ইসলামি আইন সংকলন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া (আরবি: اَلْفَتاوى اَلْهِنْدِيَّة) বা আল-ফাতাওয়া আল-আলমকিরীয়া (আরবি: الفتاوى العالمكيرية) ও ফার্সীতে ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী হিসেবেও পরিচিত একটি ইসলামী আইন সংকলন, যা ৫৪ বছর ধরে অধিকাংশ ভারতীয় উপমহাদেশের রাষ্ট্রশিল্প, সাধারণ নৈতিকতা, সামরিক কৌশল, অর্থনৈতিক নীতি, ন্যায় বিচার এবং শাস্তির উপর আইন সংকলন ছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ওরফে বাদশাহ আলমগীরের নির্দেশে এই সংকলন প্রণীত হয়।[১] "ভারতে তৈরি মুসলিম আইনের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন" হিসাবে ঘোষণা করা হয়,[২][৩] সংকলনটি ব্যাপকভাবে ইসলামিক আইনশাস্ত্রের (ফিকহ) ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুসংগঠিত কাজগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। সুন্নি হানাফি মাজহাবের ভিত্তিতে শরিয়া আইন এতে সংকলিত হয়েছে।[৪] অনেক আলেম এই গ্রন্থ প্রণয়নে অবদান রেখেছেন।[৫] এতে কুরআন, ‘সহীহ আল-বুখারী’, ‘সহীহ মুসলিম’, ‘সুনান আবু দাউদ’ ও ‘জামি' আত-তিরমিযী’ থেকে সব লেখা হয়েছিল। এ ফতোয়ার কিতাবটি সংকলনে ১৩০ টি এর বেশি গ্রন্থের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।
লেখক | আওরঙ্গজেব এবং বিভিন্ন বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিত |
---|---|
অনুবাদক | কাফিলুর রহমান নিশাত উসমানি (উর্দু) |
ভাষা | আরবি এবং ফার্সি |
ধরন | ইসলামী আইন (হানাফি) |
প্রকাশনার তারিখ | ১৭ শতক |
ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া প্রণয়নের উদ্দেশ্যে আওরঙ্গজেব ফিকহের ৫০০ আলেমকে নিয়োগ দেন। তাদের মধ্যে ৩০০ জন দক্ষিণ এশিয়া, ১০০ জন ইরাক এবং ১০০ জন হেজাজ থেকে আগত। দিল্লি ও লাহোরে সংকলন কর্মে শেখ নিজাম বুরহানপুরি দলের নেতৃত্ব দিয়েছন। তাদের কয়েক বছরব্যপী পরিশ্রমের মাধ্যমে ফতোয়ায়ে হিন্দীয়া প্রণীত হয়। এই গ্রন্থে বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতির সাপেক্ষে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দাস, যুদ্ধ, সম্পদ, আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক, বিনিময়, কর, অর্থনীতি ও অন্যান্য আইন এবং আইনি নির্দেশনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিতাবটি বিশ্বের বহু ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
১৮৫০ ঈসাব্দে মিঃ বেলি ইংরেজি ভাষায় A Digest of Moohammedan Haneefea and Islamia law in India নামে ফতোয়ায়ে আলমগীরীর একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন । ব্রিটিশ ভারতীয় আদালতে দীর্ঘদিন যাবৎ ফতোয়ায়ে আলমগীরীর অনুসরণে শারঈ মামলা মুকাদ্দামার সমাধান দেওয়া হতো । এই গ্রন্থের হস্তলিখিত কপি বহির্ভারতের বিভিন্ন লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে । ১১০৯ হিঃ সালে এরূপ একটি প্রাচীন কপি বাহীরা (পাঞ্জাব) এর একটি ব্যক্তিগত পাঠাগারে আছে ।
এই কিতাব খানি ফতোয়ায়ে আলমগিরি বলে প্রসিদ্ধ। দক্ষিণ এশিয়া, ইরাক ও হেজাযের ৫০০ আলেম লেখকের এ ফতোয়ার কিতাবটিতে ১০০ হানাফি আলেম কিতাবটির সম্পাদনায় অংশগ্রহণ করেন। সম্পাদক-মন্ডলীর সভাপতি ছিলেন শায়খ নিজামুদ্দিন(মৃত:১১০৩ হি:)। ফতোয়ায়ে-হিন্দিয়া লেখা হয় ১১০৩ হিজরীতে অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (১১০৩-১৫০)= ৯৫৩ বছর পর। কিতাবখানির পাশে হাশিয়াতে আরো দুটি কিতাব আছে। একটির নাম ফতোয়ায়ে কাযীখান। লেখকের নাম হাসান বিন-মনসুর। ৫৯২ হিজরীতে মারা যান। জন্ম তারিখ পাওয়া যায়নি।[৬]
এটি প্রণয়নের পর ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া হানাফি মাযহাবের একটি রেফারেন্স গ্রন্থ হিসেবে গণ্য ও ব্যবহৃত হতে থাকে।[৭]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.