Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যবহৃত এক ধরনের দিক-নির্ভর বেতার এন্টেনা যা একই সাথে কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাশূন্য সন্ধানী যান থেকে উপাত্ত সংগ্রহের কাজ করে। জ্যোতির্বৈজ্ঞানিব ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগুলো আলোকীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র থেকে পৃথক, কারণ এগুলো তড়িচ্চৌম্বক বর্ণালির বেতার কম্পাঙ্ক অংশটিতে কার্যকর থাকে এবং বেতার উৎসের উপর ভিত্তি করেই উপাত্ত সংগ্রহ ও চিহ্নিত করতে পারে। সাধারণত বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বৃহৎ পরাবৃত্তীয় এন্টেনা (ডিশ এন্টেনা সদৃশ) যা এককভাবে বা একটি অ্যারের মধ্যে কাজ করে থাকে। বেতার মানমন্দিরগুলো জনবসতি থেকে অনেক দূরে স্থাপন করা হয় যাতে বেতারযন্ত্র, টেলিভিশন, রাডার এবং অন্যান্য তড়িচ্চৌম্বক ব্যতিচার (ইএমআই) নিঃসরণকারী যন্ত্রের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়। আলোকীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্রও আলোকীয় অন্যান্য প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পাহাড়ের চূড়ায় বা দালানের ছাদে স্থাপন করা হয়। তথাপি বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করতে হয় বিস্তীর্ণ সমতল উপত্যকায় যাতে ইএমআই থেকে বেঁচে থাকা যায়।
বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাবিশ্বের বিভিন্ন দিক থেকে আগত বেতার তরঙ্গের শক্তি পরিমাপ করা যায় এবং এদের দিক নির্ণয় করা যায়। এর মধ্যে তিনটি প্রধান অংশ থাকে যার একটি অন্যটির পরিপূরক। অংশ তিনটি হচ্ছে:
এই যন্ত্রের মৌলিক কার্যনীতি দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ব্যবহৃত প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মতই। আপতিত তরঙ্গ, তা বেতার বা দৃশ্যমান যা-ই হোক না কেন, একটি নিখুঁত দর্পণে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে একটি সাধারণ অভিসারী বিন্দুতে মিলিত হয়। এক্ষেত্রে প্রতিফলন পৃষ্ঠতল এবং আপতিত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিফলন পৃষ্ঠতলের আকৃতি এমন হতে হবে যেন বেতার তরঙ্গগুলো সেখান থেকে প্রতিফলনের পর অভিসারী বিন্দুতে একই দশায় মিলিত হতে পারে। এর জন্য প্রতিফলন বিন্দু থেকে অভিসারী বিন্দু পর্যন্ত পথের দৈর্ঘ্য পৃষ্ঠতলের বিভিন্ন বিন্দুতে একই হতে হবে। এই শর্ত অবশ্য সহজেই মেটানো যায়, কেবল প্রতিফলন পৃষ্ঠতলটি পরাবৃত্ত আকৃতির করে দিলেই হল। এজন্যেই আধুনিক বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলোর প্রতিফলন পৃষ্ঠতল তথা ডিশের আকৃতি পরাবৃত্তীয় হয়ে থাকে। এছাড়া এ ধরনের দূরবীক্ষণের দর্শন তথা পর্যবেক্ষণের কাজটি ১ মিমি থেকে ৩০ মিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে করতে হয়। কারণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৩০ মিটারের বেশি হলে আয়নমণ্ডলে শোষণ ঘটে আর ১ মিলিমিটারের চেয়ে কম হলে বায়ুমণ্ডলের পানি, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং ওজোন কর্তৃক শোষিত হয়।
এভাবে অভিসারী বিন্দুতে বেতার তরঙ্গগুলোকে একত্রিত করা হলেও সেগুলো সাধারণত খুবই ক্ষীণ থাকে। এদেরকে পর্যবেক্ষণের উপযোগী করতে হলে বিবর্ধিত করতে হয়। প্রথমে আপতিত এবং অভিসারী বিন্দুতে একত্রিত বেতার কম্পাঙ্ক সংকেতকে অভিসারী বিন্দুতে ১০ থেকে ১০০০ গুণ বিবর্ধিত করা হয়। এই বিবর্ধিত কম্পাঙ্ককে তাদের ক্ষুদ্রতর কম্পাঙ্কে পরিবর্তিত করা হয় যাকে মধ্যবর্তী কম্পাঙ্ক বলা হয়। এই মধ্যবর্তী কম্পাঙ্ককে সহজেই তারের মাধ্যমে অভিসারী বিন্দু থেকে দূরবীক্ষণ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠানো যায়। এখানে মধ্যবর্তী কম্পাঙ্ককে আরও বর্ধিত করা হয় যাতে সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এই স্পষ্ট কম্পাঙ্ককে এমনভাবে তথ্যপ্রদর্শনীযন্ত্রে প্রদর্শন করা হয় যার মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ কাজে সর্বোচ্চ উপযোগীতা লাভ করতে পারেন।
যেসব জ্যোতিষ্ক থেকে বেতার তরঙ্গগুলো নিঃসরিত হয় তারা একটি অন্যটি থেকে অনেক পৃথক। এরকম অসংখ্য জ্যোতিষ্ক থেকে নিঃসরিত বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করতে হলে তাই বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্রের প্রকারও হতে হয় অনেক। বেতার দূরবীক্ষণ এবং গ্রাহকযন্ত্র তাই বিভিন্নতা আসে। জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত দুটি সাধারণ ধারণার মাধ্যমে কি ধরনের দূরবীক্ষণ প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা যায়:
প্রথম গুণটি নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। অতি দীর্ঘ ভূমি-রৈখিক ব্যতিচার (Very long baseline interferometry, VLBI) পদ্ধতির মাধ্যমে চূড়ান্ত কৌণিক পৃথকীকরণ পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে একই সাথে কয়েকটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় যার একটি অন্যটি থেকে কয়েক হাজার মাইল পর্যন্ত দূরত্বে থাকতে পারে। প্রতিটি যন্ত্রে স্বতন্ত্রভাবে তথ্যসংগ্রহ করে তা ভিডিও টেপে লিপিবদ্ধ বরা হয়। এই টেপের উপর হাইড্রোজেন মেজার ঘড়ি ব্যবহার করে সংকেত চিহ্নের সাথে সঠিক সময়টিও লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়। লিপিবদ্ধ করার কাজ হয়ে গেলে বিভিন্ন দূরবীক্ষণের ভিডিও টেপগুলো একত্রিত করা হয় এবং প্রতিটি টেপের সময়সূচক চিহ্ন পাশাপাশি রেখে বিশ্লেষণ করা হয়। একই সময়ে লিপিবদ্ধ তথ্য তুলনা করার মাধ্যমে বিশ্লেষণ কাজ চলে। এই ভিএলবিআই পদ্ধতিতে .০০০৩ সেকেন্ড কৌণিক দূরত্ব পৃথকীকরণ সম্ভব হয়েছে।
জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বেতার উৎস চিহ্নিত করার কাজে ব্যবহৃত প্রথম বেতার এন্টেনা তৈরি করেছিলেন কার্ল গাথ জান্স্কি। বেল টেলিফোন গবেষণাগারে কর্মরত এই প্রকৌশলী ১৯৩১ সালে এ ধরনের একটি এন্টেনা তৈরি করেন। জান্স্কির দায়িত্ব ছিল বেতার টেলিফোন সার্ভিসে ব্যাঘাত ঘটায় এমন ধরনের স্থির তরঙ্গের উৎসকে চিহ্নিত করা। তার এন্টেনাটি ২০.৫ মেগাহার্জে এবং ১৪.৬ মিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে স্বল্প তরঙ্গের বেতার সংকেত গ্রহণের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছিল। একটি ঘূর্ণনক্ষম টেবিলের উপর স্থাপন করার কারণে একে যেকোন দিকে প্রয়োজনমত ঘোরানো যেত। তাই এই যন্ত্রটির নাম হয়ে গিয়েছিল "জানস্কি'স মেরি-গো-রাউন্ড"। এর ব্যাস ছিল আনুমানিক ১০০ ফুট (৩০ মিটার) এবং দৈর্ঘ্য ছিল ২০ ফুট (৬ মিটার)। চারটি ফোর্ডের মডেল-টি টায়ারের মাধ্যমে একে যেকোন দিকে ঘোরানো যেত। এভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গৃহীত ব্যতিচার হয়ে আসা স্থির বেতার উৎসের দিক নির্ধারণ করা যেত। অ্যান্টেনার একপাশে একটি অ্যানালগ কাগজ-কলমের ব্যভস্থা ছিল যার মাধ্যমে উপাত্ত জমা করে রাখা যেত। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দিক থেকে বেতার সংকেত ধারণ এবং সংগ্রহ করে রাখার পর জান্স্কি সেগুলোকে তিনটি স্থির তরঙ্গে বিভক্ত করেন:
জান্স্কি অবশেষে নির্ধারণ করেন যে, দুর্বল হিসহিসটি ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট পরপর পর্যাবৃত্তভাবে পুনরায় শোনা যায়। এই সময়টি তথা পর্যায়কালটি হল সাধারণ নাক্ষত্রিক দিনের দৈর্ঘ্যের সমান। খ-গোলকে অবস্থিত যেকোন স্থির বস্তু মাথার উপর দিয়ে দুবার অতিক্রম করতে যে সময় প্রয়োজন এটি তা-ই নির্দেশ করে। আলোক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক তালিকা এবং মানচিত্রগুলোর সাথে তুলনা করে জান্স্কি সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, এই বিকিরণ আকাশগঙ্গা থেকে আসছে এবং ছায়াপথটির কেন্দ্রের দিকে এর প্রাবল্য সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত ধনু রাশি হতে এই বিকিরণ সবচেয়ে বেশি আসছে।
বর্তমানে যা বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান নামে পরিচিত তার অগ্রদূতদের মধ্যে অন্যতম হলেন গ্রোট রেবার। তিনিই প্রথম ১৯৩৭ সালে পরাবৃত্তীয় প্রতিফলন পৃষ্ঠতল নির্মাণ করেন যা ডিশ বা বেতার দূরবীক্ষণের আধুনিক গ্রাহকযন্ত্র নামে পরিচিত। এর ব্যাস ছিল ৯ মিটার। তিনি কার্ল জান্স্কির অগ্রবর্তী তথাপি সরল গবেষণাকর্মকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং প্রথমবারের মত বেতার কম্পাঙ্কে মহাকাশের পর্যালোচনা এবং জরিপ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়টি আরও বিস্তৃতি লাভ করে এবং ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য গবেষকরা বিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.