Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুহাম্মদ তাহির-উল-কাদরী ( উর্দু: محمد طاہر القادری; জন্ম ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১) বিশ্বের একজন প্রসিদ্ধ ইসলামিক স্কলার এবং প্রাক্তন পাকিস্তানি-কানাডিয়ান রাজনীতিবিদ, যিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা মিনহাজুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল এবং দেশীয় রাজনৈতিক সংগঠন পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক প্রতিষ্ঠা করেন।
মুহম্মদ তাহিরুল কাদরী | |
---|---|
محمد طاہر القادری | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | পাকিস্তানি |
আদি নিবাস | ঝং, পাঞ্জাব, পাকিস্তান |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তানি কানাডীয়[1] |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
ধর্মীয় মতবিশ্বাস | মাতুরিদি |
আন্দোলন | বেরলভী |
প্রধান আগ্রহ | তাফসীর, শরীয়ত, ফিকহ, হাদিস, কোরআন, উসুল আল ফিকহ, ইতিহাস, আকীদা, ইসলামি দর্শন, রাজনীতি[2] |
যেখানের শিক্ষার্থী | পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় |
তরিকা | কাদেরিয়া |
যে জন্য পরিচিত | ফতওয়া অন টেরোরিজম |
পেশা | ইসলামি পণ্ডিত ও বক্তা |
এর প্রতিষ্ঠাতা | মিনহাজুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল পাকিস্তান আওয়ামী তেহরীক |
দর্শন | সুফিবাদ |
মুসলিম নেতা | |
কাজের মেয়াদ | অক্টোবর ১৯৮১ – বর্তমান |
যার দ্বারা প্রভাবিত
| |
যাদের প্রভাবিত করেন
| |
পেশা | ইসলামি পণ্ডিত ও বক্তা |
ওয়েবসাইট | www |
এছাড়াও তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সাংবিধানিক আইন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। [3] ড. কাদেরী মিনহাজ-উল-কুরআন ইন্টারন্যাশনালের বিভিন্ন উপ-সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও।
ড. মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী ১৯৫১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরের জং জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[4][5][6][7] তার পিতার নাম ফরিদুদ্দিন আল-কাদেরি, যিনি একজন প্রসিদ্ধ চিকিৎসক এবং শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিস হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি তার পিতার দুই পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ্য।
তিনি ৬ বছর বয়সে তার পিতার নিকট থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষার সবক শুরু করেন। ১২ বছর বয়সে তিনি মদিনায় আহমদ রেজা খান বেরলভীর প্রধান শিষ্য জিয়াউদ্দিন মাদানির নিকট হতে শাস্ত্রীয় শিক্ষার সূচনা শুরু করেন। একই বছর তিনি মক্কার তৎকালীন আহলে বাইতের ইমাম আলাওয়ী বিন আব্বাসের কাছ থেকে হাদিসশাস্ত্রের (উলুমুল হাদিস) দরস ও সনদ অর্জন করেন। তাছাড়া তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আরব বিশ্বের উলামা এবং পাকিস্তান ও ভারতের প্রসিদ্ধ শাইখদের সান্নিধ্যে থেকে তাদের শিষ্যত্ব অর্জন করেন। সুফিশাস্ত্রে তার শিক্ষক হলেন বাগদাদ শরিফের তৎকালীন সাজ্জাদানশীন পীর তাহির আলাউদ্দিন আল-জিলানী। [8]
ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ড. কাদেরি লাহোরের ইসলামিয়া হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক স্টাডিজে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রি, ইসলামিক স্টাডিজে এম.এ ডিগ্রি এবং ইসলামিক আইনে এলএলবি ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি লেকচারার এবং পরবর্তীতে আইনের অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেন। [8]
১৯৭২ সালে এলএলবি পাশ করার পর তিনি জং জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে গোল্ড মেডেল পাওয়ার পর তিনি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রথমে লেকচারার ও পরে প্রফেসর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
শীঘ্রই তিনি পাকিস্তানের পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের জুরিস্ট কনসাল্ট ও পাকিস্তান ফেডারেল শরীয়া কোর্টের বিশেষ উপদেষ্টা পদে নিয়োজিত হন। ১৯৮০ সালে, তার কিছু রীটের কারণে পাকিস্তানের ফেডারেল শরীয়া আদালত ও সুপ্রীম কোর্টের আপীল বেঞ্চ কর্তৃক বেশ কিছু রায় পাস করা হয়।
তিনি ১৯৮৯ সালের মে মাসে পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক (পিএটি) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৯৯ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। [9] ২৯ নভেম্বর ২০০৪-এ, কাদরি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফের স্বৈরাচারী সন্ত্রাসবিরোধী নীতির প্রতিবাদে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ইতিহাসে প্রথম সদস্য হিসাবে তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। [10] ২০০৫ সালে তিনি কানাডায় নির্বাসিত হন। [11]
ডিসেম্বর ২০১২ সালে, কানাডার টরন্টোতে সাত বছর বসবাস করার পর, ড কাদেরী পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং তার রাজনৈতিক প্রচারণা শুরু করেন। সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ড কাদেরী ইসলামাবাদে "মিলিয়ন-ম্যান" মার্চের ডাক দেন।[12] তিনি নির্বাচনী সংস্কারের জন্য একটি স্বাধীন সংস্থা গঠনের দাবি জানান, যা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে। এবং তিনি আরও বলেন যে, সাংবিধানিক শর্ত পূরণ না হলে তিনি আসন্ন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবেন। [13] ১৪ জানুয়ারি ২০১৩ সালে, একটি বিক্ষোভকারী জনতা শহরের প্রধান সড়কে মিছিলে নেমে পড়ে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ অনশনে থাকার অঙ্গীকার করেন।[14] তিনি যখন লাহোর থেকে লংমার্চ শুরু করেন তখন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ তার সঙ্গে ছিলেন।[15] সংসদের সামনে সমাবেশে তিনি বলেন, ‘কোনো সংসদ নেই, আছে একদল লুটেরা, চোর-ডাকাত। . . আমাদের আইন প্রণেতারা আইন ভঙ্গকারী।"[16] চারদিন অবস্থানের পর, সরকার এবং ড তাহিরুল কাদেরীর মাঝে "ইসলামাবাদ লং মার্চ প্রজ্ঞাপন" নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষরিত হয়, যাতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনী সংস্কার এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।[17] যদিও তিনি "মিলিয়ন-ম্যান" মার্চের ডাক দিয়েছিলেন, কিন্তু ইসলামাবাদে অবস্থানের সময় আনুমানিক মোট উপস্থিতি ছিল ৫ লাখেরও বেশি।[15]
সমালোচকরা অভিযোগ করেন যে, বিক্ষোভগুলি পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক নির্বাচন বিলম্ব ও বেসামরিক সরকারের প্রভাবকে দুর্বল করার একটি চক্রান্ত ছিল। সামরিক বাহিনীর সাথে ড তাহিরুল কাদেরীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং বিদেশী ও পাকিস্তানি তহবিলের উৎস সন্দেহজনক মনে করা হয়।[18][19] পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা দাবি করেন যে, ড তাহিরুল কাদেরীর দাবিগুলি অকার্যকর কারণ এগুলো পাকিস্তানের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। [20] দ্য ট্রিবিউন ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সংখ্যায় রিপোর্ট করে যে, ড কাদেরী ইসলামাবাদ লং মার্চ ঘোষণায় তার বেশিরভাগ দাবির প্রতি আত্মসমর্পণ করেছেন বলে মনে হচ্ছে। [21]
১৭ জুন ২০১৪ সালে, পাঞ্জাব পুলিশ এবং পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক কর্মীদের মধ্যে একটি সহিংস সংঘর্ষ হয়; যার ফলে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। [22][23] ড তাহিরুল কাদেরী বলেন, পুলিশ এক্ষেত্রে এজাহার নিতে অস্বীকৃতি জানায়।[24] বাকির নাজফির তদন্তে দেখা গেছে যে, হাইকোর্টের নির্দেশে স্থাপন করা বাধা অপসারণের জন্য পুলিশ গণহত্যায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। [25]
তাহিরুল কাদেরীর ফ্লাইট ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণের কথা থাকলেও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ অবতরণের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করে দেয়। এবং বিমানটিকে লাহোর বিমানবন্দরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। [26] তাহিরুল কাদেরী মনে করেছিলেন যে, হয়তো পাঞ্জাব সরকার তার কোনো ক্ষতিসাধন করবে। কিন্তু পাঞ্জাব গভর্নর ব্যক্তিগতভাবেই তার প্রতিনিধিদলকে দিয়ে লাহোরের মডেল টাউনে তার বাসভবনে পৌঁছে দেন। [27]
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে, পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে তার রাজনৈতিক মিত্র ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর সাথে ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে তার ইনকিলাব মার্চ শুরু করেন।[28]
ইমরান খান এবং ড. তাহিরুল কাদেরী তাদের বিক্ষোভ মিছিলে পুরোপুরি যোগ দেননি, আবার একে অপরকে সমর্থন করতে অস্বীকারও করেননি।[29] ১০ আগস্ট ২০১৪ সালে, ড. তাহিরুল কাদেরী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে তার দলের ইনকিলাব মার্চ, পিটিআই-এর আজাদি মার্চের সমান্তরালে এগিয়ে যাবে। উভয় মার্চ একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্য হওয়া সত্ত্বেও, উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন দাবি নেওয়ার জন্য সংগঠিত হয়েছিল। এটা স্পষ্ট যে দুটি দলেরই একই উদ্দেশ্য রয়েছে, তবে লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন ছিল। বিরোধী দলগুলির দ্বারা দুটি সমান্তরাল ধর্মঘটের ঘোষণা, পিটিআই এবং পিএটি-র মধ্যে একটি সম্ভাব্য জোটের জল্পনার জন্ম দেয়। অবশ্য দুই দলের প্রধানরা স্পষ্টভাবে কোন আনুষ্ঠানিক জোট করেননি; কিন্তু একে অপরকে সমর্থন করার জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক চুক্তি করেন। [30][31]
২১ আগস্ট ২০১৪ সালে, ড. কাদেরী বলে বসেন যে, সরকার তার কর্মীদের ধর্মঘটের অংশগ্রহণকারীদেরকে খাদ্য সামগ্রী এবং পানীয় জল সরবরাহ করার অনুমতি দিচ্ছে না। [32]
৩১ আগস্ট ২০১৪ সংখ্যায় দি ডেইলি ডন পত্রিকা লিখে যে, ইসলামাবাদে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক এর নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশ লড়াইয়ের সময় শত শত লোক আহত হয়েছে। [33] ]
এরপর প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। [34] জেনারেল রাহিল শরিফ তাহিরুল কাদেরী ও ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। [35] জেনারেল রাহিল শরীফের হস্তক্ষেপে পুলিশ রিপোর্টটি উঠিয়ে নেওয়া হয়। ড. কাদেরী ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামে করায় তার সমর্থকদের অভিনন্দন জানান। [24]
সে বছর, তাহিরুল কাদেরী ইসলামাবাদের ডি-চকে ইদের নামাজের ইমামতি করেন। জামাতে ইমরান খান এবং MWM এর রাজা নাসির আব্বাস জাফরি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন। হযরত ইব্রাহিম ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) এর সুন্নাহ অনুসরণ করে আল্লাহর নামে পশু কোরবানিও করা হয়। [36][37][38]
সংগঠনটি ধর্মীয় মধ্যপন্থা, কার্যকর ও সঠিক শিক্ষা, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতি এবং সুফিবাদের পদ্ধতি ব্যবহার করে ইসলামের একটি মধ্যপন্থী ব্যাখ্যা প্রচার করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। মার্চ ২০১১ অধিবেশনে, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল মিনহাজ-উল-কুরআন ইন্টারন্যাশনালকে বিশেষ পরামর্শমূলক মর্যাদা প্রদান করে। [39]
২০১১ সালে, তিনি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত WEF- এ ইমরান খানের সহিত বক্তৃতা উপস্থাপন করেন।[40]
৭ এপ্রিল ২০১৯ সালে, ড. তাহিরুল কাদেরী রিয়াদে ওআইসি সম্মেলনে স্কলারদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এবং মিনহাজ-উল-কুরআনের কাউন্টার টেররিজম কার্যক্রমগুলি উপস্থাপন করেন। [41]
২০১০ সালের আগস্টে, তিনি যুক্তরাজ্যে চরমপন্থা মোকাবেলার লক্ষ্যে ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম যুবকদের জন্য একটি সন্ত্রাসবিরোধী শিবির স্থাপন করেন। [42] মিনহাজ-উল-কুরআন ইউকে এর পৃষ্ঠপোষকতা করে। [43]
ফয়সালাবাদ সমাবেশের সাত দিন পর, তিনি ১৯ অক্টোবর ২০১৪ সালে লাহোরে আরেকটি জনসমাবেশ করেন। [44]
লাহোর সংঘর্ষ ২০১৪,[45][46] মূলত মডেল টাউন ট্র্যাজেডি নামে পরিচিত ( উর্দু: سانحہ ماڈل ٹاؤن)। কেউ কেউ একে লাহোর গণহত্যা দিবস নামে অভিহিত করেন। [47] এটি ছিল পাঞ্জাব পুলিশ এবং পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক কর্মীদের মধ্যে একটি হিংসাত্মক সংঘর্ষ যা, ১৭ জুন ২০১৪-এ সংঘটিত হয়েছিল, যার ফলে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। সে হামলার পাঁচ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। [48] মিনহাজ-উল-কুরআনের অফিস এবং মডেল টাউনে পিএটি প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ তাহিরুল কাদরির বাসভবনের দিকে যাওয়ার রাস্তা থেকে প্রতিবন্ধকতা অপসারণের জন্য পুলিশের অ্যান্টি-অ্যাক্রোচমেন্ট স্কোয়াড অভিযান শুরু করলে প্রায় 11 ঘন্টা ধরে এই অচলাবস্থা চলে।
ঘটনাটি বিভিন্ন স্থানীয় নিউজ চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। [49] এবং কীভাবে অচলাবস্থা শুরু হয়েছিল তার পরস্পরবিরোধী বিবরণও দেখানো হয়। [50] পুলিশ দাবি করেছে যে, পিএটি সচিবালয়ের ভিতরে লোকেরা তাদের আক্রমণ করেছিল। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত লাইভ ফুটেজে, পুলিশ সদস্যদের বিক্ষোভকারী জনতাকে অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে গুলি ছুড়তে এবং টিয়ার গ্যাসের ক্যানিস্টারে লাবিং করতে দেখা যায়। বিপরীতে বিক্ষোভকারীদের আত্মরক্ষার জন্য পুলিশকে পাথর ছুঁড়তেও দেখা যায়।[50] তাহিরুল কাদেরী এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সবচেয়ে জঘন্যতম রূপ তকমা দেন। তাহিরুল কাদেরী, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং তার ভাই শাহবাজ শরিফের শাসনের অবসান ত্বরান্বিত করবে এমন একটি বিপ্লব এনে তার রাজনৈতিক কর্মীদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। [51][52]
তাহিরুল কাদেরী এবং তার দল ৯ আগস্ট ২০১৪ এর মডেল টাউনের তেহরিক-ই-মিনহাজ উল কুরআন সচিবালয়ে হামলার দিনকে ইয়াউম-ই-শুহাদা (শহীদ দিবস) হিসেবে পালন করে। [53] জনগণ জমায়েতে হবার পর, তিনি তার সমর্থকদেরকে এবং সরকারকে আশ্বস্ত করেন যে ১০ আগস্টের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে এবং তার অনুসারীদেরকে কুরআন তেলাওয়াতের জন্য তাদের জায়নামাজ নিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়। [54]
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তিনি আমন্ত্রিত হন। [55][56]
NSW আইন পরিষদের সদস্য শাওকেট মোসেলমান এমএলসি কর্তৃক আমন্ত্রিত হলে, জুলাই ২০১১ সালে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নিউ সাউথ ওয়েলসের পার্লামেন্টে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে একটি বক্তৃতা দেন। [57] ড কাদেরী অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার সম্মুখেও আসেন, যেখানে তিনি ইসলাম, সন্ত্রাসবাদ এবং আফগানিস্তান থেকে সম্ভাব্য সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে, মিনহাজ-উল-কুরআন লন্ডনের ওয়েম্বলি এরিনায় "পিস ফর হিউম্যানিটি কনফারেন্স"এর আয়োজন করেন, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় প্রতিনিধি, পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ ও সমবেত বক্তাগণ শান্তির ঘোষণা জারি করেন। এতে বিভিন্ন দেশ থেকে ১২০০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনটি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল আযহার ইমাম আহমদ তাইয়েব, বান কি-মুন (জাতিসংঘের মহাসচিব), একমেলেদ্দিন ইহসানগ্লু ( ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার মহাসচিব), ডেভিড ক্যামেরন (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী), নিক ক্লেগ (ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী) এবং রোয়ান উইলিয়ামস (ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ) কর্তৃক সমর্থন বার্তা পায়। ৩০ নভেম্বর ২০১১ সালে, তাহিরুল কাদেরী তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বৈশ্বিক ধর্ম, কূটনীতি এবং দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য "আফগানিস্তানের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত" সম্মেলনে একটি বক্তৃতা দেন যা মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানটিতে ১২০ জন আফগান নেতা উপস্থিত ছিলেন।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে, তাহিরুল কাদেরি ভারতে চার সপ্তাহের জন্য দিল্লি সফরে যান। [58][59][60] দিল্লিতে ফতোয়া কিতাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় তাহিরুল কাদেরী শান্তির বার্তা প্রদান করে বলেন: "ইসলামে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই"। [61] গুজরাটে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে তাহিরুল কাদেরীর কথা শুনতে প্রচুর লোকজন জড়ো হয়েছিল। [60][62] তিনি পাকিস্তান ও ভারত সরকারকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় কমানো এবং পরিবর্তে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে অর্থ ব্যয় করার আহ্বান জানান। [63] তিনি আজমীর শরিফ পরিদর্শন করেন, সেখানে দরবার কর্তৃক তাকে ঈর্ষণীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি সেখানে সুফিবাদের উপর একটি বক্তৃতা দেন। [64] ৪ জানুয়ারি ২০১৫ সালে, তিনি সন্ত্রাসবাদকে বিশ্বের সর্ব বৃহত্তম সমস্যা হিসাবে ঘোষণা করেন। [65]
সন্ত্রাসবাদ এবং আত্মঘাতী বোমা হামলার উপর ফতোয়া একটি ৬০০ পৃষ্ঠার (উর্দু সংস্করণ) (৫১২ পৃষ্ঠা- ইংরেজি সংস্করণ), হল তাহিরুল কাদেরীর রচিত একটি ইসলামিক ডিক্রি, যেখানে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রমাণ করা হয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ এবং আত্মঘাতী বোমা হামলা সম্পুর্ণ হারাম ও অনৈসলামিক। এটি একটি বই আকারে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। [66] এই ফতোয়া আল-কায়েদা এবং তালেবানের মতাদর্শের সরাসরি খণ্ডন করে। এটি সবচেয়ে বিস্তৃত ইসলামি সন্ত্রাসবিরোধী ফতওয়াগুলির মধ্যে একটি। এখানে বলা হয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে কুফরি। [67] কিতাবের মোড়ক উন্মোচনের আয়োজন করে মিনহাজ-উল-কুরআন ইউকে। ফতওয়া প্রদানের সময় তাহিরুল কাদেরী উল্লেক করেন যে, "সন্ত্রাসবাদ সন্ত্রাসবাদই, সহিংসতা সহিংসতাই এবং ইসলামিক শিক্ষায় এর কোন স্থান নেই। এবং এর জন্য কোন ন্যায্য কারণ প্রদান করা যায় না, কোন প্রকার অজুহাতও দেওয়া যায় না।"
ফতোয়াটি মিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পায় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ইতিবাচকভাবে কাভার করা হয়। [68]
সিএনএনের মতে, বিশেষজ্ঞরা এই ফতোয়াকে সন্ত্রাসবাদী আগ্রাসনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা হিসেবে দেখেছেন। [69] CNN এর Amanpour শো তার ওয়েবসাইটে ফতোয়ার সারসংক্ষেপ যোগ করে এটিকে শান্তির জন্য ফতোয়া বলে ঘোষণা করে। [70] মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ফতোয়াটিকে ইসলামকে সন্ত্রাসীদের থেকে পৃথক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে ঘোষণা করে। [71]
ডগলাস মারে ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড এর একটি নিবন্ধে ফতোয়াটিকে "সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন, যদিও তিনি বলেছিলেন "একটি ফতোয়া সন্ত্রাসবাদের মাত্রাকে এতটা পরিবর্তন করতে পারবে না"। [72]
আইটিভি নিউজ চ্যানেল ফতোয়াটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং জিজ্ঞাসা করে যে এটি কি আদৌ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রণোদিত কি না। কারণ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এবং এমআই 5 এর সিনিয়র কাউন্টার টেররিজম কর্মকর্তাগণ ফতওয়া ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন। [73]
৫১২ পৃষ্ঠার ইংরেজি বইয়ের সংস্করণে মোড়ানো, Fatwa on Terrorism and Suicide Bombings, (লন্ডন: মিনহাজ-উল-কুরান, ২০১১।আইএসবিএন ৯৭৮-০-৯৫৫১৮৮৮-৯-৩) কিতাবটির শুরুতে জন এস্পোসিটোর একটি মুখবন্ধ রয়েছে এবং জোয়েল হেওয়ার্ডের একটি ভূমিকা রয়েছে। এবং এতে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশরের ইসলামিক রিসার্চ কাউন্সিল থেকে একটি প্রশংসাপত্রও সংযোজন করা রয়েছে।
মিশরের কায়রোতে অবস্থিত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে Fatwa on Terrorism and Suicide Bombings কিতাবটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করে। জানুয়ারি ২০১১ সালে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় ফতোয়াটি আলোচনা করা হয়েছিল। [74] জুন ২০১১ সালে, পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট মিনহাজ ইন্টারফেইথ রিলেশনের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ফতোয়াটির একটি অনুলিপি পান। পোপ উল্লেখজনকভাবে এর প্রশংসা করে বলেন যে, এটি শান্তি, সম্প্রীতি এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রচারণায় কাজ করবে। [75]
কামাল আর্গন, Fatwa on Terrorism and Suicide Bombings কে ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করেছেন। এবং রটারডাম ইসলামিক অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের জার্নালে এর একটি পর্যালোচনা প্রকাশ করেছেন, ভলিউম। 2, নং 1, 2011, পিপি। 149-160। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ রটারডাম, নেদারল্যান্ডস।
একজন সংবাদপত্র বিশেষজ্ঞের মতে, তাহিরুল কাদেরীর সন্ত্রাসবাদের উপর ফতোয়াটিতে আইনগত-ধর্মতাত্ত্বিক একটি ধারণা তৈরি করে যে, খাওয়ারিজ সম্পর্কে ইসলামে ঐকমত্য রয়েছে। [76][77] থিঙ্ক ম্যাগাজিন (বিশ্ব ধর্ম) ডক্টর তাহিরুল কাদরিকে ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উল্লেখ করে। [78]
তাহিরুল কাদেরী ১০০০টি কিতাব রচনা করেছেন [79] যার মধ্যে ৫৫০টি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত কিতাবগুলোর মধ্যে আট খণ্ডে বিস্তৃত ৭০০০ পৃষ্ঠার একটি কুরআনিক এনসাইক্লোপিডিয়া (ইংরেজিতে) রয়েছে। [80] তিনি ৬০০০টিরও বেশি বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন এবং ইসলামী আইনশাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, সুফিবাদ, ইসলামী দর্শন, আইন, ইসলামী রাজনীতি, হাদিস, সীরাহ এবং অন্যান্য অনেক ঐতিহ্যবাহী বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলির দারস দিয়ে যাচ্ছেন। [79]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.