Loading AI tools
রঙ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বেগুনী (বাংলা উচ্চারণ: [বেগুনী] () হল )নীলা, ল্যাভেন্ডার আর বিউটিবেরিসের বর্ণ। এর নাম করা হয়েছে বেগুনী ফুলের নাম অনুযায়ী।[2][3] বেগুনী দৃশ্যমান বর্ণালীর সর্বশেষ বর্ণ যা নীল এবং অদৃশ্য অতিবেগুনীর মাঝামাঝি অবস্থান করে।এর প্রাধান্যপূর্ণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল ৩৮০-৪৫০ ন্যানোমিটার[4] (কিছু নির্দিষ্ট অবস্থায় রক্তবর্নেরও ৩১০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য দেখা যায়)।[5][6][7] যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেগুনী অপেক্ষা ছোট কিন্তু রঞ্জনরশ্মি এবং গামারশ্মি অপেক্ষা বড় তাকে অতিবেগুনী বলে।ইতিহাসে চিত্রকরেরা যে বর্ণচাকতি ব্যবহার করত,বেগুনী তাতে নীল এবং রক্তবর্ণের মাঝামাঝি ছিল।কম্পিউটারের মনিটর এবং টেলিভিশন সেটে যা বেগুনীর মত দেখতে,তা আরজিবি বর্ণ মডেল দ্বারা নির্মিত, যা লাল এবং নীলের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এখানে নীল লালের দ্বিগুণ উজ্জ্বল থাকে। কিন্তু এটি সত্যিকার বেগুনী হয়না, এটি কেবল নীলের চেয়ে ছোট একটি তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর বদলে কয়েকটি উচ্চ তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর যোগফল হয়।
| ||||||||||||||||||||||||||
|
বেগুনী এবং রক্তবর্ণ প্রায় একই দেখা যায়, কিন্তু বেগুনী সত্যিকার অর্থে একটি রঙ, যার দৃশ্যমান বর্ণালীতে একটি নির্দিষ্ট অবস্থান আছে। আর রক্তবর্ণ একটি সংযুক্ত বর্ণ, যা নীল এবং লাল বর্ণের যোগফল। ইতিহাসে বেগুনী আর রক্তবর্ণ আভিজাত্য এবং মর্যাদার প্রতীক হয়ে ছিল। রোমের সম্রাটরা রক্তবর্ণের আলখেল্লা পরিধান করতেন, যা বাইজেন্থাইন সম্রাটরাও পরতেন। মধ্যযুগে বিশপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা বেগুনী বস্ত্র পরিধান করতেন। এবং বিভিন্ন চিত্রকর্মে কুমারী মেরির পোশাকের রঙ বেগুনী দেখানো হয়েছে। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র এ কিছু জরিপ থেকে জানা যায় যে বেগুনীকে অনেকেই অপব্যয়, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, রীতিবিরুদ্ধ, কৃত্রিম এবং অস্পষ্টতার বর্ণ বলে মনে করে।[8]
চীনা চিত্রকর্মএ বেগুনী মহাবিশ্ব এর সাদৃশ্যের চিত্র বহন করে,কারণ এটি লাল এবং নীলের সমন্বয়ে সৃষ্ট।[9] হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মে বেগুনী মুকুট চক্রে শোভা পেয়েছে।[2]
মধ্যযুগীয় এবং পুরাতন ফ্রেঞ্চ শব্দ violette,এবং লাতিন viola থেকে violet শব্দটি পাওয়া যায়,যার বাংলা বেগুনী।[10] বেগুনীকে সর্বপ্রথম ১৩৭০ সালে রঙের নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[11]।
চিত্রকরেরা তাদের যে বর্ণ চাকতি ব্যবহার করতেন,তাতে লাল এবং নীলের মাঝে বেগুনীকে স্থান দেয়া হয়েছে।রক্তবর্ণ লাল রঙের কাছাকাছি,গাঢ় লাল এবং বেগুনীর মাঝামাঝি, মহাশূন্যের বর্ণ তৈরী করে।[12] বেগুনী নীল রঙের কাছাকাছি বর্ণের এবং রক্তবর্ণের চেয়ে কিছুটা গাঢ় এবং উজ্জ্বল হয়।আলোকবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয় বেগুনী একটি সত্যিকার বর্ণ যা দৃশ্যমান বর্ণালীর শেষ অংশ দখল করে,এবং যা ১৬৭২ সালে আইজ্যাক নিউটন এর আবিষ্কৃত বর্ণালীর ৭ টি বর্ণালীগত বর্ণালীর অন্তর্ভুক্ত।
কম্পিউটার পর্দা অথবা বর্ণীল টেলিভিশনে বর্ণ তৈরী করতে যোজনীয় বর্ণ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।বেগুনী আসলে রক্তবর্ণের নকল,যা কাল পর্দায় গাঢ় নীল রঙ এবংং হালকা লাল রঙের সংযুক্তিতে তৈরী করা হয়।রক্তবর্ণের পরিসর লাল এবং নীলের সমন্বয়ে তৈরী করা হয়। এই লাইনে যে বর্ণাল তৈরি হয় তাকে রক্তবর্ণের লাইন বলে।
বেগুনী মানুষের ব্যবহার করা সবচেয়ে পুরনো রঙের মধ্যে একটি।প্রাকৃতিক ম্যাঙ্গানিজ এর নিষ্পেষণের সাথে পানি বা প্রানীজ চর্বি মিশিয়ে গাঢ় বেগুনী রঙ বানিয়ে গুহার দেয়ালে আকার চিহ্ন পাওয়া যায় ২৫০০০ বছর পূর্বে,ফ্রান্সের পেক মার্লে এর গুহায় (প্রাগঐতিহাসিক গুহাঙ্কন)।এগুলো আলতামিরা এবং লাসকাউক্স এর গুহায়ও পাওয়া গেছে।[13] এটি কোন সময় কাল কয়লার বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।চিত্র আকার জন্য যে ম্যাঙ্গানিজ এর কাঠি ব্যবহৃত হত তা পাওয়া যায় ফ্রান্স এবং ইজরায়েল এর নিয়ানডারথাল মানবের মধ্যে।বিভিন্ন স্থানে পাওয়া বিভিন্ন নিষ্পেষক থেকে বুঝা যায় এটি প্রানীর ত্বক এবং শরীর রঙ করতেও ব্যবহৃত হত।
কিছুদিন আগেই ৩৫০০০ বছর পূর্বের গুহাঙ্কন পাওয়া যায়।অস্ট্রেলীয়ার কিছু গুহার পাথরের দেয়ালে হস্তাঙ্কন তো আরো পূর্বের,প্রায় ৫০০০০ বছর পূর্বের। রুবুস গণের অন্তর্ভুক্ত বেরি,যেমন ব্লাকবেরি,প্রাচীনযুগে ব্যবহৃত একটি সাধারণ রঙের উৎস ছিল।প্রাচীন মিসরীয়রা মালবেরীর জুস এর সাথে পিষ্টিত সবুজ আঙুর ফল মিশিয়ে এক ধরনের বেগুনী রঙ বানাত।রোমান ইতিহাসবিদ পিলনি দ্যা ইল্ডার বলেন যে গলবাসীরা বিলবেরী হতে তৈরি এক ধরনের বেগুনী রঙের কাপড় ব্যবহার করত দাসদের জন্য।ওগুলো প্রশংসনীয় রক্তবর্ণ তৈরী করত,কিন্তু সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এবং ধোয়ার ফলে সে রঙ অদৃশ্য হয়ে যেত।[14]
প্রাচীন বাইজেন্থিন সাম্রাজ্য সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞীদের কাছে বেগুনী ও রক্তবর্ণ দীর্ঘদিন তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। যেখানে মধ্যযূগ ও রেনেসাঁর সময় রাজা এবং রাণীরা বেগুনী বস্ত্র পরা কমিয়ে দিলেন,সেখানে ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা বেগুনী বস্ত্র পরতেন।তাদের কাপড়্গুলো পাদ্রীদের কাপড়ের অনুরূপই বানানো হত,এবং মাঝেমাঝে তারা চৌকোণা বেগুনী টুপি,অথবা বেগুনী ট্রিমযুক্ত কালো কাপড় পরতেন। রেনেসা যুগের বিভিন্ন ধর্মীয় চিত্তকর্মেও বেগুনী গুরুত্বপূর্ণ বর্ণ ছিল।স্বর্গদূত এবং কুমারী মেরীর বিভিন্ন চিত্রকর্মে বেগুনী কাপড় পরানো হত।
১৫দশ শতাব্দীতে বিখ্যাত ফ্লোরেন্টিন চিত্রকার কেনিনো কেনিনি চিত্রকরদের বলেন : "যদি তুমি সুন্দর বেগুনী রঙ পেতে চাও,তবে ভাল আল্ট্রামেরিন নীল লাচ্চা নাও (প্রত্যেকটি উপাদানের সম সংখ্যক উপস্থিতি)"। দেয়ালচিত্রকরদের উদ্দেশ্যে তিনি বেগুনী নীলবর্ণ এবং লাল হেমাটাইট এর মিশ্রণ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।[15]
অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে বেগুনী কেবল রাজপরিবারের লোক,অভিজাত এবং ধনী পুরুষ ও মহিলারা পরতেন।ভাল মানের বেগুনী বস্ত্র অনেক দামী ছিল যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে চিত্রকরেরা বেগুনী বর্নকে আলোর সূক্ষ্ম প্রভাব বোঝাতে ব্যবহার করেন।ইউজিন ডেলাক্রয়েক্স (১৭৯৮-১৮৬৩) বেগুনীকে আকাশের রঙ এবং তার বিভিন্ন চিত্রকর্মের,যেমন বাঘের চিত্রে, ছায়া হিসেবে তুলে ধরেন।
প্রথমে বলি কোবাল্ট বেগুনী নিয়ে,যা আসলে তীব্র লালচে বেগুনী কোবাল্ট আর্সেনেইট এবংং তীব্র বিষাক্ত।যদিও এটি সম রঞ্জক পদার্থে অটল থাকত,তবুও এর বিষাক্ততার জন্য বিংশ শতাব্দীতে এটি কোবাল্টের অন্যান্য যৌগ যেমন কোবাল্ট ফসফেট দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।কোবাল্ট বেগুনী ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের দিকে চিত্রকরদের প্যালেটে পাওয়া যেত।কোবাল্ট বেগুনী পল সিগনাক (১৮৬৩-১৯৩৫),ক্লড মনেট (১৮৪০-১৯২৬) এবং জর্জ সিউরেট (১৮৫৯-১৮৯১) প্রমুখ চিত্রকরেরা ব্যবহার করতেন।[16] বর্তমানে কোবাল্ট এমোনিয়াম ফসফেট,কোবাল্ট লিথিয়াম ফসফেট এবং কোবাল্ট ফসফেট ব্যবহৃত হয়।এদের মধ্যে কোবাল্ট এমোনিয়াম ফসফেট সবচেয়ে লালচে।কোবাল্ট ফসফেট এর দুটি আলাদ ধরন আছে - কম পরিপৃক্ত গাঢ় নীলচে,আরেকটি হালকা এবং উজ্জ্বল লালচে ধরনের।কোবাল্ট লিথিয়াম ফসফেট পরিপৃক্ত হালকা নীলচে বেগুনী।কোবাল্ট এমোনিয়াম ফসফেট এর সমবর্নের আরেকটি বর্ন কোবাল্ট ম্যাগনেসিয়াম বোরেট বিংশ শতাব্দীর দিকে দেখা যায়।কিন্তু এটি প্রয়োজনীয় লাইটফাস্ট ছিলনা।কেবল কোবাল্ট বেগুনী ই প্রয়োজনীয় লাইটফাস্ট ছিল।অন্য আলোক সুস্থিত বেগুনী রঞ্জক এর কাছেধারেও ছিলনা।কিন্তু এর উচ্চ দাম এবং বিষাক্ততা এর ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছিল।
ভিনসেন্ট ভন গফ (১৮৫৩-১৮৯০) বর্ণতত্ত্বের একজন উৎসুক ছাত্র ছিলেন।তিনি ১৮৮০ র দিকে তার বিভিন্ন চিত্রকর্মে (আইরিস,ঘূর্ণিজল এবং রহস্যময় আকাশের চিত্রকর্মসহ) বেগুনী ব্যবহার করেন,এবং প্রায়ই একে পূরক বর্ণ,হলুদের সাথে মিলিয়ে ফেলতেন।১৮৮৮ সালে তার করা আর্লেস এ তার বেডরুমের চিত্রে তিনি কয়েক ধরনের পূরক বর্ণ ব্যবহার করেন; বেগুনী এবং হলুদ,লাল এবং নীল, এবং কমলা এবং নীল।তার চিত্রকর্ম সম্বন্ধে তিনি তার ভাই থিও কে বলেছিলেন "এই রঙগুলো.....ঘুম এবং বিশ্রামের ইঙ্গিতপূর্ন হওয়া উচিত... দেয়ালগুলো মলিন বর্নের,ফুলগুলো লাল,বিছানার কাঠ আর চেয়ার মাখন-হলুদ বর্নের,পাত এবং বালিশ হালকা লেমন সবুজ বর্নের জানালা সবুজ,টেবিল কমলা,পাত্রগুলো নীল,দরজা লিলাক....বর্ণগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে অথবা চিন্তাকে বিশ্রাম দিতে পারে।[17] ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ রসায়নবিদ উইলিয়াম হেনরি পার্কিন সিন্থেটিক কুইনাইন বানানোর চেষ্টা করেন।তার পরীক্ষার ফলে অন্য ফল আসার পরিবর্তে প্রথম সিন্থেটিক এনিলিন রঞ্জক তৈরী হয়,এটি একটি কড়া বেগুনী বর্ণ যাকে মভেন বলে,যাকে সংক্ষেপে মভ ও বলে।এ নামটি ম্যালো মভ ফুলের হালকা বর্ণ থেকে নেয়া।কাপড় রঙ করার ক্ষেত্রে যখন একে ব্যবহার করা হল,তখন সেটি ইউরোপের উচ্চশ্রেণীর লোকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফ্যাশনসম্মত হয়ে উঠল।ঠিকভাবে বললে যখন রাণি ভিক্টোরিয়া ১৮৬২ সালে রাজকীয় প্রদর্শনী তে যান।এর পূর্বে এমন রঙের বস্ত্র কেবল অভিজাত শ্রেণির লোকেরাই পরত।কিন্তু পার্কিন একটি বাণিজ্যিক পন্থা বললেন,এবং সে অনুযায়ী ফ্যাক্টরি তৈরী করলেন এবং রঞ্জকটি তৈরী শুরু করলেন।এটি প্রথম সে বর্তমান শিল্পকারখানা ছিলা যা রসায়ন এবং ফ্যাশন উভয় শিল্পকেই পরিবর্তন করে দেয়।[18]
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের দিকে বেগুনী ও রক্তবর্ণের গলাবন্ধনী খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল,বিশেষ করে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক নেতাদের মধ্যে।এটা লাল গলাবন্ধের দৃড় সূচনা এবং আত্মবিশ্বাস এবং নীল গলাবন্ধের শান্তি ও সহযোগীতার সমন্বয় ঘটিয়েছিল।এবং এই গলাবন্ধ জাতীয় ও কর্পোরেট নেতাদের নীল বিজনেস স্যুট এর সাথে ভাল মানানসই ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বেগুনী দৃশ্যমান বর্ণালীর শেষ বর্ণ,যা নীল ও অদৃশ্য অতিবেগুনীর মাঝখানে থাকে।অন্যান্য দৃশ্যমান বর্ণালি থেকে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম।আমাদের চোখ ৩৮০-৪৫০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘের আলোকে দেখতে পারে। চিত্রকরেরা যে বর্ণ চাকতি ব্যবহার করত তাতে বেগুনী ও রক্তবর্ণ লাল ও নীলের মাঝখানে ছিল।বেগুনী যেমন নীলের কাছাকাছি,রক্তবর্ণ তেমন লালের কাছাকাছি ছিল। বেগুনী রঙ পাওয়া যায় লাল ও নীলের মিশ্রণ থেকে,রক্তবর্ণ এর মতই [19] (রক্তবর্ণ শব্দটি ব্যবহৃত হয় লাল ও নীলের মধ্যে কোনকিছু বোঝানোর সুবিধার্থে)।বর্ণতত্ত্ব অনুযায়ী,রক্তবর্ণ হল এমন একটু বর্ণ যা সিআইই ক্রোমাটিসিটি ডায়াগ্রাম এর রক্তবর্ণের লাইন এ পরে।রঙধনুর বেগুনী বর্ণকে কেবল বর্ণালীগত বেগুনী বলা যায়,যার খুব ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য আছে।
বেগুনী বস্তু হল সেসব বস্তু যারা বেগুনী আলো নিঃসরণ করে।বর্ণালীগত বেগুনী আলো নিঃসরণকারী বস্তুকে অনেক সময় কালো ও দেখাতে পারে,কারণ আমাদের চোখ ওসব আলোর প্রতি তুলনামূলকভাবে সংবেদশুন্য হয়।যেসব একবর্ণী বাতিগুলো বর্ণালীগত বেগুনী তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিঃসরণ করে তাকে নিচের চিত্রের বৈদ্যুতিক বেগুনী আলোর মত লাগতে পারে।
মানুষ অনেক প্রাচীনকাল থেকেই বেগুনী বর্ণ ব্যবহার করে আসছে।তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো ছিল গুহাচিত্রে,যেগুলো ম্যাঙ্গানিজ ও হেমাটাইট থেকে বানানো হত।ম্যাঙ্গানিজ এখনো অস্ট্রেলিয়ান এরান্ডা মানবরা ব্যবহার করে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যগত রঞ্জক হিসেবে ত্বক রঙ করতে।এটা আবার এরিজোনার হোপি ইন্ডিয়ানরাও ব্যবহার করে। প্রাচীন যুগে সবচেয়ে পরিচিত বেগুনী-রক্তবর্ণ রঙ ছিল টাইরিয়ান বেগুনী,যা মেডিটেরানিয়ান এর কাছাকাছি পাওয়া ম্যুরেক্স নামক সামুদ্রিক শামুক থেকে তৈরী করা হত। পাশ্চাত্য পলিনেশিয়ার অধিবাসীরা টাইরিয়ান বেগুনীর মতই এক প্রকার বেগুনী রঙ বানাত সামুদ্রিক শজারু থেকে।মধ্য আমেরিকার অধিবাসীরা পরপুরা নামক সামুদ্রিক শামুক থেকে আরেক প্রকার বেগুনী রঙ বানাত,যা কোস্টারিকা এবং নিকারাগুয়ার কাছে পাওয়া যেত।মায়ানরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য বেগুনী রঙ বানাত,আর এজটেক্সরা বানাত চিত্রলিপি বানাতে,যা তাদের আভিজাত্যের পরিচয় বহন করত।[20]
মধ্যযুগে বিভিন্ন চিত্রকররা নীল ও লাল মিশিয়ে বেগুনী অথবা রক্তবর্ণ তৈরী করত।সাধারণত তারা নীল এজোরাইট অথবা নীলকান্তমণির সাথে লাল গৈরিক,হিঙ্গুল বা সিঁদুর ব্যবহার করত।তারা অনেক সময় রঙ ও পাউডার মিশিয়ে হৃদবর্ণ ও তৈরী করত ওয়াড বা ইন্ডিগো রঙ মিশিয়ে (নীলের জন্যে),অথবা টকটকে লাল রজক (লালের জন্যে)।[20] অরসিন অথবা বেগুনী মস ছিল আরেকটি সাধারণ বেগুনী রঞ্জক।গ্রিক ও হিব্রুরা এটি জানত যে এটি আর্চিল নামক মেডিটারনিয়ান শৈবাল (Roccella tinctoria) এবং একটি এমোনিয়াক (সাধারণত মূত্র) থেকে পাওয়া যায়।অরসিন ঊনবিংশ শতাব্দীতে জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে,যখন বেগুনী ও রক্তবর্ণ শোকপ্রকাশের রঙ হয়ে উঠে (কেউ বিধবা হলে তাকে কিছুদিনের জন্য কালো কাপড় পরানো হত,তারপর তাকে সাধারণ পোশাক পরানোর আগে বেগুনী কাপড় পরানোর রীতি ছিল।[21]
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ড,ফ্রান্স ও জার্মান রসায়নবিদরা প্রথম সিন্থেটিক বর্ণ তৈরী করতে শুরু করে।তখন দুটি জনপ্রিয় রক্তবর্ণ তৈরি হয়।কোডবিয়ার অর্কিল শৈবাল থেকে পাওয়া যেত যা দিয়ে ওল এবং সিল্ক রঙ করা যেত মর্ডান্ট ব্যবহার ছাড়াই।কোডবিয়ার তৈরি করেন স্কটল্যান্ড এর ড. কাথবার্ট গর্ডন,১৭৫৮ সালে।প্রথমে শৈবালকে এমোনিয়াম কার্বনেট দ্রবণে ফোটানো হয়।তারপর একে ঠান্ডা করে এমোনিয়া মেশানো হয় এবং সেটাকে ৩-৪ সপ্তাহ স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে রাখা হয়।তারপর সেই শৈবালকে শুকিয়ে গুঁড়া করা হয়।এর তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়,সেজন্য এর চারপাশে ১০ ফুট উচু দেয়াল তোলা থাকে,এবং সকল শ্রমিকদের গোপনীয়তার জন্য শপথ করানো হয়।
ফ্রেঞ্চ রক্তবর্ণ প্রায় একই সময়ে ফ্রান্সে তৈরী হয়।শৈবালকে মূত্র অথবা অন্য এমোনিয়াক দ্বারা অধঃক্ষিপ্ত করা হয়।সেই অধঃক্ষেপ এসিডীয় করা হয় আর তাতে রঙ অধঃক্ষিপ্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।।তারপর একে আবার এমোনিয়াতে দ্রবীভূত কয়া হয় এবং একে বাতাসের উপস্থিতিতে তাপ দেয়া হয় যতক্ষণ পর্যন্ত তা রক্তবর্ণ না ধারণ করবে।তারপর একে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড দ্বারা অধঃক্ষিপ্ত করা হয়।এই রঙ অন্যগুলোর চেয়ে ভাল ও স্থায়ী হয়।
কোবাল্ট বেগুনী একটি সিন্থেটিক রঞ্জক যা ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় শেষভাগে পাওয়া যায়।এটা তৈরির পদ্ধতি অনেকটা কোবাল্ট নীল,সিলোরিয়ান নীল ও কোবাল্ট সবুজ এর মতোই।এই রঙটি, এবং ম্যাঙ্গানিজ বেগুনী রঙটি, চিত্রকরেরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকে।
মভেন,যাকে এনিলিন বেগুনী এবং পার্কিন মভ নামেও ডাকা হয়,প্রথম তৈরী সিন্থেটিক জৈব রাসায়নিক রঙ ছিল,[22][23] যা ১৮৫৬ সালে ভাগ্যক্রমে সৃষ্টি হয়। ১৯৫৯ এর দিকে কুইনাক্রিডন নামক বেগুনী সিন্থেটিক জৈব রঞ্জকের গ্রুপ বাজারে আসে।এটি ১৮৯৬ এ পাওয়া যায়,কিন্তু ১৯৩৬ পর্যন্ত বানানো হয়নি এবং ১৯৫০ পর্যন্ত তৈরী শুরু হয়নি।এই গ্রুপটির রঙ গাঢ় লাল থেকে বেগুনী পর্যন্ত ছিল।তাদের আণবিক সংকেত ছিল C12H12N2O2।তাদের তীব্র সূর্যালোক প্রতিরোধী ছিল,এবং এদের তৈলচিত্র,জলরঙ, এবং এক্রাইলিক এ ব্যবহার করা হত।এছাড়া গাড়ির কোটিং ও বাণিজ্যিক কোটিংয়েও ব্যবহার করা হত।
ইউরোপ ও আমেরিকায় বেগুনী খুব একটা জনপ্রিয় না।ইউরোপে একটি সমীক্ষা হতে দেখা গেছে ৩% এর মতো নারী ও পুরুষ নীল,সবুজ,লাল,কালো,হলুদ এর পর বেগুনীকে পছন্দের রঙ বলেছেন,যার ফলে এটি কমলার মত অবস্থানে আছে।১০% লোক একে সবচেয়ে কম পছন্দের রঙ বলেছেন,কেবল বাদামী,গোলাপি ও মেটে রঙই এর পরে ছিল।[8]
রোমান রাজাদের অবস্থা,রাজা ও রাজপুত্রদের পরিধানযোগ্য পছন্দের বর্ণ হবার ফলে রক্তবর্ণ ও বেগুনী আরামদায়কের সাথে যুক্ত হয়ে যায়।বিভিন্ন আরামপ্রদ জিনিশ যেমন ঘড়ি,জুয়েলারি ইত্যাদিকে বেগুনী মখমলের বাক্সে মোড়ে দেয়া হত।কারণ এটি ছিল হলুদের পূরক বর্ণ,তাই কিছুটা স্বর্ণাভ দেখাত।
যেখানে ক্যাথলিক চার্চ বলেছিল বেগুনী মনুষ্যত্বের প্রতীক,সেখানে সাধারণ সমাজে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।ইউরোপে ২০০০ সালের একটি ভোটে দেখা যায় এই রঙটি সবচেয়ে বেশি বলা হয় অসারত্বের জন্য।[24] যেহেতু এটি প্রকৃতিতে খুব একটা পাওয়া যায়না,এবং এটির প্রকৃতি মন কাড়ে,তাই একে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও অপব্যয় এর প্রতীক ও বলা হয়।
জরিপ থেকে জানা যায়,এটি অস্পষ্টতা ও বিরোধের প্রতীক।
জাপানে বেগুনী রঙটি হাইয়ান পিরিয়ডএ (৭৯৪-১১৮৫) এ পরিচিত হবার পর জনপ্রিয়তা লাভ করে।ঐ রঙটি একটি আলকানেট চারাগাছ (Anchusa officinalis) থেকে বানান হত,যাকে জাপানে মুরাযাকি নামে ডাকা হয়।প্রায় একই সময়ে জাপানিজ চিত্রকরেরা একই চারাগাছ থেকে তৈরী রঞ্জক ব্যবহার করত।[25]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.