ম্যাগনাস ক্রিয়া
From Wikipedia, the free encyclopedia
ম্যাগনাস ক্রিয়া (ইংরেজি: Magnus effect) বলতে কোনও প্রবাহী (তরল বা বায়বীয়) পদার্থে নিমজ্জিত অবস্থায় গতিশীল কোনও ঘূর্ণায়মান বেলনাকার, বা গোলকাকার কঠিন বস্তু ও প্রবাহী পদার্থের মধ্যে আপেক্ষিক গতির কারণে ঐ বস্তুটির উপরে এমন এক ধরনের বল সৃষ্টি হওয়ার ঘটনাকে বোঝায়, যা বস্তুটি ঘূর্ণায়মান না হলে পরিলক্ষিত হয় না। উৎপন্ন বলটিকে ম্যাগনাস বল (ইংরেজি: Magnus force) বলে; এটি ঘূর্ণায়মান বস্তুটির গতিমুখের সাথে লম্বভাবে ও বস্তুটি যে দিকে ঘুরছে, সেই দিকে প্রযুক্ত হয়। খ্রিস্টীয় ১৯শ শতকের জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ হাইনরিখ গুস্টাভ মাগনুসের নামে এই ক্রিয়াটির নামকরণ করা হয়েছে। তিনিই ১৮৫৩ সালে এই ক্রিয়াটির উপরে পরীক্ষানিরীক্ষামূলক গবেষণা সম্পাদন করেন।
![]() | এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। |
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/15/Sketch_of_Magnus_effect_with_streamlines_and_turbulent_wake.svg/640px-Sketch_of_Magnus_effect_with_streamlines_and_turbulent_wake.svg.png)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/f/f0/Magnus-anim-canette.gif/320px-Magnus-anim-canette.gif)
কোনও ঘূর্ণায়মান বস্তু যখন কোনও প্রবাহী তরল বা বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়, তখন বস্তুটির ঘূর্ণনের ফলে প্রবাহী পদার্থের মধ্যে বেগের যে ভিন্নতা এবং সে কারণে চাপের যে তারতম্য সৃষ্টি হয়, তার ফলে বস্তুটি সরলরৈখিক গতিপথ ধরে রাখে না, ঐ পথ থেকে তার বিচ্যুতি ঘটে। ম্যাগনাস ক্রিয়া হল বের্নুইয়ের উপপাদ্যের একটি বিশেষ রূপ। ঐ উপপাদ্য অনুযায়ী যে বিন্দুতে প্রবাহীর দ্রুতি বৃদ্ধি পায়, সেই বিন্দুতে প্রবাহীর চাপ হ্রাস পায়। যখন একটি গোলকাকার বস্তু (যেমন একটি বল) বাতাসের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে সম্মুখদিকে অগ্রসর হয়, তখন বস্তুটির ঘূর্ণনের ফলে এর চারপাশের লাগোয়া বাতাসও ঘূর্ণনের টান অনুভব করে ও বস্তুটিকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। বস্তুটি সম্মুখ দিকে ধাবিত হয় বলে বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বস্তুর মুখোমুখি বাতাস বস্তুটির দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে হয়। কিন্তু একই সময়ে বস্তুটি ঘুরছে বলে ঘুরন্ত বস্তুর একপাশে বস্তুর লাগোয়া ঘূর্ণায়মান বাতাসটি বস্তুর দিকে ধাবমান বায়ুপ্রবাহের মুখোমুখি থাকে ও সেটিকে বাধাপ্রদান করে, ফলে ঐ পাশে বাতাসের মোট গতিবেগ মন্থর হয়ে যায়। আবার ঘুরন্ত বস্তুর অন্যপাশে বস্তুর লাগোয়া ঘূর্ণায়মান বাতাসের স্তরটি বস্তুর দিকে ধাবমান বায়ুপ্রবাহের একই দিকে গতিশীল থাকে বলে ঐ পাশে বাতাসের মোট গতিবেগ বেড়ে যায়। বের্নুইয়ের উপপাদ্য অনুযায়ী যে পাশে বায়ুপ্রবাহের মোট গতিবেগ কমে যায়, সে পাশে বায়ুর পার্শ্বচাপ বেড়ে যায়, আর অন্যপাশে বায়ুর মোট গতিবেগ বৃদ্ধি পায় বলে সেই পাশের পার্শ্বচাপ কমে যায়। ফলে ঘূর্ণায়মান বলটি উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে বিচ্যুত হয়ে সরে যায়। এই ঘটনাটিকেই ম্যাগনাস ক্রিয়া বলা হয়। এই বিচ্যুতি সৃষ্টিকারী বলটিকে ম্যাগনাস বল বলে। ম্যাগনাস বলটি ঘূর্ণায়মান বস্তুটির ঘূর্ণন অক্ষ ও এর দিকে ধাবমান বায়ুপ্রবাহের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত হয়।
নিউটনের গতিসূত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে একটি সম্মুখে গতিশীল ঘূর্ণায়মান বস্তু বাতাসের উপরে একটি লব্ধি বল প্রয়োগ করে। নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুযায়ী বাতাসও ঐ সম্মুখে গতিশীল ঘূর্ণায়মান বস্তুটির উপরে একটি সমমানের ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে, ফলে বস্তুটির গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়।
ম্যাগনাস ক্রিয়ার ফলে কোনও বস্তু যদি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরন্ত, অর্থাৎ বাম থেকে ডানে ঘুরন্ত থাকে, তাহলে সেটি সামনে চলতে চলতে ডান দিকে বিচ্যুত হবে। যেমন কোনও ফুটবল খেলোয়াড় ফুটবলকে যদি এমনভাবে লাথি দেয় যে ফুটবলটি বাম থেকে ডানে বা ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে, তাহলে বাতাসে উড়ন্ত ঐ ঘূর্ণায়মান বলটি চলতে চলতে ডান দিকে বিচ্যুত হয়ে যাবে, অর্থাৎ এর গতিপথ ডান দিকে বেঁকে যাবে। আবার টেনিস খেলায় র্যাকেট দিয়ে টেনিস বলের উপর শীর্ষঘূর্ণন (টপস্পিন) প্রয়োগ করলে বলটি উপর থেকে নিচের দিকে ঘুরতে ঘুরতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়, ফলে এটির উপর একটি নিম্নমুখী ম্যাগনাস বলের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নমুখী ম্যাগনাস বলের সাথে মাধ্যাকর্ষণ বল যুক্ত হয়ে বলটির উপরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি নিম্নমুখী বল প্রযুক্ত হয়, যার ফলে বলটি স্বাভাবিক সময়ের আগেই মাটিতে নেমে আসে। এভাবে টেনিস খেলোয়াড়েরা শীর্ষঘূর্ণন প্রয়োগ করে অনেক জোরে টেনিস বলে আঘাত করলেও সেটি কোর্টের সীমানা অতিক্রম না করে কোর্টের ভেতরেই পতিত হয়। উল্টোভাবে পশ্চাৎঘূর্ণনের (ব্যাকস্পিন) ফলে টেনিস বলটির উপরে একটি ঊর্ধ্বমুখী উত্তোলক ম্যাগনাস বল সৃষ্টি হয় যা একটি গতিশীল বলের উড্ডয়নকে দীর্ঘায়িত করে।[1] ফুটবল ও টেনিস ছাড়াও বেসবল খেলার পিচার ও ক্রিকেট খেলার বোলারগণ (বল নিক্ষেপকারক) এই ধর্মটি প্রায়শই ব্যবহার করেন। তাই ম্যাগনাস ক্রিয়াটি বহু বল জাতীয় খেলার ক্রিয়াকৌশল পর্যবেক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রীড়াক্ষেত্রের বাইরে সামরিক বিজ্ঞানে দিকনির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্রের উপর ঘূর্ণনের প্রভাব পর্যবেক্ষণে ম্যাগনাস ক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকৌশল ক্ষেত্রে যেমন, রোটর জাহাজ ও ফ্লেটনার বিমানের নকশাতে এর ব্যবহার রয়েছে।
এই সামগ্রিক ঘটনাটি বায়ুপত্রকের (Aerofoil অ্যারোফয়েল) চারদিকে ঘটা অবস্থার অনুরূপ (উত্তোলক বল দ্রষ্টব্য), তবে এক্ষেত্রে বায়ুপত্রক ক্রিয়ার বদলে যান্ত্রিক ঘূর্ণনের ফলে প্রবাহীর পরিচলন সৃষ্টি হয়।[2]
মাগনুস ছাড়াও একটি ঘূর্ণায়মান বেলনের উপর ক্রিয়াশীল বল সর্বপ্রথম বিশ্লেষণ করেন জার্মান বিজ্ঞানী মার্টিন কুটা (Martin Kutta) ও রুশ বিজ্ঞানী নিকোলাই ঝুকভস্কি (Nikolay Yegorovich Zhukovsky)। তাদের নামে এই বলটি কুটা–ঝুকভস্কি উত্তোলন তত্ত্ব নামে পরিচিত।[3]