Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সামগ্রিকভাবে বুধের পৃষ্ঠতল অনেকটা চন্দ্রের মত, এতে চাঁদের মত সাগর (mare) এবং খাদ রয়েছে। এ ধরনের গঠন থেকে বোঝা যায় বুধ বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে ভূতাত্ত্বিকভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। বুধের ভূ-তত্ত্ব বোঝার জন্য আমাদেরকে কেবল একটি মাহাকাশ অভিযানের উপর নির্ভর করতে হয়। এজন্য পার্থিব গ্রহসমূহের মধ্যে এটি সম্বন্ধে সবচেয়ে কম জানা গেছে। বুধের পৃষ্ঠতলীয় বিষয়সমূহ নিম্নোক্ত নামগুলোর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়:
সৃষ্টির পরপরই বুধ গ্রহে বিপুল পরিমাণ ধূমকেতু এবং গ্রহাণু আঘাত হানে। আঘাতের এই সময়টি লেট হেভি বম্বার্ডমেন্ট (late heavy bombardment) নামে পরিচিত। আজ থেকে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। আঘাতের এই সময়টিতে বুধের সমগ্র ভূ-তল আক্রান্ত হয়। উপরন্তু এর কোন বায়ুমণ্ডল না থাকায় আঘাতের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। তখন গ্রহটি আগ্নেয়ভাবে সক্রিয় ছিল। বুধের অনেকগুলো অববাহিকা যেমন ক্যালরিস অববাহিকা তখন গ্রহের ভিতর থেকে বের হয়ে আসা ম্যাগমা দ্বারা পূর্ণ ছিল। এর ফলে গ্রহে সুষম তলের সৃষ্টি হয় যা অনেকটা চাঁদের সাগরের মত।
বুধের খাদসমূহ কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। এখন পর্যন্ত জানা মতে সর্ববৃহৎ খাদের মধ্যে রয়েছে ক্যালরিস অববাহিকাগুলো (caloris basin)। এদের ব্যাস প্রায় ১৩০০ কিমি। তবে স্কিনাকাস অববাহিকার ব্যাস আরও বেশি, প্রায় ১৬০০ কিমি। অবশ্য মেরিনারের মাধ্যমে এগুলোর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। পৃথিবী থেকে তোলা ছবির ভিত্তিতে এই পরিমাপ করা হয়েছে। যে সংঘর্ষের কারণে ক্যালরিস অববাহিকাগুলো সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো এতটাই শক্তিশালী যে, এদের কারণে প্রচুর লাভা উদ্গীরণ ঘটে এবং প্রায় ২ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত একটি ঘনকেন্দ্রিক বলয়ের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ খাদগুলোকে কেন্দ্র করে এই বলয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। ক্যালরিস অববাহিকার প্রতিপাদস্থানসমূহে একটি বৃহৎ অঞ্চলের সৃষ্টি হয় যা স্বাভাবিকের চেয়ে আলাদা। এই পর্বতসমৃদ্ধ ভূমিখণ্ডটি এ কারণে "অলৌকিক ভূমিখণ্ড" নামে সুপরিচিত। এ ধরনের ভূমিরুপ সৃষ্টির কারণ হিসেবে একটি প্রকল্পে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় সৃষ্ট অভিঘাত তরঙ্গ সমগ্র গ্রহে ছড়িয়ে পড়ে এবং যখন তারা ক্যালরিস অববাহিকার প্রতিপাদস্থানসমূহে অভিমুখে মিলিত হয় (একে অন্যের সাথে ১৮০ ডিগ্রী কোণে, যেহেতু দুটি প্রতিপাদস্থান দুই বিপরীত বিন্দুতে থাকে), তখন এত উচ্চ চাপ প্রয়োগ করে যে গ্রহের পৃষ্ঠতলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।[1] অন্য একটি প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে, ইজেক্টাগুলো এই অববাহিকার প্রতিপাদস্থানসমূহে মিলিত হওয়ার ফলে এ ধরনের ভূমিরুপ সৃষ্টি হয়েছে।
বুধ গ্রহের সমতল ভূমির দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বয়স সীমা রয়েছে: অপেক্ষাকৃত কম বয়স্ক সমভূমিটিতে খাদের সংখ্যা কম। কারণ সম্ভবত এই ভূমি সৃষ্টি হয়েছে লাভা দ্বারা পূর্ববর্তী ভূমিখণ্ডগুলো আবৃত হয়ে যাওয়ার পর। সমতল ভূমিসমূহের একটি অস্বাভাবিক বিষয় হচ্ছে এদের মধ্যে আড়াআড়িভাবে বিপুল সংখ্যক সংকোচনজনিত ভাজ রয়েছে। ধারণা করা হয়, যখন গ্রহের অভ্যন্তরভাগ শীতল হচ্ছিল তখন তা সংকৃচিত হতে শুরু করে এবং এর ফলে এর পৃষ্ঠতল পুনরায় ভিন্নভাবে গঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে ভাজগুলোর সৃষ্টি হয়। এই ভাজগুলো উপর থেকে খাদ বা সমভূমির চেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এ থেকে বোঝা যায় ভাজগুলো অপেক্ষাকৃত নবীন।[2] সূর্য দ্বারা উত্থিত জোয়ার-ভাটার কারণে সৃষ্ট বিস্ফোটের পরিণতি হিসেবে বুধ গ্রহের পৃষ্ঠতল বিভিন্ন বাঁক নেয়। চাাঁদের প্রভাবে পৃথিবীতেও এ ধরনের বিস্ফোট ঘটে। তবে বুধের স্ফীতি পৃথিবীর চেয়ে ১৭% বেশি।[3] চাঁদের মত বুধের পৃষ্ঠতল মহাশূন্য ওয়েদারিং প্রক্রিয়ার প্রভাবগুলো দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আক্রান্ত হয়েছে। সৌর বায়ু এবং ক্ষুদ্র উল্কা দ্বারা বারংবার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় এর প্রতিফলন অনুপাত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে এবং পৃষ্ঠের প্রতিফলন ধর্ম হ্রাস পেয়েছে।
বুধ গ্রহের পৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ৪৫২ কেলভিন (৩৫৩.৯°ফারেনহাইট, ১৭৮.৯°সেলসিয়াস)। তবে এই মান স্থানভেদে ৯০ কেলভিন থেকে ৭০০ কেলভিনের মধ্যে উঠানামা করে। দেখা যাচ্ছে বুধ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬১০ কেলভিন পর্যন্ত উঠানামা করে যেখানে পৃথিবীতে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৮০ কে পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে। এর মূল কারণ বুধের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। পৃথিবীর তুলনায় বুধ পৃষ্ঠে সূর্য রশ্মির তীব্রতা ৬.৫ গুণ বেশি। তবে এই সমানুপাতিক সম্পর্কের মধ্যে একটি সৌর ধ্রুবক রয়েছে যার মান ৯.১৩ কিলোওয়াট/বর্গমি.।
বুধ পৃষ্ঠের এত উচ্চ তাপমাত্রা দেখে মনে হতে পারে এতে বরফ থাকার কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও হলেও এটি সত্যি যে, বৃধ গ্রহে বরফ থাকতে পারে। মেরুর নিকটে অবস্থিত কিছু গভীর খাদের সমতলে সূর্য রশ্মি কখনও সরাসরি পৌঁছায় না। এতে সেখানকার তাপমাত্রা সবসময়ই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। এতে বরফের সৃষ্টি হয়। পানি থেকে সৃষ্ট বরফ রাডারের সংকেতগুলোকে তীব্রভাবে প্রতিফলিত করে। এ কারণে বুধে বরফের অস্তিত্ব রাডার সংকেতের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়। বুধ গ্রহের মেরুর সন্নিকটে অবস্থিত বরফ খণ্ড পৃথিবী থেকে প্রেরিত রাডার সংকেতকে প্রতিফলিত করেছে।[4] এই প্রতিফলনের কারণ বরফ ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এটি বরফ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিশ্বাস করা হয় বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলগুলোতে আবরণের পুরুত্ব মাত্র কয়েক মিটার এবং এই আচ্ছাদনে ১০১৪ – ১০১৫ কেজির মত বরফ রয়েছে। পৃথিবীর ও মঙ্গলের সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে। পৃথিবীর এন্টার্কটিকায় বরফের পরিমাণ ৪×১০১৮ কেজি এবং মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে বরফের পরিমাণ প্রায় ১০১৬ কেজি। বুধ গ্রহে বরফের উৎপত্তির কারণ সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি, তবে দুইটি সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রকট: প্রথমত, গ্রহের অভ্যন্তরভাগ থেকে পানির outgassing এবং দ্বিতীয়ত, ধূমকেতুর সাথে সংঘর্ষের ফলে জমা হওয়া বস্তু।[5]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.