মেলান্দহ উপজেলা
জামালপুর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জামালপুর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মেলান্দহ বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি ১১টি ইউনিয়ন এবং দুইটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন জামালপুর জেলার ৭ টি উপজেলার একটি এবং এটি জেলার মধ্যভাগে অবস্থিত। মেলান্দহ উপজেলার উত্তরে ইসলামপুর উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর সদর উপজেলা ও মাদারগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে জামালপুর সদর উপজেলা, শেরপুর জেলার শেরপুর সদর উপজেলা ও ইসলামপুর উপজেলা, পশ্চিমে মাদারগঞ্জ উপজেলা ও ইসলামপুর উপজেলা।
মেলান্দহ | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে মেলান্দহ উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৮′১৬″ উত্তর ৮৯°৫০′১০″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | জামালপুর জেলা |
সরকার | |
আয়তন | |
• মোট | ২৫৮.৩২ বর্গকিমি (৯৯.৭৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৩,১৩,১৮২ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,১০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৫.৭% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৩৯ ৬১ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২৫ সালে মেলান্দহ থানা গঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৩ সালে মেলান্দহ উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেলান্দহ উপজেলা জামালপুর-৩ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত । এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪০ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।
মেলান্দহ উপজেলার আয়তন ২৫৮.৩২ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী ৩,১৩,১৮২ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ১০০ঃ৯৭, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২১২ জন, শিক্ষার হার ৩৫.৭%।[2]
মেলান্দহ উপজেলার প্রাচীন ইতিহাসে হযরত শাহ কামাল (র.) এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৫০৩ সালে হযরত শাহ কামাল মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেন প্রদেশ থেকে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলে আগমন করেন। তিনি দুরমুট ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থান গ্রহণ করেন। বর্তমানে সেখানে হযরত শাহ কামালের (র.) মাজার রয়েছে। প্রতি বছর ১লা বৈশাখ থেকে ৩১শে বৈশাখ পর্যন্ত মাসব্যাপী মেলাও অনুষ্ঠিত হয়।[3]
মেলান্দহের নামকরণের সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত কিংবদন্তি থেকে অনুমান করা হয় যে, এ অঞ্চলে অতীতে ‘মেলা' বা অনেক ‘দহ’ বা জলাশয় ছিল। এই ‘মেলা’ ও ‘দহে’র মিলিত উচ্চারণেই ’মেলান্দহ’ নামের উদ্ভব হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন কয়েকটি দহের মিলনস্থলে এ স্থানটি গড়ে উঠেছে বলে এর নাম মিলন্দহ> মিলান্দহ> মেলান্দহ হয়েছে। ‘মেলান্দহ’ নামের ব্যাপারে অন্য একটি ধারণাও প্রচলিত আছে। এ অঞ্চলে একটি মৌজার নাম ছিল মেলান্দহ। এ মৌজার নামেই পরবর্তীকালে এই অঞ্চলের নাম মেলান্দহ হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
এ অঞ্চলটি শুধু তিনদহের মিলনস্থল ছিল না, অনেক লোকের সাক্ষাৎ, মিলন ও সমাগমের স্থানে পরিণত হয়েছিল সেই প্রাচীন কালেই। তবে বর্তমান মেলান্দহ বাজারটি বসত কামাখ্যা তলায়। আদিপৈত গ্রামের জমিদার-কর্মচারী হরদেব ও রাজচন্দ্র দেব স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মেলান্দহ বাজারের পত্তন করেন। তখনকার দিনে মেলান্দহ বাজারে দুধ, মাছ, তেল, লবণের মতো খুব সামান্য জিনিসের বেচা কেনা হতো। সে সময় টাকা পয়সার মুদ্রার প্রচলন তেমন হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘বিনিময় প্রথা’র মাধ্যমে জিনিসপত্রের আদান-প্রদান হতো। কলের কাপড়ের প্রচলন তখনও শুরু হয়নি। ঘরে ঘরে তুলা থেকে তুলা থেকে চরকায় সুতা তৈরি হতো। ব্যবসায়ীরা তুলা আমদানি করে গ্রামে গ্রামে কাটুনিদের দিয়ে যেত। তারা সুতা কেটে পারিশ্রমিক হিসেবে এক চতুর্থাংশ রেখে বাকি সুতা ব্যবসায়ীদের দিয়ে দিত। আধাসের বা দশ ছটাক সুতায় একটি শাড়ি বুনানো যেত। গায়ের চাদর বুনতে আরো কম সুতা লাগতো। মানুষের জীবন ছিল কষ্টসাধ্য ও অনাড়ম্বরপূর্ণ। মানুষের নীতি-নৈতিকতা ছিল উন্নত এবং সামাজিক বন্ধন ছিল মজবুত।
কথিত আছে, ২৫০ বছর পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী ’লৌহজং’ বর্তমান মেলান্দহ বাজারের উপর দিয়ে প্রবহমান ছিল। এই নদীর উভয় তীর ঘনবসতিপূর্ণ ছিল। ভূমিকম্প, নদীভাঙ্গন, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে নদীটি ভরাট হয়ে যায়। পরে ম্যালেরিয়া, কলেরা, কালাজ্বর ইত্যাদি সংক্রামক ব্যাধিতে অনেক লোক মারা যায়। অনেকেই স্থানান্তরে চলে যায়। ফলে ক্রমশ স্থানটি লোকবিরল ও জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ওঠে। অনেকদিন পর একদল লোক এসে মেলান্দহের আশেপাশে বসতি স্থাপন করে। আস্তে আস্তে আবার লোকালয় গড়ে ওঠে। জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদ শুরু করে। তখন এ অঞ্চলে কয়েকজন বিশিষ্ট জমিদার স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এদের মধ্যে মহিরামকুলের মহিরাম লাহিড়ি ও মালঞ্চার চন্দ্রকান্ত রায়ের নাম উল্লেখযোগ্য। পাচুরপাড়ায় বাস করেত একজন প্রতাপশালী জমিদার। খুব কাছাকাছি ছিল এসব জমিদারি এলাকাগুলো। এসব জমিদারদের অনেক কর্মচারীর প্রয়োজন ছিল। বহুলোক চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন শুরু করে। জমিদার মহিরামকুল লাহিড়ির মৃত্যুর পর তাঁর নামে এ অঞ্চলের নাম হয় মহিরামকুল। মহিরামকুলের পূর্বনাম ছিল চন্দ্রকোনা। মেলান্দহ বাজার উন্নয়নে মহিরামকুল জমিদারদের বিশেষ অবদান রয়েছে। তাঁরা মালঞ্চার গোবিন্দপুর বাজার এবং জামালপুর সদরের সকাল বাজারেরও পত্তন করেছিলেন। মহিরামকুলে জমিদারদের কাচারিবাড়ি ও পুকুর এখনও ভগ্নদশায় তাদের স্মৃতিবহন করছে।
নবাবি আমলে মেলান্দহ উপজেলা রাণী ভবানীর জমিদারির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কথিত আছে যে, মেলান্দহ অঞ্চলের কোন এক নদীতে জাফর নামের একজন নমদাস দুইজন সঙ্গীকে নিয়ে নদীতে মাছ ধরছিল। এ সময় রাণী ভবানীর দেওয়ান নৌকা করে যাওয়ার সময় তাদের নিকট কর দাবি করলে তারা তিনজনেই এক টাকা করে কর দিতে রাজি হয়। ঐ সময় ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী ঝিনাই নদী তীরের এই অঞ্চলটি জাফরশাহি পরগণা নামে পরিচিতি লাভ করেছিল।
ব্রিটিশ যুগের শুরুর কালেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৭৬০ সাল থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত এই বিদ্রোহ স্থায়ী হয়েছিল। ঐ সময় সন্ন্যাসী দলপতি শাহ মজরত মেলান্দহের মালঞ্চা কাচারি লুঠ করেছিল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জামালপুর মহকুমার সর্বত্র কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ঐ সময় মেলান্দহের ঝাউগড়ার চেং সরকার কৃষকদের অধিকার আদায়ের নেতৃত্ব দেন। তখন মেলান্দহের আমবাড়িয়া স্টেটের মালিক হেমনগরের জমিদার কৃষক-বিদ্রোহী চেং সরকারকে গ্রেপ্তার করে হেমনগর জেলখানায় ছয় মাস আটকে রেখেছিল। এলাকার বিদ্রোহী কৃষকরা এই গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে জামালপুর মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট টিএ ডনো সাহেবের নিকট অভিযোগ দায়ের করে। চেং সরকার ছয় মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চলটি ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার আওতাভুক্ত হয় এবং ১৯২৫ সালের ২১ শে মে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৩ এপ্রিল পাকিস্তান বাহিনী মেলান্দহে প্রবেশ করে।[4] ৮ ডিসেম্বর মেলান্দহ হানাদার মুক্ত হয়।[5] ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল মেলান্দহ থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। ২৪ মার্চ ১৯৯৮ খ্রিঃ মেলান্দহ পৌরসভা গঠিত হয়।
মেলান্দহ উপজেলা ২৪°৫১´ থেকে ২৫°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪২´ থেকে ৮৯°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[6] মেলান্দহ উপজেলার আয়তন ২৫৮.৩২ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে ইসলামপুর উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর সদর ও মাদারগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে জামালপুর সদর ও শেরপুর জেলা, পশ্চিমে মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলা অবস্থিত।
উপজেলার বেশির ভাগ ভূমি সমতল তবে পশ্চিম অংশের ভূমি নিম্নসমতল। প্রায় প্রতিবছর উপজেলার এ অংশ বন্যা কবলিত হয় এবং প্রচুর রবিশস্যের ক্ষতি হয়। মাটি বেলে-দোআঁশ ও এটের-দোআঁশ। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালে ঘন কুয়াশা হয়। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩২° থেকে ৩৬° সেলসিয়াস থাকে। গড় বৃষ্টিপাত ৮৬০ সে.মি.। মোট কৃষিজমির পরিমান ৬৭৩২২ একর, আবাদি জমির পরিমান ৫১৮৫১ একর।[2]
মেলান্দহ উপজেলায় বর্তমানে ২টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম মেলান্দহ থানার আওতাধীন।[7]
এ উপজেলায় ১৩২ টি মৌজা, ১৯৯ টি গ্রাম রয়েছে।[8] জামালপুর-মেলান্দহ বাজার সড়কের পাশে উপজেলা হেড়কোয়ার্টার অবস্থিত।
জামালপুর জেলার একটি সমৃদ্ধ জনপদের নাম মেলান্দহ। এ অঞ্চল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জমিদারির বিভিন্ন পরগণার অধীনে ছিল। ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চলটি ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার আওতাভুক্ত হয় এবং ১৯২৫ সালের ২১ শে মে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল মেলান্দহ থানা উপজেলায় উন্নীত হয়।
২৪ মার্চ ১৯৯৮ খ্রিঃ মেলান্দহ পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভার আয়তন ১২.৯৬ বর্গ কিলোমিটার, ওয়ার্ডের সংখ্যা ৯টি। ২০১৮ সালে মেলান্দহ পৌরসভাকে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণি অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। ২০১৭ সালে হাজরাবাড়ী পৌরসভা গঠিত হয়।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলা নিয়ে জামালপুর-৩ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪০ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর ডা. নুরুল ইসলাম, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর আব্দুস সালাম তালুকদার, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ এর সফিকুল ইসলাম খোকা, ১৯৮৮ সালে সফিকুল ইসলাম খোকা, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মির্জা আজম, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর মোঃ আবুল হোসেন, জুন ১৯৯৬ তারিখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মির্জা আজম,২০০১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মির্জা আজম, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মির্জা আজম, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মির্জা আজম ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মির্জা আজম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ৩,১৩,১৮২ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ১০০ঃ৯৭, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২১২ জন, শিক্ষার হার ৩৫.৭%। মেলান্দহ উপজেলায় প্রধানত মুসলমান ও হিন্দু এই দুই সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। অন্যান্য ধর্মের লোকসংখ্যা একেবারেই কম। এর মধ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ৩,০৯,২১৯, হিন্দু ৩,৮৭২, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১১ এবং অন্যান্য ৭৯ জন।[2]
মেলান্দহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হলো-হাজরাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৭), কলাবাধা উচ্চ বিদ্যালয়, ফুলকোচা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫১),মালঞ্চ আবদুল গফুর উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৬২), ঝাউগড়া উচ্চ বিদ্যালয়, মাহমুদপুর হাই স্কুল, মেলান্দহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩) ইত্যাদি।[9] মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি এ উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল, কলাবাধা উচ্চ বিদ্যালয়টিও বিখ্যাত। দুরমুট ইউনিয়নের সৈয়দ রশিদুজ্জামান ও কলাবাধার রাজেন্দ্র চন্দ্র সেনের উদ্যোগে ও অর্থায়নে হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
মেলান্দহ উপজেলায় ৮ কলেজ রয়েছে।[10] এ উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো মেলান্দহ সরকারি কলেজ, ১৯৭২ সালে নাংলা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই বাচ্চু মিঞার উদ্যোগে “মেলান্দহ মহাবিদ্যালয় ” নাম দিয়ে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে আহম্মদ আলী সরকার, এম এ গফুর এর সহায়তায় কলেজের নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়ে উঠে।[11] ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়।[11] অন্যান্য কলেজগুলো হলো জাহানারা লতিফ মহিলা কলেজ, হাজরাবাড়ি সিরাজুল হক কলেজ (১৯৭৬), বঙ্গবন্ধু কলেজ ঝাউগড়া, হাবিবুর রহমান কলেজ, এস এম শিখা মুখলেছুর রহমান কলেজ, শেখ কামাল কলেজ, আলেয়া আজম কলেজ।[10]
মেলান্দহ উপজেলায় ফাজিল মাদ্রাসা রয়েছে ২টি, মেলান্দহ সদর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা ও পয়লা বানিয়া বাড়ি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা।[12] এছাড়াও কামিল মাদ্রাসা রয়েছে ১ টি, মালঞ্চা আল আমিন জামিরিয়া কামিল মাদ্রাসা।[13]
২০২০ সালে মেলান্দহের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজটিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য অনুষদ হিসেবে আত্ত্বীকরন করা হয়।[14][15] বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে গণিত, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধীনে ব্যবস্থাপনা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে সোসিয়াল ওয়ার্ক এবং প্রকৌশল অনুষদের অধীনে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে প্রথম ব্যাচের একাডেমিক সেশন ২০১৯ সালের মার্চ থেকে শুরু হয়। প্রথম বর্ষের ক্লাশ শুরু হয় ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে।[16]
এছাড়া উপজেলার ভাবকি এলাকায় বাস্তবায়নাধীন শেখ হাসিনা বিএসসি-ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মানাধিন আছে।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মেলান্দহ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৬টি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৪টি, বেসরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪টি, কিন্ডার গার্টেন ১৬টি, এনজিও স্কুল ১৩২টি; সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১টি, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৩৭টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১টি; সরকারি কলেজ ১টি, বেসরকারি কলেজ ৭টি; মাদ্রাসা ২৪টি, কওমি মাদ্রাসা ১৫টি, এবতেদায়ি মাদ্রাসা ৪টি; টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল ইন্সিটিটিউট ২টি, এগ্রিকালচারাল ও ভেটেনারি কলেজ ১টি।[17]
উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১১টি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মেলান্দহ উপজেলায় ১টি বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক এবং ৪টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, ১টি মিশনারি হাসপাতাল রয়েছে।
মেলান্দহ মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সব ধরনের ফসলই এখানে উৎপন্ন হয়। এখানে ধান, আলু, পাট, তামাক, বেগুন, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, গম, এবং বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। মেলান্দহ উপজেলাটি দেওয়ানগঞ্জ জিলবাংলা সুগার মিল এলাকার আওতার্ভৃূক্ত হওয়ায় এখানে প্রচুর আখ উৎপন্ন হয়। এখানকার মাটি যে কোন ফসলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৫০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০২%, শিল্প ০.৪৪%, ব্যবসা ১০.৩৩%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৫৮%, চাকরি ৪%, নির্মাণ ১.০০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ৭.৭৩%।[18]
মেলান্দহ উপজেলার যোগাযোগ সড়ক ও রেল এই দুইভাবেই আছে। বর্ষাকালে সীমিতভাবে নৌপথে চলাচল করে। উপজেলার মোট সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ৭৪১.৫৩ কিলোমিটার; এর মধ্যে পাকা রাস্তা ২৩১.৮২ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ৫০৯.৭১ কিলোমিটার।[19] এ উপজেলায় রেলপথ আছে ১২ কিমি।[20]
মেলান্দহ থেকে বেশিরভাগ মানুষ রেল পথকেই বেছে নেয়। ১৯১২ সালে জামালপুর থেকে মেলান্দহ হয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হয়।[21] মেলান্দহ থেকে চলাচলকারী দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন হল তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস। ঢাকা পর্যন্ত চলাচলকারী কমিউটার ট্রেন হল দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, জামালপুর কমিউটার; এছাড়া ভাওয়াল এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনেও ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করে।
সড়ক পথে বিআরটিসি, রাজিব বাস যোগে সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করা যায়।
এ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ, ঝিনাই, দাঁতভাঙ্গা ও কেখরা বা ঝারকাটা নদী।
ব্রহ্মপুত্র নদ: রহ্মপুত্র নদটি তিববতের মানস সরোবর থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে ভারতের অরূণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র (ব্রহ্মার সন্তান) নামে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহস্থানে ৫টি প্রধান উপনদী থেকে ব্রহ্মপুত্র পানি সংগ্রহ করেছে যাদের মধ্যে ডিহঙ্গ এবং লুহিত প্রখ্যাত। এ ধারা পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মাজাহরালীতে দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গার তিন গুণ প্রশস্ত ছিল বলে ঐতিহাসিক মিনহাজউদ্দিন লিখেছেন।
ঝিনাই নদী: প্রাচীনকালে অতি বেগবান ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী হচ্ছে ঝিনাই। এটি মেলান্দহ উপজেলার চরপলিশা গ্রামের সামনে দিয়ে দক্ষিণে সরিষাবাড়ির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনা নদীতে পড়েছে। মেলান্দহ অঞ্চলের জনজীবনে এ নদীর প্রভাব সবচেযে বেশি। এ নদী নিয়ে একটি প্রবাদ এরকম-
ঝিনাই নদীর শীর্ণ কায়া শীর্ণ বেশ দুই তীরে তার গঞ্জ গায়ের নাই গো শেষ।[22]
এ নদীতে একসময় নৌকাবাইচ হতো। এসব বিচিত্র কাহিনি জনমনে আজও স্মৃতি হয়ে আছে। েএখন এ নদী মৃতপ্রায়। বর্ষাকালে পানির প্রবাহ থাকলেও শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যায়।
দাঁতভাঙ্গা নদী: অতি প্রাচীনকালে এ নদীটিও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে পয়লা ব্রিজের নীচ দিযে উরমা বিলের মধ্যদিয়ে দক্ষিণে বাশুরিয়া গ্রামের পাশ ঘেঁষে সরিষাবাড়িতে যমুনার সাথে মিশেছে। এই নদীটিই হাজরাবাড়ি এলাকায় দাঁতভাঙ্গা ও পয়লা এলাকায় মাদারদহ নামে পরিচিত। এ নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
কেখরা বা ঝারকাটা নদী: এ নদীটি ইসলামপুরে যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে মাহমুদপুর বাজারের পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণে সরিষাবাড়িতে যমুনার সাথে মিশেছে। এ নদীর কৈ মাছ বিখ্যাত ছিল। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রবাদের প্রচলন আছে-
কেখরা নদীর কৈ মাছ
খেতে বড় মজা
হরিপুরের তেলে যদি
কর তারে ভাজা।[22]
তবে এ নদীতে আরও অনেক রকম মাছ পাওয়া যায়।
মেলান্দহ উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় দুইশতাধিক বিল আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রৌমারী বিল, গোদাডাংগা বিল, ডাংগার বিল, দরগাডাংগা বিল, ভারারদহ বিল, মরা গাং, সিথানি বিল, হরকা বিল, কালিদহ বিল, দরগাতলা বিল, কামাখ্যা বিল ইত্যাদি।
রৌমারি বিল ঝাউগড়ার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। ফুলকোচা উচ্চবিদ্যালয়ের উত্তর পাশে গোদাডাংগা বিল অবস্থিত; এ বিলের কর্তি মাছ সকলের প্রিয় ছিল। এখন এ বিলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষের ফলে এ বিলের মাছে আগের সেই স্বাদ আর পাওয়া যায় না। ডাংগার বিলটি বালুয়াটা গ্রামের দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থিত ছিল। এখন এ বিলটি ভরাট করে ইরিধান চাষ করা হয়। হযরত শাহ কামাল (র.) এর মাজারের পূর্বপাড় ঘেষে দরগাডাংগা বিলটি অবস্থিত। উক্ত দরগাহের নামনুসারে এ বিলের নামকরণ করা হয়েছে। ৪নং ইউনিয়নের পশ্চিমে এবং ৬নং ইউনিয়নের উত্তরে এক বিরাট এলাকা জুড়ে ভারারদহ বিল অবস্থিত। বকচড়িসহ আরো কয়েকটি ছোট ছোট বিলের সমন্বয়ে গঠিতি এ বিলের আগের রূপটি নেই। খাসজমি বন্দোবস্তের কারণে স্থানীয় লোকজনের দখলে চলে গেছে।
এছাড়া অন্যান্য বিলের মধ্যে মামা-ভাগিনা, মরা গাং, সিথানি বিল, হরকা বিল, উর্মাবিল, কালিদহ, কামাখ্যা বিলের নাম উল্লেখযোগ্য। এসব বিলকে কেন্দ্র করে অনেক অলৌকিক কাহিনি প্রচলিত আছে। যেমন জালালপুরের কালিদহ বিলে প্রতি বছর কালীমূর্তি ভেসে উঠতো, কামাখ্যা বিলে অমাবস্যার রাতে মানুষ অসাধ্য সাধন করার সাধনা করতো ইত্যাদি।[22]
হযরত শাহ্ কামাল (র.) এর মাজার : জামালপুর জেলার এক ঐতিহাসিক প্রাচীণ ধর্মীয় নিদর্শন হযরত শাহ্ কামাল (র.) এর মাজার। এটি মেলান্দহ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ তীরে দুরমুট গ্রামে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম যাদুঘর: এটি মেলান্দহ উপজেলার কাপাসহাটিয়া গ্রামে অবস্থিত। ১৯৩৪ সালে গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা হলেন কিংবদন্তি কৃষক নেতা নাসির উদ্দিন সরকার।[23]
◾আসাদুল্লাহ ফারাজি
◾ফরহাদ হোসেন
◾হাবিবুর রহমান হাবিব
◾শাহ্ জামাল
◾শেখ ফজল
◾শাকিল আহম্মেদ (প্রতিষ্ঠাতা, জননী বাংলা সাহিত্য সংসদ)
◾আশরাফুল মান্নান
◾আমিনুর ইসলম
◾খায়রুল আলম নয়ন
◾মো. আরিফুল ইসলাম লাভলু
◾রাহিল রিফাত
◾ নজরুল ইসলাম রহমানী
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.