমানিক ৮৫০,০০০ মার্কিন ডলার। ২০০৪ সালে ফ্রিল্যান্স লেখক টি. ফ্যাব্রিস এই ছবিটি অবলম্বনে ল্যাটার ডেজ নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিল অ্যালিসন পাবলিকেশনস।
এল্ডার অ্যারন ডেভিস হলেন ইডাহোর পোকেটেলোর এক তরুণ মর্মন। তাকে মর্মন ধর্মবিশ্বাস প্রচারের জন্য অন্য তিন মিশনারির সঙ্গে লস এঞ্জেলসে পাঠানো হয়। তারা যে বাড়িতে ওঠেন, তার পাশেই এক ঘোষিতরূপে সমকামী পার্টি বয় ক্রিস্টিয়ান মার্কেলি তার রুমমেট তথা এক উদীয়মান গায়িকা জুলির সঙ্গে থাকেন। ক্রিস্টিয়ান ও জুলি লিলা’স নামে এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় ওয়েটার কাজ করেন। এই রেস্তোরাঁর মালকিন অবসরপ্রাপ্ত অভিনেত্রী লিলা মন্টানে।
ক্রিস্টিয়ান তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে বাজি ধরেন যে, তিনি মর্মনদের একজনকে প্রলুব্ধ করবেন। কিছুদিন পরেই তিনি বুঝতে পারেন সবচেয়ে অনভিজ্ঞ মিশনারি অ্যারন একজন ক্লোসেটেড সমকামী। অ্যাপার্টমেন্ট চত্বরে কয়েকবার দেখা হওয়ার পর অ্যারন ও ক্রিস্টিয়ানের মধ্যে আলাপ হয়। একদিন একটি ধাতব হোস পাইপে হাত কেটে ক্রিস্টিয়ান অজ্ঞান হয়ে যান। অ্যারন তাঁকে ঘরে নিয়ে আসেন এবং তাঁর ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে দেন। ক্রিস্টিয়ান অ্যারনকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, যৌনতার “কোনো উদ্দেশ্য থাকতে হবে, এমন নয়।” এই কথাটি শুনে সংশয়ী মর্মন অ্যারন মনে দুঃখ পান। ক্রিস্টিয়ান তার বিরুদ্ধে কৃত্রিম আচরণের অভিযোগ আনেন এবং ঘর থেকে বেরিয়ে যান। পরে ক্রিস্টিয়ানের মনে হয়, অ্যারন সম্ভবত ঠিকই বলেছেন। তিনি প্রোজেক্ট এঞ্জেল ফুডে এইডস আক্রান্ত লোকেদের খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন।
অ্যারনের সহকর্মী মিশনারি পল রাইডারের একটি সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। অ্যাপার্টমেন্টে ফেরার সময় চিন্তিত অ্যারনের সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানের দেখা হয়। ক্রিস্টিয়ান তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে যান। দুজনেই দুজনের গভীর অনুভূতির বাঁধনে ধরা পড়েন এবং একে অপরকে চুম্বন করেন। তারা দেখতে পাননি যে অ্যারনের রুমমেটরা ফিরে এসেছেন। লজ্জায় অ্যারনকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাইডার ক্রিস্টিয়ানের উপর রেগে গিয়েছিলেন। কারণ, তিনি মনে করতেন ক্রিস্টিয়ান অকারণে অ্যারনকে নষ্ট করেছেন। এই জন্য ক্রিস্টিয়ান রাইডারের মুখোমুখি হন। ক্রিস্টিয়ান স্বীকার করেন, প্রথমে তিনি শুধুমাত্র বাজিটাই জিততে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারপর “সেটা শুধু তাতেই থেমে থাকেনি”। ক্রিস্টিয়ানকে চিন্তিত দেখে রাইডার বলেন, অ্যারনের বিমান সল্ট লেক সিটিতে পাঁচ ঘণ্টার লেওভারে আছে।
অ্যারন এয়ারপোর্ট টার্মিনালের বাইরে বরফের উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় ক্রিস্টিয়ান তাকে দেখতে পান। ক্রিস্টিয়ান বলেন, তিনি অ্যারনকে ভালবাসেন। মনে দ্বিধা থাকা সত্ত্বেও অ্যারনও স্বীকার করেন, তিনি ক্রিস্টিয়ানকে ভালবাসেন। তুষার ঝড়ের জন্য সব ফ্লাইট বাতিল হয়ে গিয়েছিল। ক্রিস্টিয়ান ও অ্যারন সেই রাতে একটি মোটেলে ঘনিষ্ঠ কিছু মুহুর্ত কাটান। সকালে উঠে ক্রিস্টিয়ান দেখেন যে, অ্যারন চলে গেছেন। অ্যারনের পারিবারিক সম্পত্তি একটি পকেট ঘড়ি শুধু রেখে গিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানের কাছে। ক্রিস্টিয়ান লস এঞ্জেলসে ফিরে আসেন। ইডাহোতে অ্যারন চার্চের এল্ডারদের দ্বারা এক্সকমিউনিকেটেড হন। এই কাজে নেতৃত্ব দেন অ্যারনের বাবা ফ্যারন। তিনি ছিলেন স্টেক প্রেসিডেন্ট। অ্যারনের বাবা তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। অ্যারনের মা তাকে বকাঝকা করেন এবং বলেন অ্যারনের উচিত ক্ষমাপ্রার্থনা করা। অ্যারন বলেন, তিনি হয়ত সমকামী। অ্যারনের মা তাকে চড় মারেন। মানসিক চাপে অ্যারন আত্মহত্যা করতে যান। তারপর তার বাবা-মা তার সমকামিতা নিরাময়ের জন্য তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
ক্রিস্টিয়ান মরিয়া হয়ে অ্যারনের খোঁজ চালাতে থাকেন। তিনি অ্যারনের বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর জোগাড় করেন। অ্যারনের মা তাকে বলেন, “তোমার সৌজন্যে আমার ছেলে রেজার দিয়ে নিজের হাতের শিরা কেটেছে। তোমার সৌজন্যে আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি।” অ্যারন মারা গিয়েছেন ভেবে ক্রিস্টিয়ান পরের কয়েকটি দিন ক্রমাগত অ্যারনের চিন্তায় কাটিয়ে দেন। জুলি ক্রিস্টিয়ানের সেলফোন জার্নালের কয়েকটি এন্ট্রি থেকে ক্রিস্টিয়ানের অনুভূতিগুলির কথা জানতে পারেন। সেগুলি নিয়ে তিনি একটি নতুন গান বাঁধেন। ক্রিস্টিয়ান ইডাহোতে ডেভিসের কাছে আসেন। সেখানে তিনি কাঁদতে কাঁদতে অ্যারনের ঘড়িটি তার মাকে ফেরত দেন। জুলির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর জুলি কিছুটা দ্বিধাভরেই তার নতুন ভিডিওটি ক্রিস্টিয়ানকে দেখান। ক্রিস্টিয়ান এতে দুঃখিত হন। কারণ, তিনি বুঝতে পারেন যে, গানের কথার কিছু অংশ তার অনুমতি ছাড়াই তার ব্যক্তিগত জার্নাল থেকে নেওয়া হয়েছে। জুলি ক্রিস্টিয়ানকে বলেন, তিনি আশা করেন ক্রিস্টিয়ানের সঙ্গে ভাল কিছু ঘটবে।
চিকিৎসা চলাকালীন অ্যারন শুনতে পান একটি নারীকণ্ঠ গান গাইছে ও অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তিনি টেলিভিশনে একটি মিউজিক ভিডিও দেখেন। সেখানে জুলি গান গাইছিলেন। এই ভিডিওটি দেখে অ্যারন ঠিক করেন যে, তিনি লস এঞ্জেলসে এসে ক্রিস্টিয়ানের খোঁজ করবেন। ক্রিস্টিয়ানের অ্যাপার্টমেন্টে এসে অ্যারনের মন ভেঙে যায়। তিনি এক অপরিচিতের কণ্ঠস্বর শুনতে পান। তিনি ভাবেন, ক্রিস্টিয়ান আবার তার পার্টি বয় জীবনে ফিরে গিয়েছেন। তার আর যাবার কোনো জায়গা নেই। তিনি লিলার রেস্তোরাঁয় গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে রেস্তোরাঁর মালকিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। লিলার সঙ্গী মারা যাওয়ার পর তিনি মিশনারি কাজে লিপ্ত ছিলেন। ক্রিস্টিয়ান সেই রেস্তোরাঁতেই কাজ করতেন। তিনি বেরিয়ে আসেন এবং অ্যারনকে জীবিত দেখে আনন্দে আত্মহারা হন। তাদের মিলন ঘটে। ক্রিস্টিয়ানের সহকর্মীদের সঙ্গে তারা থ্যাংসগিভিং উদযাপন করেন। লিলা সবাইকে বলেন যে, যাই হোক না কেন, তারা সবসময় “আমার টেবিলে আর আমার হৃদয়ে স্থান পাবে।”
কক্স বলেছেন যে, এই ছবির প্রধান বিষয়বস্তু দুটি চরিত্রের প্রেমকাহিনি।[4] এখানে সমকামিতার প্রতি ধর্মীয় মনোভাবও পর্যালোচনা করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ সমকামীদের মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব এই ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, তারা যা এবং তারা যা বিশ্বাস করে তার মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ট। ট্রেম্বলিং বিটুইন জি-ডি নামে একটি কাহিনিবিহীন ছবির বিষয়বস্তুও এই ছবির অনুরূপ।[5]
কক্স আরও বলেছেন যে, এই ছবিতে একটি বড়োসড়ো বিদ্রুপ রয়েছে। যে বিদ্রুপ এই ছবিতেই শুধু নয়, মানুষের জীবনেও দেখা যায়। ধর্ম পারিবারিক জীবন ও তার গুরুত্বের উপর এতটাই দৃষ্টি দেয় যে সমকামিতা সংক্রান্ত শিক্ষা দিয়ে তা পরিবারগুলিকে ভেঙে দেয়।[4] বাস্তব ক্ষেত্রে, কক্স বিশ্বাস করেন না যে কোনো মর্মন সমকামী হতে পারেন না।[6] যদিও, ল্যাডার ডেজ চলচ্চিত্রের একটি প্রধান বিষয় হল এই যে, ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা ও মতবাদের বাইরেও জগতে একটি অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিকতা বিরাজ করে।[7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.