Loading AI tools
বেদের শাখা ও অঙ্গ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বেদাঙ্গ (সংস্কৃত: वेदाङ्ग) হিন্দুধর্মের ছয়টি সহায়ক শাখা যা প্রাচীনকালে উদ্ভূত এবং বেদ চর্চার সাথে সম্পর্কযুক্ত।[1][2] এই ছয়টি বেদাঙ্গকে ষড়ভঙ্গ বা ছয়টি অঙ্গ বলা হয়। সেগুলো হলো:[1]
বেদের সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, ও উপনিষদ্ যথরীতি পাঠের জন্য এবং তাদের অর্থবোধ এবং বিনিয়োগ সহায়ক এই বেদাঙ্গ। উপনিষদ রচনার পূর্বে বেদাঙ্গ রচিত হয়েছে। কারণ উপনিষদে বেদাঙ্গ নাম দৃষ্ট হয়।[9] পাণিনীয় শিক্ষায় বেদাঙ্গকে বেদের ছয় অঙ্গরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
ছন্দ বেদের পাদদেশ, কল্প বেদের হস্তযুগল, জ্যোতিষ বেদের চক্ষু, নিরুক্ত কর্ণ, শিক্ষা নাসিকা, ব্যকরণ বেদের মুখ। এই ছয়টি অঙ্গ সহ বেদ অধ্যয়ন করলে ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত হয়। অঙ্গ ব্যতীত যেমন অঙ্গীর বা শরীরধারীর পরিচয় অসম্ভব তদ্রূপ বেদাঙ্গ ব্যতীত বেদের সম্পূর্ণ পরিচয় সম্ভব নয়।
— পাণিনীয় শিক্ষা, ৪১, ৪২
ষড় বেদাঙ্গের মাঝে শিক্ষাকে প্রথম স্থানে দেওয়া হয়েছে, যা বৈদিক যুগ হতে বর্তমান পর্যন্ত রক্ষিত হয়ে আসছে। এতে সংস্কৃত ভাষার ধ্বনিবিজ্ঞান ও ধ্বনিবিদ্যা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।[3][4] এতে বেদের বর্ণ, স্বর, মাত্রা, ইত্যাদি যথাযথ উচ্চারণ ও প্রয়োগবিধি লিপিবদ্ধ আছে।[10] ইংরেজিতে একে Phonetics (ধ্বনি বিজ্ঞান) বলা হয়। বর্ণ, স্বর, মাত্রা, বল, সাম, সন্তান শিক্ষাগ্রন্থে এই বিষয়গুলো আলোচনা হয়। পাণিনিয়-শিক্ষা এবং নারদীয়-শিক্ষা বৈদিক অধ্যয়নের এই ক্ষেত্রের বিদ্যমান প্রাচীন পাণ্ডুলিপির উদাহরণ।[11][12][13] প্রত্যেক বেদের পৃথক পৃথক ‘শিক্ষা’ রয়েছে।
চতুর্বেদের অধিকাংশ মন্ত্রসূহ ছন্দোবন্ধ। এসকল ছন্দ “অক্ষর ছন্দ” অর্থাৎ অক্ষর গণনা করে ছন্দ নির্ণয় করতে হয়। সাতটি ছন্দ বেদে দৃষ্ট হয়। যথা: গায়ত্রী, উষ্ণিক, অনুষ্টূপ, বৃহতী, পঙক্তি, ত্রিষ্টুপ এবং অগতী। এই সাতটি ছন্দ পরমেশ্বরের সাতটি হস্তরূপে কল্পনা করা হয়।
বৈদিক গ্রন্থসমূহের শব্দপ্রয়োগ এবং অর্থব্যবহার নিয়ে ব্যকরণ শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়। পাণিনির অষ্টাধ্যয়ী ব্যাকরণ গ্রন্থের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ।
নিরুক্ত হল বেদের অর্থ সম্পূর্ণভাবে নিরূপনের জন্য একটি বৈদিক শাস্ত্র। নির্-নিঃশ্বেষরূপে পদসমূহ যেখানে উক্ত হয়েছে, তাকে নিরুক্ত বলে। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে ঋষি যাস্ক নিরুক্ত শাস্ত্রের রচনা করেছিলেন।[14] বেদের সংস্কৃত শব্দরাশি সংগৃহ ও যথাযথ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নিরুক্ত শাস্ত্রে আলোচনা হয়েছে।[14][15][15]
কল্প হচ্ছে আচার নির্দেশ। ব্রাহ্মণ অংশে বর্ণিত যজ্ঞের অনুষ্ঠান প্রক্রিয়াসমূহ নিয়ে সূত্রাকারে যেসকল গ্রন্থ রচিত তাকেই কল্পসূত্র বা কল্প বলা হয়। কল্পসূত্রের দুইটি মুখ্য বিভাগ- শ্রৌতসূত্র ও গৃহ্যসূত্র। এটি বৈদিক আচার-অনুষ্ঠানগুলোর জন্য সংগতিপূর্ণ পদ্ধতি। পরিবারে জন্ম, বিবাহ এবং মৃত্যুর মতো জীবনের প্রধান ঘটনাগুলোর সাথে সম্পর্কিত ষোড়শ সংস্কারের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে একজন ব্যক্তির আচার-আচরণ এবং যথাযথ কর্তব্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।[16]
জ্যোতিষ হচ্ছে নক্ষত্র ও নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়[1] এবং জ্যোতির্বিদ্যার সাহায্যে আচার অনুষ্ঠানের সঠিক সময় নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া।[17][18] এই সহায়ক বৈদিক শৃঙ্খলা সময় পালনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।[19][20]
বেদাঙ্গসমূহের বিস্তৃতি প্রাচীনকালে রয়েছে এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদ এটিকে বৈদিক গ্রন্থ ব্রাহ্মণ স্তরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে উল্লেখ করেছে।[21] বেদ অধ্যয়নের এই সহায়ক শাখাগুলো লৌহ যুগের ভারতে বেদের বিন্যাসের সাথে উদ্ভূত হয়। কোন সময়ে সর্বপ্রথম ষড় বেদঙ্গের তালিকা হিসেবে ধারণা করা হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়।[22] সম্ভবত বেদাঙ্গ বিকশিত হয়েছিল বৈদিক যুগের শেষের দিকে, খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দের মাঝামাঝি বা তারও পরে। রীতির একটি প্রাথমিক পাঠ্য হল যাস্ক দ্বারা নিয়ণ্টু, মোটামুটিভাবে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বহু শতাব্দী আগে রচিত বৈদিক শাস্ত্রগুলোর ভাষা সেই সময়ের লোকেদের কাছে খুব প্রাচীন হয়ে উঠেছিল বলে বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়নের এই সহায়ক ক্ষেত্রগুলো আবির্ভূত হয়েছিল।[23]
বেদের জন্য আনুষঙ্গিক অধ্যয়ন হিসাবে বেদাঙ্গগুলো বিকশিত হয়েছিল, তবে এর মাত্রার অন্তর্দৃষ্টি, শব্দ এবং ভাষার গঠন, ব্যাকরণ, ভাষাগত বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য বিষয়গুলো বৈদিক-পরবর্তী অধ্যয়ন, শিল্পকলা, সংস্কৃতি এবং হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন শাখাকে প্রভাবিত করেছিল।[24][25][26] উদাহরণস্বরূপ, ছয় বেদাঙ্গের একটি অংশ কল্প ধর্ম-সূত্রের জন্ম দেয়, যা পরবর্তীতে ধর্মশাস্ত্রে বিস্তৃত হয়।[23][27]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.