রাউলাট আইন (ইংরেজি: The Rowlatt Act of 1919)-এর মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার দমন পীড়নের মাধ্যমে সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কন্ঠরোধ এবং ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন দমনে সচেষ্ট হন । এই উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার বিচারপতি রাউলাটের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ‘সিডিশন কমিশন’ [Sedition Commission] গঠন করেন । ভারতীয়দের হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে কমিশন কতকগুলি সুপারিশ করেন । সেই সুপারিশ সমূহের ওপর ভিত্তি করে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ ব্রিটিশ সরকার এক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী এবং দমনমূলক আইন প্রণয়ন করেন । এই আইনই সাধারণভাবে কুখ্যাত ‘রাউলাট আইন’ নামে পরিচিত । এই আইনে জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করা হয় । সরকার বিরোধী যে-কোনো প্রচারকার্যকে দন্ডনীয় অপরাধ বলে চিহ্নিত করা হয় এবং কোনো রকম সাক্ষ প্রমাণ ছাড়াই যে-কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় ও বিনাবিচারে গ্রেফতার ও যতদিন খুশি আটক রাখার অবাধ ক্ষমতা ও ঘরবাড়ি তল্লাসির অধিকার সরকারকে দেওয়া হয় । এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের ন্যায়বিচার লাভের অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল । তাই রাওলাট আইনকে কালো আইন বলা হয় । সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয় এবং সরকার সাধারণ আইনের প্রয়োগ স্থগিত রেখে জনসাধারণকে চরম পুলিশি ও প্রশাসনিক অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় । জনমনে যথারীতি এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । জনগণের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা ও প্রতিবাদ চলাকালে গুলি চালিয়ে কিছু লোককে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে ১৩ এপ্রিল, ১৯১৯ অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসরের জালিয়ান ওয়ালাবাগ উদ্যানে ১০ হাজার মানুষ সমবেত হয়। জেনারেল ডায়ার সমবেত জনগণকে কোনরূপ হুশিয়ারি প্রদান না করে তার সেনাবাহিনীকে গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেন। এতে বহুলোক হতাহত হয়। ভারতীয়দের জাতীয় স্বার্থবিরোধী এই আইনের বিরুদ্ধে চারিদিকে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে । কেন্দ্রীয় আইন সভার সমস্ত ভারতীয় সদস্য প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন । মদনমোহন মালাব্য, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, মাজহার উল হক আইন পরিষদের সদস্য পদে ইস্তফা দেন । চরমপন্থীরা তো বটেই সুরেন্দ্রনাথ সহ সকল নরমপন্থী নেতা এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন । মহাত্মা গান্ধি সর্বভারতীয় আন্দোলনের ডাক দেন । ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ৩০শে মার্চ এবং ৬ই এপ্রিল গান্ধিজির ডাকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ হরতাল পালিত হয় ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয় । গান্ধিজি সত্যাগ্রহের হুমকি দেন ।

রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত জলিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের এক স্মৃতিচিহ্ন

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.