Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ফাতিমার গৃহে উমর (আরবি: حادثة حرق الدار أو حادثة كسر الضلع) বলতে একটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে নির্দেশ করা হয়, যা ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের নবি মুহাম্মদের মৃত্যুর অনতিবিলম্বে তাঁর কন্যা ফাতিমার গৃহে সংঘটিত হয়েছিল। প্রখ্যাত সাহাবি উমর ইবনুল খাত্তাব একটি দল নিয়ে সকীফায় সদ্য নির্বাচিত খলিফা আবু বকরের প্রতি আলী ও তাঁর অনুসারীদের আনুগত্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ফাতিমার ঘরের দিকে রওয়ানা হন। এর ফলস্রুতিতে দুটি দলের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত বাদানুবাদ তৈরি হয়।[2] এই ঘটনাটির খুঁটিনাটি সম্বন্ধে ঐতিহাসিকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
সুন্নি, শিয়া এবং পশ্চিমা অ্যাকাডেমিক গ্রন্থে এই ঘটনাটির উল্লেখ রয়েছে। শিয়া সূত্রসমূহ[3] দাবি করে যে, এর ফলে ফাতিমার গর্ভস্রাব ঘটে ও গর্ভস্থ সন্তান মুহসিন ইবনে আলীর মৃত্যু ঘটে[4][5] এবং এর ফলে পরবর্তীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[6] যদিও এর সত্যতা সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে, তথাপি এই ঘটনাটিকে সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের বিচ্ছেদের অন্যতম প্রাথমিক কারণ হিসেবে দেখা হয়।[7]
মুহম্মদের মৃত্যুর অনতিবিলম্ব পরে বনু সাঈদা গোত্রের সকীফা প্রাঙ্গণে আনসারদের (মদিনার স্থানীয় বাসিন্দা) একটি জনসভা বসে।[8] তখনকার সাধারণ বিশ্বাস ছিল যে, সভাটির উদ্দেশ্য ছিল মুহাজিরদের (মক্কার অভিবাসী) ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে আনসারদের নিজেদের মধ্যে থেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন নতুন নেতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, যদিও এটি তখন থেকেই একটি বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়।[9] তবে নবীর বিশিষ্ট দুই সাহাবি আবু বকর ও উমর বৈঠকটির ব্যাপারে জানতে পেরে একটি সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করেন এবং তড়িঘড়ি করে সেখানে যান। আংশিক উত্তপ্ত বিতর্কের পর আবু বকর চূড়ান্তভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের নতুন খলিফা হিসেবে সমবেত জনতার দ্বারা নির্বাচিত হন।[10]
যদিও তাঁর ক্ষমতারোহণ সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছিল, আবু বকর তাঁর নির্বাচনের তাড়াহুড়ো প্রকৃতির ফলে বিতর্কের সম্মুখীন হন। বেশ কয়েকজন সাহাবা, যাঁদের মধ্যে আলী ইবনে আবী তালিব ছিলেন অন্যতম, প্রাথমিকভাবে তাঁর কর্তৃত্বকে অস্বীকার করেন।[8] নবীর চাচাতো ভাই ও জামাতা হওয়াতে আলী নিজেই সম্ভবত নেতৃত্ব গ্রহণের প্রত্যাশা করেছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে আলীর একটি ক্ষুদ্র সমর্থকগোষ্ঠীও ছিল।[11] শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে এটিও প্রচলিত আছে যে, আলীকে এর আগেই মুহাম্মদ তাঁর কাঙ্ক্ষিত স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনীত করে গিয়েছিলেন, যদিও সুন্নিরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে।[12] তবে সকীফার নির্বাচনে আলীর প্রার্থিতা উত্থাপিত না হওয়ার ব্যাপারে ঐতিহাসিকেরা একমত।[13]
সকীফার সমাবেশের পর নবনির্বাচিত খলিফা আবু বকর উমর (যিনি ছিলেন আবু বকরের সমর্থকদের অন্যতম) ও তাঁর একদল সমর্থককে ফাতিমার বাড়িতে পাঠান যেখানে আলী, ফাতিমা এবং তাঁদের কিছু সমর্থক জড়ো হয়েছিল।[14] আত তাবারি ও ইবনে কুতাইবার মতো একাধিক পণ্ডিতেরা বর্ণনা করেছেন যে, আলী আবু বকরের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করলে উমর ফাতিমার ঘর পুড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। আত তাবারির আরও যুক্ত করেন যে, উমরের লোকেরা এরপর আলীর সহচর জুবাইর ইবনুল আওয়ামকে মারধর করে।[15][16][17][18] আল-ইমামাহ ওয়া আস-সিয়াসাহ (যা ইবনে কুতাইবার লেখা বলে দাবি করা হয়) অনুসারে,[19] উমরকে যখন ঘরের ভিতরে ফাতিমার উপস্থিতি সম্পর্কে অবগত করা হয়, তখন তিনি এই বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যে, তাঁর উপস্থিতি এক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য তৈরি করে না।[20][21]
অন্যদিকে ইতিহাসবিদ আল-বালাজুরী বলেছেন যে, এই বিভাজনটি কখনই হিংসাত্মক হয়ে ওঠেনি এবং আলীর আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি হয়েছিল।[22] তাবারি এই ঘটনায় ফাতিমার জড়িত থাকার ব্যাপারে কোনও উল্লেখ করেননি।[15] ১৩] কিছু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, উমর ও তাঁর সমর্থকেরা জোর করে ঘরে প্রবেশ করেন এবং এর ফলে ফাতিমার গর্ভপাত ঘটে ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তান মুহসিন মারা যায়।[23] দ্বাদশী শিয়া সূত্রসমূহে বর্ণিত রয়েছে যে, উমর জোরপূর্বক সম্মুখের দরজাটি খুলতে গেলে তা ভেঙে যায় এবং দরজার নিচে চাপা পড়ে ফাতিমার পাঁজর ভেঙে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।[3] আবার মুতাজিলা ধর্মতাত্ত্বিক ইব্রাহিম আল-নজ্জম বর্ণনা করেছেন যে, “উমর ফাতিমার পেটে আঘাত করাতে তাঁর গর্ভের সন্তানটি মারা যায়।[24] বিকল্পভাবে, ইবনে রুস্তম আত-তাবারি বলেছেন যে, কুনফুজ নামক উমরের এক সমর্থক ছিল এই গর্ভপাতের জন্য দায়ী যে তলোয়ারের খাপ দিয়ে ফাতিমাকে আঘাত করেছিল।[25] অন্যান্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে কুনফুজ তাঁকে চাবুক মেরেছিল[26] বা তাঁর মুখে আঘাত করেছিল।[27] কিতাব সুলাইম ইবনে কায়েস (সুলাইম ইবনে কায়েস কর্তৃক লিখিত বলে দাবি করা হয়, তবে সম্ভবত একটি পরবর্তী সৃষ্টি) অনুসারে,[28] আলীকে গলায় রশি বেঁধে ঘর থেকে বের করে আনা হয়েছিল।[29]
শিয়া পণ্ডিত মুহম্মদ বাকির মজলিসী তাঁর বিহার আল-আনোয়ারে লিখেছেন যে, বিবাদ চলাকালীন আঘাতের ফলে অসুস্থ হয়ে কয়েকমাস পরেই ফাতিমা মৃত্যুবরণ করেন।[6] পূর্বোক্ত আল-ইমামা ওয়া আস-সিয়াসাতে বর্ণিত হয়েছে যে, মৃত্যুর পূর্বে ফাতিমা আবু বকর ও উমরকে বলেছিলেন, “আমি আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সাক্ষী মেনে বলছি যে, আপনারা আমাকে সন্তুষ্ট করেননি; বরঞ্চ আমাকে ক্রুদ্ধ করেছেন। যখন আমি আল্লাহর রাসুলের সাথে সাক্ষাত করব, তখন আপনাদের দুজনের নামে অভিযোগ করব।”[30] মোর্তেজা মোতাহারীর মতে, তিনি মৃত্যুর আগে আলীকে রাতেরবেলা তাঁর লাশ দাফন করতে বলেছিলেন যাতে তাঁর বিরোধীদের কেউই তাঁর জানাজায় অংশ নিতে না পারে।[31]
গৃহের মধ্যে যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল তা নিয়ে শিয়া মতবাদের সহিংসতামূলক সংস্করণসহ বিভিন্ন উৎসের মধ্যে একটি বিবাদের বিষয় হয়ে উঠেছে। বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক প্রাথমিক সূত্র বলছে যে ফাতিমার শিশু মুহসীন গর্ভপাত না হয়ে ভূমিষ্ট হওয়ার পর বাল্য বয়সে মারা গিয়েছিল। ইয়াকুবী ও আল-মাসুদীর সঙ্গে আল-বালাজুরীর গবেষণা বলছে ফাতিমার সন্তানদের মধ্যে কেউই গর্ভপাতের কারণে মারা যায় নি। একইভাবে শিয়া ধর্মতত্ত্ববিদ শেখ মুফীদ লিখিত আল-এরশাদ বইটিতে গর্ভপাতের কারণে মু্হসীনের মৃত্যু হয়ে হয়েছে এই বিষয়টি কোথাও উল্লেখ করেন নি। ফাতিমার গর্ভপাতের বিষটি সম্পর্কে সর্বপ্রথম জানা গিয়েছিল দশম শতকের ইবনে কুলাওয়েহ আল-কুম্মি এর লেখা কামিল আজ-জিয়ারত বইটিতে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.