মার্গারেট হেফিল্ড হ্যামিল্টন (জন্ম:১৭ই আগস্ট ১৯৩৬))[2] হচ্ছেন একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী, সিস্টেম প্রকৌশলী এবং ব্যবসায়ী। তিনি এমআইটি ইন্সট্রমেনশন ল্যাবরেটরি এর সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক ছিলেন,[3] যেটি অ্যাপোলো মহাশূন্য মিশন এর অন-বোর্ড ফ্লাইট সফটওয়্যার তৈরি করেছিল[4]। ১৯৮৬ সালে তিনি হ্যামিল্টন টেকনোলজি ইঙ্ক এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(সিইও) হন। প্রতিষ্ঠানটি তার তৈরিকৃত ইউনিভার্সাল সিস্টেম ল্যাংগুয়েজ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল যেটি তিনি আগে সিস্টেম এবং সফটওয়্যার ডিজাইনের জন্য তৈরি করেছিলেন।[5] হ্যামিল্টন প্রায় ৬০টির মত প্রকল্পে জড়িত ছিলেন, যেগুলোর উপর ১৩০ এরও বেশি কাগজপত্র, কাজ এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ২০১৬ সালের ২২শে নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা তাকে অ্যাপোলো এর চাঁদের মিশনের অন-বোর্ড ফ্লাইট সফটওয়্যার তৈরিতে তার নেতৃত্বের জন্য প্রেসিডেন্টাল মেডেল অব ফ্রিডম পুরস্কার দেন।[1]

দ্রুত তথ্য মার্গারেট হ্যামিল্টন, জন্ম ...
মার্গারেট হ্যামিল্টন
Thumb
১৯৯৫ সালে হ্যামিল্টন
জন্ম
মার্গারেট হেফিল্ড

(1936-08-17) আগস্ট ১৭, ১৯৩৬ (বয়স ৮৭)
পাওলি, ইন্ডিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র
শিক্ষামিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়ারলহাম কলেজ
পেশাহ্যামিল্টন টেকনোলজি ইঙ্ক এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(সিইও)
কম্পিউটার বিজ্ঞানী
দাম্পত্য সঙ্গীজ্যামস কক্স হ্যামিল্টন
আত্মীয়জ্যামস কক্স চেম্বারস(জামাতা)
পুরস্কারপ্রেসিডেন্টাল মেডেল অব ফ্রিডম[1]
বন্ধ

প্রাথমিক জীবন

মার্গারেট হেফিল্ড জন্মগ্রহণ করেন ইন্ডিয়ানার পাওলি শহরে কেনেথ হেফিল্ড ও রুথ ইস্টার হেফিল্ড এর কাছে। ১৯৫৪ সালে হ্যানকক হাই স্কুল থেকে পাশ করে তিনি মিশিগান ইউনিভার্সিটি এ গণিত বিভাগে ভর্তি হন স্নাতকোত্তর করার জন্য।[6] সে উচ্চতর গণিত এবং ফরাসী ভাষা শিক্ষা দিয়েছে স্নাতোকত্তর এর সময় তার স্বামীকে কাজে সহয়তার জন্য। সে বোস্টনে যায় ব্রান্ডিস ইউনিভার্সিটিতে বিযুক্ত গণিত এর উপর তার স্নাতক অধ্যায়ন করার উদ্দেশ্যে। ১৯৬০ সালে এমআইটি তে অস্থায়ী পদে আবহাওয়া গণনার সফটওয়্যার তৈরিতে যুক্ত হয়।[2][7][8] হ্যামিল্টন পরে লিখেছিলেন যে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং সফটওয়্যার প্রকৌশল সেসময় শিক্ষা বা পড়াশুনাতে ছিল না, সেখানে কাজের সময় প্রোগ্রামিং শেখার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে হত[4] ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত সে সেমি-অটোমেটিক গ্রাউন্ড এনবারনমেন্ট(সেইজ) প্রকল্পে এমআইটি এর লিঙ্কন ল্যাব এ কাজ করেন, যেখানে তিনি প্রোগ্রামারদের একজন ছিলেন যারা সফটওয়্যার লিখত প্রথম এএন/এফএসকিউ-৭ কম্পিউটার(এক্সডি-১) তে অবন্ধুত্বপূর্ন উড়োজাহাজ অনুসন্ধানে, সে বিমান বাহিনীর জন্যও সফটওয়্যার লিখে ক্যামব্রিজ রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে।

সেইজ প্রকল্প

সেইজ প্রকল্পটি ছিল হুইরলওয়াইন্ড প্রকল্পের সংযোজিত অংশ, যেটি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি(এমআইটি) শুরু করে ছিল কম্পিউটার পদ্ধতি তৈরি করতে যেটি আবহাওয়া গণনা করবে। সেমি-অটোমেটিক গ্রাউন্ড এনবারনমেন্ট(সেইজ) শিগ্রই ব্যবহার হতে লাগল সেনাবাহিনীর কাজে সোবিয়েত ইউনিয়নের সাথে স্নায়ুযুদ্ধের সময় আকাশ রক্ষার ক্ষেত্রে শত্রু উড়োজাহাজ সনাক্তকরণে। এই প্রকল্পে তার কাজের জন্য তাকে নাসার প্রকল্পে অ্যাপোলো ফ্লাইট সফটওয়্যার তৈরিতে একজন প্রার্থী করে তুলে।

নাসা

Thumb
হ্যামিল্টন দাঁড়িয়ে আছেন তার লেখা কম্পিউটারের কোড যেগুলো তিনি এমআইটি এর হয়ে অ্যাপোলো এর জন্য লিখেছিলেন
Thumb
হ্যামিল্টন সেসময়ের অ্যাপোলো ফ্লাইট সফটওয়্যার ডিজাইনের প্রধান হিসাবে

হ্যামিল্টন এমআইটি এর চার্লিস স্টার্ক ড্রাপার ল্যাবরটরিতে যোগ দেন যেটি তখন অ্যাপোলো এর মহাকাশ মিশনে কাজ করছিল। সে একটি দলের নেতৃত্ব দেয় যেটি অ্যাপোলো এবং স্কাইল্যাব এর জন্য সফটওয়্যার তৈরি করছিল।[9] হ্যামিল্টনের দলটি উড্ডয়নের সফটওয়্যার তৈরির দায়িত্বে ছিল।[10] তার দলের অন্য একটি অংশ সফটওয়্যার সিস্টেম ডিজাইন এবং তৈরি করছিল যার মধ্যে ছিল এরর ডিটেকশন এবং রিকবারি সফটওয়্যার যেটি হ্যামিল্টন ডিজাইন ও তৈরি করেছিলেন। [11] সে সময় সে কাজ করে গেছে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা এর জন্য যখন কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষা ছিল বিরল এবং সফটওয়্যার প্রকৌশল এর অস্তিত্বই ছিল না।[4]

ব্যবসা

১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত হ্যামিল্টন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ও যেটির তিনি সহ-প্রতিষ্ঠাতাও হাইয়ার ওর্ডার সফটওয়্যার(এইচওএস) তার ত্রুটি নিবারণ এবং সহনশীলতার ধারণাকে এমআইটি এর অভিজ্ঞতা থেকে আরও উন্নত করতে যোগ দেন।[12] তারা একটি পণ্য তৈরি করে যেটির নাম ইউজ ডট ইট, যেটি এইচওএস এর প্রণালী এর উপর ভিত্তি করে এমআইটিতে তৈরি হয়।[13][14][15] এটি সফলভাবে বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়।[16][17] হ্যামিল্টন ১৯৮৫ সালে এইচওএস প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেন। ১৯৮৬ সালের মার্চে তিনি প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হন হ্যামিল্টন টেকনোলজি ইঙ্ক. এর। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়েছিল ইউনিভার্সাল সিস্টেম ল্যাংগুয়েজ কে ঘিরে, ০০১ টুল সুইট, যার ভিত্তি ছিল তার পূর্বে তৈরি করা সিস্টেম ডিজাইন এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট।[5][18][19][20]

উত্তরাধিকার

Thumb
নাসার দাপ্তরিক ছবি, ১৯৮৯

যখন হ্যামিল্টন “সফটওয়্যার প্রকৌশল” আখ্যা দিতে শুরু করলেন[21][22][23] তখন সফটওয়্যার প্রকৌশলকে গুরুত্বসহকারে নেয়া হত না সাধারণ প্রকৌশলের সাথে এবং এটিকে বিজ্ঞানও বিবেচনা করা হত না। তিনি এই পদবি ব্যবহার করেতে শুরু করেছিলেন অ্যাপোলো মিশনের শুরুর দিকে যাতে সফটওয়্যারকে অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন হার্ডওয়ার প্রকৌশলের মত মর্যাদা দেয়া হয়। সময়ের সাথে সফটওয়্যার প্রকৌশল অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের মত সমান সুযোগ পেয়েছে।[24] হ্যামিল্টনের উদ্ভাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মানুষকে চাঁদে নিয়ে যেতে। হ্যামিল্টন অন্যান্য মহিলা প্রকৌশলীদের সাথে তাদের সময়ের পুরুষশাসিত প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে গেছেন, যাতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত ইত্যাদি ক্ষেত্রে মেয়েরা আসতে পারে বা অবদান রাখতে পারে।[25]

পুরস্কার

  • ১৯৮৬ সালে সে “অগাস্টা আদা লাভলেক পুরস্কার পায়।[26]
  • ২০০৩ সালে সে “নাসা এক্সসেপশনাল স্পেইস একট এওয়ার্ড” পায়। যার সাথে ৩৭,২০০ মার্কিন ডলার ছিল যেটি নাসার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঙ্কের পুরস্কার কোন ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে।[27][28][29]
  • ২০০৯ সালে সে ইরহালম কলেজের অসাধারণ প্রাক্তন ছাত্রী পুরস্কার পায়।
  • ২০১৬ সালে সে “প্রেসিডেন্টাল মেডেল অব ফ্রিডম” পুরস্কার পায় যেটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা।[30][31]

ব্যক্তিগত জীবন

তার স্বামী জেমস কক্স হ্যামিল্টনের সাথে ইয়ারহলম কলেজে থাকতে পরিচয় হয়। তারা ১৯৫০ এর দশকে বিয়ে করে হেফিল্ড তার স্নাতক শেষ করার পর। তাদের একটি মেয়ে আছে নাম লরেন, যে বিয়ে করে বিলিয়নিয়ার, অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য পরিকল্পনাকারী জেমস কক্স চেম্বারকে। মার্গারেট হ্যামিল্টন এবং জেমস হ্যামিল্টনের পরবর্তীতে বিচ্ছেদ ঘটে।[32]

প্রকাশনা

  • M. Hamilton (1994), "Inside Development Before the Fact," cover story, Special Editorial Supplement, 8ES-24ES. Electronic Design, Apr. 1994.
  • M. Hamilton (1994), "001: A Full Life Cycle Systems Engineering and Software Development Environment," cover story, Special Editorial Supplement, 22ES-30ES. Electronic Design, Jun. 1994.
  • M. Hamilton, Hackler, W. R.. (2004), Deeply Integrated Guidance Navigation Unit (DI-GNU) Common Software Architecture Principles (revised dec-29-04), DAAAE30-02-D-1020 and DAAB07-98-D-H502/0180, Picatinny Arsenal, NJ, 2003-2004.
  • M. Hamilton and W. R. Hackler (2007), "Universal Systems Language for Preventative Systems Engineering," Proc. 5th Ann. Conf. Systems Eng. Res. (CSER), Stevens Institute of Technology, Mar. 2007, paper #36.
  • M. Hamilton and W. R. Hackler (2007), "A Formal Universal Systems Semantics for SysML", 17th Annual International Symposium, INCOSE 2007, San Diego, CA, Jun. 2007.
  • M. Hamilton and W. R. Hackler (2008), "Universal Systems Language: Lessons Learned from Apollo", IEEE Computer, Dec. 2008.

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.