মুসআব ইবনে উমাইর (আরবি: مصعب بن عمير) মুসআব আল খায়ের নামেও পরিচিত,[1] ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন সাহাবা। কুরাইশ বংশের শাখা বনু আব্দুল দর গোত্রের লোক ছিলেন তিনি। ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ইসলামের প্রথম দূত ছিলেন।[2] তিনি উহুদের প্রান্তরে ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে শহীদ হন।[3]

দ্রুত তথ্য মুস'আব ইবনে উমাইর, মদিনায় ১ম রাষ্ট্রদূত ...
মুস'আব ইবনে উমাইর
مصعب بن عمير
মদিনায় ১ম রাষ্ট্রদূত
কাজের মেয়াদ
আনু.৬২০  ৬২১ খ্রিস্টাব্দ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(৫৯৪-০১-০৮)৮ জানুয়ারি ৫৯৪
মক্কা
মৃত্যু২২ ডিসেম্বর ৬২৫(625-12-22) (বয়স ৩১)
উহুদ, মদিনা, হেজাজ, আরব
মৃত্যুর কারণউহুদের যুদ্ধে শহীদ
জাতীয়তাআরব
পেশাদ্বায়ী
যে জন্য পরিচিতমুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রসিদ্ধ সাহাবি
বন্ধ

প্রাকজীবন

মুসআব বিন উমাইরের জন্মের প্রকৃত সাল জানা যায়নি। অনুমান করা হয় তিনি ৫৯৪ থেকে ৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬১৪ সালে তরুন বয়সেই ইসলাম গ্রহণ করেন।[4] তিনি কুরাইশ বংশের বনু আব্দুর দার শাখায় জন্মগ্রহণ করেন।[5] মুসআবের পিতা উমাইর ইবনে হাশিম এবং মাতা খুন্নাস বিনতে মালিক। তারা পিতামাতা বিত্তশালী ছিলেন।[6] তরুন বয়সেই তিনি কুরাইশ বংশের বড়দের জমায়েতে অংশগ্রহণের জন্যে অনুমতিপ্রাপ্ত ছিলেন।[7]

ইসলাম গ্রহণ

প্রথমদিকে মুসলমানগণ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সঙ্গে আল-আরকামের গৃহে সাক্ষাৎ করতো যা ইসলাম শিক্ষাকেন্দ্র নামে পরিচিত ছিলো।[8] মুস'আব ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে এই বাড়িতে যান। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কুরআন তিলাওয়াত এবং তার কথা শুনে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।[9][10]

প্রথমদিকে মুস'আব তার ধর্মবিশ্বাস গোপন রেখেছিলেন। কারণ তিনি ভয় পেতেন যে তার মা এটা শুনলে রেগে যাবেন।[1] একদিন কোরাইশদের একজন উসমান ইবনে তালহা তাকে আল আরকামের বাড়িতে গিয়ে মুসলমানদের সঙ্গে প্রার্থনায় সামিল হতে দেখে। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তার মায়ের কাছে পৌঁছে যায়। তার মা তাকে বাড়ির মধ্যে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে।[11] মুস'আব তার বিশ্বাস থেকে সরে যায়নি। মুহাম্মাদ (সাঃ) তাকে আবিসিনিয়া গমনকারী দলের সঙ্গে যোগ দিতে তাকে পরামর্শ দেন।[9]

ইসলামের প্রথম দূত

মুসআব ইবনে উমাইর ইসলামের প্রথম দূত নিযুক্ত হন এবং তাকে ইয়াসরিব (মদিনা) এ পাঠানো হয়।[2][12] মদিনায় গিয়ে তিনি আসন্ন হিজরত এর পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। সাদ ইবনে জুরারাহ নামক মদিনার এক ব্যক্তি তাকে সহযোগিতা করেন। তারা ইসলাম প্রচার শুরু করলে অনেকেই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেন। তাদের মধ্যে সাদ ইবনু মুআজ এবং উসায়িদ ইবনু হুদাইর এর মতো নেতৃত্বস্থানীয় লোকেরাও ছিলেন।[13] মদিনায় ইসলাম ধর্মান্তরিত ব্যক্তিগণ আনসার আনসার বা সাহায্যকারী নামে পরিচিত।[2]

সামরিক অভিযান

বদরের যুদ্ধ

তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুসলিম বাহিনী এই যুদ্ধে সত্তরটি উট এবং দুটি ঘোড়া নিয়ে অংশ নেয়।[14][15]

উহুদের যুদ্ধে মৃত্যু

৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত উহুদের যুদ্ধে মুহাম্মদ স. মুসআব ইবনে উমাইরকে মুসলমান বাহিনীর পতাকা বহনের দায়িত্ব দেন।[16] যুদ্ধের সময়ে কিছু মুসলমান ভুল করে মনে করে যে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। তাই তারা যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের স্থান ত্যাগ করে।[16] এর ফলে বিরোধী পক্ষ মুহাম্মদ স কে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে। এটা বুঝতে পেরে মুসআব কাফিরদের দৃষ্টি তার দিকে ফেরাতে হাতের পতাকা উঁচিয়ে আল্লাহু আকবর তাকবির দিতে থাকে।[17] কাফিরগণ মুসআবকে আক্রমণ করে। ডান হাতে পতাকা ধরা ছিলেন। ডান হাত ছিন্ন করে ফেললে বাম হাতে পতাকা ধরে কুরআনের বাণী বারবার বলতে থাকেন। বাম হাত যখন কেটে ফেলে তখন বাহু দিয়ে পতাকা ধরে রাখেন। তিনি পতাকাটি পড়তে দেন নাই। "মুহাম্মদ শুধুমাত্র আল্লাহর একজন নবী। তার আগেও নবীগণ মারা গেছেন।"[18][19] মুসআব ইবনু কামির ছোড়া বর্শার আঘাতে মৃত্যুমুখে পতিত হন।[17] যতক্ষণ তার বুকে দম ছিলো তিনি এক মূহুর্তের জন্যে পতাকাটি পড়তে দেন নাই।[3]

শেষকৃত্য

যুদ্ধে ৬৫ জন মুসলমান মারা যায়।[20] খাব্বাব ইবনু আল আরাত বলেছেন:

আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর রাসূলের সান্নিধ্যে হিজরত করেছি। সুতরাং আমাদের প্রতিদান আল্লাহর কাছে প্রাপ্য ও নিশ্চিত হয়ে গেল। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের পুরস্কার (এখানে) কিছু উপভোগ না করেই মারা গিয়েছিলেন এবং তাদের একজন ছিলেন মুসআব ইবনে উমর যিনি উহুদের যুদ্ধের দিন শহীদ হয়েছিলেন এবং একজন নামিরা (অর্থাৎ আ.) ব্যতীত কিছুই রেখে যাননি। যে চাদরে তাকে কাফন দেওয়া হয়েছিল। এটা দিয়ে তার মাথা ঢেকে রাখলে তার পা উলঙ্গ হয়ে যায়, আর যদি তার পা ঢেকে দেই তাহলে তার মাথা নগ্ন হয়ে যায়। তাই নবী আমাদের বললেন, "তা দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং তার পায়ের উপর কিছু ইদখীর (অর্থাৎ এক ধরনের ঘাস) রাখো অথবা তার পায়ের উপর ইদখির নিক্ষেপ কর।" কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের পরিশ্রমের ফল পেকেছে, তারা সংগ্রহ করছে.[21][22]

মুসআবের দেহের পাশে দাঁড়িয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ) পাঠ করলেন: "ঈমানদারদের মধ্যে এমন পুরুষও রয়েছে যারা আল্লাহর কাছে যে অঙ্গীকার করেছে তার প্রতি সত্য হয়েছে.[23]

আল্লাহর রাসূল সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তোমরা আল্লাহর কাছে শহীদ." যখন মুসআবের স্ত্রী হাম্মানাহ বিনতু জাহশ তার ভাই এবং মামার মৃত্যু সংবাদ শুনলেন তখন বললেন, "আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি এবং তারই কাছে ফিরে যাবো"। কিন্তু স্বামী মুসআবের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন।[12]

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.