মাতৃকা
হিন্দু শাক্তধর্মে মহাশক্তির কয়েকটি বিশেষরূপ / From Wikipedia, the free encyclopedia
হিন্দু শাক্তধর্মে মহাশক্তির কয়েকটি বিশেষরূপকে একত্রে মাতৃকা (সংস্কৃত: मातृका, আইএএসটি: mātṝkā) নামে অভিহিত করা হয়।[2] এঁদের মাতরঃ (সংস্কৃত: मातरः) বা মাতৃ (সংস্কৃত: मातृ) নামেও অভিহিত করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। সংখ্যায় সাত হওয়ার দরুন এঁদের সপ্তমাতৃকা (সংস্কৃত: सप्तमातृका) নামেও অভিহিত করা হয়। এঁরা হলেন: ব্রহ্মাণী, বৈষ্ণবী, মাহেশ্বরী, ইন্দ্রাণী, গঙ্গা, লক্ষ্মী, স্বরসতী, কৌষিকী, গণেশজননী, স্বন্দদাত্রী, কৌমারী, বারাহী ও চামুণ্ডেশ্বরী, কামেশ্বরী, ক্যাতায়ণী, শিবানী, চণ্ডী, মনসা, রাধা, ভুবনেশ্বরী, শূদ্রাণী, ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যা, ছিন্নমস্তা, চন্দ্রঘণ্টা, শৈলকন্যা, মহাকালী, তারা, শাক্তা, দূর্গা, ঈশ্বরী/ভগবতী, মাতঙ্গী, ভৌরবী, স্বরসতী, ভীষ্মা, কালরাত্রি, নৃসিংহী ও হয়গ্ৰীবা,সীতা। তবে কোনো কোনো মতে, মাতৃকাগণ সংখ্যায় আট এবং তারা অষ্টমাতৃকা (সংস্কৃত: अष्टमातृका) নামে পরিচিত। মাতৃকাগণ দক্ষিণ ভারতে সপ্তমাতৃকার রূপে এবং নেপালে অষ্টমাতৃকার রূপে পূজিতা হয়ে থাকেন।[3]
হিন্দুধর্মের শাক্তশাখা তান্ত্রিক ধর্মে মাতৃকাগণের গুরুত্ব সর্বোচ্চ।[4] শাক্তধর্মে তারা "অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধকালে মহাশক্তির সহকারিণী রূপে বর্ণিত হন।"." [5] কোনো কোনো পণ্ডিত তাঁদের শৈব দেবী মনে করেন।[6] যুদ্ধদেবতা স্কন্দের পূজার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বিদ্যমান।[7]
প্রথম দিকের বর্ণনায় মাতৃকাদের অমঙ্গলকর ও বিপজ্জনক দেবী বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীকালের পুরাণগুলিতে তাঁদের রক্ষাকর্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। তবে এই সকল বর্ণনাতেও তাঁদের কয়েকজন অমঙ্গলকর এবং ভয়ানকই রয়ে যান।[8] এইভাবে "তাঁরা প্রকৃতির সৃষ্টিকারিণী এবং ধ্বংসকারিণী উভয় রূপেরই প্রতীক হয়ে ওঠেন।"[9]
খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত বৃহৎ-সংহিতায় বরাহমিহির লিখেছেন, “[বিভিন্ন পুরুষ] দেবতার নামানুসারে এবং তাঁদের গুণ অনুযায়ী মাতৃকাগণের সৃষ্টি।” [10] তারা এই সকল পুরুষ দেবতার স্ত্রী অথবা শক্তি হিসেবে পরিচিত।[9] মনে করা হয়, মাতৃকাগণ প্রকৃতপক্ষে সপ্তকন্যা নামক নক্ষত্রমণ্ডলীর সাতটি নক্ষত্রের মূর্তিরূপ। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী নাগাদ তারা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন এবং নবম শতাব্দী থেকে বিভিন্ন দেবী মন্দিরের সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হন।[11]