মুখগহ্বরের ঘা
From Wikipedia, the free encyclopedia
মুখগহ্বরের ঘা বা মুখগহ্বরের দুষ্টক্ষত হল মুখগহ্বরের ভেতরে, যেমন ঠোঁট বা গালের ভেতরের দেয়ালে, জিহ্বার উপরে বা নিচে, মাঢ়ির গোড়ায়, নরম তালুতে কিংবা অন্য যেকোনও স্থানের নরম কলাতে অবস্থিত কিছু ক্ষুদ্রাকার, অগভীর দুষ্টক্ষত। এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাফথাস স্টোমাটাইটিস (Aphthous stomatitis), যার আক্ষরিক অর্থ হল "দুষ্টক্ষতজনিত মুখগহ্বরের প্রদাহ"। মুখগহ্বরের ঘা জ্বরঠোসার মত ঠোঁটের উপরে হয় না, আর এগুলি সংক্রামকও নয়। তবে এগুলি বেশ যন্ত্রণাদায়ক হয় এবং এগুলির কারণে কথা বলতে ও কোনও কিছু খেতে অসুবিধা হয়।[2]
মুখগহ্বরের ঘা / দুষ্টক্ষত অ্যাফথাস স্টোমাটাইটিস (Aphthous stomatitis) | |
---|---|
নিচের ঠোঁটের ভেতরে মুখগহ্বরের ঘা | |
বিশেষত্ব | মুখগহ্বরের চিকিৎসাবিজ্ঞান, চর্মবিজ্ঞান |
সংঘটনের হার | ~২০% লোক, বিভিন্ন মাত্রায়[1] |
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখগহ্বরের ঘা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই চলে যায়। যদি ঘায়ের আকার অস্বাভাবিক রকমের বড় হয় কিংবা নিজে থেকে সেরে না যায়, তাহলে পেশাদার চিকিৎসক বা দন্ত্যচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।[2]
বেশিরভাগ মুখের ঘা ডিম্বাকৃতির (বা বৃত্তাকৃতির) হয়। এর সাদা বা হলুদ রঙের কেন্দ্র থাকে এবং একে ঘিরে লাল রঙের সীমানা থাকে। ঘায়ের আবির্ভাবের দুই এক দিন আগে থেকে ঘায়ের জায়গায় টনটনে বা জ্বালাপোড়া অনুভূতি হতে পারে।[2]
ঠিক কী কারণে মুখের ঘা হয়, তা এখনও সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে গবেষকরা অনুমান করেন যে বেশ কিছু নিয়ামকের সমষ্টিগত ক্রিয়ার ফলে এই ঘায়ের আবির্ভাব হয়। যেমন দাঁতের চিকিৎসার সময় হালকা আঘাত পেলে, বেশি জোরে দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে মুখে আঘাত পেলে, দুর্ঘটনাবশত মুখের ভেতরে দাঁতের কামড় বসলে, কোনও কোনও খাদ্যে অতিসংবেদনশীলতা থাকলে (যেমন কফি, চকলেট, ডিম, বাদাম, ঝালযুক্ত খাবার, অম্লীয় খাবার, ইত্যাদি), খাদ্যে বি-১২ ভিটামিন, দস্তা বা জিঙ্ক, ফোলিক অ্যাসিড বা লোহার অভাব ঘটলে, মুখের ভেতরে কিছু ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে অতিপ্রতিক্রিয়া বা অ্যালার্জি ঘটলে, পাকস্থলির ক্ষত (পেপটিক আলসার) সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাক্টর পিলোরি-র কারণে, হরমোন বা গ্রন্থিরসের ভারসাম্যের অভাব ঘটলে, কিংবা স্নায়বিক চাপের কারণে মুখের ঘা হতে পারে।[2]
এছাড়া কিছু রোগের উপসর্গ হিসেবেও মুখগহ্বরের ঘা প্রকাশ পেতে পারে, যেমন সিলিয়াক ব্যাধি (গ্লুটেনের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা), প্রদাহী আন্ত্রিক ব্যাধি যেমন ক্রোনের ব্যাধি বা ক্ষতসৃষ্টিকারী মলান্ত্রপ্রদাহ, বেসেটের ব্যাধি, অনাক্রম্যতন্ত্রের ত্রুটি, যার কারণে অনাক্রম্যতন্ত্রের কোষগুলি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তে মুখের সুস্থ কোষগুলিকে আক্রমণ করে, এইচআইভি (এইডস) যা অনাক্রম্যতন্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, ইত্যাদি। তবে জ্বরঠোসার মত মুখের ঘায়ের সাথে হার্পিস বা বিসর্প ভাইরাস সংক্রমণের কোনও সম্পর্ক নেই।[2]
যেকোনও ব্যক্তিরই মুখের ঘা হতে পারে, তবে এগুলি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়; বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। কারও কারও পারিবারিক ইতিহাসে মুখের ঘা হবার প্রবণতা থাকতে পারে; এটি বংশগত কারণে কিংবা একই ধরনের পরিবেশে বসবাসের কারণে, যেমন কিছু বিশেষ ধরনের খাবার গ্রহণের ফলে হতে পারে।[2]
মুখের ঘা প্রতিরোধ করার জন্য অতিরিক্ত নোনতা, ঝালযুক্ত বা অম্লযুক্ত খাবার পরিহার করা, কড়া আম্লিক পানীয় যেমন কফি পান না করা, অতিপ্রতিক্রিয়া বা অ্যালার্জি হতে পারে এমন খাবার পরিহার করতে হয়, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয়, মুখগহ্বর সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হয়, নরম দাঁতের ব্রাশ ব্যবহার করতে হয়, সোডিয়াম লরিল সালফেটযুক্ত টুথপেস্ট পরিহার করতে হয়, মানসিক চাপ কমাতে হয়।[2]