রাইনহার্ট ট্রিসটান ওয়গ্‌ন হাইড্‌রিখ (জার্মান: ˈʁaɪnhaʁt ˈtʁɪstan ˈɔʏɡn̩ ˈhaɪdʁɪç; ৭ মার্চ, ১৯০৪ – ৪ জুন, ১৯৪২) ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন একজন উচ্চপদস্থ জার্মান নাৎসি কর্মকর্তা এবং হলোকস্টের (ইহুদী গণহত্যা) মূল হোতা। তিনি ছিলেন একাধারে একজন এসএস-ওবারগ্রুপেনফুয়েরার আন্দ্ জেনারেল দা পলিয্ (সিনিয়র দল নেতা এবং পুলিশ প্রধান), রাইখ নিরাপত্তা বিভাগ, গেস্টাপো, ক্রিমিনালপলিয্ (নাৎসি ক্রিমিনাল পুলিশ) এবং এসডি ( নিরাপত্তা বাহিনী) প্রধান। এছাড়াও তিনি প্রটেক্টরেট অব বোহেমিয়া অ্যান্ড মোরাভিয়ার স্টেলভারট্রিটেনডার রাইখস্প্রোটেক্টর (নির্বাহী/ভারপ্রাপ্ত প্রটেক্টর) এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশনের (এইসিপিসি; বর্তমানে ইন্টারপোল) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত "ওয়ানসি কনফারেন্সে" তিনি উপস্থিত ছিলেন। এখানেই কুখ্যাত "ইহুদী প্রশ্নের চূড়ান্ত সমাধান" প্রস্তাবিত হয়, যার ফলাফল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান অধ্যুষিত ইউরোপ থেকে ইহুদীদের নির্বাসনের নামে নির্বিচারে গণহত্যা।

দ্রুত তথ্য রেইনহার্ড হেড্রিক, ডেপুটি প্রটেক্টর অব বোহেমিয়া অ্যান্ড মোরাভিয়া (ভারপ্রাপ্ত) ...
রেইনহার্ড হেড্রিক
Thumb
এসএস-গ্রুপেনফুয়েরার (১৯৪০)
ডেপুটি প্রটেক্টর অব বোহেমিয়া অ্যান্ড মোরাভিয়া
(ভারপ্রাপ্ত)
কাজের মেয়াদ
২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪১  ৪ জুন ১৯৪২
নিয়োগদাতাআডলফ হিটলার
পূর্বসূরীকন্সটান্টিন ভন নুরাথ
(২৪ আগস্ট ১৯৪৩ পর্যন্ত)
উত্তরসূরীকুর্ট ডাল্‌জ
(ভারপ্রাপ্ত)
রাইখ প্রধান নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক
কাজের মেয়াদ
২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯  ৪ জুন ১৯৪২
নিয়োগদাতাহেনরিক হিমলার
পূর্বসূরীকার্যালয় প্রতিষ্ঠা
উত্তরসূরীহেনরিক হিমলার (ভারপ্রাপ্ত)
প্রেসিডেন্ট অব
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশন
কাজের মেয়াদ
২৪ আগস্ট ১৯৪০  ৪ জুন ১৯৪২
পূর্বসূরীওটো স্টেইনহাস্‌ল
উত্তরসূরীআর্থার নিব
গেস্টাপোর মহাপরিচালক
কাজের মেয়াদ
২২ এপ্রিল ১৯৩৮  ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯
নিয়োগদাতাহেনরিক হিমলার
পূর্বসূরীরুডলফ ডিলজ
উত্তরসূরীহেনরিক মুলার
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মরাইনহার্ট ট্রিসটান ওয়গ্‌ন হাইড্‌রিখ
(১৯০৪-০৩-০৭)৭ মার্চ ১৯০৪
হেইল আন দার সাল, জার্মান সাম্রাজ্য
মৃত্যু৪ জুন ১৯৪২(1942-06-04) (বয়স ৩৮)
প্রাগ, প্রটেক্টরেট অব বোহেমিয়া অ্যান্ড মোরাভিয়া
(বর্তমান প্রাগ, চেক রিপাবলিক)
রাজনৈতিক দলজাতীয় সমাজতান্ত্রিক জার্মান শ্রমিক পার্টি (এনএসডিএপি)
দাম্পত্য সঙ্গীলিনা ভন অস্টেন
(১৯৩১–১৯৪২; আমৃত্যু)
সম্পর্কহেইচ হেড্রিক (ভাই)
সন্তান
স্বাক্ষরThumb
ডাকনাম
  • জল্লাদ[1]
  • প্রাগের কসাই[2]
  • স্বর্ণকেশী জানোয়ার[2]
  • হিমলারের শয়তানি মাথা[2]
  • অল্পবয়সী শয়তান শামন[3]
  • লোহার হৃৎপিণ্ডধারী মানব[4]
সামরিক কর্মজীবন
আনুগত্য
সেবা/শাখা
  •  রাইখসমারিন
  • শাতজাতাফেল
কার্যকাল১৯২২–১৯৪২
পদমর্যাদা
  • ওবারলিউটেনান্ট য়‍্যুর সি (রাইখ্‌স্‌মেরিন)
  • রিজার্ভের মেজর (লুফ্‌ত্‌ওয়াফ্)
  • এসএস-ওবারগ্রুপেনফুয়েরার আন্দ্ জেনারেল দা পলিয্
যুদ্ধ/সংগ্রামদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
বন্ধ

অনেক ঐতিহাসিকগণ হেড্রিককে "নাৎসি অভিজাতদের মধ্যে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব" হিসেবে বিবেচনা করেন। স্বয়ং আডলফ হিটলার তাকে "লোহার হৃৎপিণ্ডধারী মানব" (ইংরেজি: the man with the iron heart) বলে বর্ণনা করেছিলেন।[4] তিনি এসডি এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ছিলেন। ১৯৩৮ সালের ৯–১০ নভেম্বর নাৎসি জার্মান জুড়ে ইহুদীদের উপর হামলা সহ ১৯৪২ সাল পর্যন্ত সর্বমোট দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ গণহত্যার সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল।

১৯৪২ সালের ২৭ মে অপারেশন অ্যানথ্রোপোইডের ফলে হেড্রিক মারাত্মকভাবে আহত হন এবং এক সপ্তাহ পর মারা যান।

প্রারম্ভিক জীবন

রেইনহার্ড হেড্রিক ১৯০৪ সালে হ্যল্ আন্ দ্যর সালেতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রোটেস্ট্যান পিতা রিচার্ড ব্রুনো হেড্রিক ছিলেন একজন সুরকার এবং অপেরার গায়ক, মাতা এলিজাবেথ অ্যানা মারিয়া হেড্রিক (বিবাহপূর্বঃ ক্রাত্জ) ছিলেন একজন রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান।

হেড্রিকের পরিবার ছিল আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং সামাজে সম্মানিত। দৈনন্দিন জীবনে সঙ্গীত অতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিল। পিতা ছিলেন হাল কনজারভেটরি অব মিউজিক, থিয়েটার অ্যান্ড টিচিং এর প্রতিষ্ঠাতা, মাতা শেখাতেন পিয়ানো বাজানো।[5] অল্প বয়সেই বেহালার প্রতি অনুরাগ তৈরি হয় হেড্রিকের, বড় হয়েও বেহালা বাজানোর এই অভ্যাস ধরে রেখেছিলেন তিনি। যেই তার বেহালা বাজানো শুনতো, সেই মুগ্ধ হতো তার অসাধারণ প্রতিভায়।[6]

জার্মান জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী পিতা, হেড্রিক এবং তার দুই ভাইদের ছোটবেলা থেকেই অনুপ্রাণিত করেছিলেন দেশাত্মবোধে, তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।[7] কড়া পারিবারিক শাসনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন হেড্রিক, অসিক্রীড়ার প্রতি তার আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন তিনি, তৎকালীন "রিফর্‌মজিমনেসিয়ামে" বিজ্ঞানে তার ফলাফল ছিল খুবই ভালো।[8] তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান সাঁতারু এবং অভিজ্ঞ অসিচালক। তবে "হেড্রিক ইহুদী বংশোদ্ভূত" এমন গুজবের কারণে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল।[9]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পুরো জার্মানি জুড়ে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে। দারিদ্র্যের এই কবল থেকে হাল্ এর মানুষও রেহাই পায়নি। এজন্য ১৯২১ সালে শহরে মাত্র হাতেগোনা অল্প কিছু পরিবারই বাকি ছিল যারা সঙ্গীতের পিছনে অর্থ ব্যয়ে সক্ষম। ফলে হেড্রিকের পরিবার আর্থিক সঙ্কটে পড়ে।

নৌ ক্যারিয়ার

১৯২২ সালে হেড্রিক জার্মান নৌ বাহিনীতে যোগদান করে এবং জার্মানির প্রাথমিক নৌ ঘাঁটি কিল্– এ ক্যাডেট পদে, পরবর্তীতে ১৯২৪ সালে সিনিয়র মিডসিপম্যান এবং ১৯২৪ সালে পদোন্নতি লাভ করে তিনি যুদ্ধজাহাজে অফিসার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।[10] পদোন্নতির সাথে সাথে তার পরিচিতিও বাড়তে থাকে। ১৯২৮ সালে তাকে উপ-লেফটেন্যান্ট (জার্মান: Oberleutnant zur See) পদে উন্নীত করা হয়।[11]

অসংখ্য সম্পর্কে জড়িয়ে হেড্রিক কুখ্যাত হয়ে ওঠেন। ১৯৩০ সালের ডিসেম্বরে লিনা ভন অস্টেনের সাথে তার পরিচয় ঘটে। অল্প সময়ের মধ্যেই উভয়ের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং নিজেদের এঙ্গেজমেন্ট ঘোষণা করেন। লিনা ইতোমধ্যে নাৎসি পার্টির সাথে জড়িত ছিল।[12] ১৯৩১ সালে একটি স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়ায় হেড্রিককে এপ্রিল মাসে নৌ বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়।[13] এর ফলে তিনি বেকার হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হন।[14] তবে ওই বছরেই ডিসেম্বর মাসে তিনি লিনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[15]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.