Loading AI tools
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুহাম্মদ নজিবউল্লাহ আহমেদজাই (পশতু: ډاکټر محمد نجیب ﷲ احمدزی; ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ – ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) ছিলেন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতির পদে ছিলেন। তিনি সাধারণভাবে নজিবউল্লাহ বা ড. নজিব নামে পরিচিত। তিনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পূর্বে তিনি পিপল'স ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আফগানিস্তানের (পিডিপিএ) বিভিন্ন দায়িত্বপালন করেছেন। হাফিজউল্লাহ আমিনের শাসনামলে তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইরানে প্রেরণ করে নির্বাসিত করা হয়। সোভিয়েত হস্তক্ষেপের পর তিনি আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। বাবরাক কারমালের শাসনামলে তিনি গোয়েন্দা সংস্থার (খাদামাতে আয়েতলাতে দাওলাতি, সংক্ষেপে খাদ) প্রধান হন। তিনি পিডিপিএর পারচাম গ্রুপের সদস্য ছিলেন।
মুহাম্মদ নজিবউল্লাহ আহমেদজাই | |
---|---|
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ – ১৬ এপ্রিল ১৯৯২ | |
প্রধানমন্ত্রী | সুলতান আলি কেশ্তমান্দ মুহাম্মদ হাসান শার্ক সুলতান আলি কেশ্তমান্দ ফজল হক খালিকিয়ার |
পূর্বসূরী | হাজি মুহাম্মদ চামকানি |
উত্তরসূরী | আবদুর রহিম হাতিফ (ভারপ্রাপ্ত) |
কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব | |
কাজের মেয়াদ ৪ মে ১৯৮৬ – ১৬ এপ্রিল ১৯৯২ | |
পূর্বসূরী | বাবরাক কারমাল |
উত্তরসূরী | দপ্তর বিলুপ্ত |
রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক | |
কাজের মেয়াদ ১১ জানুয়ারি ১৯৮০ – ২১ নভেম্বর ১৯৮৫ | |
রাষ্ট্রপতি | বাবরাক কারমাল |
প্রধানমন্ত্রী | বাবরাক কারমাল সুলতান আলি কেশ্তমান্দ |
পূর্বসূরী | আসাদউল্লাহ সারওয়ারি |
উত্তরসূরী | গোলাম ফারুক ইয়াকুবি |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ কাবুল, আফগানিস্তান |
মৃত্যু | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ ৪৯) (বয়স কাবুল, আফগানিস্তান |
রাজনৈতিক দল | পিপল'স ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আফগানিস্তান (পারচাম) |
দাম্পত্য সঙ্গী | ড. ফাতানা নজিব |
সন্তান | তিন মেয়ে |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় |
নজিবউল্লাহ খাদের প্রধান থাকাকালীন সময়ে এটি সরকারের সবচেয়ে সহিংস অঙ্গ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। ১৯৮১ সালে তিনি পিডিপিএর পলিটব্যুরোতে নিযুক্ত হন। ১৯৮৫ সালে তিনি পিডিপিএ সেক্রেটারিয়েটে নিয়োগ পান। ১৯৮৬ সালে কারমালের পদত্যাগের পর নজিবউল্লাহ পিডিপিএর মহাসচিব হন। নজিবউল্লাহ এরপর কয়েক মাস ধরে রাষ্ট্রপতি কারমালের সাথে ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন। নজিবউল্লাহ অভিযোগ করেন যে কারমাল তার জাতীয় সমঝোতার নীতি ধ্বংস করতে চাইছেন।
নজিবউল্লাহর শাসনামলে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান ত্যাগ শুরু করে। সোভিয়েতরা চলে যাওয়ার পরও অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে নজিবউল্লাহর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র মুজাহিদদের সমর্থন দিতে থাকে। সরকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির জন্য তিনি তার সরকারকে ইসলামি সরকার হিসেবে পরিচিত করতে চেষ্টা করেন। ১৯৯০ সালের সংবিধানে ইসলামি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এসবের ফলে নজিবউল্লাহর সমর্থন বৃদ্ধি পায়নি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর নজিবউল্লাহ একা হয়ে পড়েন। ১৯৯২ সালের এপ্রিলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি কাবুলে জাতিসংঘের দপ্তরে ছিলেন। এরপর তালেবানরা কাবুল অধিকার করে। নজিবউল্লাহকে গ্রেপ্তার করার পর জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
মুহাম্মদ নজিবউল্লাহ ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন।[1] তিনি কাবুলের হাবিবিয়া হাই স্কুল, কাশ্মিরের সেইন্ট জোসেফ'স স্কুল, ও কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ১৯৭৫ সালে তিনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসক হিসেবে স্নাতক হন। তিনি গিলজাই পশতুন গোত্রের আহমেদজাই উপগোত্রের সদস্য।[1]
১৯৬৫ সালে তিনি কমিউনিস্ট দল পিডিপিএর পারচাম গ্রুপে যোগ দেন। বাবরাক কারমাল আইনসভার সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। স্বভাবের কারণে তিনি নজিব-এ-গাও নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন।[2] ১৯৭৭ সালে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন।
১৯৭৮ সালের এপ্রিলে পিডিপিএ ক্ষমতায় আসে। এসময় নজিবউল্লাহ বিপ্লবী কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ইরানে স্বল্পকাল রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপালন করার পর তিনি পদচ্যুত হয়ে ইউরোপে নির্বাসিত হন।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের পর তিনি কাবুল ফিরে আসেন। ১৯৮০ সালে তিনি খাদের প্রধান নিযুক্ত হন। এই প্রতিষ্ঠান সোভিয়েত কেজিবির সমতুল্য ছিল।[3] এসময় তাকে মেজর জেনারেল পদ দেয়া হয়।[1] ১৯৮১ সালের জুন মাসে নজিবউল্লাহ, সাবেক ট্যাংক কমান্ডার ও তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী মুহাম্মদ আসলাম ওয়াতানজার এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মেজর জেনারেল মুহাম্মদ রফিকে পিডিপিএর পলিটব্যুরোতে নিয়োগ দেয়া হয়।[4] নজিবউল্লাহর অধীনে খাদের সদস্য সংখ্যা ১২০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ হয়।[5] সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে খাদের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি বেতন পেত এবং একারণে কর্মীদের রাজনৈতিক দীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[6] নজিবউল্লাহর সময় খাদের পরিচালিত সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড চরমে পৌছায়।[7] তিনি সরাসরি সোভিয়েত কেজিবিকে রিপোর্ট করতেন। সংস্থার বাজেটের একটি বড় অংশ সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসত।[8]
নজিবউল্লাহ খাদের প্রধান থাকাকালীন সময়ে কয়েক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।[1] বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বর্ণনা অনুযায়ী উচ্চ পর্যায়ের কমিউনিস্ট বিরোধী নাগরিকদের নির্যাতনে নজিবউল্লাহ ব্যক্তিগতভাবে অংশ নিতেন। কমিউনিস্ট বিরোধী নাগরিক, রাজনৈতিক বিরোধীদেরকে খাদ লক্ষ্যবস্তু করেছিল। এর ফলে সোভিয়েতদের কাছে তিনি আকর্ষণীয় ছিলেন।[1] এসবের ফলে খাদ নির্মম হিসেবে পরিচিতি পায়। একই কারণে বেশ কয়েকজন আফগান রাজনীতিবিদ নজিবউল্লাহকে বাবরাক কারমালের উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চাননি। এছাড়াও নজিবউল্লাহ ঘুষ ও দুর্নীতিকে এমন মাত্রায় প্রশ্রয় দিয়েছিলেন যা পূর্বে দেখা যায়নি।[9]
১৯৮৫ সালের নভেম্বরে তিনি পিডিপিএর সেক্রেটেরিয়েটে নিয়োগ পান।[10] সোভিয়েতরা আফগানিস্তান ত্যাগের সময় মিখাইল গর্বাচেভ পিডিপিএর মহাসচিব পদ থেকে কারমালের পদত্যাগ চাইছিলেন। এসময় কারমালের উত্তরসূরির প্রশ্নে গর্বাচেভ নজিবউল্লাহকে সমর্থন করেছিলেন।[11] ইয়ুরি আন্দ্রোপভ, বরিস পোনোমারেভ ও দিমিত্রি উস্তানোভ নজিবউল্লাহকে সমর্থন করেছিলেন। তবে নজিবউল্লাহ ছাড়াও আসাদউল্লাহ সারওয়ারির প্রতি অনেক সোভিয়েত কর্মকর্তার সমর্থন ছিল। আরেকজন কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন আবদুল কাদির। তিনি সাওর বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন।[12] ১৯৮৬ সালের ৪ মে নজিবউল্লাহ পিডিপিএর মহাসচিব হিসেবে কারমালের উত্তরসূরি হন। তবে কারমাল বিপ্লবী কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের পদে বহাল থাকেন।[13]
১৫ মে নজিবউল্লাহ যৌথ নেতৃত্বের ঘোষণা দেন। এর আওতায় তিনি দলের প্রধান, কারমাল রাষ্ট্রপ্রধান ও সুলতান আলি কেশ্তমান্দ মন্ত্রীসভার চেয়ারম্যান হন।[14] তবে নজিবউল্লাহ দলের মহাসচিব হলেও কারমালের পক্ষে দলে যথেষ্ট সমর্থন ছিল। কিন্তু কারমাল জাতীয় সমঝোতার পরিকল্পনায় বাধা দিচ্ছেন নজিবউল্লাহর এমন অভিযোগের পর সোভিয়েত পলিটব্যুরো কারমালকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পিডিপিএর বৈঠকে কারমালমে বিপ্লবী কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কারমাল এরপর মস্কোয় নির্বাসিত হন।[15] বিপ্লবী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে এরপর হাজি মুহাম্মদ চামকানি দায়িত্ব পান।[7]
১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে নজিবউল্লাহর নির্দেশে জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠিত হয়। তারা বিপক্ষ দলীয়দেরকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করে। ১৯৮৬ সালের শেষের দিকে তিনি ছয় মাসের যুদ্ধবিরতি ও বিবদমান পক্ষগুলির মধ্যে আলোচনার আহ্বান করেন। তবে এসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।[7]
১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন সংবিধান রচিত হয় এবং ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর তা গৃহীত হয়।[16] এতে রাষ্ট্রপ্রধানের ভেটো দেয়ার ক্ষমতা কমানো হয়েছিল। ১৯৮৭ সালের ১৩ জুলাই আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় নাম আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকে বদলে আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্র রাখা হয়। ১৯৮৮ সালের জুন মাসে দলীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে নির্বাচিত বিপ্লবী কাউন্সিলের বদলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ স্থাপন করা হয়। ১৯৮৯ সালে উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সোভিয়েতিকরণ বাতিল করতে শুরি করে। ১৯৯০ সালে দল ঘোষণা দেয় যে পিডিপিএর সব সদস্য মুসলিম এবং দল মার্কসবাদ ত্যাগ করেছে।
১৯৮৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নজিবউল্লাহ সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার পর অনেকের আশাভঙ্গ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ১,৭০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৯১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাকস্বাধীনতার উপর সরকারি বিধিনিষেধ আরোপিত ছিল। তার জাতীয় সমঝোতা দলের মধ্যে অনেকের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। অনেকে এই সমঝোতা সোভিয়েতদের প্রণীত বলে অভিযোগ করে।[17]
১৯৮৭ সালে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার দিয়ে আইন প্রণীত হয়। নতুন সংবিধানে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইন সভার ব্যবস্থা রাখা হয় এবং পরোক্ষ ভোটে ৭ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার বিধান রাখা হয়।[18] নজিবউল্লাহ বলেন যে বিরোধী পক্ষের চরমপন্থিরা সরকারে অংশ নিতে পারবে না। এছাড়াও বলা হয় আফগানিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক নিয়ে কেউ বিরোধিতা করতে পারবে না। ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে পিডিপিএ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৬টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৪৫টি আসনে জয়লাভ করা ন্যাশনাল ফ্রন্ট ও অন্যন্য নতুন বামপন্থি দলের (আসন সংখ্যা ২৪) সমর্থন পেয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ পায়। তবে মুজাহিদরা নির্বাচন বর্জন করে। উচ্চকক্ষ সিনেটে দলের বেশি আসন ছিল না। সশস্ত্র দলগুলির মধ্যে শুধুমাত্র হিজবুল্লাহ সরকারের সাথে শান্তি স্থাপন করেছিল।[19]
বাবরাক কারমালের শাসনের শেষ দিকে এবং নজিবউল্লাহর শাসনামলে পিডিপিএ দল ও রাষ্ট্রের নতুন রূপ প্রদান করার চেষ্টা করে। মুসলিমদের সমর্থন লাভের জন্য ১৯৮৭ সালে নজিবউল্লাহ তার নামের সাথে উল্লাহ পুনরায় যোগ করেন। কমিউনিস্ট প্রতীকসমূহ অপসারণ বা প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে ইসলামের প্রশ্নে মুজাহিদদের প্রতি জনসমর্থন বেশি থাকায় সরকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পায়নি।[20] ১৯৮৭ সালের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২ এ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়। অনুচ্ছেদ ৭৩ এ বলা হয় যে রাষ্ট্রপ্রধান আফগান মুসলিম পরিবারে জন্ম হয়েছে এমন হতে হবে। ১৯৯০ সালের সংবিধানে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় এবং কমিউনিজমের অন্যান্য উল্লেখ অপসারণ করা হয়।[21] এই সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১ এ আফগানিস্তানকে একটি "স্বাধীন, এককেন্দ্রিক ও ইসলামি রাষ্ট্র" উল্লেখ করা হয়।[16]
১৯৮৮ সালের ১৪ এপ্রিল আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং এতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র জামিন হিসেবে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী সোভিয়েত সেনাদেরকে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হবে। গর্বাচেভ পরে তার এক ব্যক্তিগত সহকারী আনাতোলি চেরনিয়ায়েভকে বলেছিলেন যে সোভিয়েতরা ফিরে আসার পর সম্ভাব্য রক্তপাতের কারণে সোভিয়েতদেরকে সমালোচিত হতে হবে।[22] দ্বিতীয় দফায় সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের সময় নজিবউল্লাহ সোভিয়েতদের প্রত্যাহারকে ধীর গতির করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু তিনি করবেন। কিন্তু সোভিয়েতরা এতে রাজি হয়নি। সেই বছর একটি সোভিয়েত প্রতিনিধিদলের সাথে আলাপকালে তিনি পুনরায় তার একই মনোভাব ব্যক্ত করেন। তিনি জানান যে আহমেদ শাহ মাসুদ মূল সমস্যা এবং তাকে হত্যা করতে হবে। সোভিয়েতরা এতে রাজি হয়।[23] কিন্তু তারা জানায় এর ফলে চুক্তি লঙ্ঘন হবে এবং মাসুদকে হত্যা করতে চাইলে সময়সীমার পূর্বে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান ত্যাগ করতে পারবে না।[24]
১৯৮৯ সালে এডুয়ার্ড শেভার্দনাদজের সাথে সাক্ষাতের সময় নজিবউল্লাহ আফগানিস্তানে ছোট আকারে সোভিয়েত সেনাদল রাখার কথা বলেন। একই সাথে সীমান্তের কাছাকাছি স্থায়ী সতর্ক অবস্থায় বোমাবর্ষণকারী মোতায়েনের কথাও বলেন।[25] তিনি পুনরায় মাসুদের ব্যাপারে উদ্বেগ জানান। শেভার্দনাদজে জানান যে সোভিয়েত সেনা আফগানিস্তানে মোতায়েন রাখা সম্ভব নয়। তবে তিনি দাবি করেন যে সোভিয়েত দূতাবাস প্রায় ১২,০০০ সোভিয়েত সেনা যাতে জাতিসংঘের অধীনে বা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আফগানিস্তানে থাকতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা করেছে।[26] একথা জানতে পেরে সোভিয়েত সামরিক নেতারা ক্ষুব্ধ হন। সোভিয়েত নেতারা এই পরিকল্পনার বিরোধী ছিলেন।[26] শেষপর্যন্ত পরিকল্পনাটি সফল হয়নি এবং সোভিয়েত সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করে।[27] তবে এসত্ত্বেও ক্ষুদ্র আকারে সোভিয়েত সেনাদল আফগানিস্তানে থেকে যায়। এদের মধ্যে ছিল প্যারাশুটিস্ট, সামরিক উপদেষ্টা, বিশেষ বাহিনী এবং আফগান-সোভিয়েত সীমানায় মোতায়েন সেনাদল।[28]
সোভিয়েতদের ফিরে যাওয়ার পর খাবার, জ্বালানি, অস্ত্রের সরবরাহ চালু থাকে। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত সহায়তার মূল্য ছিল প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আফগান সামরিক বাহিনী এসময় সম্পূর্ণভাবে সোভিয়েত সহায়তার উপর নির্ভরশীল ছিল।[29] ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর নজিবউল্লাহ সাবেক সোভিয়েত মধ্য এশিয়ার দিকে নজর দেন। এই অঞ্চলের নবগঠিত রাষ্ট্রসমূহ আফগানিস্তানকে ৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং ৫,০০,০০০ টন গম সহায়তা হিসেবে সরবরাহ করে।[30]
সোভিয়েতদের প্রত্যাবর্তনের পর আফগান সরকারি বাহিনী ও মুজাহিদদের মধ্যে জালালাবাদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসময় নজিবউল্লাহ সোভিয়েত সহায়তার আহ্বান জানান। তবে তার এই আহ্বান ফিরিয়ে দেয়া হয়।
১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে নজিবউল্লাহ সরকার আংশিকভাবে আফগান প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় প্রায় ১,০০,০০০ সদস্যের একটি স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে। সার্বিকভাবে সরকারের কাছে প্রায় ৩,০০,০০০ সৈনিক ছিল।[31] ১৯৯০ সালের গ্রীষ্ম নাগাদ সরকারি বাহিনী রক্ষণাত্মক ভূমিকায় চলে যায়। ১৯৯১ সালের শুরুর দিকে সরকারের হাতে দেশের মাত্র ১০% এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল। মুজাহিদদের জয়ের মাধ্যমে ১১ বছরব্যপী চলমান খোস্ত অবরোধ এসময় সমাপ্ত হয়। এসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেও নজিবউল্লাহ সমর্থন পাননি। ১৯৯১ সালে শেভার্দনাদজেকে লেখা চিঠিতে নজিবউল্লাহ লেখেন, "আমি রাষ্ট্রপতি হতে চাইনি, আপনি আমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছেন, জোর দিয়েছেন এবং সমর্থনের ওয়াদা করেছেন। এখন আপনি আমাকে পরিত্যাগ করে আফগানিস্তানের প্রজাতন্ত্রকে তার ভাগ্যের উপর সপে দিচ্ছেন।"[32]
১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে রুশ সরকার নজিবউল্লাহ সরকারের প্রতি সব সহায়তা বন্ধ করে দেয়। ফলে জ্বালানির অভাবে আফগান বিমানবাহিনী অকেজো হয়ে পড়ে। প্রধান শহরগুলি প্রতিপক্ষের হস্তগত হয়। তার জাতীয় সমঝোতার পাঁচ বছর পূর্তিতে তিনি আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নকে দায়ী করেন।[32]
মার্চে তিনি তার সরকারের পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়ে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা অনুসরণ করেন। মধ্য এপ্রিলে তিনি সাত সদস্যের কাউন্সিলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জাতিসংঘের পরিকল্পনা মেনে নেন। এর কয়েকদিন পরে ১৪ এপ্রিল বাগরাম বিমানঘাটি ও চারিকার শহর হাতছাড়া হওয়ার কারণে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। এরপর আবদুল রহিম হাতিফ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন।[33] কাবুলের পতনের পূর্বে তিনি জাতিসংঘের কাছে আশ্রয় চান। কিন্তু আবদুর রশিদ দোস্তাম তাকে বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগে বাধা দেন। এরপর নজিবউল্লাহ কাবুলের জাতিসংঘ দপ্তরে আশ্রয় নেন।[34] ১৯৯৬ সালে তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে।[35]
তালেবানদের কাবুল দখলের পর ১৯৯৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নজিবউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এই মৃত্যুদন্ড আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছিল।[36]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.