Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রুশ সাহিত্য হল রাশিয়া ও এর অভিবাসীদের সাহিত্য এবং তৎকালীন রুশ সাম্রাজ্য বা সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিল এমন কয়েকটি স্বাধীন দেশের রুশ ভাষার সাহিত্য। রুশ সাহিত্যের গোড়াপত্তন হয় মধ্যযুগে, যখন প্রাচীন রুশ ভাষায় মহাকাব্য ও ইতিবৃত্ত রচিত হয়। আলোকিত যুগে সাহিত্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৩০ এর দশকের শুরুর দিকে রুশ সাহিত্য কবিতা, গদ্য ও নাটকের স্বর্ণযুগ পাড় করে। রোমান্টিকতা সময়কালে কাব্যিক প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে এবং এই সময়ে ভাসিলি ঝুকভ্স্কি ও পরে তার দ্বারা প্রভাবিত আলেক্সান্দ্র পুশকিন কাব্যচর্চা করেন। এই সময়ে গদ্যও বিকাশ লাভ করেন। প্রথম মহান রুশ ঔপন্যাসিক ছিলেন নিকোলাই গোগোল। পরবর্তীতে আসেন ইভান তুর্গেনেভ, যিনি ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় ধরনেই প্রসিদ্ধ ছিলেন। ল্যেভ তল্স্তোয় ও ফিওদোর দস্তয়েভ্স্কি অচিরেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আন্তন চেখভ ছোটগল্পে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন এবং অন্যতম প্রধান নাট্যকার হয়ে ওঠেন। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভিক সময় ছিল রুশ কবিতার রৌপ্যযুগ। রৌপ্যযুগের কবিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কনস্তান্তিন বেলমন্ত, ভালেরি ব্রিউসভ, আলেক্সান্দ্র ব্লক, আনা আখমাতোভা, নিকোলাই গুমিলিউভ, অসিপ মান্দেলস্তাম, সের্গেই ইয়েসেনিন, ভ্লাদিমির মায়াকোভ্স্কি, মারিনা স্ভেতায়েভা, ও বরিস পাস্তের্নাক। এই যুগে কয়েকজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকারদের দেখা যায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন আলেক্সান্দ্র কুপ্রিন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইভান বুনিন, লেওনিড আন্দ্রেইভ, ফিওদোর সলোগুব, আলেক্সি রমিজভ, ইয়েভজেনি জামিয়াতিন, দিমিত্রি মেরেঝ্কোভ্স্কি, ও আন্দ্রে বেলি।
রুশ লেখকগণ সাহিত্যের বিভিন্ন ধরনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। রাশিয়ায় পাঁচজন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রয়েছে। কথিত আছে যে রুশরা হল "বিশ্বের সবচেয়ে পড়ুয়া জাতি"।[1][2]
প্রাচীন রুশ সাহিত্যে প্রাচীন রুশ ভাষায় লিখিত কয়েকটি শ্রেষ্ঠকর্ম রয়েছে। প্রাচীন রুশ ঐতিহাসিক সাহিত্যের প্রধান ধরন ছিল ইতিবৃত্ত, যার বেশির ভাগই অজ্ঞাত।[3] এই ধরনের অজ্ঞাত কাজের মধ্যে আরও রয়েছে দ্য টেল অব ইগর্স ক্যাম্পেইন ও মলেনিয়া দানিলা জাতোচ্নিকা। হাজিওগ্রাফি (রুশ: жития святых, ঝিতিয়া স্ভিতিখ) প্রাচীন রুশ সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় ধরন হয়ে ওঠেছিল। ঝিতিয়ে আলেক্সান্দ্র নেভস্কোভা এই ধরনের একটি বিখ্যাত রচনা। অন্যান্য রুশ সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে জাদোন্স্কিনা, ফিজিওলজিস্ট, কিয়েভানের সিনপ্সিস এবং খুঝ্দেনিয়া জা ত্রি মোরিয়া।
ব্যঙ্গলেখক আন্তিওখ দিমিত্রিভিচ কান্তেমির, ১৭০৮–১৭৪৪, ছিলেন প্রথম দিকের অন্যতম রুশ লেখক, যিনি মহান পিটারের ধারণা সংস্কারের পাশাপাশি ইউরোপের আলোকিত যুগের আন্দোলনের ধারণার প্রশংসা করেন। কান্তেমিরের কাজে পিটারের প্রশংসামূলক স্তব দেখা যেত, বিশেষ করে সম্রাটকে উৎসর্গ করে লেখা মহাকাব্য পেত্রিদা। কান্তেমির পিটারের পশ্চাদপদতা ইস্তেহারের মাধ্যমে এর সংস্কার করতে চান এবং রাশিয়ার "বহিরঙ্গ ও রহস্যবাদ" বিষয়ে কান্তেমির তার ব্যঙ্গধর্মী সমালোচনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পিটারের প্রভাবের প্রশংসা করেন।[4] কান্তেমির পিটারকে সমর্থনের মাধ্যমে এই রীতির সম্মান জানান, কিন্তু এর ফলে রুশ ভাষার ব্যবহার করে উপযুক্ত শব্দের অর্থ বিষয়ে দশক ব্যাপী বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
উনবিংশ শতাব্দীকে রুশ সাহিত্যের "স্বর্ণযুগ" বলে অভিহিত করা হয়। রোমান্টিকতা সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি হলেন ভাসিলি ঝুকভ্স্কি ও পরে তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হন আলেক্সান্দ্র পুশকিন। পুশকিন রুশ সাহিত্যিক ভাষায় নতুনত্ব প্রদান করেন এবং রুশ সাহিত্যে নতুন মাত্রার শৈল্পিকতা নিয়ে আসেন। তার শ্রেষ্ঠকর্ম হল ইউজিন অনেজিন। মিখাইল লের্মোন্তভ, [[ইয়েভ্জানি বারাতিন্স্কি, কনস্তান্তিন বাতিউশ্কভ, নিকোলাই নেক্রাসভ, আলেক্সেই কনস্তান্তিনোভিচ তল্স্তোয়, ফিওদোর তুতচেভ, ও আফানাসি ফেতসহ নতুন প্রজন্মের সকল কবি পুশকিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন।
রোম্যান্টিক যুগে গদ্যও বিকশিত হতে থাকে। নিকোলাই গোগোল প্রথম সেরা রুশ ঔপন্যাসিক। নিকোলাই লেস্কভ, ইভান তুর্গেনেভ, মিখাইল সালতিকভ-শেদ্রিন সকলেই ছোটগল্প ও উপন্যাসে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ল্যেভ তল্স্তোয় ও ফিওদোর দস্তয়েভ্স্কি এই সময়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। অনেক পণ্ডিত, যেমন এফ. আর. লিভিস, তাদের সর্বকালের সেরা ঔপন্যাসিক বলে উল্লেখ করেন। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আন্তন চেখভ ছোটগল্পে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন এবং তার সময়ের আন্তর্জাতিকভাবে প্রধান নাট্যকার হয়ে ওঠেন। চেখভের দ্য ব্ল্যাক মঙ্ক, ওয়ার্ড নং ৬, দ্য বিশপ বা দ্য ডুয়েল অন্যতম সেরা রুশ ছোটগল্প।[5]
বিংশ শতাব্দীর শুরুর সময়কে রুশ কবিতার রৌপ্যযুগ বলে অভিহিত করা হয়। এই সময়ের বিখ্যাত কবি হলেন আলেক্সান্দ্র ব্লক, সের্গেই ইয়েসেনিন, ভালেরি ব্রিউসভ, কনস্তান্তিন বালমন্ত, মিখাইল কুজমিন, ইগর সেভেরিয়ানিন, সাশা চোর্নি, নিকোলাই গুমিলেফ, মাক্সিমিলিয়ান ভলোশিন, ইনাঙ্কেঞ্চি আনিন্স্কি, জিনাইদা জিপিউস। অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন আনা আখমাতোভা, মারিনা স্ভেতেভা, ওসিপ মান্দেলস্তাম, ও বরিস পাস্তের্নাক। নিকোলাই গুমিলেফ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ - মিশর, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও জিবুতি ভ্রমণ করেন এবং দ্য গালা, দ্য জিরাফ ও দ্য সাহারা কবিতায় আফ্রিকা তার অনুপ্রেরণা ছিল।[6]
যদিও রৌপ্যযুগ কবিতায় সমৃদ্ধ ছিল, পাশাপাশি কয়েকজন প্রথম সারির ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকারও এই সময়ে আবির্ভূত হন। তারা হলেন আলেক্সান্দ্র কুপ্রিন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইভান বুনিন, লেওনিড আন্দ্রেয়েভ, ফেদর সলোগুব, আলেক্সি রেমিজভ, ইয়েভ্জেনি জামিয়াতিন, দিমিত্রি মেরেঝ্কভ্স্কি, এবং ও আন্দ্রে বেলি।
রুশ বিপ্লবে বিজয়ের পরে মায়াকভ্স্কি নব্য বাস্তবতা নিয়ে কাজ করেন। তার রচনা ওড টু দ্য রিভলূশন ও লেফট মার্চ (১৯১৮) কাব্যে নতুনত্ব নিয়ে আসেন। লেফট মার্চ মায়াকভ্স্কি রুশ বিপ্লবের বিরোধীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। তার কবিতা ১৫০,০০০,০০০ বিপ্লবে জনমানুষের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন (১৯২৪) কবিতায় মায়াকভ্স্কি রুশ বিপ্লবের এই নেতার জীবনী ও কর্ম নিয়ে আলোকপাত করেন। ইট্স গুড কবিতায় সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে "মানবতার বসন্তকাল" বলে উল্লেখ করেন। মায়াকভ্স্কি কবিতায় নব্য ধারার সূচনা করেন, যেখানে রাজনীতি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।[7]
১৯৩০ এর দশকে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতা রাশিয়ায় সাহিত্যের প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। মাক্সিম গোর্কি ছিলেন এই সময়ের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, যিনি তার মাত উপন্যাস এবং দ্য এনেমিস নাটক দিয়ে এই ধারার ভিত্তি স্থাপন করেন। তার আত্মজীবনীমূলক ত্রয়ীতে সমাজের দরিদ্রতর স্তর থেকে তার রাজনৈতিক বিবেকের উন্নয়নের উত্থান বিবৃত হয়েছে। তার উপন্যাস দ্য আর্তামানভ বিজনেস (১৯২৫) এবং নাটক এগর বুলিশভ (১৯৩২) রুশ সামন্ত শ্রেণীর পতনকে চিত্রায়িত করে। গোর্কি সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাকে "পৃথিবীর পুনঃগঠনরত জনগণের বাস্তবতা" বলে উল্লেখ করেন। গোর্কির সাহিত্যকর্ম রাশিয়ার সাহিত্যিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে এর প্রভাব ছড়িয়ে পরে।[8]
নিকোলাই অস্ত্রভ্স্কির উপন্যাস কাক জাকালিয়াওস স্তাল রুশ সাহিত্যের সবচেয়ে সফল কর্মের একটি। সারা বিশ্বে বিভিন্ন ভাষায় বইটির ১০ মিলিয়নের বেশি কপি মুদ্রিত হয়। চীনের বইটির বিভিন্ন সংস্করণের ১০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়। রাশিয়ায় বইটির ৩৫ মিলিয়নের বেশি কপি মুদ্রিত হয়।[9] বইটিতে অস্ত্রভ্স্কির জীবনী ধারণ করা হয়েছে, যার শৈশব ছিল খুবই কষ্টদায়ক এবং ১৯১৯ সালের জুলাইয়ে তিনি কমসোমল সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক হন। উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র পাভেল কর্চাগিন রুশ সাহিত্যের এই "তরুণ বীর" এর প্রতিচ্ছবি, যে রাজনীতিতে তার জীবন উৎসর্গ করে তার দুঃখগুলো অতিক্রম করে। উপন্যাসটি সারা বিশ্বের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা ছিল এবং রাশিয়ার স্বদেশপ্রেমী যুদ্ধে গতিশীল ভূমিকা পালন করে।[10]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.