Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
"রোমান সৈন্যবাহিনী" (ল্যাটিন: romanum legio ; legio শব্দের অর্থ "বাছাইকৃত সৈন্য") হল প্রাচীন রোম সেনাবাহিনীর একটি সুবিন্যস্ত সৈন্য বিভাগ।
ধারণা করা হয় রোম সাম্রাজ্যের গোড়ার দিকে এর পূর্ণ সেনাবাহিনীর নাম ছিল লিজিওন (Legion), তবে ঐ যুগের তথ্যের উৎসসমূহ অত্যন্ত স্বল্পসংখ্যক ও অনির্ভরযোগ্য।[1] ভিন্ন ভিন্ন সময়ের লিজিওনসমূহের আকার আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকলেও সাধারণতঃ প্রতি লিজিওনে ৫,০০০ সৈন্য থাকত। রোমান প্রজাতন্ত্রে যুগে প্রতিটি লিজিওন তিন সারিতে বিভক্ত থাকত এবং প্রতিটি সারি ১০টি ম্যানিপ্ল (Maniples)-এর সমন্বয়ে গঠিত ছিল। রোমান প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসের শেষভাগে এবং রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অনেকাংশজুড়ে (খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ সাল থেকে) প্রতিটি লিজিওন ১০টি কোহর্ট (Cohort)-এ বিভক্ত ছিল এবং প্রতিটি কোহর্ট ৬টি (কিংবা ৫টি) সেঞ্চুরি (Century)-তে বিভক্ত ছিল। আবার প্রতিটি লিজিওনের সাথে থাকত অশ্বারোহী সেনাদের একটি ছোট দল। ৩য় শতাব্দী খ্রিষ্টাব্দে লিজিওনসমূহের আকার হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ১০০০ থেকে ১৫০০ জন সৈন্যে, এবং সেনাবাহিনীতে লিজিওনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। ৪র্থ শতাব্দী খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে (লিমিটানেই) লিজিওনের আকার আরো ছোট হয়ে যায়। রোমান প্রজাতন্ত্র যুগের লিজিওন বাহিনীর গঠনপ্রণালী সম্ভবত প্রাচীন গ্রীক ও ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের ফ্যালাংক্স (Phalanx) নামক ঘন সন্নিবিশিষ্ট সৈন্যদের প্রতিরক্ষাব্যূহের গঠন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।[2]
রোমান সাম্রাজ্যের যুগে রোমান সেনাবাহিনীর অভিজাত ভারি পদাতিক বিভাগ ছিল লিজিওন বাহিনী, এ বাহিনীতে শুধুমাত্র রোমান নাগরিকদেরকেই নিযুক্ত করা হত। সেনাবাহিনীর অবশিষ্ট অংশ ছিল সহকারী যোদ্ধাগণ (Auxiliary), যারা অতিরিক্ত পদাতিক সেনা ও রোমান বাহিনীর অশ্বারোহী বিভাগ গড়ে তুলত। (প্রাদেশিক অঞ্চলসমূহের বাসিন্দারা রোমান নাগরিক হতে ইচ্ছুক হলে তাদেরকে রোমান সহযোগী বাহিনী থেকে "সম্মানজনক অব্যাহতি" নিতে হত)। রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অধিকাংশ সময়ে বাহিনীর সিংহভাগ যোদ্ধা ছিল এসমস্ত সহকারী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত, লিজিওন বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত নয়।[3]
খ্রিস্টপূর্ব ৪০ সালের পূর্বে যেসকল লিজিওন গড়ে তোলা হয়েছিল তা অন্তত ৫ম শতাব্দী খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল, বিশেষ করে খ্রিস্টপূর্ব ৪০ সালে সম্রাট অগাস্টাস কর্তৃক গঠিত ৫ম লিজিও ম্যাসিডোনিয়া (Legio V Macedonia), এই লিজিওনটি ৭ম শতাব্দীতে ইসলামী অভিযানের পূর্ব পর্যন্ত মিসরে নিযুক্ত ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব ১০৭ সালে রোমান সেনাপতি ম্যারিয়ান কর্তৃক সংস্কারের পূর্ব পর্যন্ত লিজিওনসমূহ রোমান সেনাবাহিনীর স্থায়ী বিভাগ ছিল না, বরং বিভিন্ন যুদ্ধের সময় তাদের সংগঠিত করা হত এবং যুদ্ধ শেষে আবার এ বাহিনীগুলো ভেঙে দেয়া হত। রোমানদের ইতিহাসে এরূপ কয়েক শত লিজিওনের নাম ও সংখ্যা উল্লিখিত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ টি লিজিওনের নাম চিহ্নিত করা গেছে। রোম প্রজাতন্ত্রের যুগে লিজিওনসমূহ গঠিত হত এর নাগরিকদের সমন্বয়ে, যারা নিজ নিজ অস্ত্রশস্ত্রের ব্যয়ভার বহন করে থাকত। একারণে রোমান বাহিনীর গঠনপ্রণালী এর সামাজিক অবস্থাকে প্রতিফলিত করত, এবং যেকোন সময়ে চারটি কনস্যুলার লিজিওন বিদ্যমান থাকত, যার নেতৃত্ব দিতেন দু'জন ক্ষমতাসীন কনস্যাল (রোমান নাগরিক সভা বা সিনেট-এর প্রধান সদস্যদেরকে কনস্যাল বলা হত, যাঁদের ওপর পালাক্রমে শাসনভার অর্পিত হত)। যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রয়োজন অনুসারে অতিরিক্ত লিজিওন গঠিত হত। রোমান বাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্যে অবশ্যই রোমান নাগরিক হতে হত এবং রোম নগরীতে ভূমির স্বত্বাধিকারী হওয়াও আবশ্যক ছিল। এসব নিয়মের কারণে খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে রোমের লিজিওন গঠন করার জন্যে লোকবলের অভাব দেখা দেয়। এসময় কনস্যাল গাইয়াস মারিয়াস রোমান বাহিনীতে যোগদানের নিয়মাবলী শিথিল করে দেন, ঘোষণা দেয়া হয় যে, যেকোন রোমান নাগরিক রোমান বাহিনীতে নিযুক্ত হতে পারবে, তাদের ধনসম্পত্তি বা সামাজিক শ্রেণী যাই হোক না কেন। তদুপরি সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র ও সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্যে পুরস্কারও দেয়া হবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এর ফলে রোমান বাহিনী পরিণত হয় একটি স্থায়ী, পেশাদার ও স্বেচ্ছায় নিযুক্ত হওয়া সৈন্যদের দ্বারা গঠিত একটি বাহিনীতে; যার সদস্য শুধু রোমান নাগরিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং অনাগরিকেরাও সহযোগী বাহিনীতে (Auxiliary) নিযুক্ত হতে পারত। এমনকি অনাগরিকেরা সেনাবাহিনীতে নির্দিষ্ট বছর চাকরির জন্য তাদেরকে পুরস্কারস্বরূপ রোমের নাগরিকত্ব প্রদান করা হত এবং রোমান নাগরিকদের ন্যায় তারা পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হত। সম্রাট অগাস্টাসের শাসনের শুরুতে এরূপ ৫০টি লিজিওন বিদ্যমান ছিল, পরবর্তীতে তা কমিয়ে ২৫-৩৫টি লিজিওনে নিয়ে আসা হয়। এই লিজিওন সংখ্যা রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস জুড়ে অক্ষুণ্ণ ছিল।
রোমান প্রজাতন্ত্রে লিজিওনের সৈন্যসংখ্যা ছিল ৩,০০০ জন, রোমান সাম্রাজ্যের যুগে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫,২০০ জন সৈন্যে, যার একেকটি মৌলিক বিভাগগুলোকে বলা হত সেঞ্চুরি (প্রতিটি সেঞ্চুরিতে ১০০ জন সেনা অন্তর্ভুক্ত ছিল)। খ্রিষ্টাব্দ ১ম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রতিটি রোমান লিজিওন বিভক্ত ছিল ১০টি কোহর্ট-এ। প্রতিটি কোহর্টে ছিল মোট ৫০০ জন সেনা (৫টি সেঞ্চুরি)। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে এ নিয়ম পরিবর্তন করে লিজিওনপ্রতি ৯টি কোহর্ট, কোহর্টপ্রতি ৬টি সেঞ্চুরি এবং সেঞ্চুরিপ্রতি ৮০ জন সৈন্য- এ নিয়মের প্রচলন করা হয়, তাছাড়ে প্রতি লিজিওনের প্রথম কোহর্টটি ছিল আকারে দ্বিগুণ (৫টি দ্বিগুণ আকারের সেঞ্চুরি, প্রতিটিতে ১৬০ জন সৈন্য করে)। খ্রিষ্টাব্দ ৪র্থ শতাব্দীর লিজিওনসমূহ আকারে বেশ ছোট ছিল, প্রতিটিতে মাত্র ১,০০০ থেকে ১,৫০০ জন সৈন্য থাকত, অবশ্য মোট লিজিওনের সংখ্যা অধিক ছিল। এর কারণ হল বিশালাকৃতির ১০,০০০ সৈন্য সংবলিত লিজিওনসমূহ এবং সহকারী বাহিনীগুলো ভেঙে ছোট ছোট দলে বিভক্ত করায় তাদেরকে বিস্তৃত ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়া যেত। খ্রিষ্টাব্দ ৪র্থ শতাব্দীতে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের সীমান্তরক্ষী বাহিনী লিমিটানেই-এর লিজিওনসমূহ ছিল আরো ছোট ভাগে বিভক্ত। রোমান প্রজাতন্ত্র যুগের লিজিওন বাহিনীর গঠনপ্রণালী সম্ভবত প্রাচীন গ্রীক ও ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের ফ্যালাংক্স (Phalanx) নামক ঘন সন্নিবিশিষ্ট সৈন্যদের প্রতিরক্ষাব্যূহের গঠন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।[2]
একটি সাধারণ লিজিওনের আকার প্রাচীন রোমের ইতিহাসে বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের যুগে প্রতি লিজিওনে ৪,২০০ জন লিজিওনারি (লিজিওনের সেনাদের বলা হত লিজিওনারি) এবং ৩০০ জন একুইটেস বা অশ্বারোহী ছিল। (এসময়কার অশ্বারোহীদের নেয়া হত অভিজাত ও সম্পদশালী শ্রেণীর নাগরিকদের থেকে কেননা প্রজাতন্ত্রের সময় প্রতিটি সৈন্য তাদের নিজ নিজ অস্ত্রশস্ত্র, বাহন ইত্যাদির ব্যয়ভার বহন করত)। এসময় লিজিওনপ্রতি ১০টি কোহর্ট, কোহর্টপ্রতি ১০টি ম্যানিপ্ল এবং ম্যানিপ্লপ্রতি ১২০ জন সৈন্য থাকত। অপরদিকে রোমান সাম্রাজ্যের সময় এ সংখ্যার পরিবর্তন করা হয়, তখন প্রতি লিজিওনে ৫,২০০ জন সৈন্য ও ১২০ জন সহযোগী সৈন্য অন্তর্ভুক্ত ছিল (প্রতি লিজিওনে ১০টি কোহর্ট, ১ম কোহর্টে ৮০০ সেনা এবং অপর ৯টি কোহর্টের প্রতিটিতে ৪৮০ জন করে সেনা)।
লিজিওন প্রথা প্রচলিত হওয়ার পূর্বে রোমান রাজ্যের প্রারম্ভিক পর্যায়ে এর সৈন্যবাহিনী প্রায় ১০০ জন সেনাবিশিষ্ট সেঞ্চুরিসমূহে বিভক্ত ছিল। এই সেঞ্চুরিসমূহকে প্রয়োজন অনুসারে একত্রিত করা হত এবং তারা তাদের আনুগত্য ছিল যে ব্যক্তি তাদের ভাড়া করে কিংবা সংগঠিত করে সে ব্যক্তির প্রতি। হালকা পদাতিক বাহিনী ও অশ্বারোহী বাহিনী সংবলিত এই স্বাধীন সংগঠন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দী পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীকালে এই প্রথা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয় যখন সহায়ক বাহিনীর ভূমিকা পালন করে বিভিন্ন মিত্রগোষ্ঠীর সৈন্যেরা। এ সময়কার নেতৃত্বের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, প্রতি সেঞ্চুরির নেতৃত্ব ছিল একজন সেনাপতি বা সেঞ্চুরিয়ন-এর, এবং তার সাথে থাকতেন একজন সহকারী সেনাপতি এবং একজন পতাকাবাহক। রোমের প্রাথমিক পর্যায়ের ইতিহাস বহুলাংশেই দলিল-প্রমাণবিহীন এবং বিভিন্ন উপকথা মিশ্রিত। কিন্তু এসব উপকথা অনুসারে সম্রাট সার্ভিয়াস টুলিয়াস-এর শাসনামলে আদমশুমারি (census) প্রথার প্রথম প্রচলন করা হয়। (ইংরেজি "census" শব্দটি এসেছে লাতিন 'censeō থেকে, যার অর্থ: "লোক গণনা")। অতঃপর প্রতিটি স্বাস্থ্যবান, ভূমি-স্বত্বাধিকারী পুরুষ নাগরিকগণকে তাদের সম্পত্তি ও সামাজিক অবস্থান অনুসারে ৫টি শ্রেণীতে বিভক্ত করে সে অনুসারে সৈন্যবাহিনী গঠন করা হত, অতঃপর প্রতি ১০০ জন সৈন্য নিয়ে একেকটি সেঞ্চুরি গঠন করা হত। এই সেঞ্চুরিসমূহ একত্রিত হয়ে একটি বৃহত্তর রোমান বাহিনী গঠিত হত, যার নাম দেয়া হয় লিজিও ("legio", যার অর্থ: সৈন্য সমাবেশ)। সেনাবাহিনীতে যোগদান করা ছিল প্রতিটি রোমান নাগরিকের কর্তব্য এবং সম্মানের প্রতীকও বটে। সেনাপতি ম্যারিয়ানের সংস্কারের পূর্বে সর্বাপেক্ষা সম্পদশালী ব্যক্তি সামরিক বাহিনীতেও সবচেয়ে বেশি বছর নিযুক্ত থাকতেন। কেননা কখনো যদি রোমান রাষ্ট্রের পতন হত, এই ব্যক্তিদের সবচেয়ে বেশি হারাবার সম্ভাবনা ছিল।
কোন এক সময়, খুব সম্ভব রোমান প্রজাতন্ত্রের প্রাথমিক পর্যায়ে, "লিজিও" বিভক্ত ছিল দু'টি পৃথক লিজিওনে, প্রতিটি লিজিওনের নেতৃত্বে ছিলেন দু'জন ক্ষমতাসীন কনস্যাল। প্রজাতন্ত্রে প্রথম বৎসরগুলোতে যুদ্ধ পরিচালনা সীমাবদ্ধ ছিল ছোটখাট ঝটিকা হামলার মধ্যে, তখন সমগ্র রোমান বাহিনী একত্রে যুদ্ধে লিপ্ত বলে মনে করা হয়না। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯৪ সালে যখন তিনটি বৈদেশিক পরাশক্তির উদ্ভব হল তখন রোমের শাসক ম্যানিয়াস ভ্যালেরিয়াস ম্যাক্সিমাস ১০টি লিজিওন দাঁড়া করালেন, রোমান ইতিহাসবিদ লিভি (Livy)-এর মতে যা ছিল তখনো পর্যন্ত রোম কর্তৃক গঠিত সর্ববৃহৎ বাহিনী।[4]
এছাড়া লিজিওন সংগঠনের বাইরেও রোমান বাহিনী যুদ্ধ পরিচালনা করে থাকত, এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭৯ সালে ফ্যাবিয়া পরিবার (gens Fabia) কর্তৃক পরিচালিত গোত্র বাহিনী যারা এট্রুস্কান সভ্যতার নগরী ভেই (Veii)-এ হামলা চালায় (এই যুদ্ধে গোত্রবাহিনীটি সম্পূর্ণ পরাস্ত ও নিহত হয়)। খ্রি.পূ. ৪র্থ শতাব্দীতে রোমানগণ আরো বড় পরিসরে ও আরো ঘন ঘন যুদ্ধ পরিচালনা করা শুরু করলে সংগঠিত লিজিওন বাহিনীর ব্যবহার বেড়ে যায়। এবং প্রতি কনস্যালের বাহিনীতে একটির পরিবর্তে দু'টি করে লিজিওন নিযুক্ত করা হয়।
প্রজাতন্ত্রের লিজিওনসমূহ ছিল ক্ষণস্থায়ী। শুধুমাত্র লিজিও ১-৪ (Legio I - IV) ছিল স্থায়ী বাহিনী যার নেতৃত্বে কনস্যালদ্বয় ছিলেন। অপরাপর লিজিওনসমূহ যুদ্ধকাল প্রয়োজন অনুসারে অস্থায়ীভাবে গঠন করা হত। রোমের ইতালীয় মিত্রদের দায়িত্ব ছিল প্রতিটি লিজিওনকে সহায়তা করার জন্যে ১০ কোহর্ট পরিমাণ সৈন্য সরবরাহ করা।
প্রজাতন্ত্র যুগের মধ্যভাগে নিম্নে উল্লিখিত বিভাগসমূহ নিয়ে লিজিওন গঠিত হত:
এই তিনটি সারিই ১০টি করে কৌশলগত বিভাগে বিভক্ত থাকত যাদের বলা হত ম্যানিপ্ল। একটি ম্যানিপ্লে থাকত দু'টি সেঞ্চুরি এবং তার নেতৃত্বে থাকতেন দু'জন সেঞ্চুরিয়ন-এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞ যিনি। এসময়ে প্রতিটি হেসটাটি ও প্রিংকিপে বাহিনীর সেঞ্চুরিতে থাকত ৬০ জন সৈন্য; ট্রিয়ারি বাহিনীর সেঞ্চুরিতে থাকত ৩০ জন। এই ৩,০০০ জন সৈন্য (২০টি ম্যানিপ্ল-এ ১২০ জন করে, এবং ১০টি ম্যানিপ্ল-এ ৬০ জন করে), তাদের সহকারী ১,২০০ জন ভেলিটেস এবং ৩০০ জন অশ্বারোহী সবমিলে ৪,৫০০ জন যোদ্ধা প্রজাতন্ত্রের এক একটি লিজিওন গঠন করত, ম্যানিপ্ল দ্বারা গঠিত এ লিজিওনকে বলা হত ম্যানিপুলার লিজিওন।
ম্যারিয়ান সংস্কার (গাইয়াস ম্যারিয়াস কর্তৃক সেনাবাহিনীর সংস্কার)-এর সময় প্রতি সেঞ্চুরিতে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে ৮০ জন সৈন্যে নেয়া হয়। এবং ২ সেঞ্চুরি বিশিষ্ট ম্যানিপ্ল-এর পরিবর্তে ৬ সেঞ্চুরি বিশিষ্ট কোহর্ট গঠন করা হয়। প্রতিটি সেঞ্চুরির একটি আলাদা পতাকা থাকত এবং প্রতিটি সেঞ্চুরি ৮-সদস্যবিশিষ্ট ১০টি দলে (কন্টুবার্নিয়া) বিভক্ত থাকত। এই ৮ জন সৈন্য একই সাথে থাকত এবং তাদের দলের ব্যবহারের জন্য একটি করে তাঁবু, যাতাকল, ভারবাহী গাধা এবং রান্নার পাত্র থাকত।
খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে রোমান সেনাপতি গাইয়াস ম্যারিয়াস রোম সেনাবাহিনীতে ব্যপক সংস্কার আনেন, এতে করে লিজিওন বাহিনী একটি সংকীর্ণ অর্থ সংকীর্ণ ধারণ করে, এর প্রচলিত অর্থ হয়ে দাঁড়ায় সারিবদ্ধ সৈন্য সংবলিত ভারি পদাতিক বাহিনী।
খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে গাইয়াস ম্যারিয়াস পূর্ববর্তী অস্থায়ী লিজিওন বাহিনী গঠনের প্রথা বিলুপ্ত করে এর পরিবর্তে স্থায়ী পেশাদার সেনাবাহিনী গঠন করেন যার লোকবল সংগৃহিত হত দরিদ্র শ্রেণীর নাগরিকদের মধ্য থেকে, যার ফলে রোম বৃহদাকার সেনাবাহিনী গঠন করতে সফল হয় এবং বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মস্থানও হয়। তবে, এর ফলে সৈন্যরা তাদের রাষ্ট্র রোমের পরিবর্তে অনুগত হওয়ার পরিবর্তে নিজ নিজ সেনাপতিদের প্রতি অনুগত হয়ে পড়ে। একারণেই পরবর্তী সময়ে জুলিয়াস সিজার তার অনুগত বাহিনী নিয়ে রুবিকন নদী পার করে রোমের ওপর আক্রমণ করতে পারেন এবং ক্ষমতা দখল করে রোম প্রজাতন্ত্রের অবসান করতে পারেন।
রোম প্রজাতন্ত্রের শেষভাগ ও রোম সাম্রাজ্যের প্রথমভাগের লিজিওনসমূহকে বলা হয় "ম্যারিয়ান" লিজিওন। খ্রিষ্টপূর্ব ১০১ সালে ভারসিলির যুদ্ধের (Battle of Vercellae) পর সেনাপতি ম্যারিয়াস সকল ইতালীয় সেনাগণকে রোমের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। সিনেটের কাছে তিনি এই যুক্তি পেশ করেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রের তাণ্ডবের মধ্যখানে তিনি রোমান যোদ্ধ এবং মিত্রবাহিনীর যোদ্ধার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেননি। এঘটনার পর "মিত্র লিজিওন" বলতে আর কিছু অবশিষ্ট রইল না, কারণ ইতালির সকল লিজিওনই তখন রোমান লিজিওন বলে গণ্য করা হতে থাকে, এবং এর সৈন্যদেরকে রোমান নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। তদুপরি উপরে বর্ণিত তিন শ্রেণীর পদাতিক বিভাগের পরিবর্তে সকল সৈন্যকে এক শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের সাজসজ্জা ছিল অনেকটা "প্রিংকিপে"দের মত: তাদের সাথে থাকত দু'টি ভারি বর্শা বা পিলাম, একটি নাতিদীর্ঘ তলোয়ার বা গ্ল্যাডিয়াস, আংটা বিশিষ্ট বর্ম (chain mail), শিরস্ত্রাণ এবং একটি চৌকনাকৃতি ঢাল যাকে বলা হত স্কুটাম।
এসময় মিত্র লিজিওনগুলোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মিত্রবাহিনীর সহকারী যোদ্ধারা, যাদের বলা হত অক্সিলিয়া (Auxilia)। এই অক্সিলিয়া বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল বিশেষ সৈন্যরা যাদের মধ্যে ছিল প্রকৌশলী ও পথপ্রদর্শক, যুদ্ধাস্ত্র বিশেষজ্ঞ, কারিগর এবং অপরাপর অনাগরিক, স্থানীয় বাহিনী ও ভাড়াটে সৈন্যরা। এদেরকে কয়েকটি নির্দিষ্ট বিভাগে বিভক্ত করা হত যেমন: হালকা অশ্বারোহী, হালকা পদাতিক বা ভেলিটেস, শ্রমিক প্রভৃতি। অপর একটি বিভাগ ছিল ১০ বা ততোধিক অশ্বারোহীদের একটি দল যাদের কাজ ছিল শত্রুসৈন্যের গতিবিধি লক্ষ্য করা, বার্তা বহন করা, এদের বলা হত "স্পেকুলেটোরেস"; এছাড়া গুপ্তচরবৃত্তিতেও এদেরকে ব্যবহার করা হত।
ম্যারিয়ান সংস্কারের অংশ হিসেবে লিজিওনসমূহের গঠনপ্রণালীকে একটি নির্দিষ্টরূপ দেয়া হয়েছিল। প্রতিটি লিজিওন বিভক্ত ছিল ১০টি কোহর্ট-এ। ইতোপূর্বে কোহর্টসমূহ ছিল একটি অস্থায়ী দল, যারা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে দুই বা ততোধিক ম্যানিপ্ল এর সমন্বয়ে গঠিত হত, যাদের স্থায়িত্ব তৎকালীন অস্থায়ী লিজিওনসমূহ থেকেও কম ছিল। সংস্কারের পর কোহর্ট সমূহ এক একটি স্থায়ী বিভাগে পরিনত করা হয়। প্রতিটি কোহর্টে থাকত ৬টি সেঞ্চুরি, এবং প্রতি লিজিওনের ১ম কোহর্টে ছিল ৫টি দ্বিগুণ শক্তির সেঞ্চুরি। প্রতিটি সেঞ্চুরির নেতৃত্বে ছিলেন একজন সেঞ্চুরিয়ন এবং তার সহকারী একজন অপটিও। কোহর্টসমূহ ছিল লিজিওনের মৌলিক কৌশলগত বিভাগ। লিজিওনের ভেতরে পদমর্যাদা দেয়া হত যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অনুসারে; লিজিওনের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সেঞ্চুরিয়ন নেতৃত্ব দিতেন ১ম কোহর্টের ১ম সেঞ্চুরিকে, তাকে বলা হত "প্রাইমাস পিলাস" (Primus pilus) বা "প্রথম বর্শা", এবং তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ (লেগেইট এবং ট্রিবিউনি)-এর সাথে সরাসরি কথা বলতেন। পেশাদার সৈন্যদের যুদ্ধক্ষেত্রে অবদান ও সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্যে পদোন্নতি দেয়া হত। একজন সদ্য পদোন্নতি পাওয়া সেঞ্চুরিয়ন নেতৃত্ব পেতেন ১০ম কোহর্টের ৬ষ্ট সেঞ্চুরির (লিজিওনের সর্বশেষ সেঞ্চুরি) এবং সেখান থেকে তিনি ধীরে ধীরে পদোন্নতি পেয়ে উচ্চপদে আসার সুযোগ পেতেন।
প্রতি লিজিওনে একটি সমন্বিত মালবাহী বহর থাকত, যাতে থাকত ৬৪০টি ভারবাহী খচ্চর (প্রতি ৮জন লিজিওনারির জন্যে ১টি করে), যাদের দ্বারা সৈন্যদের সাজসরঞ্জাম বহন করানো হত। এই লটবহর যাতে ভারি ও ধীরগতির না হয়ে যায় সেজন্যে প্রতিটি সৈন্য নিজে যতটা সম্ভব সরঞ্জাম বহন করত, যেমন তার বর্ম, অস্ত্রশস্ত্র এবং ১৫ দিনের খাদ্য ইত্যাদি যার সম্মিলিত ওজন হয়ে দাঁড়াত প্রায় ২৫-৩০ কিলোগ্রাম। মাল বহনের সুবিধার্থে সৈন্যদেরকে একজোড়া লাঠি দেয়া হত। এই বিপুল পরিমাণ ভার বহন করতে হত বলে এই সৈন্যদের কৌতুকের ছলে ডাকা হত "ম্যারিয়াসের খচ্চর" বলে। এ পদ্ধতির জন্যে মালামাল বহরের জন্য সৈন্যবাহিনীকে অপেক্ষা করে থাকতে হত না, ফলে প্রয়োজন পড়লে তারা লটবহরকে পেছনে ফেলে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারত।
সাধারণতঃ এসময়কার প্রতিটি লিজিওনে ৫,১২০ জন সৈন্য থাকত, তাদের সাথে আরো থাকত ছাউনি কর্মী, চাকর ও দাস প্রভৃতি। সহকারী যোদ্ধাসমেত এক একটি লিজিওনে ১১,০০০ জন পর্যন্ত যোদ্ধা থাকতে পারত। তবে রোমান সাম্রাজ্যের শেষ পর্যায়ে এই সংখ্যা কমিয়ে মাত্র ১,০০০ জনে নিয়ে আসা হয়, যাতে করে বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড প্রতিরক্ষার্থে লিজিওনসমূহকে ছড়িয়ে দেয়া যায় এবং তাদের রসদ সরবরাহ সুবিধাজনক হয়। আবার বিভিন্ন যুদ্ধে সৈন্যেরা হতাহত হওয়াতেও এ সংখ্যায় তারতম্য হয়; যেমন জুলিয়াস সিজারের গল অভিযানে প্রতি লিজিওনে কেবল ৩,৫০০ সেনা ছিল।
এসময় রণকৌশলে অতীতের তুলনায় খুব একটা পরিবর্তন আনা হয়নি, তবে পেশাদার সেনাবাহিনী গঠন করায় তাদের কার্যকারিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।
রোম প্রজাতন্ত্রের শেষ যুগে ম্যারিয়াস কর্তৃক সংস্কারের পরবর্তীতে লিজিওনসমূহ রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে লিজিয়নসমূহ একজন জনপ্রিয় ও বাক্যবাগীশ নেতার নেতৃত্বে চলে আসার আশঙ্কা পরিলক্ষিত হয়। রোমের গভর্নরগণকে তাদের নেতৃত্বাধীন লিজিওনসমূহ নিয়ে তাদের প্রাদেশিক সীমান্তের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়। জুলিয়াস সিজার এ নিয়ম ভঙ্গ করেন এবং তার লিজিওন বাহিনী সমেত তিনি তার প্রদেশ গল ত্যাগ করেন ও রুবিকন নদী পার হয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেন। এতে করে রোমে একটি সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হয়। এ সংকট এবং রোমের গৃহযুদ্ধের ফলশ্রুতিতে অবশেষে রোম প্রজাতন্ত্রের পতন হয় এবং এর স্থলে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭ সালে অগাস্টাস কর্তৃক রোমান সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়।
রোমের গৃহযুদ্ধের সময় সেনাপতিরা নিজ নিজ লিজিওন গড়ে তোলেন এবং এদেরকে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সংখ্যায়িত করেন। এসময় অনেকক্ষেত্রেই জেমিনা বা জোড়া লিজিওনের উদ্ভব হয়, যেখানে দু'টি লিজিওন একত্রিত করে একটি বাহিনীতে পরিণত করা হয় (পরবর্তী সময়ে এদের আনুষ্ঠানিক বাহিনীর মর্যাদা দেয়া হয় এবং এদের নেতৃত্বে একজন লেগেটাস (Legatus) এবং ৬জন ডুকেস (duces)-কে নিযুক্ত করা হয়)। সেনাপতি মার্কাস অ্যান্টোনিয়াস (বা মার্ক অ্যান্টনি)-এর বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর সম্রাট অগাস্টাস- এর নিকটে প্রায় ৫০টি লিজিওন অবশিষ্ট থাকে, এর মধ্যে অনেক লিজিওনকে সংখ্যাবিভ্রাটের কারণে একাধিকবার গণনা করা হয় (যেমন ১০ম লিজিওন বা Legio Xকে একাধিকবার গণনা করা হয়)। নানান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে অগাস্টাস লিজিওনের সংখ্যা কমিয়ে ২৮টি তে নিয়ে আসেন (টিউটরবার্গ অরণ্যের যুদ্ধে ৩টি লিজিওন জার্মানিক গোত্রের কাছে পরাস্ত ও নিহত হওয়াতে এ সংখ্যা আরো কমে ২৫টি-তে নেমে আসে)।
সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে অগাস্টাস সৈন্যদের মজুরি নির্ধারণ ও পরিশোধে মনোযোগ দেন, তিনি সহকারী যোদ্ধাদের সংখ্যা বহুলাংশে বৃদ্ধি করে পেশাদার লিজিওনারি যোদ্ধাদের সমপরিমাণে নিয়ে আসেন। তিনি সম্রাটের দেহরক্ষী "প্রিটোরিয়ান" রক্ষীবাহিনী গঠন করেন এবং একটি স্থায়ী নৌবাহিনীও গঠন করেন যেখানে লিবার্টি বা মুক্তিপ্রাপ্ত দাসগণ চাকুরি করতে পারত। অস্থায়ী লিজিওন সমূহকে স্থায়ী রূপ দেয়া হয়। তদুপরি লিজিওনসমূহের জন্য স্থায়ী ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়, যেগুলোকে বলা হত কাস্ট্রা লিজিওনারিয়া (লিজিওনারি দুর্গ)।
অগাস্টাসের সামরিক নীতিসমূহ কার্যকর ও ব্যয়সাপেক্ষ বলে প্রমাণিত হয়, এবং তার উত্তরসূরিগণও তার প্রচলিত নিয়মাবলী অনুসরণ করেন। এই সম্রাটগণ প্রয়োজনের খাতিরে সাবধানতার সাথে নতুন লিজিওন গঠন করতেন এবং একপর্যায়ে সাম্রাজ্যে লিজিওনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০টি-তে দাঁড়ায় (এর থেকেই দার্শনিক ফ্যাভোরিনাসের এই উক্তির উদ্ভব, "৩০টি লিজিওনের মালিকের সঙ্গে বিতর্কে যাওয়া বুদ্ধির কাজ নয়")। প্রতি লিজিওনে ৫,১২০ জন লিজিওনারি (লিজিওনের পেশাদার যোদ্ধা) থাকত এবং তাদের সমপরিমাণ সহযোগী যোদ্ধা থাকত (ট্যাকিটাসের মতে)। রোমের দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির সময় প্রতি লিজিওন-প্রধানের অধীনে প্রায় ১১,০০০ জন পর্যন্ত লোক মোতায়েন থাকত। স্বনামধন্য লিজিওন এবং শত্রুভাবাপন্ন ভূখণ্ডসমূহে নিযুক্ত লিজিওনসমূহে সহকারী যোদ্ধার পরিমাণ অধিক হত। সম্রাট সেভেরাসের শাসনামলে (খ্রি. ১৯৩ - খ্রি. ২১১) সেনাবাহিনীর মোট যোদ্ধার ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশই ছিল সহকারী (Auxiliary) যোদ্ধা, মোট ৪,৪৭,০০০ যোদ্ধার মধ্যে যাদের সংখ্যা ছিল ২৫০,০০০ জন। কোন কোন লিজিওনে সময়ের প্রয়োজনে ১৫,০০০- ১৬,০০০ সৈন্যও মোতায়েন থাকত, যা একটি আধুনিক সেনাবাহিনীর ডিভিশনের সমান।
রোমান সাম্রাজ্যের যুগে লিজিওনসমূহ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে কখনো কখনো সাম্রাজ্যে কোন নতুন একনায়কের উত্থানকে দমন করা হত, আবার কখনো তাদের সাহায্যে নতুন একনায়ক ক্ষমতায় আসীন হত। উদাহরণস্বরূপ "চার সম্রাটের বৎসর"-এ সম্রাট ভিটেলিয়াসের পরাজয় ঘটে যখন দানিউব অঞ্চলে নিযুক্ত লিজিওনসমূহ তার পরিবর্তে সম্রাট ভেসপাসিয়ানকে সমর্থন দেয়।
সাম্রাজ্যের লিজিওনসমূহের আকার আকৃতি নির্দিষ্ট করা হয়। প্রতিটি লিজিওনের নিজস্ব প্রতীক এবং নিজস্ব ইতিহাস ছিল এবং এর সৈনিকেরা নিজ নিজ লিজিওনের সদস্য হওয়াকে গৌরবের প্রতীক বলে মনে করত। লিজিওন প্রধানকে বলা হত লেগেটাস বা লেগেইট। তাদের বয়স ত্রিশোর্ধ ছিল, তারা সাধারণতঃ সিনেটর (রোমান সংসদ বা সিনেট-এর সদস্য) থাকতেন যাদের ৩ বছর মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হত। লেগেইট-এর অধীনে থাকতেন ৬জন সামরিক ট্রিবিউন। এদের মধ্যে ৫জন থাকতেন সেনা-অফিসার এবং একজন থাকতেন অভিজাত বংশীয় নাগরিক, যিনি সিনেটর হওয়ার আশা রাখতেন (এই ট্রিবিউন লিজিওনের কর্তৃত্বে থাকতেন)। এছাড়াও বিশেষ অফিসারগণের একটি দলে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, নথি সংরক্ষক, ঘাঁটি-অধিনায়ক (praefectus castrorum) প্রভৃতি বিশেষজ্ঞরা থাকতেন, এছাড়াও ধর্মযাজক, বাদ্য-বাদক ইত্যাদি দায়িত্বেও যথাযথ লোকবল নিযুক্ত করা হত।
রোমান সাম্রাজ্যের শেষযুগে লিজিওনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় এবং রোমান সেনাবাহিনীকে সম্প্রসারিত করা হয়। "চার সম্রাটের শাসন" বা টেট্রার্কি (Tetrarchy)-এর প্রবর্তনের পূর্বে লিজিওনের গঠনের কোন পরিবর্তন হয়েছে- এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, যদিও লিজিওন সমূহের আকার তাদের নথিভুক্ত তথ্যের তুলনায় ছোট ছিল- এই প্রমাণ মেলে। সম্রাট ডায়োক্লিটান ও টেট্রার্ক বা চার সম্রাট কর্তৃক লিজিওনের সর্বশেষ রূপটি প্রবর্তিত হয়, যার নাম ছিল লিজিওনেস প্যালাটিনি (Legiones palatinae)। এই লিজিওনসমূহের প্রতিটিতে ৫,০০০ জনের পরিবর্তে কেবল ১,০০০ জন সৈন্য থাকত, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল পুরনো কায়দার অশ্বারোহী বাহিনী। প্রারম্ভিক কতিপয় লিজিওনেস প্যালাটিনি-এর নাম ছিল ল্যানসিয়ারি, জোভিয়ানি, হারকুলিয়ানি এবং ডিভিটেনসিস।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
খ্রিষ্টাব্দ ৪র্থ শতাব্দীতে অনেকগুলি ছোট ও নতুন লিজিওন গঠন করা হয়, যে প্রক্রিয়া শুরু করেন সম্রাট ২য় কনস্টান্টিন। অভিজাত প্যালাটিনি লিজিওনের পাশাপাশি অন্যান্য লিজিওনসমূহ গঠিত হয় যাদের নাম ছিল কমিটাটেনসিস, স্যুডোকমিটাটেনসিস, অক্সিলিয়া প্যালাটিনা যারা রোমের পদাতিক বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়। রোম সাম্রাজ্যের নথি "নটিটিয়া ডিগনিটেটাম" (Notitia Dignitatum)-এ লিপিবদ্ধ রয়েছে ২৫টি লিজিওনেস প্যালাটিনি, ৭০টি লিজিওনেস কমিটাটেনসিস, ৪৭টি লিজিওনেস স্যুডোকমিটাটেনসিস এবং ১১১টি অক্সিলিয়া প্যালাটিনা-এর নাম, যারা রণবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং আরো ৪৭টি লিজিওন যারা সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।.[7] নটিটিয়া নথিতে যেসকল লিজিওনের নাম পাওয়া যায় যেমন: হনোরিয়ানি (Honoriani) কিংবা গ্রাটিয়ানেনসিস (Gratianenses), তার থেকে এই অনুভূতি হয় যে, খ্রিষ্টাব্দ ৪র্থ শতাব্দী পর্যন্ত এই নতুন পদ্ধতিতে লিজিওন গঠন অব্যাহত ছিল। লিজিওনসমূহের নাম থেকে এটিও বোধগম্য হয় যে, লিজিওনসমূহ ভেক্সিলাটিওনেস (Vexillationes) বা পুরাতন লিজিওনসমূহ থেকেই গঠিত হয়েছিল। তদুপরি ২৪টি ভেক্সিলাটিওনেস প্যালাটিনি এবং ৭৩টি ভেক্সিলাটিওনেস কমিটাটেনসিস -এর উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া পূর্ব সীমান্তে ৩০৫টি লিমিটানেই এবং পশ্চিম সীমান্তে ১৮১টি লিমিটানেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উল্লেখ রয়েছে।[8]
রোম সাম্রাজ্যের শেষযুগের লেখক ভেগেটিয়াস কর্তৃক রচিত ডি রে মিলিটারি গ্রন্থে বলা হয়েছে প্রত্যেক সেঞ্চুরির সাথে একটি করে ব্যালিস্তা (Ballista, বিশালাকার গুলতির ন্যায় প্রাচীন যুদ্ধাস্ত্র, যার সাহায্যে বৃহৎ আকারের তীর বা সর নিক্ষেপ করা যেত) থাকত এবং প্রতিটি কোহর্টের সাথে একটি করে প্রস্তর নিক্ষেপণ যন্ত্র (Onager) থাকত। এতে করে সৈন্যবাহিনীর সাথে মোট ৫৯টি ব্যালিস্তা ও ১০টি প্রস্তর নিক্ষেপণ যন্ত্র বহন করা হত। প্রতিটি এরূপ যন্ত্রের সাথে ১০ জন লিব্রিটর বা গোলন্দাজ সৈন্য থাকত এবং ভারি এই যন্ত্রগুলো এক একটি রথের ওপর বসিয়ে খচ্চর বা ষাঁড় দ্বারা টেনে নিয়ে যাওয়া হত। বিভিন্ন নগরী বা দুর্গ আক্রমণে এই ভারি যন্ত্রসমূহ ব্যবহৃত হত, আবার রোমানদের দুর্গ ও ঘাঁটিসমূহকে শত্রুর আক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষার কাজেও এগুলো ব্যবহৃত হত। সাম্রাজ্যের শেষ যুগে সম্মুখ সমরেও এই যুদ্ধ-যন্ত্রসমূহ ব্যবহৃত হত, যেমন খোলা প্রান্তরে শত্রুসৈন্যদের বিরুদ্ধে অথবা কোন নদী পারাপারকে সুরক্ষিত করতে এগুলো ব্যবহার করা হত।
পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর কতিপয় সংস্কার সত্ত্বেও লিজিওন প্রথা টিকে ছিল এবং পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছিল। ৭ম শতাব্দীতে সম্রাট হেরাক্লিয়াস "থীম প্রথা" চালু করলে লিজিওনসমূহ বহুলাংশেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবুও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী বা বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী রোমান লিজিওনদের দ্বারা অনেকাংশেই প্রভাবিত হয়েছিল, এবং তারাও রোমানদের অনুরূপ শৃঙ্খলা, রণকৌশল এবং সাংগঠনিক কাঠামো টিকিয়ে রেখেছিল।
সর্ব নিম্নপদস্থ সৈনিকগণ ব্যতীত (যাদের বেতন ছিল দৈনিক ১০টি তাম্রমুদ্রা "অ্যাসেস", বা বার্ষিক ২২৫ টি রৌপ্যমুদ্রা "দিনারি") বাহিনীতে বিভিন্ন পর্যায় ও পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ নিযুক্ত ছিলেন। খ্রিষ্টপূর্ব ১০৪ সালে ম্যারিয়ান সংস্কারের পরবর্তীতে সৃষ্ট এসমস্ত পদ সম্রাট ডায়োক্লিটানের শাসনামল (২৯০ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। নিম্নে ক্রমানুসারে পদমর্যাদাসমূহের বর্ণনা দেয়া হল:
"সেঞ্চুরিয়ন" পদটি ছিল সামরিক কর্মকর্তার পদের একটি শ্রেণিবিভাগ, যার মধ্যে উচ্চ ও নিম্ন কয়েকটি পর্যায় ছিল। অর্থ্যাৎ একজন সেঞ্চুরিয়নের পদোন্নতির ভাল সুযোগ ছিল। একটি লিজিওনের সর্বোচ্চ পদস্থ সেঞ্চুরিয়নকে বলা হত প্রাইমাস পিলাস (অর্থ: প্রথম বর্শা), যিনি ১ম কোহর্টের ১ম সেঞ্চুরির নেতৃত্ব দিতেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ১ম কোহর্টের নেতৃত্ব দিতেন। লিজিওনের ২য় থেকে ১০ম কোহর্টের প্রতিটির ১ম সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিয়নকে বলা হত পিলাস প্রাইয়র, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তারা যার যার সম্পূর্ণ কোহর্টের নেতৃত্ব দিতেন। পিলাস প্রাইয়র-সেঞ্চুরিয়নগণের নিম্নপদস্থ ছিলেন ১ম কোহর্টের ২য়-৬ষ্ঠ সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিয়নগণ, তাদের বলা হত প্রিমি অর্ডিনেস।
একটি সাধারণ কোহর্টের (১ম কোহর্ট ব্যতীত অন্যান্য) ৬টি সেঞ্চুরি, অবস্থানের ক্রমানুসারে:
সেঞ্চুরিসমূহের নামের উৎস লিজিওনের পুরাতন তিন প্রকার সৈন্যবিভাগের নাম থেকে গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি সেঞ্চুরি তাদের সারির মধ্যরেখা বরাবর অবস্থান নিত, যদিও সেঞ্চুরির এই বিভাগসমূহ নামকরণেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেঞ্চুরির মধ্যকার ৩টি সারি পুনরায় নিজেদের মধ্যে সম্মুখ ও পশ্চাৎ ভাগে বিভক্ত হত।
একজন সেঞ্চুরিয়ন যে সেঞ্চুরির নেতৃত্ব দিতেন তা তার পদমর্যাদা নির্দেশ করত: ১ম কোহর্টের ১ম সেঞ্চুরির সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এবং ১০ম কোহর্টের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি সর্বনিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন ছিল। সাধারণ সেঞ্চুরিয়নগণ সর্বনিম্ন বেতনের ১০ গুণ বেতনপ্রাপ্ত হতেন।
সেনাপতি গাইয়াস ম্যারিয়াস এর পর থেকে, লিজিওনারিগণ বেতন হিসেবে বার্ষিক ২২৫ "দিনারি" বা রোপ্যমুদ্রা পেত, (যা ৯০০ "সেস্টেরটি" বা তাম্রমুদ্রার সমমূল্যের ছিল); সম্রাটের ডমিটিয়ানের শাসনামল পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত ছিল, তার আমলে এই মূল বেতন বৃদ্ধি করে ৩০০ দিনারি করা হয়। ২য় শতাব্দীতে মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও এই বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। অবশেষে সম্রাট সেপটিমিয়াস সেভেরাস মূল বেতন বৃদ্ধি করে বার্ষিক ৫০০ দিনারি-তে নিয়ে আসেন। তবে সৈনিকেরা সম্পূর্ণ বেতন হাতে পেত না, তাদের খাদ্য ও পোশাক বাবদ কিছু অর্থ কেটে রাখা হত। এর বাইরেও একজন সৈন্য যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ভাগ পেত, যেমন শত্রুসেনাদের মরদেহ থেকে প্রাপ্ত অস্ত্রাদি এবং শত্রু ঘাঁটি লুঠ করে প্রাপ্ত সম্পদ। এছাড়া যুদ্ধবন্দীদেরকে তারা দাস হিসেবে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত, যাদেরকে পরে তারা মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রয় করে দিত। এসব ছিল তাদের বাড়তি আয়ের উৎস।
এছাড়াও লিজিওনারি সৈনিকেরা "প্রিমিয়া" বা "অবসর ভাতা" পেত, সেনাবাহিনীতে ২৫ বছরের কর্মজীবন সম্পূর্ণ করলে তারা ভাল অঙ্কের একটি ভাতা পেত। সম্রাট অগাস্টাসের আমলে এই ভাতা ছিল ৩,০০০ দিনারি (রৌপ্যমুদ্রা) এবং/অথবা একখন্ড চাষযোগ্য জমি (সেসময় ভাল জমির ব্যপক চাহিদা ছিল); অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদেরকে জমি প্রদানের ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলসমূহ এবং বিদ্রোহী প্রদেশসমূহের ওপর সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব সুসংহত হত। সম্রাট ক্যারাকালার আমলে এই অবসর ভাতা বৃদ্ধি করে ৫,০০০ দিনারি করা হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ১০৪ সাল থেকে প্রতিটি লিজিওন তাদের জাতীয় প্রতীক হিসেবে "রোমান ঈগল প্রতীক" (aquilla) ব্যবহার করত। যে সামরিক কর্মকর্তা যুদ্ধক্ষেত্রে এই প্রতীকটি বহন করতেন তাকে বলা হত অ্যাকুইলিফার, এই প্রতীকটি হারানো গেলে লিজিওনের জন্যে তা অত্যন্ত অসম্মানজনক গণ্য করা হত এবং কখনো ঐ লিজিওনটিকেই ভেঙে দেয়া হত। এর কারণ- ঈগল প্রতীকটি উদ্ধার করা যায়নি তার অর্থ হল লিজিওনটি এতই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যে তার আর যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই।[12]
সম্রাট জুলিয়াস সিজার কর্তৃক লিখিত "গলিক ওয়্যার" (Gallic War)-এর ৪র্থ পুস্তকের ২৫ নং অনুচ্ছেদে, সম্রাট বর্ণনা করেছেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫ সালে তার ব্রিটেন অভিযানের সময় ঈগল প্রতীকটি হারানোর আশঙ্কা রোমান সৈনিকদের কী পরিমাণ উদভ্রান্ত করে তুলত। সিজারের যোদ্ধারা এক পর্যায়ে ব্রিটনদের ভয়ে জাহাজ ত্যাগ করতে ইতস্তত করতে থাকলে ১০ম লিজিওন "জেমিনা"-র প্রতীক বাহক তার ঈগল প্রতীক সমেত জাহাজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একাই বীর বিক্রমে শত্রুবাহিনীর দিকে সাঁতার কেটে অগ্রসর হতে থাকে। এতে করে লিজিওনের অন্যান্য যোদ্ধারা অসম্মান এড়াতে তাদের ঝান্ডাবাহককে অনুসরণ করে এবং অন্যান্য জাহাজ সমূহ থেকেও সৈনিকেরা একে একে সাঁতরে তীরে উঠতে থাকে।
রোমান সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের কালে সৈনিকদের মনে তাদের নেতা, রোমান সম্রাটের প্রতি একপ্রকার আনুগত্য ও বন্ধন অনুভব করতে থাকে। প্রতি লিজিওনে আরেকজন ঝান্ডাবাহক ইম্যাগিনিফার-কে দায়িত্ব দেয়া হয় সম্রাটের চিত্র বা প্রতীমা বহন করার।
প্রতিটি লিজিওনে আরো থাকত একজন ভেক্সিলিফার, যে লিজিওনের নাম ও প্রতীক সংবলিত একটি পতাকা বহন করত, যা ঐ লিজিওনের নিজস্ব ছিল। প্রায়ই একটি লিজিওন অন্য লিজিওনকে সহায়তা করার জন্যে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করত, সেক্ষেত্রে ঐ দলটির সাথে তাদের লিজিওনের পতাকা থাকত, কিন্তু ঈগল প্রতীকটি থাকত না, তাদেরকে তাই বলা হত ভেক্সিলাটিওনেস। সামরিক কর্মকর্তাদের অবসর বা বদলির সময় পদকস্বরূপ একটি ক্ষুদ্রাকৃতি "ভেক্সিলাম" প্রদান করা হত, যা ছিল রূপার ভিত্তিতে বসানো ঐ লিজিওনের প্রতীক সংবলিত পদক বিশেষ।
বেসামরিক ব্যক্তিবর্গকেও রোমান লিজিওনকে সাহায্য করার জন্যে পুরস্কৃত করা হত। তাদেরকে দেয়া হত ফলকবিহীন একটি তীর দন্ড, যাকে অত্যন্ত সম্মানের একটি প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হত।
রোমান সেনাবাহিনী ছিল কঠিন শৃঙ্খলায় আবদ্ধ। নিয়মকানুন অত্যন্ত কঠোরভাবে পালিত হত, এবং কোন সৈনিক তা ভঙ্গ করলে তাকে নানানভাবে শাস্তি প্রদান করা হত। অনেক সৈন্য নিয়মশৃঙ্খলার দেবী "ডিসিপ্লিনা"-র উপাসনা করত, যার গুণগুণ ছিল সংযম, কঠোরতা এবং আনুগত্য, এসকল গুণ সকল সৈন্যের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু গণ্য করা হত।
ফরাসী দার্শনিক ও বিচারক মন্টেস্ক্যু- লিখেছেন "রোমানদের সমগ্র বিশ্বের ওপর কর্তৃত্ব করার কারণ হল, একের পর এক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় তারা যখনই কোন নতুন শ্রেষ্ঠতর রেওয়াজের সম্মুখীন হয়েছে, তখনই তারা নিজেদের রেওয়াজকে বর্জন করেছে।"[13]
নতুন কোন উদ্ভাবনের সন্ধান পেলে রোমানরা তা বরণ করে নিত এবং নিজেদের বাহিনীতে প্রয়োগ করত, যেমন আইবেরীয় জাতির কাছ থেকে তারা গ্ল্যাডিয়াস তলোয়ার নির্মাণের কৌশল রপ্ত করে। কার্থেজীয়দের নিকট থেকে তারা উন্নততর জাহাজ "কুইনকের্মে" নির্মাণ শেখে। এমনকি পার্থিয়ান সাম্রাজ্য এবং নুমিডীয়দের ভারি অশ্বারোহী যোদ্ধা ("ক্যাটাফ্রাক্ট") এবং তীরন্দাজ অশ্বারোহী যোদ্ধার কলাকৌশল ও সাজসজ্জাও তারা রপ্ত করে।
ঢাল, শিরস্ত্রাণ ও বর্মে আবৃত রোমান সেনারা তাদের শত্রুদের তুলনায় অধিক সুরক্ষিত থাকত, যেখানে অনেকক্ষেত্রে তাদের শত্রুসেনাদের সুরক্ষা বলতে শুধুমাত্র ঢালছাড়া আর কিছু থাকত না।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.