Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বামিয়ান শহর হল আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশের প্রধান শহর ও রাজধানী। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের এটি অন্যতম। দেশের রাজধানী কাবুল থেকে ২৩০ কিলোমিটার বা প্রায় ১৪৪ মাইল উত্তরপশ্চিমে বামিয়ান উপত্যকায় এই শহরটি অবস্থিত। ১৯৬৪ সালে যখন পূর্ববর্তী কাবুল ও পারোয়ান প্রদেশের অংশবিশেষ নিয়ে এই প্রদেশটি তৈরি করা হয়[2] , তখন এই শহরকেই তার প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। বর্তমান জনসংখ্যার হিসেবে শহরটি যথেষ্ট ছোট হলেও, এর ইতিহাস সুপ্রাচীন। তাছাড়া শহরটির অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বও উপেক্ষণীয় নয়।
বামিয়ান بامیان | |
---|---|
আফগানিস্তানে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৩৪°৪৯′ উত্তর ৬৭°৪৯′ পূর্ব | |
দেশ | Afghanistan |
প্রদেশ | বামিয়ান প্রদেশ |
উচ্চতা | ২,৪০০ মিটার (৮,০০০'"`UNIQ--ref-০০০০০০০৩-QINU`"' ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১৩) | |
• মোট | ৮০,৯০০[1] |
সময় অঞ্চল | UTC+4:30 |
মূল নিবন্ধ - বামিয়ান উপত্যকা
হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও তারই একটি শাখা, সুউচ্চ কো-ই-বাবা পর্বতমালার সংযোগস্থলে দুই পর্বতমালার মধ্যবর্তী উপত্যকায় বামিয়ান শহরের অবস্থান। উত্তরে ও দক্ষিণে শহরটি তাই দুই পর্বতমালার প্রায় ১৫০০০ ফিট উঁচু বরফঢাকা শৃঙ্গগুলি দিয়ে ঘেরা। হিমবাহ ও নদীবাহিত ক্ষয়কার্য ও পলিসঞ্চয়ের ফলে তিনটি স্তরে পলি পড়ে গড়ে ওঠা যে সমপ্রায় সবুজ উপত্যকায় এর অবস্থান, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তার গড় উচ্চতা ৮০০০ ফিট বা প্রায় ২৪০০ মিটার।[3][4][5] ভূতাত্ত্বিক মতে মহাদেশীয় প্লেট বা টেকটনিক উত্থানের ফলেই উচ্চভূমি রূপে অনেক লম্বা একটি চ্যূতির অংশ হিসেবে এই উপত্যকার উত্থান ঘটে।[5] শহরের অদূর দিয়েই বয়ে চলে বামিয়ান নদী। সমগ্র উপত্যকার মূল নদী এটিই। এছাড়া শহরের ঠিক পাশেই অবস্থিত সুবিখ্যাত বামিয়ানের ঐতিহাসিক পর্বতগাত্রটি, ২০০১ সালের মার্চ মাসে তালিবানদের হাতে ধ্বংস হওয়া প্রায় ১৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বুদ্ধমূর্তিদুটি[3], অসংখ্য কৃত্রিম গুহা ও বৌদ্ধ মঠের কল্যাণে আজ যা পৃথিবীবিখ্যাত।
এই শহর তথা উপত্যকার ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে এই উপত্যকা ছিল পারস্যের হাখমানেশি সাম্রাজ্যের অধীন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে আলেকজান্ডারও তার হিন্দুকুশ অঞ্চলে অভিযানের সময় খুব সম্ভবত এই উপত্যকায় এসেছিলেন।[6] তবে কুষাণ আমলেই সম্ভবত শহরটি গড়ে ওঠে। এই সময় ঐতিহাসিক রেশম পথ ধরে বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে ও খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শতকের মধ্যে অনেকগুলি বৌদ্ধ মঠ, বিহার ও স্তূপ গড়ে ওঠে। দীর্ঘ বাণিজ্য পথের মধ্যবর্তী বিশ্রামস্থল এবং বৌদ্ধ ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চা কেন্দ্র হিসেবে এইসময়েই এই শহরটির উত্থান ঘটে।[7][8] চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন (৩৩৭ খ্রিঃ - ৪২২ খ্রিঃ), হিউয়েন সাঙ (৬০২ - ৬৬৪), কোরিয় সন্ন্যাসী হায়েচো(৭০৪-৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দ), প্রমুখর বিবরণেও আমরা এই শহরের উল্লেখ পাই।[4][9][10]
৭ম খ্রিষ্টাব্দে এখানে আরবদের আগমণ ঘটলেও তারপরও প্রায় ২৫০ বছর এখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বজায় ছিল। কিন্তু গজনির সুলতান মামুদের আমলে (৯৯৭ - ১০৩০ খ্রিঃ) এই উপত্যকার পুরোপুরি ইসলামীকরণ সম্পূর্ণ হয়। এরপর ঘুরি বংশের শাসনকালে এক বিস্তৃত রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এই শহর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।[9] ঘুরিদের পতনের পর স্বল্প সময়ের জন্য এই শহর উত্তরের খরেজম সাম্রাজ্যের অধীন হয়ে পড়ে। কিন্তু ১২২১ খ্রিষ্টাব্দে মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিজ খানের আক্রমণের ভয়াবহতায় শহরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় ও এখানকার সমস্ত অধিবাসীরা গণহত্যার শিকার হয়। এরপর অন্তত চল্লিশ বছর এই অঞ্চলে পুনরায় আর কোনও জনবসতি গড়ে ওঠেনি।[11] তবে পরবর্তীকালে বাবরের লেখা বাবরনামায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে আবার আমরা এর উল্লেখ দেখতে পাই। কিন্তু রেশম পথ ধরে বাণিজ্য এই সময় থেকে অনেক কমে আসায় শহরটির আগের গুরুত্ব আর কখনোই পুনরুদ্ধার হয়নি।
বামিয়ানের ঐতিহ্যবাহী পর্বতগাত্রটি থেকে একটু দূরেই অবস্থিত আজকের এই ছোট্ট শহরটিই উপত্যকায় বর্তমানে একমাত্র শহর। ছোট্ট এই শহরটিতে ১৯৭৯ সালেও লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩৫৫ জন। এত ছোট হওয়া সত্ত্বেও ১৯৬৪ সালে নতুন তৈরি জনবিরল প্রদেশটির প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এই শহরটিকেই নির্বাচন করা হয়। এরপর থেকেই এই শহরটি প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে দ্রুত বেড়ে উঠতে শুরু করে। এছাড়া এই শহরেই উপত্যকার মূল বাজারটিও অবস্থিত। ব্যস্ত এই বাজারটিতে ১৯৭৯ সালে ৩০০-৪০০টি দোকান ছিল। তখন সপ্তাহে দু'দিন - সোমবার ও বৃহস্পতিবার, এই বাজার বসত। ঐ দু'দিন সারা উপত্যকা থেকে এখানে মানুষের সমাগম ঘটত।[12] শহরটি একটিমাত্র মূল রাস্তার দু'পাশে গড়ে ওঠে। তবে এই গড়ে ওঠার নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনার ছাপ এর চেহারার মধ্যে পাওয়া যায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শহরটির নাগরিক পরিষেবা খুব উন্নত মানের নয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানী গ্যাস ও জলের জোগান যথেষ্ট অনিয়মিত। যাতায়াতের সুবিধা বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক উন্নত, তবে প্রয়োজনের তুলনায় এখনও তা যথেষ্টই কম ও অপ্রতুল। শহরের নিকটে একটি ছোট বিমানবন্দর আছে বটে, কিন্তু তার রানওয়ে বাঁধানো নয়। সেখানে অনিয়মিত কিছু বিমান ওঠানামা করে। ২০১৩ সালের হিসেবেও সমগ্র উপত্যকাটির জনসংখ্যা মাত্র ৮০,৯০০ জন।[1]
এই উপত্যকার মূল অধিবাসী হাজারা উপজাতির মানুষদের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হল এই শহর। হাজারা উপজাতির বাসভূমি হজরজৎ'এর একেবারে কেন্দ্রস্থলে এর অবস্থান। এখানে বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে উঠেছে। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের প্রাচূর্যের কারণে এই শহরের পর্যটন শিল্প বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করার সম্ভাবনা আছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.