রুদ্রাক্ষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রুদ্রাক্ষ (Sanskrit: रुद्राक्ष) একপ্রকার বৃহৎ ও চওড়া পাতাওয়ালা চিরহরিৎ বৃক্ষ যার বীজ হিন্দুধর্মাবলম্বীগণ বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেন। এই গাছ Elaeocarpus গণভুক্ত; এর অনেক প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে E. ganitrus প্রজাতিটি প্রধানত ধর্মীয় 'মালা' তৈরির কাজে লাগে।
রুদ্রাক্ষ | |
---|---|
গাছ | |
পাঁচমুখী রুদ্রাক্ষ | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Plantae |
বিভাগ: | Magnoliophyta |
শ্রেণী: | Magnoliopsida |
বর্গ: | Oxalidales |
পরিবার: | Elaeocarpaceae |
গণ: | Elaeocarpus |
প্রজাতি: | E. ganitrus |
দ্বিপদী নাম | |
Elaeocarpus ganitrus (Roxb.) | |
রুদ্রাক্ষ শব্দটি সংস্কৃত ভাষার, যার অর্থ রুদ্রের চোখ বা শিবের চোখ।[1][2]
রুদ্রাক্ষ গাছ দেখতে কিছুটা বকুল গাছের মত, পরিপক্ব গাছের শেকড়ে ঝাউ-শিমুল-বুদ্ধনারিকেল গাছের মত অধিমূল বা বাট্রেসিং দেখা যায়। গাছের ফল দেখতে গাঢ় নীল রঙের, যে কারণে এর ইংরাজি এক নাম ব্লুবেরি বিডস্। মূলত রঙটা নীল দেখা যায় স্ট্রাকচারাল টেক্সচার-এর কারণে, যেমনটা দেখা যায় ময়ূরের পেখমে। এই ফলের বহিরাবরণ সরিয়ে নিলে রুদ্রাক্ষ বেরিয়ে পড়ে যা হতে পারে বহুমুখী। এই ফল মৃগীরোগীদের জন্যে উৎকৃষ্ট। হিমালয়ের সাধুরা তৃষ্ণা নিবারনের জন্যে একে ব্যবহার করেছেন। স্বাদে টকজাতীয় বলে নেপালের মানুষ তৈরি করেছে পিকলস্ জাতীয় মুখরোচক খাবার। প্রাচীনকালে বসন্ত-গুটির প্রলেপে এবং যক্ষ্মা ও শ্লেষ্মার আধিক্যে ব্যবহৃত হয়েছে রুদ্রাক্ষ-ঘষা ক্ক্বাথ।
রুদ্রাক্ষের ক্ষেত্রে এর মুখিতা সম্পর্কে জানা একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। লোকিউল বা বীজকোষের বিভাজন রেখার গভীর দাগ থেকেই এর মুখ-সংখ্যা নিরূপন করা যায়। সাধারণত পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষই দেখতে পাওয়া যায় সবচে বেশি। তবে ১ থেকে শুরু করে ৩৮ মুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষের সন্ধানও পাওয়া যায়। সহজলভ্য নয় বলে ১৪ থেকে ২১ মুখী রুদ্রাক্ষের মূল্যও বেশি। গৌরীশঙ্কর, ত্রিযুতি রুদ্রাক্ষ-জগতে পরিচিত হলেও সাধারণ্যের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। গৌরীশঙ্কর রুদ্রাক্ষ দেখতে দুটি রুদ্রাক্ষ-বীজ একসঙ্গে জোড়া দেয়া মনে হয়, যাকে শিব ও পার্বতীর প্রতীক বলে মনে করা হয়। বৌদ্ধ অনুসারীদের দেখা যায় কলাবতীর শক্ত বীজের সঙ্গে রুদ্রাক্ষের দানা মিশিয়ে সঙ্কর মালা তৈরি করতে। যাবতীয় নানামুখী রুদ্রাক্ষের মধ্যে সবচেয়ে দুর্লভ বোধ হয় সুশ্রী এবং গোলাকার একমুখী রুদ্রাক্ষ যা আজকাল অতিশয় দুর্লভ। শোনা যায় ভারতের টাটা কোম্পানী ৭০ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি একমুখী রুদ্রাক্ষ বংশ পরম্পরায় রক্ষা করে আসছে।[3]
রুদ্রাক্ষের মালা হাজার বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়, বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বাউলদেরও এটা ব্যবহার করতে দেখা গেছে, কারণ রুদ্রাক্ষ তখন ছিল সহজলভ্য। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ এবং সেই তুলনায় গাছের সংখ্যা গেছে কমে যে কারণে দুর্লভ হয়ে পড়েছে বস্তুটি। এই রুদ্রাক্ষের বেশির ভাগ, প্রায় ৬৫ ভাগ পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়ার জাভা, সুমাত্রা এবং বোর্নিও প্রভৃতি দ্বীপে, ২৫ ভাগ পাওয়া যায় নেপালে, সবিশেষে ভোজপুর জেলায়, এবং বাকি সব ভারত-বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
বিগত ষাটের দশকে লস এঞ্জেলস-এর ‘সেলফ রিয়ালাইজেশান’ পত্রিকায় প্রথম বৈজ্ঞানিক আলোচনা দেখা যায় রুদ্রাক্ষের ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক স্বভাব সম্পর্কে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এর পর বেনারস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ডক্টর সুভাষ রায় একটি গবেষণালব্ধ পুস্তক প্রকাশ করেন, যা রুদ্রাক্ষের অনেক কার্যকারিতার দিক উম্মোচন করে। মানব দেহের রক্ত সংবহনতন্ত্রে এর কাজ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। এই তন্ত্র ঠিকমত কাজ না করলে দেহমন অনেক ধরনের রোগের শিকার হয়ে পড়ে। রুদ্রাক্ষের চৌম্বকীয় আবেশের জন্যে দেহের কিছু ধমনী ও শিরা স্ফীত হয়ে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। জীবিকা ও জীবোন্নতির কারণে আমরা এ যুগে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ে চলি। চাপের কারণে হৃদযন্ত্রের স্পন্দনের মাত্রা বেড়ে যায় যাতে দেহে অতিরিক্ত জীববিদ্যুৎ তৈরি হতে থাকে। রুদ্রাক্ষ এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎকে ধারণ করে স্থিতিশীল করতে পারে। অতএব রক্ত সংবহনে এবং হৃদযন্ত্রের স্পন্দন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা অনেক।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞানের আলোকে রুদ্রাক্ষের উপকারিতা উপলব্ধি করার পর থেকে উত্তরোত্তর এর চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য নেপালে সবচেয়ে বেশি রুদ্রাক্ষের চাষ হয় কিন্তু তা আশু প্রয়োজন মেটাবার জন্যে যথেষ্ট নয়। রুদ্রাক্ষের সকল বীজকোষে বীজ থাকে না, প্রায় ২০% থাকে শূন্য। শক্ত বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গমের জন্যে সময় লাগে ৬ মাস। নেপালের মত উপযুক্ত আবহাওয়া না পেলে এই গাছ তেমন ফলবতী হতে পারে না। উভলিংগী ফুল হওয়া সত্ত্বেও এসব গাছে ফুল ধরতে ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। একটি গাছে ফল ধরে দুয়েক হাজার যার প্রায় অর্ধেক ঝরে পড়ে অপরিপক্ব অবস্থায়। গাছের ওপরের অবশিষ্ট ফল বিশেষ কৌশলে সংগ্রহ করতে হয় তান্ত্রিক-দ্রব্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে। চোখ ওঠা,হাপানিতে, ক্ষয় রোগে, মৃগী রোগে এ গাছের উপকারিতা আছে।
রুদ্র অর্থ শিব, অক্ষ অর্থ চোখ বা চক্ষুজল। পৌরাণিক কাহিনীর একটিতে আছে, দুর্বিনীত অসুর ত্রিপুরকে বধ করতে গিয়ে শিব দীর্ঘকাল অপলক নেত্রে যুদ্ধ করার কারণে তার অবসাদগ্রস্ত চোখ থেকে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে এক ফোঁটা অশ্রু। সেই অশ্রুকণা থেকেই জন্ম হয় রুদ্রাক্ষের। এ কারণে শিব-পুজারী এবং ধার্মিকদের মধ্যেই ছিল এর প্রাথমিক বিস্তার। এখন তেমন নেই, জ্যোতিষবিদদের ব্যবসায়িক প্রবণতার কারণে প্রচার হয়েছে, রুদ্রাক্ষ যে কোনো ধর্মের এবং যে কোনো বয়সের নারী-পুরষই ধারণ করতে পারে, গলায় বাজুতে এবং কব্জিতে। আরো প্রচার হয়েছে গাছের তলায় পড়ে থাকা রুদ্রাক্ষ ব্যবহার্য নয়, গাছ থেকে চয়ন করতে হবে সেসব যার ২-৩% মাত্র রুদ্রাক্ষের জন্য উপযোগী। রুদ্রাক্ষের লাল কালো হলুদ ধূসর নানা রঙ এবং এর সঙ্গে গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব, পাপস্খালন, দাম্পত্য জীবনে সুখ, ব্যবসায়িক সাফল্য ইত্যাদি বিষয়গুলোকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যার পরিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সম্পর্কে আমরা অজ্ঞাত।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.