ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দু এবং এর বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দুর সংযোজক রেখাংশ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জ্যামিতির ভাষায় কোন ত্রিভুজেরমধ্যমা হলো সেই রেখাংশ যা ত্রিভুজটির একটি শীর্ষবিন্দুকে শীর্ষবিন্দুটির বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দুর সাথে যুক্ত করে তথা সেই বাহুটিকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। সোজা কথায়, ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দু এবং এর বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দুর সংযোজক রেখাংশই মধ্যমা। প্রতিটি ত্রিভুজের প্রতিটি শীর্ষবিন্দু থেকে এক একটি করে মোট ঠিক তিনটি মধ্যমা থাকে। এই মধ্যমা তিনটি যে বিন্দুতে পরস্পরকে ছেদ করে তাকে ত্রিভুজটির ভরকেন্দ্র বলা হয়, যেকোন ত্রিভুজের ক্ষেত্রে যা কেবল ত্রিভুজটির ভিতরেই অবস্থান করে, এমনকি ত্রিভুজের বাহুত্রয়ের উপরেও এর অবস্থান অসম্ভব। সে যাই হোক, সমদ্বিবাহু এবং সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রে এর যে কোণের সন্নিহিত বাহুদুটির দৈর্ঘ্য সমান সেই কোণের শীর্ষবিন্দু থেকে অঙ্কিত মধ্যমাটি সেই কোণটিকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। একারণে মধ্যমা দ্বারা সমবাহু ত্রিভুজের তিনটি কোণই সমদ্বিখণ্ডিত হয়; পক্ষান্তরে, সমদ্বিবাহু ত্রিভুজে কেবল একটি কোণ মধ্যমা দ্বারা সমদ্বিখণ্ডিত হয়।
ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র (centroid) হলো ত্রিভুজটির মধ্যমাত্রয়ের ছেদবিন্দু। অর্থাৎ ত্রিভুজের প্রতিটি মধ্যমা ত্রিভুজটির ভরকেন্দ্র দিয়ে অতিক্রম করে। এখন অসীমভাবে পাতলা সুষম ঘনত্বের ত্রিভুজাকৃতির একটি পাতের যে বিন্দুতে এর সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত আছে বলে বিবেচনা করা যায় সেই বিন্দুটি অর্থাৎ ত্রিভুজাকৃতি পাতটির যে বিন্দুতে বল প্রয়োগ করলে পাতটি কেবল বলের দিকে গতিশীল হবে বা হতে চাইবে সেই বিন্দুটি যাকে বলা হয় বস্তুর ভরকেন্দ্র (center of mass) সেটি ত্রিভুজটির মধ্যমাত্রয়ের ছেদবিন্দু এই ভরকেন্দ্রেই অবস্থান করে।[1] মধ্যমাত্রয়ের এই ছেদবিন্দুতেই ত্রিভুজাকার পাতটি তার ভারসাম্য ধরে রাখে। ত্রিভুজের একটি বাহুর মধ্যবিন্দু থেকে ভরকেন্দ্রটি যতদূরে থাকে ভরকেন্দ্রটি ঐ বাহুর বিপরীত শীর্ষবিন্দু থেকে সেই দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্বে অবস্থান করে। আরেকভাবে বলা যায়, প্রতিটি মধ্যমা ভরকেন্দ্রে ২ঃ১ অনুপাতে অন্তর্বিভক্ত হয়।
ত্রিভুজের প্রতিটি মধ্যমা ত্রিভুজটিকে সমান দুটি ক্ষেত্রে বিভক্ত করে। একারণে সুষম ঘনত্বের ত্রিভুজাকার পাতের ভারসাম্য এর মধ্যমাগুলোতেও বজায় থাকে। মধ্যমা ব্যতীত আর যেসব রেখা ত্রিভুজকে সমদ্বিখণ্ডিত করে সেগুলো এই ভরকেন্দ্র দিয়ে গমন করে না।[2][3] ত্রিভুজের মধ্যমা তিনটি ত্রিভুজটিকে সমান ক্ষেত্রফলযুক্ত মোট ছয়টি ক্ষুদ্র ত্রিভুজে বিভক্ত করে।
মধ্যমার দ্বারা সমান ক্ষেত্রফলে বিভাজিত হওয়ার ধর্মের প্রমাণ
ধরাযাক ABC একটি ত্রিভুজ যেখানে D, E এবং F যথাক্রমে , এবং বাহুর মধ্যবিন্দু এবং O হলো ভরকেন্দ্র ( একে সচরাচর G দ্বারা সূচিত করা হয়।)
সংজ্ঞানুসারে, । এই কারণে, এবং । এখানে এর দ্বারা ত্রিভুজ এর ক্ষেত্রফল নির্দেশ করা হয়েছে। এখানে প্রত্যেকটি জোড়ার ক্ষেত্রে ত্রিভুজগুলোর ভূমি এবং উচ্চতা একই হওয়ার এরা পরস্পর সমান হয়েছে।
এখন আমার পাব:
সুতরাং, এবং
এখন যেহেতু
তাই
হবে
একই পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখানো যায় যে,
তিনটি সর্বসম ত্রিভুজ
২০১৪ সালে লি স্যালোস এই উপপাদ্যটি আবিষ্কার করেন:[4]
ত্রিভুজের মধ্যমাগুলো ত্রিভুজটিকে উপরে দেওয়া চিত্রের মতো ছয়টি সমান ক্ষেত্রফলযুক্ত ক্ষুদ্র ত্রিভুজে বিভক্ত করলে এবং ত্রিভুজের তিনটি সন্নিহিত যুগল D, E এবং F মিলিত হলে এখন যদি এই যুগল তিনটির প্রতিটির ক্ষেত্রে যুগলে থাকা ত্রিভুজ দুটিকে তাদের সাধারণ মধ্যবিন্দুর সাপেক্ষে আবর্তন করানো হয় এবং এরা একটি সাধারণ বাহুতে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এই আবর্তন চলতে থাকে তাহলে প্রতিটি যুগলের সমন্বয়ে যে নতুন তিনটি ত্রিভুজ পাওয়া যাবে সেগুলো সর্বসম হবে।
কোন ত্রিভুজের বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য এবং হলে এবং এই বাহুগুলোর মধ্যবিন্দু থেকে অঙ্কিত মধ্যমাগুলো যথাক্রমে এবং হলে অ্যাপোলোনিয়াসের উপপাদ্য অনুসারে মধ্যমাগুলোর দৈর্ঘ্য হবে:
এই সূত্রগুলো থেকে নিচের সম্পর্কগুলো পাওয়া যাবে:[5]
ধরাযাক ABC ত্রিভুজে G হলো ভরকেন্দ্র। D, E এবং F হলো যথাক্রমে BC, CA এবং AB বাহুর মধ্যবিন্দু। ABC ত্রিভুজ যে তলে অবস্থিত সেই তলে বিদ্যমান যেকোন একটি বিন্দু P। তাহলে আমরা পাব:[6]
ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র প্রতিটি মধ্যমাকে ২ঃ১ অনুপাতে অন্তর্বিভক্ত করে। একটি বাহুর মধ্যবিন্দু থেকে ভরকেন্দ্রটি যতদূরে থাকে ঐ বাহুর বিপরীত শীর্ষবিন্দু থেকে ভরকেন্দ্রটি সেই দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্বে অবস্থান করে।
কোন ত্রিভুজের বাহু তিনটি এবং মধ্যমা তিনটি হলে আমরা পাব[7]
এবং দৈর্ঘ্যের বাহুদুটির মধ্যবর্তী মধ্যমাটি লম্ব হবে যদি এবং কেবল যদি হয়।[8]
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে যদি ত্রিভুজটির অতিভুজ হয় এবং অতিভুজের উপর অঙ্কিত মধ্যমাটি হয় তাহলে হবে।
যদি এবং মধ্যমাযুক্ত ত্রিভুজের ক্ষেত্রে কে দ্বারা সূচিত করা হয় তাহলে ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল T কে নিম্নোক্ত সূত্রানুসারে পাওয়া যাবে[9]—
চতুষ্তলক হলো এমন একটি ত্রিমাত্রিক বস্তু যার চারটি ত্রিভুজাকার পৃষ্ঠতল বিদ্যমান। চতুষ্তলকের একটি শীর্ষবিন্দুর সাথে এই শীর্ষবিন্দুর বিপরীত দিকে বিদ্যমান ত্রিভুজাকার পৃষ্ঠতলটির ভরকেন্দ্রের সংযোজক রেখাংশটিকে চতুষ্তলকটির একটি মধ্যমা বলা হয়। একটি চতুষ্তলকে চারটি মধ্যমা থাকে এবং এদের প্রতিটিই চতুষ্তলকের ভরকেন্দ্রসমবিন্দুগামী হয়।[10] দ্বিমাত্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে চতুষ্তলকের ভরকেন্দ্রটি হবে সেই বিন্দু যেখানে বল প্রয়োগ করলে কাঠামোটি বলের দিকে গতিশীল হবে বা হতে চাইবে অর্থাৎ এক্ষেত্রে ভরকেন্দ্রটি center of mass এর ভূমিকা পালন করবে। সে যাই হোক, দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রের বিপরীতে চতুষ্তলকের ভরকেন্দ্রটি মধ্যমাগুলোকে ২ঃ১ অনুপাতে বিভক্ত না করে বরং ৩ঃ১ অনুপাতে বিভক্ত করে (কমান্ডিনোর উপপাদ্য)।
Weisstein, Eric W. (২০১০)। CRC Concise Encyclopedia of Mathematics, Second Edition। CRC Press। পৃষ্ঠা375–377। আইএসবিএন9781420035223।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Déplanche, Y. (১৯৯৬)। Diccio fórmulas। Medianas de un triángulo। Edunsa। পৃষ্ঠা22। আইএসবিএন978-84-7747-119-6। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৪-২৪।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)