Loading AI tools
ডাচ গুপ্তচর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মাতা হারি আসল নাম মার্গারেটা গিরট্রুইডা (গ্রিইৎজ) জেলে (৭ আগস্ট, ১৮৭৬, লিউয়ারডেন, নেদারল্যান্ড – ১৫ অক্টোবর, ১৯১৭, ভিন্সেনেস, ফ্রান্স) একজন ওলন্দাজ নর্তকী। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ফ্রান্সের একটি সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।[1]
মাতা হারি | |
---|---|
জন্ম | মার্গারেটা গিরট্রুইডা (গ্রিইৎজ) জেলে ৭ আগস্ট ১৮৭৬ লিউয়ার্ডেন, নেদারল্যান্ডস |
মৃত্যু | ১৫ অক্টোবর ১৯১৭ ৪১) | (বয়স
মৃত্যুর কারণ | ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদন্ড |
জাতীয়তা | ডাচ |
পরিচিতির কারণ | প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ফ্রান্সের একটি সামরিক আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত। |
উচ্চতা | ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মি) |
দাম্পত্য সঙ্গী | রুডলফ জন ম্যাকলিওড (তালাকপ্রাপ্ত) |
সন্তান | ২ |
পিতা-মাতা | অ্যাডাম জেলে Antje van der Meulen |
মার্গারিটা জেলে নেদারল্যান্ডসের ফ্রায়সল্যান্ড প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন।[2] তার পিতার নাম এডাম জেলে মাতার নাম এন্টজে ভ্যান ডার মুলেন। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।[3] তার পিতা এডামের একটি টুপির দোকান ছিল। পরবর্তীতে তিনি তেল শিল্পে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে যথেষ্ট সম্পদশালী হন। প্রচুর অর্থবিত্ত থাকায় মার্গারিটা তার শৈশবে বেশ বিলাসী জীবনযাপন করেন। ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি খুব ব্যয়বহুল স্কুলে লেখাপড়া করেন।[4][5]
এর কিছুদিন পরেই ১৮৮৯ সালে মার্গারিটার পিতা দেউলিয়া হয়ে যান, তার পিতামাতার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এবং ১৮৯১ সালে তার মাতা মারা যান।[4] ৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৩ সালে তার বাবা সুসান্না ক্যাথারিনাকে বিয়ে করেন। তবে তাদের কোন সন্তান ছিল না। এরপর মার্গারিটা তার পিতামহের সাথে বসবাস করতে শুরু করেন। একই সাথে একজন শিশু শিক্ষিকা হাবর জন্য পড়াশুনা শুরু করেন। উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় তার পিতামহ তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নেন।[4][6] কিছুদিন পর সেখান থেকে পালিয়ে তিনি হেগ শহরে তার চাচার বাড়িতে চলে যান।[6]
মার্গারিটার যখন ১৮ বছর বয়স, তখন ডাচ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে একজন সামরিক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রুডলফ ম্যাকলেওডকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ উপনিবেশে (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া) বসবাস শুরু করেন। ১১ জুলাই ১৮৯৫ সালে আমাস্টারডামে তাদের বিয়ে হয়। ক্যাপ্টেন রুডলফকে বিয়ে করার সুবাদে তিনি তৎকালীন ডাচ সমাজের অভিজাত শ্রেণিতে প্রবেশ করার সুযোগ পান।
বিয়ের পর তারা পূর্ব জাভা দ্বীপের মালাঙে চলে যান। সেখানে তাদের দুই সন্তান, নরম্যান-জন ম্যাকলিওড (৩০ জানুয়ারি ১৮৯৭) এবং লুই জেনে ম্যাকলিওড (২ মে ১৮৯৮) জন্ম নেয়।
তাদের বিয়ে সুখের ছিল না।[7] ম্যাকলিওড মদ্যপ ছিলেন। তিনি মার্গারিটার চেয়ে ২০ বছরের বড় ছিলেন। ক্যাপ্টেন ম্যাকলিওড প্রায়ই তার স্ত্রীকে প্রহার করতেন। তার ধারণা ছিল মারগারিটার কারণেই সামরিক বাহিনীতে তার পদোন্নতি হচ্ছে না। তার একজন প্রকাশ্য রক্ষিতাও ছিল। তৎকালীন ডাচ ইস্ট ইন্ডিজে একজন রক্ষিতার সাথে সম্পর্ক রাখা ছিল একটি সাধারণ ব্যাপার। জেলে তাকে সাময়িকভাবে ত্যাগ করে ভ্যান রিড নামে অপর একজন সামরিক অফিসারের কাছে চলে যান। মার্গারিটা কয়েকমাস ধরে নিবিড়ভাবে ইন্দোনেশিয়ান রীতিনীতি শেখেন এবং একটি নাচের কোম্পানিতে যোগদান করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি “মাতা হারি” (মালয় ভাষায় যার অর্থ সূর্য বা দিনের চক্ষু) নাম নেন।[4]
১৯০৩ সালে জেলে প্যারিসে আসেন, সেখানে একটি সার্কাসে তিনি লেডি ম্যাকলিওড নামে ঘোড়শওয়ার হিসেবে কাজ করেন। ১৯০৫ সালের মধ্যে তিনি বিদেশী নর্তকী হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। যৌনতা ও শরীর প্রদর্শনের মাধ্যমে মাতা হারি খুব দ্রুত দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।[8] তিনি নিজেকে জাভার এক রাজকুমারী হিসাবে জাহির করতেন। নাচের মঞ্চে তার সাহসী খোলামেলা উপস্থাপনা ছিল দর্শক আকর্ষণ করার হাতিয়ার। মাতা হারির নৃত্য উপস্থাপনার সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় অংশটি ছিল নৃত্যরত অবস্থায় ক্রমে শরীরের সমস্ত বস্ত্র বিসর্জন দেয়া। নাচের শেষে শুধুমাত্র একটি বক্ষবন্ধনি এবং হাতে ও মাথায় কিছু অলংকার অবশিষ্ট থাকত।[4] বক্ষবন্ধনি ছাড়া তাকে খুব কমই দেখা যেত কারণ তিনি তার সংক্ষিপ্ত স্তনযুগল নিয়ে খুব সচেতন ছিলেন।[6]
১৯১০ সালের মধ্যে অসংখ্য নৃত্যশিল্পী মাতা হারিকে অনুকরণ করা শুরু করে। সমালোচকরা বলতেন তার এই সাফল্য শুধুমাত্র দেহ প্রদর্শনের মাধ্যমে এসেছে। কোনরকম শৈল্পিকতার উপস্থিতি সেখানে নেই। যদিও মাতা হারি সমগ্র ইউরোপ জুড়েই অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন তথাপি, কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন মাতা হারি প্রকৃত অর্থে নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন না বলে মনে করত এবং তার সাথে কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে উৎসাহী ছিল না।[4]
১৯১২ সালের পর মাতা হারির ক্যারিয়ারের ভাঙন শুরু হয়।
১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭, মাতা হারিকে Elysée Palace নামে একটি হোটেল কক্ষ থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২৪ জুলাই গুপ্তচর বৃ্ত্তির দায়ে তার বিচার শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল গোপন সংবাদ পাচারের মাধ্যমে ৫০,০০০ ফরাসি সৈন্যকে হত্যার ঘটনায় জার্মানিকে সহায়তা করা। ধারণা করা হয় তার হোটেল কক্ষে অদৃশ্য কালি পাওয়া গিয়েছিল যা পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে সাহায্য করে। মাতা হারি দাবি করেছিলেন যে এই কালি ছিল তার মেক আপের সামগ্রী।[9]
১৫ অক্টোবর ১৯১৭ সালে, ৪১ বছর বয়সে গুলি করে তার মৃত্যুদন্ড কার্য়কর করা হয়। ফায়ারিং স্কোয়াডে মাতা হারিকে বেঁধে রাখা হয়নি। এমনকি তিনি চোখ বাঁধতেও রাজি হননি। মৃত্যুর আগে তিনি ফায়ারিং স্কোয়াডের সৈন্যদের দিকে উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে দেন।[10] মাতা হারি নামে অর্থ “ভোরের চোখ”, এক ভোরেই তার মৃত্যু হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.