Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ফিদিয়া (আরবি: الفدية) এবং কাফফারা (আরবি: كفارة) এমন অসুস্থ বা বৃদ্ধ ব্যক্তি, যার সুস্থতার আশা করা যায় না অথবা যদি কোনো ব্যক্তি রোযার কাযা আদায় না করে মারা যায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে রোযার ফিদিয়া আদায় করতে হবে।
এই অনুদান খাদ্য বা টাকা হতে পারে এবং এটা অভাবীদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দ দুইটি আল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আল কুরআন দুটি শব্দকে আলাদা করা হয়েছে, তবে একটি ধারণা উভয় শব্দকে একীভূত করে দেয়। কিছু অনলাইন সংস্থার মতে ফিদিয়া এবং কাফফারার বিকল্প কিছু রয়েছে।[1]
ফিদিয়া (এছাড়াও ফিদ্যা নামেও পরিচিত) হল অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য অর্থ বা খাবার সমন্বিত একটি ধর্মীয় অনুদান। যখন কেউ অসুস্থ বা বেশি বয়স্ক (বৃদ্ধ বা অল্প বয়স্ক) হয়, প্রয়োজনীয় সংখ্যক দিনের জন্য রোজা বা উপবাস করতে পারে না এবং রোজা বা উপবাস রাখতে সক্ষম হন না তখন ফিদিয়া দেওয়া হয়।[2] রমজানে প্রতিটি রোজা বাদ পড়ার জন্য ফিদাই দিতে হবে।[1] তবে, যদি কেউ অসুস্থ থাকার কারণে বা সফরে যাওয়ার কারণে তাদের রোজা না রাখে, তবে তার জন্য ফিদাই দিতে হবে না। তবে কুরআনে বর্ণিত অনুযায়ী পরবর্তী তারিখে রোজা রাখতে হবে।[3]
সাধারণ অসুস্থতায় যদি সুস্থ হয়ে রোজা কাজা আদায় করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করতে হবে। আর যদি এমন অসুস্থতা হয় যা সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো সম্ভাবনা না থাকে বা কম থাকে অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা পালনে সম্পূর্ণ অক্ষম হন, তাহলে প্রতি রোজার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ ফিদইয়া দিতে হবে। ফিদইয়া হলো একজন লোকের এক দিনের খাবারের সমান। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)[4] জাকাত-ফিতরা যাদের দেওয়া যায়, ফিদইয়া তাদের দিতে হয়। ফিদইয়া এককালীন বা একসঙ্গেও আদায় করা যায়। একজনের ফিদইয়া অনেককে দেওয়া যায়, আবার অনেকের ফিদইয়া একজনকেও দেওয়া যায়। অনুরূপ এক দিনের ফিদইয়া একাধিক জনকে দেওয়া যায়, একাধিক দিনের ফিদইয়া একজনকে দেওয়া যায়। যাকে ফিদইয়া দেওয়া হবে, তার রোজাদার হওয়া জরুরি নয়। যেমন নাবালেগ মিসকিন, অসহায় অসুস্থ বা অতিবৃদ্ধ, যারা নিজেরাই রোজা পালনে অক্ষম, তাদেরও জাকাত, ফিতরা ও সদকার মতো ফিদইয়া প্রদান করা যাবে। ফিদইয়া প্রদানের পর সুস্থ হলে এবং রোজা রাখতে সক্ষম হলে পুনরায় রোজা কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া রশিদিয়া)।ফিদইয়া ও কাফফারা দেওয়া যাবে যাঁরা জাকাত ও ফিতরা তথা ফরজ ও ওয়াজিব সদকা গ্রহণ করতে পারেন। যথা ‘ফকির, মিসকিন, সদকা কর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদ ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফিরের জন্য।’ (সুরা-৯ [১১৩] তাওবাহ (মাদানি), রুকু: ৮/১৪, আয়াত: ৬০, পারা: ওয়ালামু-১০, পৃষ্ঠা ১৯৭/১৫)।
কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একাধিকবার একই রমজানের রোজা ভাঙার কারণে এক কাফফারাই যথেষ্ট। অর্থাৎ ভেঙে ফেলা সব রোজার জন্য ৬০ জন মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়াবে, অথবা প্রতি মিসকিনকে এক ফিতরা পরিমাণ সম্পদ সদকার মাধ্যমেও কাফফারা আদায় করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০১, রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৩[5]
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার কাজাকৃত রোজার কাফফারা হিসেবে অন্য কারো রোজা রাখার বিধান নেই। তবে মৃত্যুকালে সে ব্যক্তি ফিদইয়া প্রদানের অসিয়ত করলে (যা পূর্ণ করা ওয়াজিব) তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ মাল থেকে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি। অসিয়ত না করলে ফিদইয়া দেয়া জরুরি নয়। তবে বালেগ ওয়ারিসরা নিজ নিজ অংশ হতে তা আদায় করলে আদায় হওয়ার আশা করা যায়। -আল জাওহারাতুন নায়্যিরাহ: ১/১৪৩, আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২৪[5]
কাফফারা (কাফফরাহ নামেও পরিচিত) হল অভাবগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য অর্থ বা খাবার সমন্বিত একটি ধর্মীয় অনুদান। যখন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন রোজা বাদ দেয় বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে রোজা ভঙ্গ করে (যেমন সহবাস করা বা খাবার খাওয়া) তখন কাফফারা দেওয়া হয়।[2]
রমজানের রোজা রাখার পর কেউ যদি অনুমোদিত কারণ ব্যতীত রোজা ভেঙে ফেলে, তবে তার ওপর ওই রোজার কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব হয়। রমজানের রোজা ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল; ইসলামের স্তম্ভ। তাই রমজানের রোজা রাখার পর বিনা ওজরে তা ভেঙে ফেলার অপরাধকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে। আল্লাহর বিধান নিয়ে খামখেয়ালি বন্ধ করার জন্য ইসলাম এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছে। যেন রমজানের রোজা রাখার পর কেউ তা ভাঙার চিন্তাও না করে। এ শাস্তির নাম হলো কাফফারা[6]।রমজানের রোজা ভাঙার কাফফারা হলো, ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা রাখা। কাফফারার উদ্দেশ্যে, কতগুলো রোজা রাখার পর যদি ঈদের কারণে বা অসুখের কারণে বা সন্তান প্রসবের কারণে বা অন্য কোনো কারণে রোজা রাখার ধারাবাহিকতা ছুটে যায়, তবে পেছনের রোজাগুলো কাফফারা হিসেবে ধর্তব্য হবে না। সমস্যা দূর হওয়ার পর আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে এবং ধারাবাহিকভাবে একটানা ৬০টি রোজা পূর্ণ করতে হবে। তবে নারীদের মাসিক স্রাবের কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে নতুন করে শুরু করতে হবে না। কারও যদি ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা রাখার দৈহিক সামর্থ্য না থাকে, তবে সে ৬০ জন গরিবকে দু'বেলা পেট পুরে খাওয়াবে। অথবা প্রত্যেককে এক ফিতরা সমান, অর্থাৎ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা তার মূল্য দান করবে[6]।
কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একাধিকবার একই রমজানের রোজা ভাঙার কারণে এক কাফফারাই যথেষ্ট। অর্থাৎ ভেঙে ফেলা সব রোজার জন্য ৬০ জন মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়াবে, অথবা প্রতি মিসকিনকে এক ফিতরা পরিমাণ সম্পদ সদকার মাধ্যমেও কাফফারা আদায় করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০১, রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৩ বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফে সহিহ রিওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে: একদা রমজানে এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছি, আমি রোজা পালন অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি একজন দাসকে মুক্ত করে দাও। সে বলল, এমন সক্ষমতা আমার নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তবে এর বদলে দুই মাস (বা ৬০ দিন) রোজা রাখো। লোকটি বলল, এমন শারীরিক সক্ষমতা আমার নেই। তখন তিনি (সা.) বললেন, তবে তুমি ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়াবে। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এ রকম আর্থিক সক্ষমতাও তো আমার নেই। তখন তিনি (সা.) তাঁকে অপেক্ষা করতে বললেন। এর কিছুক্ষণ পর কোনো একজন সাহাবি রাসুল (সা.)-কে এক ঝুড়ি খেজুর হাদিয়া দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই লোকটিকে ডেকে বললেন, এগুলো নিয়ে গিয়ে গরিবদের মধ্যে সদকাহ করে দাও। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্র এলাকায় আমার মতো গরিব আর কে আছে? এ কথা শুনে রাসুলে করিম (সা.) স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হাসলেন। তিনি (সা.) বললেন, ‘আচ্ছা, তবে খেজুরগুলো তুমিই তোমার পরিবার নিয়ে খাও।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর: ১৩৩৭, মুসলিম, হাদিস নম্বর: ১১১১)[4]।
ফিদিয়া এবং কাফফারাকে নিচে উল্লেখিত আয়াতের মাধ্যমে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে:
গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য (যেমন বৃদ্ধ মানুষ) অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে (রোজা রাখার বিকল্প হিসেবে) একজন মিসকীনকে (দরিদ্র ব্যক্তিকে) খাদ্যদান (প্রতিটি দিনের জন্য) করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। (সূরা আল-বাকারা; আয়ার: ১৮৪)[7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.