Loading AI tools
ছাগলের প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বা বাংলার কালো ছাগল বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু রাজ্যে বসবাসরত ছাগলের একটি প্রজাতি। বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ছাগলটি অন্য জাতের ছাগলের তুলনায় বেশি বাচ্চা প্রসব করে। দুধ তুলনামূলকভাবে কম উৎপাদন করে এবং উচ্চতার দিক থেকে সাধারণত খাটো হয়। বিশ্ববাজারে এর চামড়া এবং মাংস খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ৷
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল | |
---|---|
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
পর্ব: | কর্ডাটা (Chordata) |
শ্রেণি: | স্তন্যপায়ী (ম্যামেলিয়া) |
বর্গ: | আর্টিওড্যাকটিলা (Artiodactyla) |
পরিবার: | বোভিডি (Bovidae) |
উপপরিবার: | Caprinae |
গোত্র: | Caprini |
গণ: | Capra |
প্রজাতি: | ক. aegagrus |
উপপ্রজাতি: | ক. a. hircus |
ত্রিপদী নাম | |
ক্যাপ্রা aegagrus hircus |
ব্ল্যাক বেঙ্গল বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ওড়িশা অঞ্চলের পাওয়া ছাগলের একটি জাত। [1] ছাগলের প্রজাতিটির অধিকাংশ কালো হলেও বাদামী, ধূসর এবং সাদা বর্ণের ছাগলও রয়েছে।[2] এদের আকার খাটো হলেও এদের লোম নরম এবং মসৃণ। এদের শিং ছোট এবং পা খাটো। পিট সমতল হয়ে থাকে। এদের কান ১১-১৪ সেন্টিমিটারের মধ্যে হয় এবং সামনের দিকে সুচালো থাকে । পুরুষ ছাগল ২৫-৩০ কেজির মতো ওজনের অধিকারী হয়, যেখানে মাদী (নারী) ছাগলের ওজন ২০-২৫ কেজি। প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলের উচ্চতা ৫০ সেন্টিমিটারের মতো হয়। সাধারণত উভলিঙ্গের ছাগলেরই দাঁড়ি গজায়। [3] দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কম হলেও কম পরিমাণের খাদ্য চাহিদা এবং বেশি পরিমাণে বাচ্চা উৎপাদনের কারণে বাংলাদেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বেশ চাহিদা রয়েছে। এদের শরীরের কাঠামো শক্তপোক্ত এবং পেশিবহুল। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল দুধ উৎপাদন এবং দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-ওজনের দিক থেকে অন্যসব জাতের ছাগলের চেয়ে পিছিয়ে। [4]
আফ্রিকার মাসাই ছাগল, ভারতের যমুনাপাড়ি ছাগল এবং চীনা জাতের ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গলের তুলনায় বেশি পরিমাণে দুধ ও মাংস উৎপাদন ৪০-৬০% এর বেশি উৎপাদন করতে পারলেও ২০-৩৫ শতাংশ ছাগল জন্মের সময় মারা যায়, যেখানে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মৃত্যুর হার মাত্র ৫-১০ শতাংশ। তাই এর প্রজনন বেশি ঘটে এবং এই কারণেই বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতির ছাগলকে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতার বিচারে সেরা হিসেবে নির্বাচিত করেন। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ১৪ মাসে দুইবার বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রতিবার ১-৩টি[5] করে বাচ্চা দিতে পারে। [4][6]
পরিষ্কার, দুর্গন্ধমুক্ত, উষ্ণ, বায়ু এবং আলো প্রবেশ করে এমন স্থান ছাগল পছন্দ করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যেমন– গোবরযুক্ত, স্যাঁত স্যাঁতে, বদ্ধ, অন্ধকার ও গন্ধময় পরিবেশে ছাগল রাখলে ছাগল অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলের জন্য ৮-১০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন এবং প্রতিটি উঠতি বয়সের ছাগলের জন্য ৫ বর্গ ফুট জায়গার দরকার হয় ।[7]
ফলপ্রসূ উৎপাদনের জন্য সঠিক পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। কাক্সিক্ষত লাভ পাওয়ার জন্য ছাগলকে দুই ধরনের খাদ্য সরবরাহ করা উচিত; যেমন- আঁশযুক্ত বা আঁশজাতীয় খাদ্য ও দানাদার খাদ্য।
ক. আঁশযুক্ত খাদ্য: গ্রামাঞ্চলে সাধারণত মুক্ত চারণ পদ্ধতির মাধ্যমে ছাগল পালন করা হয়। কাজেই আঁশজাতীয় খাবার সরবরাহের প্রয়োজন হয় না। কারণ, চড়ে খাওয়ার সময় ছাগল দিনভর তার নিজের পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী আঁশজাতীয় রকমারি খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। তবে মুক্তচারণ পদ্ধতি সব সময় কাজে লাগানো যায় না। এজন্য বিশেষ সময় পরিকল্পিতভাবে খামারিদের আঁশযুক্ত খাবার অবশ্যই সরবরাহ করতে হবে।
শস্য মৌসুমে যখন ক্ষেতে ফসল থাকে তখন মুক্ত চারণের ফলে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ থেকে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। কাজেই, এ সময় ছাগলকে মাঠে বা রাস্তার ধারে বেঁধে চড়ানো উচিত। তবে বেঁধে চরালে ছাগল প্রয়োজন অনুযায়ী আঁশযুক্ত খাবার পায় না। তাই এ সময় ছাগলকে পরিকল্পিত মাত্রা অনুযায়ী আঁশযুক্ত খাবার সরবরাহ করতে হবে।
বর্ষা মৌসুমে ছাগলকে পুরোপুরি আবদ্ধ অবস্থায় পালন করতে হয়। এ সময়ে অবশ্যই আঁশযুক্ত খাবার হিসেবে বিভিন্ন গাছের পাতা ও সবুজ ঘাস দেয়া যেতে পারে। শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ যে সময়ে ক্ষেতে ফসল থাকে সে সময়ে ৫০ ভাগ গাছের পাতার সাথে ৫০ ভাগ সবুজ ঘাস সরবরাহ করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যাবে। ক্ষুদ্র খামারিরা বাড়ির আঙিনা, জমির আইল ও রাস্তার পাশে নেপিয়ার, আলফালফা, শিম, ইপিল ইপিল, কাঁঠালপাতা এসবের চারা রোপণ করতে পারেন। এ থেকে সারা বছর আঁশযুক্ত খাবার সংগ্রহ করা সহজ হবে।
খ. দানাদার খাদ্য : শুধু আঁশযুক্ত খাবার ছাগলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটাতে পারে না। আশানুরূপ উৎপাদন পেতে হলে আঁশযুক্ত খাবারের সাথে দানাদার খাবার অবশ্যই সরবরাহ করা প্রয়োজন। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট হারে দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ ব্যবহার করলে ছাগল থেকে ভালো উৎপাদন-ফলাফল পাওয়া সম্ভব। খাবার যাই-ই প্রয়োজন হোক না কেন যে কোনো দানাদার খাদ্যের মিশ্রণে শতকরা হারে হবে চাল-ভুট্টা-গমের ভুষি ৪৫ ভাগ, চালের কুঁড়া ২০ ভাগ, খেসারি ভাঙা ১৮ ভাগ, তিলের খৈল ১৬ ভাগ, লবণ ০.৯ ভাগ, এমবাভিট ০.১ ভাগসহ যেন মোট ১০০ ভাগ হয়। লক্ষ রাখতে হবে যাতে এ খাবারের মিশ্রণে শতকরা ১৬ ভাগ অপরিশোধিত আমিষ থাকে। তা না হলে সেটাকে সুষম খাবার বলা যাবে না। দানাদার খাদ্যের মধ্যে চালের ক্ষুদ-কুঁড়া, গম ও ভুট্টা চূর্ণ, গমের ভুষি, ছোলা-খেসারি ভাঙা, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, ভিটামিন, শুঁটকির গুঁড়া ও খনিজ লবণ, আয়োডিনযুক্ত লবণ এগুলো মাত্রা ও অনুপাত অনুযায়ী খাওয়ালে লাভ বেশি হবে।
খাওয়ানো পদ্ধতি : পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার সুবিধামতো সময়ে দিনে দুই বা ততোধিক বারে সরবরাহ করলেই চলবে। আর দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতি ছাগীকে প্রতিদিন ১৬০ গ্রাম অর্ধেক করে সকালে ৮০ গ্রাম এবং বিকালে ৮০ গ্রাম খাওয়াতে হবে এবং তিন মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ছাগলের বাচ্চাকে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম (৫০ গ্রাম সকালে ও ৫০ গ্রাম বিকালে) সরবরাহ করতে হবে।
ছাগল থেকে কাঙ্খিত উৎপাদন পেতে হলে খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। সব সময় বয়স অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। ছাগলের খাদ্য তালিকায় স্টাটার খাদ্য, বাড়ন্ত খাদ্য এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগলের খাদ্য এ তিন ধরনের খাদ্য মাত্রা নিশ্চিত করতে হবে বয়স অনুযায়ী। ১ দিন থেকে ৩ মাস, ৩ মাস থেকে ১ বছর এবং ১ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য তিন ধরনের খাদ্য সরবরাহ দিতে হবে।
পানি : পানির অপর নাম জীবন। আরও ভালোভাবে বলা দরকার বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। পানি সব প্রাণীর মতো ছাগলের জন্যও পরিমিত পরিমাণে সরবরাহ থাকা দরকার। খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন বিশুদ্ধ হয়। সে জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ছাগল পালন ঘরের খুব কাছেই যেন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রোগের কারণঃ PPR ছাগলের একটি মারাত্মক জীবনঘাতি রোগ।
PPR রোগের লক্ষণঃ
১. সাধারণত PPR রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৩-৬ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
২. শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় এবং ১০৫°-১০৭°F হয়ে থাকে।
৩. ছাগলের নাক,মুখ ও দিয়ে প্রথমে পাতলা তরল পদার্থ বের হয়। পরবর্তীতে তা ঘা ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে ধীরে ধীরে তা শুকিয়ে যায় এবং নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৪. অসুস্থ পশুটির চোখেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ছাগলের চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে।
৫. PPR আক্রান্ত ছাগল অসুস্থ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।
৬. অল্প বয়স্ক ছাগল এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়
৭. মুখের চারদিকে ও দাঁতের গোড়ায় ক্ষত সৃষ্টি হয়।
৮. গর্ভবতী ছাগলের অকাল গর্ভপাত হতে পারে।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ
১. এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে অসুস্থ ছাগলের সুস্থ ছাগল থেকে আলাদা করতে হবে।
২. সুস্থ ছাগল কে PPR ভ্যাকসিন ১ মি,লি করে চামড়ার নিচে বছরে ১বার করে দিতে হবে।
৩. PPR রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী রোধ করে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।
৪. ছাগল মারা গেলে মাটিতে ৮ ফুট গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল মাংস এবং চামড়ার জন্য বিখ্যাত। বিশ্ববাজারে এই প্রজাতির ছাগলের চামড়া কুমিল্লা গ্রেড নামে পরিচিত। অধ্যাপক সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন ২০ বছর গবেষণা করে বলেছেন," ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংসের স্বাদ অন্যসকল জাতের তুলনায় ভাল,তাই বিশ্ববাজারে এর চাহিদা অনেক। বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের চামড়াজাত পণ্য তৈরির জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়া ব্যবহার করে। [4]
ছাগল পালন প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ বেশ সফলতা দেখিয়েছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহায়তায় ২০০৮ সালে মাচায় ছাগল পালনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং ছাগলের মৃত্যুহার কমানোর জন্য ‘লিফট’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ওয়েব ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা ওই প্রকল্পে ছাগলের মৃত্যুহার চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ সময় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছাগলের সংখ্যাও বেড়েছে ৩০ শতাংশ এবং সারা দেশে উপজেলাপ্রতি ছাগলের সংখ্যা গড়ে ১৭১ শতাংশ বেড়েছে। সাধারণত মূত্র পায়ে লেগেই ছাগলের খুরা রোগ হয় এবং জীবনের ঝুঁকি বাড়ে। মাচা পদ্ধতিতে মূত্র নিচে পড়ে যাওয়ায় রোগের প্রকোপ কমে যায়।
খুব দ্রুত প্রজননক্ষম হয় বলে এই জাতের মাদী ছাগল বছরে দুই বার গর্ভধারন করতে পারে এবং প্রতিবারে ৩ থেকে ৪টি বাচ্চা প্রসব করে। কম সময়ে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে বলে এই জাতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। উচ্চ মানের মাংস ও চামড়ার জন্য এই জাত প্রসিদ্ধ। বাংলাদেশে বেকারত্ব ও দারিদ্র দূরীকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.