Loading AI tools
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরেলা কাঠামো উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রাচীন সঙ্গীত শাস্ত্রে স্বর ও বর্ণ দ্বারা ভূষিত ধ্বনিবিশেষকে রাগ বলা হয়। এটি মানবচিত্তে এক ধরনের রঞ্জক ধ্বনির আবহ সৃষ্টি করে। ধাতুগত অর্থ করতে হলে, যে স্বর লহরী মনকে রঞ্জিত করে তাকে রাগ বলা হয়। রাগসঙ্গীত, সংগীতের মূলধারার অংশ।[1]
“রঞ্জয়তি ইতি রাগঃ”—যে স্বর রচনা মানুষের চিত্তরঞ্জন করে তাকে বলা হয় রাগ। ‘সংগীত দর্পণ’-কার রাগের নির্ণয় করতে গিয়ে বলেছেন:[2]:৭১
যোঽয়ং ধ্বনিবিশেষস্তু স্বরবর্ণবিভূষিতঃ।
রঞ্জকো জনচিত্তানাং স রাগঃ কথিতো বধৈঃ॥ ৬২
[2]অর্থাৎ ধ্বনির সেই বিশিষ্ট রচনা স্বরবর্ণবিভূষিত হয়ে জনচিত্ত রঞ্জন করে বুদ্ধিমান ব্যক্তি তাকেই বলেন রাগ।
অথবা
যস্য শ্রাবণামাত্রেণ রজ্যন্তে সকলাঃ প্রজাঃ।
সর্ব্বানুরঞ্জনাদ্ধেতোন্তেন রাগ ইতি স্মতঃ॥
[2]উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলি ব্যাপকার্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাগ রচনায় কতকগুলি আবশ্যিক নিয়মকানুন আছে যার ব্যতিক্রম ঘটলে সেই রচনাকে ‘রাগ’ আখ্যা দেওয়া চলবে না, যেমন—[2]
কোনো রাগের আরোহী অবরোহী তে ব্যবহৃত স্বরের সংখ্যা অনুযায়ী রাগের যে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাকেই রাগের জাতি বলা হয়। অর্থাৎ সব রাগেই যে সাতটি করে স্বর ব্যবহৃত হবে এমন নয়।কখনো কখনো কোন কোন রাগে ছয়টি আবার কোন কোন রাগে পাঁচটি স্বরও ব্যবহৃত হয়।জাতি প্রধানত তিন প্রকার।যথা: সম্পূর্ণ জাতি:সাতটি স্বরই ব্যবহৃত হয় এই রাগে। ষাড়ব জাতি :এই রাগে ছয়টি স্বর ব্যবহৃত হয়। ঔড়ব জাতি :এই রাগে পাঁচটি স্বর ব্যবহৃত হয়।
রাগ নির্ণয়ের সুবিধার জন্য প্রাচীন গ্রন্থাকারগণ রাগের দশবিধ লক্ষণ নির্দেশ করেছিলেন, যেমন—
গ্রহাংশৌ তারমন্দ্রৌ চ ন্যাসোহপন্যাস এব চ।
অল্পত্বং চ বহুত্বং চ ষাড়বৌড়ৌবিতে॥— নাট্যকার
অর্থাৎ গ্রহ, অংশ, তার, মন্দ্র, ন্যাস, অপন্যাস, অল্পত্ব, বহুত্ব, ষাড়বত্ব, এবং ঔড়বত্ব—এইগুলিই হচ্ছে রাগের দশ লক্ষণ। এই ১০টি লক্ষণের বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হল।
রাগ সঙ্গীতের চারটি প্রধান রীতি আছে। এগুলো হচ্ছে: ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা ও ঠুমরী। সঙ্গীতে রাগ সমাহার-
রাগ কালিঙ্গড়া , রাগ যোগীয়া , রাগ রামকেলী , রাগ ভৈরব , রাগ গুনকলি
অতি প্রাচীন এই রাগটি ভৈরো, ভ্যায়রো, মালব, ভৈরব ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত।প্রাচীন হলেও বর্তমান প্রচলিত ভৈরবের সাথে আগের ভৈরবের কোন মিল নেই। এটি একটি ঠাট রাগ। রে,ধ কোমল- গাওয়ার সময় আন্দোলিত হয় এবং বিশেষ মহত্বপূর্ণ ভাবে ফুটে উঠে। ভৈরবী ঠাটের কোমল গ ও নি এর স্থলে শুদ্ধ গ নি ব্যবহার করলেই ভৈরব ঠাটের স্বর সপ্তক পাওয়া যায়। রাগটি প্রাত:কালীন সন্ধি প্রকাশ রাগ। ধৈবতের আন্দোলন কালে কোমল নি ঈষৎ প্রয়োগ হয় এবং রে স্বরটি অতি কোমল ও অবরোহে বেশি প্রাধান্য পায়। কুশলতার সাথে অবরোহ গতিতে কোমল নি ব্যবহার করা যায়। গমরে, ধমপ, ধমপ ধনিসাঁ এই স্বর সংগতি মীড় যুক্ত হয়ে বেশি প্রয়োগ হয়। আরোহে সা রে গ ম/ন়ি সা গ ম/সা গ ম এ রকম বিভিন্ন ভাবে স্বর প্রয়োগ হয়ে থাকে। ম রে মীড় হলেও এর সাথে প রে সংযোগ হয়ে একটি বিশেষ রূপ ফুটে উঠে যা সঠিক তালিম প্রাপ্ত গায়ক গণের পক্ষেই কেবল গেয়ে দেখানো সম্ভব। ভৈরবের সমপ্রকৃতির রাগ হচ্ছে কলিংড়া এবং রামকেলী।
পরিচয়: রে ধ কোমল বাকী সব শুদ্ধ স্বর ব্যবহৃত হয়। রে ও ধ এর ব্যবহার শিখে নেয়ার মত একটি বিষয়। ঠাট:ভৈরব। জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ।
আরোহ: সা রে গ ম প ধ নি সাঁ/সা গ ম ধ নি সাঁ। অবরোহ: সাঁ নি ধ প ম গ রে সা ।
চলন: গ ম ধ ধ প গ ম রে রে সা পকড়: সা গ ম প ধ ধ প, ম গ ম রে সা। বাদী: ধ। সমবাদী: রে।
অঙ্গ:উত্তরাঙ্গ । প্রকৃতি: শান্ত, গম্ভীর। ন্যাস স্বর: রে, ম, প ও ধ। সময়:দিবা প্রথম প্রহর (সাধারণত: সকাল ৫-৮ টা)।[4]
রাগ বিভাস , রাগ নট ভৈরব , রাগ আহির ভৈরব , রাগ তোড়ি , রাগ গুরজী তোড়ি , রাগ হিন্দোল , রাগ লীলাবতী , রাগ কোমল রিষাভ আশাবরী
রাগ দেব গান্ধার , রাগ দেশকার , রাগ আলাহিয়া বিলাবল , রাগ আশাবরী , রাগ জৌনপুরী , রাগ দেশী , রাগ ভৈরবী , রাগ বিলাসখনি টোডি , রাগ ভুপাল টোডি , রাগ ললিত
রাগ বিলাবল, বিলাবল ঠাটের অর্ন্তগত একটি রাগ।এই রাগের বৈশিষ্ট্য এবং রুপ ঠাটের সঙ্গে বেশি মিল সম্পন্ন বলে রাগটি বিলাবলের ঠাট রাগ হিসেবে পরিচিত্। কথিত আছে হযরত বেলাল (র:) একটি বিশেষ সুরে আযান দিতেন এবং তার সেই সুরের প্রতিফলনকে ভিত্তি করেই বিলাবল রাগের সৃষ্টি ও নাম করন । এ রাগে সব শুদ্ধ স্বর ব্যবহৃত হয়। নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হল:-
পরিচয়: সব স্বর শুদ্ধ ব্যবহৃত হয় এবং এর চলন বক্রগতি সম্পন্ন।এ রাগের সাথে কল্যাণ ঠাটের প্রচুর সাদৃশ্য থাকায় কখনো কখনো একে প্রাত:কালের কল্যাণও বলা হয়।এই রাগের আরোহে যখন মধ্যম বর্জিত হয় এবং অবরোহে অল্প মাত্রায় কোমল নিষাদ প্রযুক্ত হয়,তখন তাকে আলহিয়া বিলাবল বলা হয়,এই রাগটিই বেশি প্রচলিত।
ঠাট: বিলাবল। জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ। আরোহী: সা রা গা মা পা ধা না র্সা। অবরোহী: র্সা না ধা পা মা গা রা সা। চলন: স, গা, রা, সা, ন্ ধ্, ন্ ধ্ পা, প্ ধ্ ন্ ধ্ ন্ সা, গ র গম গ প, মগ, মর স। পকড়: স গর গ,মগ প,মধপমপ, মগ,মর,স। বাদী স্বর: ধা। সমবাদী স্বর: গা। অঙ্গ: উত্তরাঙ্গ। সময়: প্রাত:কাল।[5]
রাগ গৌড় সারং , রাগ বৃন্দাবনী সারং , রাগ শুদ্ধ সারং
রাগ ভীমপলশ্রী
রাগ মারওয়া , রাগ শ্রী , রাগ পূর্বী , রাগ বারওয়া , রাগ পটদীপ , রাগ মুলতানী , রাগ মধুবন্তী , রাগ ধানি
রাগ পুরিয়া , রাগ পুরিয়া কল্যাণ , রাগ পুরিয়া ধনশ্রী , রাগ শুদ্ধ কল্যাণ , রাগ ইমন , রাগ হামীর , রাগ হংসধ্বনি , রাগ পিলু , রাগ শ্যাম কল্যাণ , রাগ ইমন কল্যাণ , রাগ মেঘ , রাগ গৌরী , রাগ লক্ষ্মী কল্যাণ
আলাউদ্দিন খিলজীর সভাসদ কবি ও দার্শনিক হযরত আমির খসরু এই রাগটির শ্রষ্টা। এই রাগে সাধারণত: সা স্বরটি বর্জন করে আরোহ গতিতে ন্ র গ এই ভাবে সরল গতিতে যাওয়া যায়। এছাড়াও মধ্যম সপ্তকের পঞ্চমকে বর্জন করে ক্ষ ধ ন, ক্ষ ধ র্স ন র্র র্স, ন র্র ন ধ ক্ষ গ এই সমস্ত স্বরসঙ্গতি বিশেষ বৈচিত্র আনয়ন করে।
পরিচয়: মা কড়ি এবং বাকি সব স্বর শুদ্ধ ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ বিলাবলের শুদ্ধ মা এর পরিবর্তে কড়ি মা এর আগমন।এর চলন বক্রগতি সম্পন্ন।এ রাগের সাথে বিলাবল ঠাটের প্রচুর সাদৃশ্য আছে। এই রাগের সমপ্রকৃতির ইমন কল্যাণ নামে আরো একটি রাগ আছে যেখানে শুদ্ধ মধ্যম প্রয়োগ করা হয় এবং ইমন অপেক্ষা ঋষভ এর প্রাধান্যও এতে বেশি থাকে। তবে শুদ্ধ মধ্যম এর ব্যবহার গুরুর নিকট শিখেই প্রয়োগ করা উচিৎ, অন্যান্য স্বরের ব্যবহার ইমন এর মতই। সৌন্দর্য বা বৈচিত্র আনয়ন কল্পে প স্বরটিকে এড়িয়ে ব্যবহার করা হলেও মনে রাখতে হবে পা স্বরটি ইমন রাগে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি ন্যস স্বর।
ঠাট: কল্যাণ। জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ। আরোহী: ( ন্ )সা রা গা ক্ষা পা ধা না র্সা। অবরোহী: র্সা না ধা পা ক্ষা গা রা সা। চলন: ন্ র গ র ,গ ক্ষ ধ ন, র্স ন ধ প ক্ষ গ, প র গ র ন র স। পকড়: ন্ র গ র ন্ র সা, বা ন্ র গ র স , প ক্ষ গ র স। বাদী স্বর: গ। সমবাদী স্বর: ন। অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ। প্রকৃতি: শান্ত। সময়: সন্ধিপ্রকাশ রাগ (গোধুলীলগ্ন থেকে রাত ০৯ টা)।[6]
শ্রী ও কল্যাণ —এই দুই পৃথক রাগের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে শ্রী-কল্যাণ। মিশ্ররাগের নিয়ম অনুযায়ী শেষে যে রাগের নাম থাকে, রাগে তারই প্রাধান্য হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কল্যাণের প্রাধান্যই বেশি। কল্যাণ ঠাটের রাগ কল্যাণ। স্বরের বিচারে ইমনের খুব কাছাকাছি। ইমনে নিরেগ, কল্যাণে সারেগ —এই অঙ্গ ব্যবহার করা হয়। সন্ধের প্রসন্নতা এই রাগে স্পষ্ট। অন্যদিকে শ্রী রাগ বিকেল শেষ হয়ে সন্ধেয় প্রবেশের সময়কার রাগ। গোধূলির বিষণ্ণতা এই রাগে প্রকট। শ্রী শুনলে শূন্যতার অনুভূতি জাগে। এরই সঙ্গে যোগ হচ্ছে কল্যাণের প্রসন্নতা। এই দুইয়ে মিলে অপরূপ মাধুর্য শ্রীকল্যাণ রাগের মধ্যে। একই সঙ্গে দুরকম স্রোতের খেলা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কণ্ঠ ও যন্ত্র, দুই মাধ্যমেই এই রাগ শুনতে পাওয়া যায়. তবে কণ্ঠে শুনতেই বেশি ভালো লাগে.
রাগ বসন্ত , রাগ মিয়াঁ মালহার , রাগ তিলক কামোদ , রাগ কালী , রাগ হেমকল্যাণ , রাগ নট বিহাগ , রাগ ভূপালী , রাগ কেদার , রাগ কামোদ , রাগ ছায়ানট , রাগ খাম্বাজ , রাগ দেশ , রাগ জয়জয়ন্তী , রাগ রাগেশ্রী , রাগ যোগ , রাগ গৌড় মালহার , রাগ কাফি , রাগ রামদাসী মাল্ল্হার , রাগ বাহার , রাগ গড়া , রাগ সুরদাসী মাল্ল্হার , রাগ নন্দ , রাগ ঝিঁঝোটি , রাগ তিলং , রাগ গোরখ কল্যাণ , রাগ স্রোত , রাগ চাঁদনী কেদার , রাগ কলাবতী , রাগ গাবতী
বেশকিছু জনপ্রিয় রাগের জন্মদাতা এই কাফি ঠাট। কর্ণাটকী সঙ্গীতে এই রাগটির নাম খরহর প্রিয়া। কাফি রাগটি ঠাটের সাথে বেশি মিল সম্পন্ন বলে এটি ঠাট রাগ হিসেবে পরিচিত। ধ্রুপদ, ঠুমরি, ভজন ইত্যাদি এই রাগে বেশি শোনা যায়।
পরিচয়: গা নি কোমল এবং বাকী স্বর শুদ্ধ ব্যবহার হয়।আরোহে তীব্র গান্ধার ও নি সুকৌশলে বার বার ব্যবহৃত হয়।নিপুন গায়ক রাগ হানি না করেও কোমল ধৈবত ব্যবহার করে থাকেন। তবে মনে রাখতে হবে এই স্বর গুলি রাগের নিয়মিত স্বর নয়।
ঠাট: কাফি। জাতি: সম্পূণ-সম্পূর্ণ। আরোহী: স র জ্ঞ ম প ধ ণ র্স । অবরোহী: র্স ণ ধ প ম জ্ঞ র স। বাদী স্বর: পন্চম (প)। সমবাদী: ষড়জ (স)।(কোন কোন গুনিজন গ এবং নি কে বাদী- সমবাদী মনে করেন)। চলন: ণৃসমজ্ঞরস, সররজ্ঞ, রপ,মপ,ধপ, মপধমপ, জ্ঞ.. , র, স , সস রর জ্ঞজ্ঞ মম প ধমপ জ্ঞ.. র, স। পকড়: সস রর জ্ঞজ্ঞ মম প। অঙ্গ: উত্তরাংগ। সময়: মধ্যরাত্রি (তবে কেউ কেউ মনে করেন সন্ধাবেলাও রাগটি গাওয়া যেতে পারে)।[7]
এই রাগ ভৈরবী ঠাটের আশ্রয় রাগ বা তার উৎস ,ঠাট রাগ । রাগ ভৈরবী সংকীর্ণ শ্রেণীর ও সরলব্রক্রগতির নাতিচঞ্চলশান্ত প্রকৃতির ভক্তি ও শৃঙ্গার রসাত্মক , ধ্রুপদ ও ঠুমরী অঙ্গে প্রচলিত। ঠুমরী বা যে কোন হালকা অঙ্গের গানে ঠাটের ১২টি সুরই ব্যবহার করা হয় । ঠাটঃ ভৈরবী। জাতিঃ সম্পূর্ণ। আরোহী: স ঋ জ্ঞ ম প ধ ণ র্স । অবরোহী: র্স ণ ধ প ম জ্ঞ ঋ স। বাদী স্বর: মধ্যম (ম) মতান্তরে ধৈবত (ধ)। সমবাদী: ষড়জ (স) মতান্তরে গান্ধার (গ)
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.