ম্যিতক্যীনা
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ম্যিতক্যীনা (বর্মী: မြစ်ကြီးနားမြို့) মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের রাজধানী। এটি ইয়াঙ্গুন থেকে ১,৪৮০ কিমি. (৯২০ মাইল) এবং মান্দালয় থেকে ৭৮৫ কিমি. (৪৮৮ মাইল) দূরে অবস্থিত। বর্মী ভাষায় এর অর্থ ''বড় নদীর কাছে'' এবং ম্যিতক্যীনা ইরাবতী নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এটি মিয়ানমারের উত্তরতম নদী বন্দর এবং উত্তরতম রেলওয়ে গন্তব্য।[২] এখানে ম্যিতক্যীনা বিমানবন্দর অবস্থিত।
ম্যিতক্যীনা | |
---|---|
শহর | |
![]() | |
মিয়ানমারে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°২৩′০″ উত্তর ৯৭°২৪′০″ পূর্ব | |
দেশ | মিয়ানমার |
বিভাগ | কাচিন রাজ্য |
জেলা | ম্যিতক্যীনা জেলা |
শহরাঞ্চল | ম্যিতক্যীনা শহরাঞ্চল |
উচ্চতা | ৪৭২ ফুট (১৪৪ মিটার) |
জনসংখ্যা (২০১৪) | |
• পৌর এলাকা | ৩,০৬,৯৪৯ |
• Ethnicities |
|
• Religions | |
সময় অঞ্চল | মায়ানমার মান সময় (ইউটিসি+৬.৩০) |
এলাকা কোড | ৭৪ |
[১] |
প্রাচীনকাল থেকে ম্যিতকীনা চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য শহর।
আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি জর্জ জে. গাইস এবং তার স্ত্রী ১৮৯০ দশকের শেষ দিকে ম্যিতক্যীনায় আসেন। তারা ১৯০০ সালে সেখানে একটি প্রাসাদ স্থাপনের অনুমতি চেয়ে অনুরোধ করে। স্থাপনাটিকে গাইস মেমোরিয়াল গির্জা নামকরণ করা হয়।[৩] এটি কাচিন ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশনের গির্জাগুলোর মধ্যে একটি।
জাপানি বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪২ সালে এই শহর এবং নিকটবর্তী বিমানঘাঁটি দখল করে। অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির মধ্যে দীর্ঘ অবরোধকালের পর মিত্রশক্তির জোসেফ সিটওয়েলের অধীনে পুনরায় এটি দখলকৃত হয়। শহরটি বার্মার রেল ও পানি সংযোগের কারণেই শুধু গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এটি ভারত ও বার্মার মধ্যে পরিকল্পিত পথ লেডো রোডের মধ্যে থাকার কারণেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[৪][৫]
ম্যিতক্যীনার প্রধান বিমানবন্দর হলো ম্যিতক্যীনা বিমানবন্দর। এটি পুতাও ও মান্দালয় শহরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এটি প্রতি সোমবারে লাশিও বিমানবন্দরের সাথে যুক্ত হয়।
রেলপথে মান্দালয় থেকে ম্যিতক্যীনায় পৌঁছাতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। রেলস্টেশনটি প্রায় ১০০ বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। রেলস্টেশনটি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মালপত্রের জন্য প্রধান যানবাহন। এটি গাড়ির মাধ্যমে লাইযা, ভামো, চীন ও সুম্প্রাবানের সাথে সংযোগ দেয়।
ম্যিতক্যীনা-তানাই-ভারত রোড যা লেডো রোড নামে পরিচিত, ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়।
শহরের কেন্দ্রস্থলের প্রধান যানবাহন হলো তিন চাকাবিশিষ্ট মোটর সাইকেল, তিন চাকার বাইসাইকেল এবং মোটর বাইক।
রাজ্যের রাজধানী হওয়ায় এখানে সরকারি দপ্তর এবং অন্যান্য শহরের চেয়ে বেশি জনসংখ্যা আছে। শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১,৫০,০০০ জন। এর মধ্যে কাচিন, বামার, শান গোষ্ঠীর মানুষ ও কয়েকজন চীনা ও ভারতীয় আছে।[৬]
কাচিন গোষ্ঠীর প্রধান ভাষা হলো কাচিন বা জিঙ্ঘপো ভাষা। জিঙ্ঘপো শব্দটির অনেক অর্থ আছে। জিঙ্ঘপো ভাষায় জিঙ্ঘপো শব্দটির অর্থ মানুষ। কিছু মানুষ ইংরেজি ও নেপালি ভাষা জানে তবে বেশিরভাগ মানুষই বর্মী ভাষায় কথা বলে যা মিয়ানমারের রাষ্ট্রভাষা।
বর্তমানে বিদেশিরা সরকারি অনুমতি ছাড়াই ম্যিতক্যীনায় ভ্রমণ করতে পারে।
এখানের প্রধান ধর্ম হলো থেরবাদ। এছাড়াও রয়েছে খ্রিস্টধর্ম (বেশিরভাগ রোমান ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্ট), হিন্দুধর্ম ও ইসলাম।
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, ম্যিতক্যীনার আর্দ্র উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু আছে। এটি ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ুর কাছাকাছি। এখানে একটি শুষ্ক শীতকালীন মরসুম (নভেম্বর-এপ্রিল) ও একটি ভেজা গ্রীষ্মকালীন মরসুম (মে-অক্টোবর) আছে।
ম্যিতক্যীনা (১৯৮১–২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩৫.০ (৯৫.০) |
৩৫.০ (৯৫.০) |
৩৮.০ (১০০.৪) |
৪১.১ (১০৬.০) |
৪২.০ (১০৭.৬) |
৪০.২ (১০৪.৪) |
৩৮.৩ (১০০.৯) |
৩৮.৫ (১০১.৩) |
৩৭.৫ (৯৯.৫) |
৩৬.২ (৯৭.২) |
৩৮.৫ (১০১.৩) |
৩৫.৫ (৯৫.৯) |
৪২.২ (১০৮.০) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৫.৩ (৭৭.৫) |
২৭.৫ (৮১.৫) |
৩০.৪ (৮৬.৭) |
৩২.৬ (৯০.৭) |
৩৩.৩ (৯১.৯) |
৩১.৬ (৮৮.৯) |
৩০.৫ (৮৬.৯) |
৩২.০ (৮৯.৬) |
৩১.৭ (৮৯.১) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
২৮.৪ (৮৩.১) |
২৫.৮ (৭৮.৪) |
৩০.০ (৮৬.০) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ১৮.০ (৬৪.৪) |
২০.৩ (৬৮.৫) |
২৩.৯ (৭৫.০) |
২৬.৬ (৭৯.৯) |
২৭.৬ (৮১.৭) |
২৭.৯ (৮২.২) |
২৭.৭ (৮১.৯) |
২৮.৩ (৮২.৯) |
২৮.১ (৮২.৬) |
২৬.২ (৭৯.২) |
২২.৫ (৭২.৫) |
১৮.৮ (৬৫.৮) |
২৪.৯ (৭৬.৮) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১০.৪ (৫০.৭) |
১২.৯ (৫৫.২) |
১৬.৩ (৬১.৩) |
১৯.৭ (৬৭.৫) |
২২.৩ (৭২.১) |
২৪.৩ (৭৫.৭) |
২৪.৫ (৭৬.১) |
২৪.৬ (৭৬.৩) |
২৩.৯ (৭৫.০) |
২১.৫ (৭০.৭) |
১৬.২ (৬১.২) |
১১.৯ (৫৩.৪) |
১৯.০ (৬৬.২) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩.০ (৩৭.৪) |
৭.৫ (৪৫.৫) |
১০.০ (৫০.০) |
১০.০ (৫০.০) |
১৬.১ (৬১.০) |
১৮.১ (৬৪.৬) |
১৮.০ (৬৪.৪) |
২০.০ (৬৮.০) |
১৯.৮ (৬৭.৬) |
১৫.০ (৫৯.০) |
৮.০ (৪৬.৪) |
৩.০ (৩৭.৪) |
৩.০ (৩৭.৪) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৯.৯ (০.৩৯) |
২১.০ (০.৮৩) |
২৪.০ (০.৯৪) |
৫৪.০ (২.১৩) |
২১৮.৫ (৮.৬০) |
৫৪৯.২ (২১.৬২) |
৫৪৩.০ (২১.৩৮) |
৩৯৮.৩ (১৫.৬৮) |
২৯৪.৭ (১১.৬০) |
১৭০.৬ (৬.৭২) |
২৫.১ (০.৯৯) |
১১.৭ (০.৪৬) |
২,৩২০ (৯১.৩৪) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় (≥ ০.৩ mm) | ২ | ৭ | ৫ | ৮ | ১৫ | ২৫ | ২৭ | ২৮ | ১৯ | ১১ | ৩ | ২ | ১৫২ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৭৭ | ৬৮ | ৬৪ | ৬৪ | ৭২ | ৮৩ | ৮৯ | ৮৭ | ৮৫ | ৮৩ | ৭৯ | ৭৮ | ৭৭ |
উৎস ১: Norwegian Meteorological Institute,[৭] Deutscher Wetterdienst (mean temperatures 1991–2010, rainy days 1896–1940, humidity 1963–1988)[৮] | |||||||||||||
উৎস ২: Meteo Climat (record highs and lows)[৯] |
শহরের বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনা রাস্তার পাশে ছোট স্তূপ করে পোড়ায়। প্লাস্টিকসহ বেশিরভাগ আবর্জনা এভাবেই দূর করা হয়। শহরের প্রতিটি গলিতে প্রতি সন্ধ্যায় স্তূপে আগুন জ্বালানো থাকে। বিকালের কিছুক্ষণ পরে পোড়ান শুরু হয় এবং ৬টার মধ্যে শহরের বায়ু ধোঁয়াটে হয়ে যায়। ছুটির দিনের আগেই পোড়ান শুরু হতে পারে। সন্ধ্যাবেলায় ম্যিতক্যীনার বায়ুর মান খারাপ হওয়ায় বাহিরে বের হলে অস্বস্তিকর লাগতে পারে। কখনো, বায়ুচাপের কারণেে সকাল পর্যন্তও বায়ু ধোঁয়াটে হতে পারে। শুশুমাত্র বর্ষা মৌসুমেই এটি হয় না। বর্ষায় বায়ু সতেজ হয় বলে রিপোর্ট করা হয়েছে।
শহরে ম্যিতক্যীনা বিশ্ববিদ্যালয়, একটি খ্রিস্টধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ট্রেনিং কলেজ, নার্সদের কলেজ, কম্পিউটার শিক্ষার কলেজ ও কাচিন থিওলজিকাল কলেজ-নাউনগ নাং অবস্থিত। এখানে ইংরেজি ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক ভাষা ব্যবসা কেন্দ্র অবস্থিত। এখানে আরও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন- নাউশাউং উন্নয়ন ইন্সটিটিউট, পিন্ন্যা তাগার, নিংশাওং ও মানবিক ও বিজ্ঞানের জন্য কাচিনল্যান্ড স্কুল[১০]। কাচিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় রূপকল্প ২০২৪ রয়েছে।
ম্যিতক্যীনা হলো কাচিন রাজ্যের ব্যবসাকেন্দ্র। কাচিন রাজ্যের ব্যবসার লেনদেন ম্যিতক্যীনায় হয়ে থাকে। এখানের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো হলো জেড পাথর, অ্যাম্বার পাথর, সোনা, সেগুন ও কৃষিপণ্য। জেড, সোনার খনি ও সেগুনের স্বল্পমেয়াদী চুক্তি থাকায় কাচিন রাজ্যের সাথে চীনাদের ভালো ব্যবসার সম্পর্ক ছিল। সরকারি উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১০-২০১১ সালে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জেড রপ্তানি হয়েছিলো। বর্তমানে, কাচিন স্বাধীনতা সেনা (কেআইে) ও সামরিক সরকারির মধ্যে বিরোধের কারণে, ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.