Loading AI tools
জর্মন সাহিত্যিক গ্যোটে বিরচিত একটি নাটক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ফাউস্ট জর্মন সাহিত্যিক গ্যোটে বিরচিত একটি নাটক যা ট্র্যাজেডি হিসাবে গণ্য। এটি দুই পর্বে লিখিত। এটি গ্যোথের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত সৃষ্টি; একই সঙ্গে এটি জর্মন সাহিত্যেরও সর্বাধিক আলোচিত সাহিত্যকর্ম। ফাউস্ট ১ম খণ্ড ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৮২৮-২৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি পুনর্মার্জ্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ফাউস্ট ২য় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ২য় খণ্ড প্রকাশের আগেই গ্যোথের মৃত্যু হয়।
মধ্যযুগে “ফাউস্ট” চরিত্রটি কিংবদন্তির মর্যাদা পেয়ে গিয়েছিল ইউরোপে বিভিন্ন দেশে। গল্পে-কাহিনীতে“ফাউস্ট” অথবা“ ফস্টাস” নামের একাধিক কল্পিত অথবা লোকগল্পের চরিত্রের দেখা যাওয়া যায়, তবে এদের আদি উৎস বাইবেলে বর্ণিত জাদুকর সাইমন ম্যাগাস। বাইবেলে বর্ণিত সাইমন ম্যাগাস নিষিদ্ধ জ্ঞানের চর্চা করে। সে নানা অপকর্মে শয়তানের সমর্থন লাভ করে। তবে শেষ পর্যন্ত সে খ্রিস্টধর্মে প্রত্যাবর্ন করে এবং ঈশ্বরের নিকট আত্মসমর্পণ করে। তবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাওয়াটা শেষ পর্যন্ত তার পক্ষে সম্ভব হয় না। আদিতে ফাউস্ট বা ফস্টাস চরিত্রের উত্থান ও পতনের সঙ্গে একদিকে ব্ল্যাক ম্যাজিক, অতিমাত্রার উচ্চাশা এবং ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার ধৃষ্টতা ইত্যাদিএবং এসবের অনিবার্য শাস্তি এবং অন্যদিকে গির্জার অনুশাসন, ধর্মীয় নৈতিকতা এবং ব্যক্তির দায়-দায়িত্বেরবিবিধ প্রসঙ্গ জড়িত ছিল।
১৫৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ফাউস্ট জীবনীভিত্তিক সম্ভবত প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি আখ্যান প্রকাশিত হয়, হিস্টোরিয়া ফন, ড. ইউহান ফস্টাস প্রিচ্ছদনামে। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। পরের বৎসর, ১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে, ইংরেজ নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লো তার বিখ্যাত নাটক দি ট্রাজিক্যাল হিস্ট্রি অফ ডক্টর ফস্টাস রচনা ও প্রকাশ করেন। মার্লোর গ্রন্থটিকে ইউরোপীয় রেনেসাঁস চিন্তার, যুক্তিমূলক জ্ঞানসাধনা, আত্মার স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে এক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ফস্টাস দীর্ঘদিন ফাউস্ট নামীয় কিংবদন্তির সবচেয়ে শিল্পীত প্রকাশ হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রয়ে যায়। তবে গ্যোতে রচিত “ফাউস্ট” প্রকাশের পর বলা হতে থাকে গ্যেটে ছিলেন ফাউস্ট কিংবদন্তির সফলতম রূপকার।
এ নাটকের সূত্রপাত স্বর্গে। অনুবাদ অংশে দেখুন ঈশ্বরের সঙ্গে মেফিস্টোফেলিসের কথোপকথন। স্বর্গে ঈশ্বরের সঙ্গে মেফিস্টো বাজি ধরে। মেফিস্টো বলে, ঈশ্বরের অনুগত পণ্ডিত ফাউস্টকে সে পথভ্রষ্ট করতে পারবে। কাহিনীর ঘটনাচক্রে প্রতীয়মান হয় বাজিতে আপাতদৃষ্টিতে তার জয় হয়েছে।
ঈস্টারের রবিবারে ফাউস্ট শহরের তোরণ পেরিয়ে বেড়াতে যায়, সাধারণ মানুষের জীবনের স্পর্শ পায়। এক নেড়ি কুকুরকে দেখে তার অনুকম্পা হয় এবং সে তাকে ঘরে নিয়ে আসে। সেই কুকুরটি আর কেউ না ছদ্মবেশী মেফিস্টোফিলিস। মেফিস্টো স্বরূপ ধরে ফাউস্টকে প্রলোভিত করে, তাকে এক ডাকিনীর কাছে নিয়ে যায়। ডাকিনীর হাতে তৈরি সঞ্জীবনী পানীয় খেয়ে ফাউস্টের বয়স কুড়ি বছর কমে যায়, সে তিরিশ বছরের যুবকে পরিণত হয়। তার শরীরে যৌনকামনা জাগ্রত হয়। মার্গারিটা নামের এক সাধারণ পরিবারের মেয়েকে দেখে ফাউস্ট তার প্রেমে পড়ে। মার্গারিটাকে গ্রেচেন বলেও ডাকা হয়। মেফিস্টোর সহায়তায় তার প্রেম সফল হয় এবং ফাউস্ট গ্রেচেনের সঙ্গে মিলিতও হয়। ফাউস্ট-এর সঙ্গে তার মিলনে যাতে মা বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য গ্রেচেন তার মাকেও হত্যা করে। একসময় গ্রেচেন অন্তঃসত্ত্বা হয়; কালে সন্তানের জন্ম হয়। গ্রেচেন তার সন্তানকে সে পানিতে হত্যা করে। এর আগে গ্রেচেনের ভাই ভ্যালেন্টাইন গ্রেচেনের এহেন দুর্বার স্খলনে কুপিত হয়ে ফাউস্টকে আক্রমণ করে। মেফিস্টোর সহায়তায় ফাউস্ট ভ্যালেন্টাইনকে পরাস্ত করে, শেষাবধি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু হয়।
এক সময় গ্রেচেন গ্রেপ্তার হয়, কারাগারে যায়, এবং ফাউস্ট তা জানতে পেরে মেফিস্টোর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও কারাগার থেকে গ্রেচেনকে মুক্ত করতে যায়। কিন্তু গ্রেচেন রাজি হয় না। তার কাছে প্রতীয়মান হয় কারাগার পাপমোচনের সুবর্ণ সুযোগ। গ্রেচেনকে অনমনীয় দেখে মেফিস্টো ফাউস্টের হাত ধরে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসে। মেফিস্টো বলে, ““গ্রেচেন এখন পতিত। তার পরিত্রাণ নেই।”” কিন্তু আকাশ থেকে ভেসে আসে অদৃশ্য কণ্ঠটস্বর: “না গ্রেচেন নির্বাণ পেয়েছে।” ফাউস্ট শেষ পর্যন্ত পলায়ন করে।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে দেবব্রত রেজ ফাউস্ট-এর প্রথম পর্বের একটি অনুবাদ করেছিলেন, “ফাউস্ট: বিয়োগান্ত নাটকের প্রথম পর্ব (১৭৭৩-১৮০৮)” শিরোনামে। গ্যেটের করা রেছিলেন ফাউস্ট-এর একটি খসড়ার পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রূপ এই প্রথম ভাগ। দেবব্রত রেজ ফাউস্ট বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন মূল জার্মান ভাষা থেকে। এর ফলে তার অনুবাদ মূলানুগত। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে অনুবাদ করলেও তিনি তা জীবদ্দশায় প্রকাশ করেন নি। তার মৃত্যুর পর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার ইউপিএল এই গ্রন্থটি প্রকাশ করে। তার অনুবাদ থেকে কিছু অংশ নিম্নরূপ:
|
মেফিস্টো: কী পণ রাখবেন যদি ঘটে অন্যরূপ? প্রভু: যতদিন থাকবে সে পৃথিবীতে |
মেফিস্টো: ধন্যবাদ আপনাকে, প্রভু: বেশ তাই হোক,
তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক! |
ফাউস্ট বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন আহমদ ছফা । তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ফাউস্টের অনুবাদ শুরু করেন এবং তা ধারাবহিকভাবে সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশে সক্ষম হন। [1] আহমদ ছফা লর্ড ম্যাকিন্সের ইংরেজি অনুবাদ থেকে তা বাংলা ভাষায় তর্জমা করেন। এই অনুবাদ সাহিত্যটি বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক পণ্ডিত আব্দুর রাজ্জাকের মতে আহমদ ছফার অনুবাদে গ্যোতে এবং আহমদ ছফা উভয়কেই পাওয়া যায়। আহমদ ছফা ‘ফাউস্টের’ ২য খণ্ডের অনুবাদে আর প্রবৃত্ত হন নি। তিনি বলেছেন, এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার। আহমদ ছফার অনুবাদ কাব্য সুষমামণ্ডিত। নমুনা নিম্নরূপ:
|
মেফিস্টো: বাজি রেখে বলি |
খোদা: যেমনটি ইচ্ছা তুমি চাতুরীর করো ব্যবহার |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.