রাষ্ট্রবিজ্ঞান (ইংরেজি: Political Science) সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ; যেখানে পরিচালন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয়। এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিজ্ঞান নামে উল্লেখ করেছেন।[1]

এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়

উপ-শাখাসমূহ

অধিকাংশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নিম্নোক্ত এক বা একাধিক ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন -

ভারতীয় উপমহাদেশ

প্রাচীন ভারতে ঋগ্বেদ, সংহিতা, ব্রাহ্মণ, মহাভারত এবং বৌদ্ধদের পালি শাস্ত্রে রাজনীতিবিদদের কথকতা উল্লেখ আছে। তক্ষশীলায় অবস্থানকারী চাণক্য ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তিনি অর্থশাস্ত্র রচনা করেন যাতে রাজনৈতিক চিন্তাধারা, অর্থনীতি এবং সামাজিক ভারসাম্যের কথা বর্ণনা করতে পারেন। এতে মুদ্রা ব্যবস্থা ও আর্থিক নীতি, কল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধের আত্মরক্ষামূলক কলাকৌশল-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। চাণক্য যুগের অবসানের দুই শতক পরবর্তীকালে রচিত মনুস্মৃতি গ্রন্থেও ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রামাণ্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। যদিও বহু পাশ্চাত্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন যে, প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা ধর্মনিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠেনি। এবিষয়ে বিখ্যাত অধ্যাপক ডানিং বলেছেন, "প্রাচ্যের আর্যরা তাঁদের রাষ্ট্রভাবনাকে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা থেকে মুক্ত করতে পারেননি।" তবে এ মতের বিরোধীতা করে বলা যায়, প্রাচীন ভারতে ধর্ম কেবলমাত্র পূজাপার্বণ ছিলনা, বরং ধর্ম বলতে বোঝাত, একপ্রকার জীবনচর্যা, যা মানুষ এবং সমাজের উন্নতি সাধন করে। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হল সপ্তাঙ্গ। কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে এবিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, কোন রাষ্ট্রের মোট উপাদান হল সাতটি। যথাঃ- স্বামী, অমাত্য, জনপদ, কোষ, দুর্গ, দূরগ, মিত্র। কৌটিল্যর এই সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব বর্তমান কালের বহু চিন্তাবিদকেও বিস্মিত করে।

প্রাচীন ভারতের মতোই মধ্যযুগেও ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার এক উল্লেখযোগ্য ধারা পরিলক্ষিত হয়। সুলতানী সাম্রাজ্যের মতোই মোঘল সাম্রাজ্যেও রাজনীতি এক বিশেষ প্রায়োগিক রূপলাভ করে। এ সময়ে আকবর, শাহজাহান, (একইসাথে শেরশাহ) প্রভৃতি বাদশাহদের পররাষ্ট্রনীতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এসময়ে এক কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রব্যবস্থা যেমন গড়ে ওঠে, তার পাশাপাশি জায়গীরদারি ব্যাবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতির বিকেন্দ্রীভবনও বহুলাংশে সম্ভবপর হয়। আবুল ফজল সহ আরও বহু লেখকের লেখা সেসময়কার রাষ্ট্রব্যাবস্থার প্রামান্য দলিল হয়ে রয়েছে।

সাধারণভাবে ভারতে ইউরোপীয় বণিকশক্তি, পাশাপাশি রাজশক্তির আগমণের মাধ্যমেই আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে বলে মনে করা হয়। আধুনিক যুগের সূচনায় ভারতীয় রাজনীতি এক সম্পূর্ণ নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। রাষ্ট্রব্যাবস্থার বিস্তার ঘটার পাশাপাশি তা আরও জটিল রূপলাভ করে। ভারতে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তার যে কটি ধারা বিশেষ প্রবল রূপলাভ করে সেগুলি হলঃ-

১) সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা হিসেবে জাতীয়তাবাদের বিকাশ। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছিল এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। সে সময়কার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বুর্জোয়া অর্থনীতির বিকাশের এক হাতিয়ার হিসেবে। কিন্তু ভারতে জাতীয়তাবাদের বিকাশের পটভূমি সম্পূর্ণ পৃথক, যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে কয়েকজন পুরোধা ব্যক্তি হলেনঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমূখ। এঁরা বিদেশী রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিরোধীতা করে এক যথার্থ ভারতবর্ষের কল্পনা করেছিলেন।

২) উপনিবেশিক শক্তির সাহায্যে ভারতীয় সমাজের উন্নয়ন ঘটানোর প্রয়াস একদল চিন্তাবিদের কাজকর্মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। যেমন, রাজা রামমোহন রায়।

৩) জাতীয়তাবাদের সংকীর্ন গন্ডীকে পেরিয়ে এসময় কতিপয় ভারতীয় দার্শনিক আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রশস্ত পথেই মানবমুক্তির কথা বলেন। এদের অন্যতম হলেন রবীন্দ্রনাথ।

৪) বিংশ শতকের বিশের দশকের গোড়া থেকেই সোভিয়েত বিপ্লবের সাফল্যে অনুপ্রানিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জী প্রমুখেরা মার্ক্সবাদী রাজনীতির একটি বিকল্প ধারা গড়ে তোলেন।

৫) এর পাশাপাশি বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার উপনিবেশিক ভারতে ধর্মের ভিত্তিতেও রাজনীতির তথা রাষ্ট্রচিন্তার এক ধারা লক্ষ্য করা যায়, যা পরবর্তীকালে প্রবল হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সৈয়দ আহমেদ খান, সাভারকার, গোলয়ালকার প্রমুখের নাম এবং ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে মুসলিম লিগ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়।

আরও পড়ুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.