রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (Rohingya Solidarity Organisation or RSO) একটি রোহিঙ্গা রাজনৈতিক সংগঠন যা তাতমাডো-র (মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী) দ্বারা পরিচালিত একটি বৃহদায়তনিক সামরিক অভিযান অপারেশন ড্রাগন কিং এর পর ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনটি অতীতে একটি জঙ্গি সংগঠন ছিল, কিন্তু এর সশস্ত্র শাখাটি ১৯৮৮ সালে রোহিঙ্গা ন্যাশনাল আর্মি (RNA) তে যুক্ত হওয়ার ফলে সংগঠনটির সশস্ত্র জঙ্গি উপাদানটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

দ্রুত তথ্য রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন, নেতা ...
রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন
রোহিঙগা
নেতাআয়ুবখান
[1]
অপারেশনের তারিখ১৯৮২ (1982)–১৯৯৮ (1998) (সামরিকভাবে বিলুপ্ত)
সদরদপ্তরআরাকান
সক্রিয়তার অঞ্চলরাখাইন রাজ্য,
বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত
মতাদর্শরোহিঙ্গা জাতীয়তাবাদ
ইসলামবাদ
বিপক্ষ ইউনিয়ন অফ মায়ানমার
খণ্ডযুদ্ধ ও যুদ্ধরোহিঙ্গা দ্বন্দ্ব
FlagThumb
বন্ধ

রাখাইন রাজ্যের আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞগণ ২০০০ এর দশকের প্রথম দিকে আরএসও-কে একটি সক্রিয় জঙ্গি বাহিনী দাবি করে এর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।[2] ২০১৬ সালের অক্টোবরে বর্ডার পোস্টগুলোতে আক্রমণের জন্য আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (ARSA) দায় স্বীকার করার পূর্বে[3] মিয়ানমার সরকার আরএসও-কে দায়ী করেছিল।[4]

ইতিহাস

১৯৯০ এর দশকে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (RSO) এর সামরিক ঘাটির অবস্থান ছিল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কক্সবাজার জেলায়। ১৯৯১ সালে সাংবাদিক বারটিল লিন্টনারের একটি মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন অনুসারে, আরএসও এর কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হালকা মেশিন গান, একে-৪৭ এসল্ট রাইফেল, আরপিজি-২ রকেট লাঞ্চার, ক্লেমোর মাইন এবং বিষ্ফোরক ছিল।[5]

আরএসও এর সামরিক সম্প্রসারণের কারণে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে আরএসও বিদ্রোহীদের বিতাড়িত করতে মিয়ানমার সরকার একটি ব্যাপক পর্যায়ে পালটা আক্রমণ শুরু করে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে তাতমাডো সৈন্যরা সীমান্ত অতিক্রম করে, এবং ভুলবশত বাংলাদেশী সামরিক আউটপোস্টে গুলিবর্ষণ করে, এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কে অল্পদিনের জন্য টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। ১৯৯২ সালের এপ্রিলে আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা বেসামরিক জনগণকে জোরপূর্বক রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা হয়, এর ফলে এই এলাকায় সামরিক অভিযানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।[6]

১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে, প্রায় ১২০ জন আরএসও বিদ্রোহী নাফ নদী পাড় হয়ে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ প্রবেশ করে, যে নাফ নদী মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্ত তৈরি করেছে। ১৯৯৪ সালের ২৮ এপ্রিল মংদু এর বিভিন্ন এলাকায় আরএসও বিদ্রোহীরা ১২টি বিষ্ফোরক স্থাপন করেছিল। এদের মধ্যে ৯টি বিষ্ফোরিত হয়েছিল, যার ফলে একটি অগ্নিনির্বাপক যানবাহন, কয়েকটি দালান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং চারজন বেসামরিক লোক গুরুতরভাবে আহত হয়।[7]

১৯৯৮ সালের ২৮ অক্টোবরে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্ট এর সাথে যুক্ত হয়, এবং আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অরগানাইজেশন (ARNO) প্রতিষ্ঠিত হয়, যাকে কক্সবাজারে নির্বাসনে থেকে পরিচালিত করা হত।[6] এই সংগঠনের সশস্ত্র শাখা হিসেবে রোহিঙ্গা ন্যাশনাল আর্মি (RNA) প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০০২ সালে আফগানিস্তানে সিএনএন আল-কায়দার আর্কাইভ থেকে কয়েক ডজন ভিডিওটেপ পায়, যেখানে দেখানো হয় যে, মিয়ানমার থেকে আসা বিদ্রোহীরা আফগানিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।[8] অন্যান্য ভিডিওটেপগুলোতে আরবী ভাষায় "মিয়ানমার" লেখা ছিল, এবং এটা ধরে নেয়া হয়েছিল যে এই ভিডিও ফুটেজগুলো মিয়ানমারেই নেয়া হয়েছে, যদিও সেটার সত্যতা প্রতিপাদন করা হয়নি।[6][9] এশিয়ার ইন্টেলিজেন্স সোর্স অনুসারে, আরএসও-তে নতুন রোহিঙ্গা সদস্যদেরকে অংশগ্রহণের জন্য উপহার হিসেবে ৩০,০০০ বাংলাদেশি টাকা (৫২৫ মার্কিন ডলার) প্রদান করা হত, এবং তাদের মাসিক আয় ছিল প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা (১৭৫ মার্কিন ডলার)। যেসব জঙ্গি যুদ্ধে মারা যেত তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লক্ষ টাকা দেয়া হত (১,৭৫০ মার্কিন ডলার)। এদের মৃত্যুর পর পরিবারকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবার অঙ্গিকারটি অনেক তরুণ রোহিঙ্গা পুরুষকে (যেখানে রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই গরিব) পাকিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগানিস্তানে আত্মঘাতি হামলা করতে অনুপ্রাণিত করেছে।[6][9]

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.