Loading AI tools
ভারতের নাগরিকদের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মৌলিক অধিকার, রাজ্য পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি ও মৌলিক কর্তব্য ভারতীয় সংবিধানের তিনটি অংশ। এই তিনটি অংশে নাগরিকদের প্রতি রাজ্যের[lower-alpha 1] মৌলিক দায়দায়িত্ব এবং রাজ্যের প্রতি নাগরিকদের কর্তব্যগুলির বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই অংশগুলি সরকারি নীতিনির্ধারণ ও নাগরিকদের আচার-আচরণের ক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক অধিকার পত্রের ভূমিকা পালন করে। এই অংশ তিনটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে গণপরিষদে রচিত মূল সংবিধানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অংশ বলে বিবেচিত হয়।
মৌলিক অধিকার হল সকল নাগরিকের মানবাধিকারের মূলভিত্তি। সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে বর্ণিত এই অধিকারগুলি জাতি, জন্মস্থান, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সমভাবে প্রযোজ্য। এই অধিকারগুলি আদালতে বিচারযোগ্য। তবে এগুলির উপর কিছু নির্দিষ্ট বিধিনিষেধও আরোপ করা যায়।
রাজ্য পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি হল সরকার কর্তৃক আইন প্রণয়নের নীতি-সংক্রান্ত নির্দেশিকা। সংবিধানের চতুর্থ খণ্ডে বর্ণিত এই নীতিগুলি আদালতে বিচারযোগ্য নয়। তবে আশা করা হয়, সরকার পরিচালনার মৌলিক নির্দেশিকার যে আদর্শগুলির উপর এই নীতিগুলি প্রতিষ্ঠিত, আইনের রূপদান ও প্রণয়নের সময় সরকার সেগুলি মেনে চলবে।
মৌলিক কর্তব্য হল সকল নাগরিকের নৈতিক দায়দায়িত্ব। এগুলির উদ্দেশ্য, দেশের জনগণের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগরিত করা এবং দেশের ঐক্য রক্ষা করা। সংবিধানের চতুর্থ-ক খণ্ডে বর্ণিত এই কর্তব্যগুলি দেশের প্রতিটি ব্যক্তি ও জাতির প্রতি প্রযোজ্য। নির্দেশাত্মক নীতিগুলির মতোই এগুলিও আদালতে বিচারযোগ্য নয়।
ভারতীয় সংবিধানে সাংবিধানিক অধিকারগুলি অন্তর্ভুক্তির অনুপ্রেরণা ইংল্যান্ডের বিল অফ রাইটস, মার্কিন যুক্তরাজ্যের বিল অফ রাইটস, ফ্রান্সের মানব ও নাগরিক অধিকারসমূহের ঘোষণাপত্রের মতো আদর্শস্থানীয় ঐতিহাসিক দলিলগুলি।[1]
১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক রাওলাট আইন জারি করে। এই আইন মোতাবেক পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় খানাতল্লাশি, বাজেয়াপ্তকরণ, গ্রেফতার ও আটকের অধিকার দান করা হয়; সভাসমিতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়; এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়। এই আইনের প্রতিবাদে ১৯২০-এর দশকে ভারতে একটি গণআন্দোলন সূচিত হয়। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২৮ সালে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের একটি সর্বদলীয় সম্মেলনে ভারতের জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব রাখে। এরপর মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন এগারো সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি ভারতীয় সংবিধানের একটি আনুষ্ঠানিক রূপরেখা তুলে ধরে। ভারতের জন্য অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস এবং সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির পাশাপাশি এই কমিটি মৌলিক অধিকারের রক্ষাকবচ, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারি ক্ষমতার সীমাবদ্ধকরণেরও দাবি জানায়।
১৯৩১ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের করাচি অধিবেশনে মৌলিক নাগরিক অধিকারের সংজ্ঞা ও এই অধিকার রক্ষার সপক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করে। অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ন্যূনতম মজুরির মতো আর্থ-সামাজিক অধিকার এবং অস্পৃশ্যতা ও ভূমিদাসপ্রথা বিলোপের প্রস্তাবনাও।[2][3] ১৯৩৬ সালে সমাজতন্ত্রের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ সোভিয়েত সংবিধানে কথিত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ধারণাটির উদাহরণ গ্রহণ করে। এই অধিকার সেদেশে সমষ্টিগত দেশাত্মবোধ জাগরণের একটি পন্থা হিসেবে ব্যবহৃত হত।
স্বাধীন ভারতে সংবিধান রচনার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত ভারতের গণপরিষদের উপর। গণপরিষদ ভীমরাও রামজি আম্বেডকরের নেতৃত্বে একটি সংবিধান খসড়া কমিটি গঠন করে। সংবিধান রচনার কাজ চলাকালীন ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজ্যসংঘ সাধারণ সভা বিশ্ব মানবাধিকার সনদটি ঘোষণা করে। এই ঘোষণাপত্রে সকল সদস্য রাজ্যকে নিজ নিজ সংবিধানে উক্ত অধিকারগুলি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে সংবিধানের চূড়ান্ত খসড়ায় মৌলিক কর্তব্য ও নির্দেশাত্মক নীতিগুলি সংযোজিত হয়; অন্যদিকে ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২তম সংশোধনী আইন বলে মৌলিক কর্তব্যগুলি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়।[4] মৌলিক অধিকার, নির্দেশাত্মক নীতি ও মৌলিক কর্তব্যগুলিতে সংশোধন আনতে হলে ভারতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব আনতে হয় এবং এই প্রস্তাবকে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হয়।
ভারতের মৌলিক অধিকার ভারতের প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, সবরকম অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটানো। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সমতার আদর্শ ঘোষিত হয়েছে। প্রস্তাবনায় সমমর্যাদা ও সমান সুযোগের নীতি স্বীকৃতি পেয়েছে। এই অধিকার অনুযায়ী ভারতের রাজ্যক্ষেত্রের মধ্যে কোন ব্যক্তিকে আইনের দৃষ্টিতে সমতা অথবা আইনের দ্বারা সমানভাবে সংরক্ষিত হবার অধিকার অস্বীকার করবে না।
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগে সর্বজনের সুযোগ থাকবে।
ভারতের সংবিধানে তৃতীয় ভাগের ১২ থেকে ৩৫ অনুচ্ছেদের মধ্যে মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ রয়েছে। ভারতের মৌলিক অধিকার মোট ৬টি (১৯৭৮ সালে ৪৪ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অংশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, এ অধিকার এখন বিধিবদ্ধ অধিকার হিসেবে রয়েছে)।Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.