ব্যবহারকারী:সুমিত রায়/খেলাঘর
From Wikipedia, the free encyclopedia
২০২২ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য-বিরোধী আন্দোলন
১৩ জানুয়ারি
১৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবাদ) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলে হলের ছাত্রীদের সঙ্গে প্রাধ্যক্ষের অসদাচরণের অভিযোগ এনে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কয়েক শ ছাত্রী অবস্থান নেয় ও বিক্ষোভ শুরু করে।[1] আন্দোলনরত ছাত্রীদের অভিযোগ ছিল, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা কিছু সমস্যার কথা বলতে প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার মুঠোফোনে কল করেন। এ সময় তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এর প্রতিবাদে ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তাঁরা স্লোগান দিয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনের ফটক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে অবস্থান নেয়। এর পর তারা দুই দফা দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। দাবিগুলো ছিল — হলের সব প্রাধ্যক্ষকে পদত্যাগ এবং সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। ছাত্রীদের অভিযোগ, প্রাধ্যক্ষ ও নিরাপত্তাকর্মীদের খারাপ ব্যবহার সহ হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে (যেসব নিয়েই তারা হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল)। ছাত্রীদের অভিযোগ ছিল, ছোট-বড় কোনো সমস্যাতেই প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজা দায়িত্ব নিতে চান না, বরং তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন, কোনো সমস্যা নিয়ে গেলেই তিনি সিট বাতিলের হুমকি দেন। সেই সাথে তিনি পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়েও তিনি ছাত্রীদের হয়রানি করেন বলে ছাত্রীরা দাবি করে।[2] রাত সোয়া ১২টার দিকে শাবিপ্রবির প্রক্টর আলমগীর কবির জানান, ‘আমরা ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাঁদের সমস্যাগুলো জানার চেষ্টা করছি। নিশ্চয়ই ছাত্রীরা হলে ফিরে যাবে।’ সেই সাথে তিনি হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলেও জানান। প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে সিরাজুন্নেসা হলের সহকারী প্রাধ্যক্ষ রাবেয়া তোরা বলেন, এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না, সমস্যাগুলো জানতে তিনি ছাত্রীদের কাছে যাচ্ছেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও জাতীয় ছাত্রদল (এনডিএফ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে যোগ দেয়। রাত সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ছাত্রীদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ জানালে ছাত্রীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারা এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানান, সমস্যা হলের সব ছাত্রীর বলে উপাচার্যকে সবার সামনে এসে কথা বলতে হবে। দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত ছাত্রীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। ঘটনাস্থলে সিলেট নগরের জালালাবাদ থানার বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।[1] পরে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বাসভবনের সামনে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় উপাচার্য শুক্রবার সকালে ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ স্থগিত করে ছাত্রীরা হলে ফিরে যায়।[3]
১৪ জানুয়ারি
১৪ জানুয়ারি (শুক্রবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রীদের পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদল একটি লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করে তিন দফা দাবি তুলে ধরে ও দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। দাবিগুলো হলো - সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, অবিলম্বে হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগ।[2] উত্থাপিত লিখিত অভিযোগগুলোর মধ্যে হলের খাবারের নিম্ন মান ও অধিক মূল্য, খাবার পানির সংকট, ওয়াইফাই সমস্যা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর স্বল্পতা, কাজে চরম অবহেলা সহ বেশ কিছু অভিযোগ ছিল, সেই সাথে হলের ভাড়া কিস্তিতে পরিশোধ; অভিভাবকদের হলের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি প্রদানের দাবিও জানানো হয়।[2] এ সময় শতাধিক ছাত্রী উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে বসে পড়ে। সেখানে অবস্থানরত ছাত্রীরা জানায়, দাবি আদায় না করে তারা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে থেকে সরবে না। দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ওই পাঁচ শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন, এবং দুপুর পৌনে একটা পর্যন্ত আলোচনা চলে।[3] ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে বেলা একটার দিকে উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হয়ে ওই শিক্ষার্থীরা দাবি করে, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। তাঁরা পুনরায় উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া এক ছাত্রী বলেন, উপাচার্য এক মাসের সময় চেয়েছেন ও পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় তিনি এখনই নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে বাইরে এসে এ সিদ্ধান্তের কথা সাধারণ ছাত্রীদের জানানো হলে তাঁরা সেটা প্রত্যাখ্যান করে, এবং জানায় প্রাধ্যক্ষ অপসারণ না হলে ছাত্রীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করবে না। অন্যদিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রীদের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে, তাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, এবং এক মাসের মধ্যে তাঁদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু বামপন্থী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রভাবে ছাত্রীরা আবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে, যা দুঃখজনক।[2] বেলা তিনটা পর্যন্ত উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ চেয়ে তারা স্লোগান দিতে থাকে, ও হলের যাবতীয় সমস্যা দ্রুত দূর করার দাবি জানায়। জাফরিন লিজা বলেন, ছাত্রীরা অতিরঞ্জিতভাবে বিষয়গুলোর বর্ণনা দিচ্ছে। সেই সাথে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের অশোভন আচরণের ঘটনা ঘটেনি, হলে খাবারের মান ও থাকার পরিবেশও খুব ভালো।[2]
বিকেল চারটার দিকে আন্দোলনরত ছাত্রীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরদিন ১৫ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করে ও সংবাদ সম্মেলন বলে, এই সময়সীমার মধ্যে তাদের তিন দফা দাবি মানতে হবে, না হলে হলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে ও পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।[4][5] ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিরাজুন্নেসা হলের বর্তমান সহকারী প্রাধ্যক্ষ যোবাইদা কনক খানকে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং জাফরিন লিজা বর্তমানে ছুটিতে আছেন।[5] সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনরত ছাত্রীরা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সেই সাথে তারা প্রাধ্যক্ষের কক্ষ (কক্ষ নম্বর ১০৭) ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের কক্ষে (কক্ষ নম্বর ১০৮) দরজায় বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত পোস্টার সাঁটিয়ে দেয়।[4]
১৫ জানুয়ারি
১৫ জানুয়ারি (শনিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির বেলা পৌনে ১১টার দিকে জানান, ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে উপাচার্য স্যার তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াইফাই সমস্যা, খাবারের মানসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দিয়েছেন, তাৎক্ষণিক সেসব সমাধান করা হয়েছে।[4]
বিকেল পাঁচটার দিকে শতাধিক ছাত্রী হল থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নেয়। এরপর তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশের প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করে। ছাত্রীরা সড়কের চারপাশে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে অবরোধ তৈরি করে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় ছাত্রীরা সড়কের চারপাশে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে অবরোধ তৈরি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ও তিন দফা দাবিতে স্লোগান দেয়। কয়েকজন ছাত্রী বলে, সন্ধ্যা সাতটার আগেই তারা গোলচত্বরে অবস্থান নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কী উদ্যোগ নিয়েছে তা তারা সাতটা পর্যন্ত দেখে তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে। ছাত্রীদের আবার আন্দোলনে যাওয়ার প্রসঙ্গে প্রক্টর আলমগীর কবির সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বলেন, ‘উপাচার্য স্যার যেখানে ছাত্রীদের সব সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন, এরপর আর কোনো কথা থাকতে পারে না। আমরা ছাত্রীদের হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাব।’[6]
সন্ধ্যা সাতটার দিকে ছাত্রলীগ ছাত্রীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলা চালায় বলে আন্দোলনরত ছাত্রীরা অভিযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা জহির উদ্দীন আহমেদ ও প্রক্টর আলমগীর কবিরের সামনেই ছাত্রীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। তারা জানায় তাদের কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে তাঁদের সরে যেতে বলেন। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্রীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ছাত্রীরা ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’—স্লোগান দিতে থাকে। এদিকে ছাত্রলীগ নেতারা বলে, সেখানে কথা–কাটাকাটি হয়েছে, হামলা করা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, রাত ৭টা ৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা জহির উদ্দীন আহমেদ ও প্রক্টর আলমগীর কবির আন্দোলনরত ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন ও ছাত্রীদেরকে রাস্তা থেকে সরে হলে যাওয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সেখানে আসে। হঠাৎ করে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী ছাত্রীদের আন্দোলনের আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাম ছাত্রসংগঠনের কিছু কর্মী ও সাধারণ ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়ে কিল-ঘুষি মারে। এতে কয়েকজন আহতও হয়। এর ১০–১৫ মিনিট পরেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর আবার সড়ক অবরোধ করে ছাত্রীরা স্লোগান দেওয়া শুরু করে।[7]
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির বলেন, আন্দোলনকারীরাই নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও সেখানে গিয়েছিলাম। ছাত্রীদের বলেছি যেন রাস্তা ফাঁকা করে তারা কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় আমাদের এক সহকর্মীর স্ত্রী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীও, তিনি প্রসূতি হওয়ায় একটি মাইক্রোবাসে করে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ ওই মাইক্রোবাস যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে দেয় এবং আরেকটি পক্ষ গাড়িটি আটকে দিচ্ছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ধাকাধাক্কির ঘটনা ঘটে।’ প্রক্টর এসব কথা বললেও ছাত্রলীগের নেতারা সেখানে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেনি। (এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি ২০২১ সালের ১৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছিল।) বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা ও বিগত কমিটির পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, ‘কর্মসূচিতে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি, কিছু কথা–কাটাকাটির ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রসূতি স্টাফ অ্যাম্বুলেন্সে ওই সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুটি রাস্তা বন্ধ থাকায় অ্যাম্বুলেন্স যেতে পারছিল না। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। কোনো ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেনি।’[7]
রাত দেড়টা পর্যন্ত ছাত্রীরা গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে তিন দফা দাবিতে স্লোগান দেয়। ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনরত ছাত্রীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সকাল আটটা থেকে গোলচত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা জানায়। এ সময় ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করে, রাত দেড়টার দিকে তারা হলে ফেরে।[8] রাত ১২টার দিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আন্দোলনের সঙ্গে নৈতিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ এবং শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংগঠনের ফেসবুক পেইজে বিবৃতি দেয়।[8]
১৬ জানুয়ারি
১৬ জানুয়ারি (রবিবার) সকাল পৌনে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে ছাত্রীরা আগের দিনের মতো ফের সড়ক অবরোধ করে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করে। এ সময় সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়। সকাল পৌনে নয়টার দিকে অর্ধশতাধিক ছাত্রী গোলচত্বরে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করে তিন দফা দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে অনেক ছাত্রী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়। ছাত্রীরা অভিযোগ করে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে গতকাল সন্ধ্যায় হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। এতে অনেকে আহতও হয়েছেন। তিন দফা দাবি আদায় না হলে ছাত্রীরা আন্দোলন থেকে সরবেন না। আন্দোলনরত ছাত্রীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিদের একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যায়।[8]
অবরোধ শুরুর পর থেকে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত সিলেট শহর ও শহরতলির বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সময় ছাত্রীরা কিলো সড়কে নয়টি বাস আটকে দেয়। একই সময়ে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত গাড়িও শিক্ষার্থীরা ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকে। এর মধ্যে ‘প্রক্টরের উপস্থিতিতে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই, ‘হামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও লড়াই করো’, ‘ছাত্রলীগের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘তিন দফা তিন দাবি, মানতে হবে মেনে নাও’, ‘প্রভোস্ট বডির পদত্যাগ, করতে হবে করতে হবে’ উল্লেখযোগ্য।[8]
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকালও দেখা করে কর্মসূচি থেকে সরে আসার অনুরোধ করেছি। এর আগে উপাচার্য স্যার আন্দোলনরত ছাত্রীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে প্রাধ্যক্ষ কমিটির পদত্যাগের বিষয়টি ছাড়া সব কটি দাবি এক মাসের মধ্যে সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু ছাত্রীরা বলছেন, পুরো প্রাধ্যক্ষ কমিটির পদত্যাগ করতে হবে। আসলে খুঁজে খুঁজে সব ম্যাডামকে এনে অনুরোধ করে করে হলগুলো পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিজেদের সংসার-কাজ ফেলে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনও করছেন। এখন প্রাধ্যক্ষ কমিটি যদি বাদ দিতে হয়, তাহলে কাদের দিয়ে কমিটি করব? আমরা ছাত্রীদের বলেছি, ছাত্র-শিক্ষকের যে সম্পর্কের জায়গা, তাতে যদি তোমরা কষ্ট পেয়ে থাকো, দেখবে সেটা আন্তরিকতার মধ্য দিয়েই কেটে যাবে। আর বাকি সমস্যাগুলো তো দ্রুততার সঙ্গেই সমাধান করা হচ্ছে।... অমিক্রন নিয়ে আতঙ্ক আছে। এভাবে ছাত্রীরা সমাবেশ করলে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ কারণে ছাত্রীদের হলে ফিরে যাওয়ার জন্য আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি।’[8]
বেলা বেলা ২টা ৪০ এর দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন উপাচার্য ভবন থেকে বের হয়ে ডিনদের এক সভায় যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন, এরপর থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও প্রক্টর আলমগীর কবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। এ সময় তারা ছাত্রীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে এক সপ্তাহ সময় চান। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ শব্দ করে শিক্ষকদের আশ্বাস প্রত্যাখান করে তাৎক্ষণিক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা চায়। এমন অবস্থায় শিক্ষকেরা কর্মসূচিস্থল ত্যাগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শিক্ষকেরা স্থান ত্যাগের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে তাদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চেতনা ৭১’-এর সামনে থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনের দিকে এগোতে থাকে। এ সময় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ডিনদের এক সভায় অংশ নেওয়ার জন্য নিচে নামলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তার পথ অবরোধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা দাবি করেন, এই সময়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করেই উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা চালান, এবং উপাচার্যের সঙ্গে থাকা কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাকে আগলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে নিয়ে যান। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করে, উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাকে দেখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য স্লোগান দিয়ে পথ অবরোধ করে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নেওয়ার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে।[9]
এই ঘটনার পর উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনের ভেতরে অবস্থান করেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনের সদর দরজায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা যায়।এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। শিক্ষক সমিতিসহ সব বিভাগের প্রধানেরা কর্মসূচিস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি মানার আশ্বাস দেন। তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন। এরপর উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। উপাচার্যকে রক্ষা করতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হামলায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আহত হয়েছেন। এতে তারা খুবই মর্মাহত।[9]
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির নেতারা ও প্রক্টরিয়াল বডি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন। এ সময় কোষাধ্যক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, ভেতরে অবরুদ্ধ থাকায় উপাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে প্রবেশ করে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে যান, তাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। এর জেরে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে। তখন শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে কিছু সময়ের জন্য পুলিশ পিছু হটলেও একটু পরই পুলিশ ২৭টি রাবার বুলেট ও ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে তাঁর বাসভবনে নিয়ে আসে। এ সময় অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী, ১০ জন পুলিশ সদস্য এবং কয়েকজন শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী আহত হন।[10][11][12] ঘটনাস্থলে থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ দাবি করেছেন, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়নি। ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে গিয়েছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর চড়াও হয়েছেন। এ সময় পুলিশ তাদের পেছনে অবস্থান নিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাও চালায়। এতে তিনিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। তাই পুলিশ জানমাল রক্ষার্থে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে।[10]
জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে রাত সাড়ে আটটার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তাঁর বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ১৭ জানুয়ারি সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে তিনটি ছাত্র হল ও দুটি ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ (লিজা) ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। তার জায়গায় নতুন প্রাধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।[11]
রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও পুলিসি হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী হলের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চালু করার দাবি জানায়। এ সময় তারা ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও এক হও’, ‘প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানব না’, ‘পরীক্ষা কেন বন্ধ, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হল কেন বন্ধ, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কেন বন্ধ, প্রশাসন জবাব চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে শাহপরান হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের কিছু আবাসিক শিক্ষার্থীও এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। পরে তারা ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দিকে চলে যায়।[13] পরে রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ শিক্ষার্থী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি তুলে বিক্ষোভ করে। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ চলে।[12]
১৭ জানুয়ারি
১৭ জানুয়ারি (সোমবার) সকাল থেকে কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। সকাল আটটার পর থেকে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে হল ছাড়তে দেখা গেছে। সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এ সময় তারা হল ছাড়বে না বলে ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি তারা ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার ঘটনায় উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে। সকাল সোয়া নয়টার দিকে ওই শিক্ষার্থীরা হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের ভেতরের বিভিন্ন রাস্তায় স্লোগান দিতে থাকে। ধীরে ধীরে ওই মিছিলের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও জড়ো হয়। সকাল নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত। শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে হল ছাড়ছেন।’[12]
হল বন্ধ করার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ফলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম কয়েকজন সহকারী প্রাধ্যক্ষকে নিয়ে হলের ভেতরে যান। এরপর শিক্ষার্থীরা তাদেরকে হলে অবরুদ্ধ করে ফেলে। তারা হলের ভেতরে ঢুকলে শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে হলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা দাবি করে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটা বাতিল করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই হল বন্ধ করা যাবে না। এ ছাড়া তারা দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ারও দাবি জানায়। তবে প্রক্টর আলমগীর কবির জানান হলে প্রাধ্যক্ষ কিংবা সহকারী প্রাধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখার তথ্য সঠিক নয়।[14]
বেলা সোয়া একটার দিকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কোনো চিন্তা নেই। এ কারণেই তিনি ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে এনেছেন এবং সেই পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা শিক্ষার্থীবান্ধব নতুন উপাচার্য চান। বেলা দুইটা থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করে। সেখানে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর নেওয়া শুরু করেছে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়।[15] উপাচার্য অভিযোগ করে বলেন, অনেক বহিরাগত কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। আজকের কর্মসূচিতেও অনেক বহিরাগত এসেছে। একটি চিহ্নিত স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব করছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা তোমাদের পাশে আছি। তোমরা সহযোগিতা করো। কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত তোমরা নিয়ো না।’[15]
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির জানান, ১৬ই জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে কমিটির প্রধান ও রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেনকে সদস্যসচিব করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস, অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন আরিফুল ইসলাম, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন রুমেল আহমদ, লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন মো. কামরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন মো. খায়রুল ইসলাম এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন দিলারা রহমান।[15]
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় এবং সব কটি প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর বিকেল সোয়া চারটার দিকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে শিক্ষার্থীরা হাঁটু গেড়ে ফুল গ্রহণের অনুরোধ জানায়। তারা পুলিশকে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করে। তবে পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় চালু না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক কার্যক্রমও চলতে দেওয়া হবে না। উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে অনেককে রক্তাক্ত করেছে। যে উপাচার্যের নির্দেশে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরেছে, তাকে শিক্ষার্থীরা একমুহূর্তও আর ক্যাম্পাসে দেখতে চান না।[16]
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহম্মদ ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা দেয়ার কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল রোববার ক্যাম্পাসের ভেতরে সংঘটিত দুঃখজনক ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এতে চিকিৎসাজনিত যাবতীয় ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুহিবুল আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, ১৬ জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষক সমিতি স্তম্ভিত, মর্মাহত ও লজ্জিত। বিবৃতিতে তারা ঘটনাটিকে ‘নারকীয়’ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থী–শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের যারা আহত হয়েছে, তাদের সুচিকিৎসা প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সবার সহযোগিতা তারা কামনা করেন।[17]
সমর্থন ও মানববন্ধন
১৬ই জানুয়ারি ঢাকায় বিকেলে তিনটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের মোর্চা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ছাত্রীদের কর্মসূচিতে হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে ও ছাত্রীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানায়। জোটের কেন্দ্রীয় কমিটি সেই বিক্ষোভের আয়োজন করে। বিক্ষোভে জোটভুক্ত তিন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কয়েক নেতা–কর্মী অংশ নেন। সমাবেশের আগে টিএসসির সঞ্জীব চত্বর থেকে তাঁরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নেতা-কর্মীরা রাজু ভাস্কর্যে এসে সমাবেশ করেন। জোটভুক্ত সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, "শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের মতোই ছাত্রলীগ অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী কায়দায় শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ভিন্নমত দমন করার চূড়ান্ত অভিপ্রায় নিয়ে মাঠে নেমেছে। এসব করে তারা বেশি দিন টিকতে পারবে না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ন্যায্য দাবি মানতে হবে। তাঁদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।" সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য বলেন, "ছাত্রলীগ হামলার কথা সরাসরি অস্বীকার না করলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ভিন্ন বয়ান দিয়েছেন... গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হামলা করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার টিকে থাকতে পারবে না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের তিন দফা দাবির প্রতি আমরা পূর্ণ সংহতি জানাই। এ লড়াইয়ে আমরা তাঁদের পাশে আছি।" সমাবেশের সঞ্চালক ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, "ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশকে তারা অস্বাভাবিক করে তুলছে। না শোধরালে আমরা ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগকে বর্জন করতে দ্বিধাবোধ করব না। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি অনতিবিলম্বে না মেনে নিলে ছাত্রসমাজ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।" সমাবেশের সভাপতি ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কে এম মুত্তাকী বলেন, "প্রয়োজনে আমরা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাব।"[18]
১৬ই জানুয়ারি বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জেলা এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা শাখা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় এবং নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।[13]
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিন্দার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ফেসবুকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানায়। সিলেটের শিল্পী ও সংগঠক অরূপ বাউল ‘রক্তাক্ত সাস্ট’ নামে একটি ই-পোস্টার তৈরি করে তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। পরে অসংখ্য মানুষ এটি শেয়ার দেয়। ই-পোস্টার পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘যে সমস্ত শিক্ষক ছাত্রদের শরীর থেকে রক্ত ঝরানোর নির্দেশ দেন, তারা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি।’ আরমান মুন্না নামের সিলেটের একজন একটি বিক্ষোভ মিছিলের ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘শাবিপ্রবি রক্তাক্ত! রক্তে রক্তে আরও লাল হয়ে ওঠে বুকের কৃষ্ণচূড়া। অন্যায় রুখে দাও।’ সিলেটের সংস্কৃতিকর্মী মামুন পারভেজ ই-পোস্টার ‘রক্তাক্ত সাস্ট’ পোস্ট করে লেখেন, ‘শব্দবোমা দিয়ে কি কণ্ঠ রোধ করা যায়?’ কবি ও প্রকাশক নাজমুল হক ফেসবুকে লেখেন, ‘আলোচনা ছাড়া পুলিশ দিয়ে কোনো ছাত্র আন্দোলন থামানো যায়নি। এটাই ইতিহাস। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’ সিলেটের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আবৃত্তিকার অম্বরীষ দত্ত লেখেন, ‘শিক্ষার প্রাথমিক শর্ত ভব্য হয়ে ওঠা। এই সব অভব্যতা। সাস্ট ছাত্রীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’[19]
১৭ই জানুয়ারি রাজশাহীতে বেলা সাড়ে ১১টায় শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে মানববন্ধন করে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘যে ভিসি (উপাচার্য) বুলেট মারে, সে ভিসি চাই না’, ‘ছাত্রসমাজ এক হও, লড়াই করো’, ‘আমার ক্যাম্পাস ছেড়ে দাও, পুলিশ তুমি বাড়ি যাও’, ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী হামলার বিচার চাই, করতে হবে’ প্রভৃতি স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। কর্মসূচিতে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ বলেন, এই হামলার সঙ্গে যে সন্ত্রাসী সংগঠন, পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আর কেউ যেন শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো মহল আঙুল তুলতে না পারে, শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দিতে না পারে, শিক্ষার্থীদের ওপর চোখ রাঙাতে না পারে। রাবি শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা স্বৈরাচারের সহায়ক ভূমিকা একনিষ্ঠভাবে পালন করছেন। এখন যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নীলচাষি, আর প্রশাসন হচ্ছে ইংরেজ। নীলচাষিদের ব্রিটিশরা যে রকম নির্যাতন করত, সে রকমভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা সব সময় সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছেন। সেই ভূমিকা যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সে জন্য সবার এক হয়ে কাজ করতে হবে। ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, ক্যাম্পাসে উপাচার্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ অভিভাবক। সেই অভিভাবকের মদদে যখন পুলিশ বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, তখন বুঝে নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কোথায়। উপাচার্যের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ বাহিনী ছাত্রসমাজের ওপর হামলার মতো ন্যক্করজনক কাজ করেছে। তারা শুধু দায়িত্ব নিয়ে পড়ে থাকেন, শিক্ষার্থীদের বিষয় নিয়ে ভাবেন না।[20]
১৭ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান এবং হামলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। একই ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৬ জুলাই রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকার পরও সরকার যেভাবে তাঁকে সমর্থন দিয়েছে, আমরা আশা করছি, শাবিপ্রবির উপাচার্যের ব্যাপারে সরকার তেমন অন্ধ সমর্থন দেবে না।’ জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘আজ সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে একাত্মতা পোষণ করছি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তার কোনোটাই ছাত্রবান্ধব নয়। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রবান্ধব হোক। নিজেদের অধিকার আদায় করতে শিক্ষার্থীদের যেন আর রক্ত ঝরাতে না হয়।[21]
১৭ই জানুয়ারি দুপুরে শাবিপ্রবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের হাদী চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। বক্তারা বলেন, ‘সব সময় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা একক ক্ষমতা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ওপর দমন–পীড়ন চালান। পান থেকে চুন খসলেই শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে নিয়মের খড়্গ। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের একক ক্ষমতা, ঔপনিবেশিক শাসন ও এগুলোর চর্চা বন্ধ হোক। ক্যাম্পাসে কিছু করলেই পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়।’ ক্যাম্পাসে পুলিশ থাকবে কেন, সেই প্রশ্ন করে তারা। বক্তারা আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন তখন ধরে নেওয়া হয় তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ জায়গা। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আঘাত করলে তা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ে।[22]
১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনের সড়কে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। ‘শাবিপ্রবির ছাত্র মারা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে এটি করা হয়। পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘নিজের আত্মরক্ষার জন্য যে উপাচার্য সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে পারেন, তিনি কোনো গ্রহণযোগ্য শিক্ষক হতে পারেন না। আমরা অবিলম্বে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করি। ন্যূনতম সম্মানবোধ থাকলে তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন বলে আমরা আশা করি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।’ ছাত্র অধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার ছাত্র মারা সরকার, তারা ছাত্রবান্ধব নয়। পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ছাত্রসমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশের দাবি করেন তিনি। এই বক্তব্যের পরই ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কুশপুত্তলিকায় কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তারা ‘ছাত্র মারা ভিসি, চাই না চাই না’, ‘যে ভিসি গ্রেনেড মারে, সেই ভিসি চাই না’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।[23]
১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মানববন্ধন করে। তারা বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীবিরোধী হতে পারে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন তার এক ‘কলঙ্কজনক নজির’ স্থাপন করেছে। অবলিম্বে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। মানববন্ধন করে তারা পাঁচ দফা দাবি জানান। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তদন্ত, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও মানসিক আঘাত নিরাময়ের উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া পূর্ণ দায়িত্বসহ আমলে নেওয়া ও মানা এবং যেকোনো মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তানভীর আকন্দ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয, ‘আমরা শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা স্তম্ভিত হয়ে লক্ষ করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর শুধু হামলাই করেনি, তাদের ওপর জঘন্য কায়দায় শিক্ষক ও পুলিশের দিকে গুলি চালানোর মিথ্যা অপবাদও দিয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে আবার তাঁদেরই অভিযুক্ত করার মাধ্যমে ও শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করে বর্তমান উপাচার্য, প্রক্টরসহ এই প্রশাসন এক ভয়াবহ অন্ধকার অধ্যায় রচনা করেছে। একটা প্রশাসন কতটা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীবিরোধী হতে পারে, তার এক কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করল বর্তমান প্রশাসন। এই হামলার দায় একান্তই বর্তমান উপাচার্য, প্রক্টরসহ পুরো প্রশাসনের।' সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসে।[23]
১৭ জানুয়ারি বেলা দেড়টার দিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। জোটভুক্ত সংগঠনগুলো হলো ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী)। বেলা পৌনে একটার দিকে মধুর ক্যানটিন থেকে জোটের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল নিয়ে জোটের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কে এম মুত্তাকী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন। একই সময়ে একই বিষয়ে বামপন্থী আটটি ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে আরও একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি আন্দোলন), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন। তাদের দাবিগুলো হলো শাবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণার অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের দালাল উপাচার্যকে অপসারণ এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচার। টিএসসি থেকে এসব সংগঠনের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার সামনে গিয়ে তারা সমাবেশ করেন। সেখানে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অনির্বাচিত সরকার ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনির্বাচিত উপাচার্যের মধ্যে একটা হৃদ্যতা দেখা যাচ্ছে। এই অনির্বাচিত সরকার যেমন একটি ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে, একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে অনির্বাচিত উপাচার্যরাও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। তা না হলে খুবই সাধারণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কোনোভাবে রাষ্ট্রীয় পেটোয়া বাহিনী যে বর্বর নিপীড়ন করল, তা আমরা দেখতে পেতাম না।’ ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ স্বীকার করেছে, সেখানে হাতাহাতি হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর বলেছেন, কোনো হাতাহাতি হয়নি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ ছাত্রলীগকে রক্ষা করছেন প্রক্টর। ছাত্র ফেডারেশনের (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) কেন্দ্রীয় সভাপতি মিতু সরকারের সভাপতিত্বে ও ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা রাফিকুজ্জামানের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) নেতা মুক্তা বাড়ৈ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের নেতা ছায়েদুল হক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা রিপন চাকমা প্রমুখ বক্তব্য দেন।[23]