যজুর্বেদ
বেদের একটি ভাগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
যজুর্বেদ (সংস্কৃত: यजुर्वेद, yajurveda, যজুস্ বা গদ্য মন্ত্র ও বেদ বা জ্ঞান থেকে) হলো গদ্য মন্ত্রসমূহের বেদ।[৪] যজুর্বেদ বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ। যজ্ঞের আগুনে পুরোহিতের আহুতি দেওয়ার ও ব্যক্তিবিশেষের পালনীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলোর পদ্ধতি এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।[৪] যজুর্বেদ হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ বেদের একটি (চতুর্থ) ভাগ। ঠিক কোন্ শতাব্দীতে যজুর্বেদ সংকলিত হয়েছিল, তা জানা যায় না। তবে গবেষকদের মতে, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০০ – ৩২০০ অব্দ নাগাদ, অর্থাৎ সামবেদ ও অথর্ববেদ সংকলনের সমসাময়িক কালে এই বেদও সংকলিত হয়।[৫]
যজুর্বেদ | |
---|---|
![]() চতুর্বেদের মাঝে দ্বিতীয় স্থানে যজুর্বেদ | |
তথ্য | |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
ভাষা | বৈদিক সংস্কৃত |
যুগ | আনু. ৫৪০০–৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তি (যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ)[১][২] |
মন্ত্র | ১,৯৭৫টি মন্ত্র[৩] |
যজুর্বেদ দুটি খণ্ডে বিভক্ত। যথা: কৃষ্ণ যজুর্বেদ ও শুক্ল যজুর্বেদ। এখানে ‘কৃষ্ণ’ শব্দের অর্থ ‘অবিন্যস্ত, অস্পষ্ট ও বিক্ষিপ্তরূপে সংকলিত’। অন্যদিকে ‘শুক্ল’ শব্দের অর্থ ‘সুবিন্যস্ত ও স্পষ্ট।’ [৬] কৃষ্ণ যজুর্বেদের চারটি ও শুক্ল যজুর্বেদের দুটি শাখা আধুনিক যুগে বর্তমান রয়েছে।[৭]
যজুর্বেদ সংহিতার আদি ও প্রাচীনতম অংশটিতে ১,৯৭৫ টি মন্ত্র রয়েছে। এগুলো ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলোর ভিত্তিতে গ্রথিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ঋগ্বেদ থেকে গৃহীত। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ঋগ্বেদ থেকে স্বতন্ত্র।[৮][৯] যজুর্বেদের মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে বৈদিক সাহিত্যের দীর্ঘতম ব্রাহ্মণ শাস্ত্র শতপথ ব্রাহ্মণ।[১০] যজুর্বেদের নবীনতম অংশে রয়েছে একাধিক প্রধান উপনিষদ্। এগুলো হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন শাখার উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। এই উপনিষদ্গুলো হলো বৃহদারণ্যক উপনিষদ্, ঈশ উপনিষদ্, তৈত্তিরীয় উপনিষদ্, কঠ উপনিষদ্, শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ্ ও মৈত্রী উপনিষদ্।[১১][১২]
নাম-ব্যুৎপত্তি

‘যজুর্বেদ’ শব্দটি সংস্কৃত ‘যজুস্’ ও ‘বেদ’ শব্দদুটি থেকে এসেছে। মনিয়ার-উইলিয়ামসের মতে, ‘যজুস্’ শব্দের অর্থ “ধর্মানুশীলন, শ্রদ্ধানিবেদন, পূজা, যজ্ঞ, যজ্ঞে উচ্চারিত প্রার্থনা, পদ্ধতি, যজ্ঞের সময় অদ্ভুতভাবে উচ্চারিত নির্দিষ্ট মন্ত্র।”[১৩] ‘বেদ’ শব্দের অর্থ “জ্ঞান”। জনসনের মতে, ‘যজুস্’ শব্দের অর্থ “যজুর্বেদে সংকলিত (প্রধানত) গদ্যে রচিত পদ্ধতি বা মন্ত্র, যেগুলো গোপনে উক্ত হয়।”[১৪]
মাইকেল উইটজেল ‘যজুর্বেদ’ শব্দটির অর্থ করেছেন, বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত “গদ্য মন্ত্রের (একটি) জ্ঞানমূলক গ্রন্থ।”[৪] র্যাল্ফ গ্রিফিথ ‘যজুর্বেদ’ নামটির অর্থ করেছেন, “যজ্ঞ বা যজ্ঞ-সংক্রান্ত গ্রন্থ ও পদ্ধতির জ্ঞান।”[১৫] কার্ল ওলসন বলেছেন যে, যজুর্বেদ হল “ক্রিয়াকাণ্ডের সময় পঠিত ও ব্যবহৃত মন্ত্র (পবিত্র পদ্ধতি)।”[১৬] অশ্বমেধ
গ্রন্থ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
শাখা
যজুর্বেদের অন্তর্গত শুক্ল যজুর্বেদের ১৬টি শাখার কথা জানা যায়। অন্যদিকে কৃষ্ণ যজুর্বেদের সম্ভবত আনুমানিক প্রায় ৮৬টি শাখা ছিল।[৭] শুক্ল যজুর্বেদের মাত্র দুটি শাখাই এখন বর্তমান। এদুটি হল: মধ্যণ্ডিন ও কান্ব। অন্যান্য শাখাগুলোর নাম অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে মাত্র। উক্ত শাখাদুটি প্রায় একই রকম। কেবল কয়েকটি ক্ষেত্রে এগুলোর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে।[৭] কৃষ্ণ যজুর্বেদের চারটি শাখা অধুনা বর্তমান। এগুলোর বিভিন্ন সংস্করণ পাওয়া যায়।[৭]
শুক্ল যজুর্বেদ
শুক্ল যজুর্বেদের সংহিতাটিকে বলা হয় বাজসনেয়ী সংহিতা। ‘বাজসনেয়ী’ শব্দটি এসেছে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের পৈত্রিক নাম ‘বাজসনেয়’ থেকে। যাজ্ঞবক্ল্য ছিলেন বাজসনেয়ী শাখার প্রতিষ্ঠাতা। বাজসনেয়ী সংহিতার দুটি বর্তমান শাখাদুটি (যেগুলো প্রায় একরূপ) হল: বাজসনেয়ী মধ্যণ্ডিন ও বাজসনেয়ী কান্ব।[৭] প্রাচীন ভারতের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত শুক্ল যজুর্বেদের লুপ্ত শাখাগুলো হল: জাবালা, বৌধ্য, সপেয়ী, তাপনীয়, কাপোল, পৌণ্ড্রবৎস, অবতী, পরমাবটিকা, পরাশর, বৈনেয়, বৈধেয়, কাত্যায়ন ও বৈজয়বপ।[১৭]
শাখার নাম | অধ্যায় | অনুবাক | শ্লোকসংখ্যা | সংশ্লিষ্ট অঞ্চল | তথ্যসূত্র |
মধ্যণ্ডিন | ৪০ | ৩০৩ | ১৯৭৫ | বিহার, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, উত্তর ভারত | [১৯] |
কান্ব | ৪০ | ৩২৮ | ২০৮৬ | মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু | [২০] |
কৃষ্ণ যজুর্বেদ
কৃষ্ণ যজুর্বেদের অধুনা বর্তমান চারটি শাখা হল তৈত্তিরীয় সংহিতা, মৈত্রয়ানী সংহিতা, কঠ সংহিতা ও কপিস্থল সংহিতা।[২১] বায়ুপুরাণে কৃষ্ণ যজুর্বেদের ৮৬টি শাখার উল্লেখ করেছে। যদিও এর অধিকাংশই অধুনা অবলুপ্ত বলে মনে করা হয়।[২২] কঠ শাখাটিকে ভারতের কোনো কোনো প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে ‘চরক’ (পর্যটক) শাখার প্রশাখা বলে উল্লিখিত হয়েছে। কারণ, এই শাখার অনুগামীরা নানা স্থানে ঘুরে ঘুরে অধ্যয়ন করতেন।[২৩]
শাখার নাম | উপশাখার সংখ্যা[২৪] | কাণ্ড | প্রপাঠক | মন্ত্রসংখ্যা | সংশ্লিষ্ট অঞ্চল | তথ্যসূত্র |
তৈত্তিরীয় | ২ | ৭ | ৪২ | দক্ষিণ ভারত | [২৫] | |
মৈত্রয়ানী | ৬ | ৪ | ৫৪ | পশ্চিম ভারত | [২৬] | |
কঠক (চরক) | ১২ | ৫ | ৪০ | ৩০৯৩ | কাশ্মীম, উত্তর ভারত, পূর্ব ভারত | [২৪][২৭] |
কপিস্থল | ৫ | ৬ | ৪৮ | হরিয়ানা, রাজস্থান | [২৭][২৮] |
এই শাখাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ও সর্বাধিক সুসংরক্ষিত শাখাটি হল তৈত্তিরীয় সংহিতা। কোনো কোনো মতে, এই শাখাটির প্রতিষ্ঠাতা যক্ষের শিষ্য তিত্তিরি। পাণিনি এই শাখাটির উল্লেখ করেছেন।[২৯] এই গ্রন্থটি যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখার সঙ্গে যুক্ত। সাধারণত ঋষি তিত্তিরির শিষ্যদের দ্বারা অনুসৃত বলে মনে করা হয়।[৩০]
মৈত্রয়ানী সংহিতা হল প্রাচীনতম যজুর্বেদ সংহিতা যেটি এখনও বর্তমান। এটির সঙ্গে তৈত্তিরীয় সংহিতার বিষয়বস্তুর বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। এছাড়া অধ্যায় বিন্যাসেও তৈত্তিরীয় সংহিতার সঙ্গে এর কিছু পার্থক্য দেখা যায়। তবে এই সংহিতায় অনেক বেশি বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।[৩১]
কিংবদন্তি অনুসারে, কঠক সংহিতা বা চরক-কঠক সংহিতার সংকলক হলেন বৈশম্পায়নের শিষ্য কঠ।[৩১] মৈত্রয়ানী সংহিতার মতো এতেও অপেক্ষাকৃত নবীন তৈত্তিরীয় সংহিতা অপেক্ষা কিছু কিছু অনুষ্ঠানের বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। উল্লেখ্য, তৈত্তিরীয় সংহিতায় স্থানে স্থানে এই ধরনের বর্ণনা সংক্ষেপিত আকারে বর্ণিত হয়েছে।[৩১] কপিস্থল সংহিতা বা কপিস্থল-কঠ সংহিতার নামকরণ করা হয়েছে ঋষি কপিস্থলের নামানুসারে। এটি কেবলমাত্র কয়েকটি বৃহৎ খণ্ডাংশ ও উচ্চারণ-চিহ্ন ছাড়া সংকলিত আকারে পাওয়া যায়।[৩১] এই গ্রন্থটি প্রকৃতপক্ষে কঠক সংহিতার একটি পাঠান্তর মাত্র।[২৭]
বিন্যাস
যজুর্বেদের প্রতিটি আঞ্চলিক শাখায় গ্রন্থের অংশ হিসেবে সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ্ রয়েছে। মূল গ্রন্থের সঙ্গে একাধিক শ্রৌতসূত্র, গৃহ্যসূত্র ও প্রতিশাখ্য রয়েছে। শুক্ল যজুর্বেদের গ্রন্থবিন্যাস মধ্যণ্ডিন ও কান্ব শাখাদ্বয়ে একই রকম।[৭][১৭] কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র, পরস্কর গৃহ্যসূত্র ও শুক্ল যজুর্বেদ প্রতিশাখ্য এই অংশের সঙ্গে যুক্ত।
কৃষ্ণ যজুর্বেদের প্রতিটি শাখার ব্রাহ্মণ অংশটি সংহিতা অংশের সঙ্গে মিশ্রিত। এর ফলে এটি গদ্য ও পদ্যের একটি মিশ্র রূপের জন্ম দিয়েছে, যা এটিকে অস্পষ্ট ও অবিন্যস্ত করে রেখেছে।[৬][৩১]
বিষয়বস্তু
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সংহিতা
বাজসনেয়ী সংহিতা ৪০টি অধ্যায়ে বিভক্ত। এই সংহিতায় নিম্নোক্ত ক্রিয়াকাণ্ডগুলোর পদ্ধতি দেওয়া হয়েছে:[১৮]
অধ্যায়ের সংখ্যা | ক্রিয়াকাণ্ডের নাম | দিন | ক্রিয়াকাণ্ডের প্রকৃতি | তথ্যসূত্র |
১-২ | দর্শপূর্ণমাস (পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কৃত্য) | ২ | অগ্নিতে গোদুগ্ধ আহুতি প্রদান। গাভীর থেকে গোবৎসকে (বাছুর) বিচ্ছিন্নকরণ | [৩২][৩৩] |
৩ | অগ্নিহোত্র | ১ | অগ্নিতে ননী (মাখন) ও দুগ্ধ আহুতি প্রদান। বসন্ত, বর্ষা ও শরৎ—এই তিন প্রধান ঋতুর আবাহন। | [৩৪] |
৪-৮ | সোমযজ্ঞ | নদীতে অবগাহন (স্নান)। অগ্নিতে দুগ্ধ ও সোমরস আহুতি প্রদান। চিন্তা ও বাক্যের দেবতাদের আহুতি প্রদান। শস্যরক্ষা, গবাদিপশু রক্ষণ ও দৈত্যদানব দূরীকরণের জন্য বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা। | [৩৫] | |
৯-১০ | বাজপেয় ও রাজসূয় | বিজয় উৎসব, রাজার রাজ্যাভিষেক। অগ্নিতে ননী ও সুরা (একপ্রকার মদ্য) আহুতি প্রদান। | [৩৬] | |
১১-১৮ | অগ্নিচয়ন | ৩৬০ | যজ্ঞের অগ্নির জন্য বেদীপ্রস্তুতের পদ্ধতি ও সেই সংক্রান্ত ক্রিয়াকাণ্ড। বৃহত্তম বেদীটি বাজপাখির বিস্তারের ন্যায় বড়ো। | [৩৭] |
১৯-২১ | সৌত্রমণি | অগ্নিতে মসর (সিদ্ধ-করা জোয়ার মিশ্রিত চাল-যবের মিশ্রণ) আহুতি। সোমরস পানে অশুভ প্রভাব নিবারণ। সিংহাসনচ্যুত রাজা, যুদ্ধে গমনোদ্যত সৈন্যের জন্য প্রার্থনা এবং গবাদি পশু ও ধনাদির নিমতি প্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা। | [৩৮] | |
২২-২৫ | অশ্বমেধ | ১৮০ বা ৩৬০ | কেবলমাত্র রাজার পালনীয়। একটি অশ্ব ছেড়ে দেওয়া হয়। তার পিছনে সশস্ত্র সেনাবাহিনী গমন করে। যেখানে কেউ সেই অশ্বের গতি রোধ করে বা ভ্রাম্যমাণ অশ্বের ক্ষতি করে তাকে রাজ্যের শত্রু ঘোষণা করা হয়। অশ্বটি রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করলে সেনারা সেটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলি দেয়। এই অংশে ভ্রাম্যমাণ অশ্বটির স্তুতি ও দেবতাদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা সংকলিত রয়েছে। | [৩৯] |
২৬-২৯ | পূর্বোক্ত যজ্ঞের আরও কিছু পদ্ধতি। | [৪০] | ||
.৩০-৩১ | পুরুষমেধ | পুরুষের (বিশ্বসত্ত্বা) প্রতীকী বলিদান। ম্যাক্স মুলার[৪১] ও অন্যান্যদের মতে,[৪২] একজন ব্যক্তিকে পুরুষরূপে কল্পনা করা হয়। তবে অনুষ্ঠানের শেষে তাকে কোনোরকম ক্ষতি বা অঙ্গহানি ব্যতিরেকেই মুক্তি দেওয়া হয়। এটি অশ্বমেধের বিকল্প। এই যজ্ঞে বিশ্বসৃষ্টির সমাপ্তি পরিদর্শিত হয়ে থাকে। | [৪৩] | |
32-34 | সর্বমেধ | ১০ | উপর্যুক্ত পুরুষমেধ যজ্ঞের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ যজ্ঞ হিসেবে কথিত। সার্বজনীন সাফল্য ও সমৃদ্ধির জন্য এই যজ্ঞ আয়োজিত হত। কারোর কল্যাণ কামনা বা গৃহত্যাগকারীর (বিশেষত শান্তি বা মোক্ষ লাভের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগী) জন্য দধি ও ঘি আহুতি দেওয়া হয় এই যেজ্ঞে। | [৪৪] |
৩৫ | পিতৃযজ্ঞ | অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া-সংক্রান্ত আচারসমূহ। পিতা ও পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ। | [৪৫] | |
৩৬-৩৯ | প্রবর্গ্য | গ্রিফিথের মতে, এই অনুষ্ঠানটি দীর্ঘজীবন লাভ, অবিনশ্বর শক্তি, স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, শান্তি ও সুখ লাভের জন্য আচরিত হত। এতে যজ্ঞের অগ্নিতে দুগ্ধ ও খাদ্যশস্য আহুতি দেওয়া হত। | [৪৬] | |
৪০ | এই অধ্যায়টি বাহ্যিক যজ্ঞানুষ্ঠান-সংক্রান্ত নয়। এটি ঈশ উপনিষদ্ নামে একটি দার্শনিক নিবন্ধ। এই উপনিষদের উপজীব্য হল আত্মার প্রকৃতি। ৪০. ৬-সংখ্যক শ্লোকটিতে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি আপন আত্মায় সমাহিত, তিনি সৃষ্ট সকল জীব ও সকল বস্তুকে দেখেন এবং সকল সত্ত্বায় তাঁর আত্মাকেই প্রত্যক্ষ করেন। তখন তাঁর সংশয় থাকে না। ভাবনাও থাকে না। | [৪৭] |
- মন্ত্রসমূহের গঠন
যজুর্বেদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত মন্ত্রগুলো একটি বিশেষ ধরনের ছন্দে নিবদ্ধ। এই মন্ত্রগুলো সবিতা (সূর্য), ইন্দ্র, অগ্নি, প্রজাপতি, রুদ্র ও অন্যান্যদের আবাহন ও স্তুতি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চতুর্থ খণ্ডের তৈত্তিরীয় সংহিতায় অগ্নিচয়ন অনুষ্ঠানের জন্য নিম্নোক্ত মন্ত্রগুলো (সংক্ষেপিত) রয়েছে,[৪৮]
সবিতা মনকে একাগ্র করেন। চিন্তন সৃষ্টি করেন, আলোক দৃশ্যমান করে পৃথিবী থেকে অগ্নি আনয়ন করেন।
সবিতা সকল দেবতাকে মনের সঙ্গে যুক্ত করেন। যাঁরা মন থেকে আকাশে ও স্বর্গে গমন করেন, সবিতা তাঁদের আনয়ন করেন। তাঁরা মহতী আলোক সৃষ্টি করেন।
সকল দেবতাকে মনের সঙ্গে যুক্ত করে, যাঁরা মন থেকে আকাশে, স্বর্গে গমন করেন, তাঁদের, সবিতা তাঁদের আনয়ন কর যাঁরা মহা আলোক সৃষ্টি করেন।
একাগ্র চিত্তে আমরা সবিতৃদেব কর্তৃক স্বর্গলাভের শক্তি অর্জন করি।
যাঁর যাত্রাপথ অন্য দেবতাগণ অনুসরণ করেন, ঈশ্বরের শক্তির স্তুতি করেন, যিনি মর্ত্যলোকের আনন্দময় স্থানগুলি রক্ষা করেন, তিনিই মহান দেবতা সবিতা।
সবিতৃদেব, অনুষ্ঠানসকল সফল করুন! অনুষ্ঠানের ধাতা, সৌভাগ্য আনয়ন করুন!
চিত্তশুদ্ধিকারী দিব্য গন্ধর্ব, আমাদের চিন্তনকে পরিশুদ্ধ করুন! বাগ্দেবতা আমাদের বাক্য মধুময় করুন!
সবিতৃদেব, এই যজ্ঞ সফল করুন!
আমরা যেন দেবগণকে সম্মান করি, বন্ধু অর্জন করি, সর্বদা বিজয়ী হই, সম্পদ অর্জন করি ও স্বর্গলাভের অধিকারী হই!— তৈত্তিরীয় সংহিতা ৪। ১। ১, [৪৮]
শতপথ ব্রাহ্মণ
‘শতপথ ব্রাহ্মণ’ শব্দটির অর্থ ‘একশো পথের ব্রাহ্মণ’।[৪৯] যে ব্রাহ্মণগুলো এখন পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে এই ব্রাহ্মণটিই দীর্ঘতম।[৪৯] স্টালের মতে, এই ব্রাহ্মণটি হলো “অনুষ্ঠান ও অন্যান্য বিষয়ে জটিল মতামতগুলোর একটি যথার্থ বিশ্বকোষ বা বিশ্বভান্ডার।”[৪৯]
১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে এগেলিং শতপথ ব্রাহ্মণ অনুবাদ করেন। এটি বহুবার মুদ্রিত হওয়ার কারণে একটি বহুপঠিত ব্রাহ্মণে পরিণত হয়। তবে এটির ভুল ব্যাখ্যা ও ভুল ব্যবহারও হয়েছে। তার কারণ হিসেবে স্টাল বলেছেন, “এই ব্রাহ্মণে ‘যেকোনো’ তত্ত্বের সমর্থনে যথেষ্ট উপাদান রয়েছে।”[৪৯] শতপথ ব্রাহ্মণের প্রথম অনুবাদক এগেলিং এটিকে বলেছিলেন, “উপযুক্ত যুক্তিনিষ্ঠার পরিবর্তে দুর্বল প্রতীকতত্ত্ব”, যা রহস্যবাদ বিষয়ে খ্রিস্টান ও অখ্রিস্টান পার্থক্যের মধ্যে প্রাপ্ত “আনুমানিক অসারতা”র তুল্য।[৪৯][৫০]
উপনিষদ্
গুরুত্ব
যজুর্বেদের যুগে ঋত্বিকদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। ভক্তির চেয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান সর্বস্ব হয়ে দাঁড়ায়। শুক্লযজুর্বেদের ষোড়শ অধ্যায়ে রুদ্রদেবতা একাধারে ভয়ংকর ও কল্যাণকর সংহারক ও পালক। কৃষ্ণযজুর্বেদকে ব্রাহ্মণ সাহিত্যের জনক বলা হয়। যজুর্বেদের সাহিত্যিক মূল্য না-থাকলেও ধর্ম সম্বন্ধে গবেষণায়, মন্ত্র ও প্রার্থনাদির উৎপত্তি, তাৎপর্য এবং ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রের আলোচনায় এই বেদের চর্চা অপরিহার্য। এই বেদে বর্ণিত ‘পিণ্ডপিতৃযজ্ঞ’ পরবর্তীকালে পিতৃশ্রাদ্ধাদিরূপে পরিণত হয়েছে।
আরও দেখুন
- কর্পূরগৌরম করুণাবতারম
- কল্প (বেদাঙ্গ)
- মহীধর
- শতপথ ব্রাহ্মণ
- বেদ
- যজ্ঞ
- হিন্দুধর্ম
- হিন্দু দর্শন
তথ্যসূত্র
আরো পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.