প্লাম কেক
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্লাম কেক বলতে সাধারণত বোঝানো হয় এমন কেক যা সাধারণত শুকনো (যেমন আঙুর, কিশমিশ অথবা আলুবোখারা) বা সতেজ ফল দিয়ে বানানো হয়। প্লাম কেক এবং পুডিঙের প্রচুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। যদিও সময়ের সাথে "প্লাম" শব্দটির অর্থ অনেকবার পরিবর্তিত হয়েছে, বিভিন্ন সময় প্লাম কেকের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং ইংলান্ডে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে প্রচুর জনপ্রিয়তা পাওয়া এই কেকটিই বর্তমানে ফ্রুটকেক নামে পরিচিত। ইংরেজ প্লাম কেকের বৈচিত্র্য ইংল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডেও দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু এদের মধ্যে উপাদান এবং দৃঢ়তার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা তাদের কলোনিতে শুকনো ফলের বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ কেক নিয়ে এসেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারতে এটি ক্রিসমাসের ছুটির সময় পরিবেশন করা হতো এবং আমেরিকান কলোনিগুলোতে নির্বাচনের সময় "ইলেকশন কেক" নামে কেকের একটি সংস্করণ যুক্ত হয়েছিল।
সতেজ প্লাম দিয়ে প্লাম কেক বানানোর ঐতিহ্য এসেছে অন্য দেশ থেকে যেখানে প্লাম কেক বানানোর প্রাথমিক উপাদান হিসেবে প্লাম ব্যবহার করা হতো।[1] কোনো কোনো ক্ষেত্রে তৈরির পর প্লাম জ্যামের মত করে কেকের ভেতরে দেওয়া হতো[2] অথবা জ্যাম ব্যবহার করেই তৈরি করা হতো।[3] প্লাম কেক তৈরি করা পফ্লাউমেঙ্কুছেন অথবা জুয়েটসছেগেনকুছেন নামে এ্যাশকেনাজি ইহুদীদের রন্ধন প্রণালিরও অংশ ছিল।[4][5][6] প্লাম দিয়ে তৈরি কেকের কথা ফ্রান্স, ইতালি এবং পোলিশ রান্নার মাঝেও পাওয়া যায়।
"প্লাম কেক" বা "ফ্রুটকেক" শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক। যখন থেকে শুকনো ফল মিষ্টিজাত দ্রব্য হিসেবে এবং যে কোনো ফল প্লাম বলে ব্যবহার করা শুরু হয়, তখন থেকে অনেক প্লাম কেক এবং প্লাম পুডিঙে প্লাম ফল ব্যবহার করা হতো না। (প্লাম পুডিঙও একটি সম্ভ্রন্ত খাবার যা একই উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এটি বেক করার পরিবর্তে ভাপে তৈরি করতে হয়।)[1] প্লাম বলতে মূলত আলুবোখারা, কিশমিশ অথবা আঙুরকে বোঝানো হয়।[1][7] এইভাবে তথাকথিত প্লাম থেকে ইংরেজ প্লাম পুডিং তৈরি করা হয়, যেখানে বর্তমানে প্লামের বদলে রসালো কিশমিশ বেশি ব্যবহৃত হয়।[8]
প্রাচীন ইংরেজি শব্দ plūme এসেছিল "ল্যাটিন শব্দ প্রুনুম থেকে যা এসেছিল মধ্যযুগীয় ল্যাটিন শব্দ প্রুন থেকে," যার অর্থ হলো আলুবোখারা।[9] আধুনিক ফ্রান্সে প্রুন বলতে প্লামকেই বোঝানো হয়। সুতরাং প্লাম টার্ট -টার্ট অক্স প্রুনেস নামেও পরিচিত। ইংরেজিতে প্রুন বলতে শুকনো প্লামকেই বোঝানো হয় এবং যখন আধুনিক কেকে এগুলো প্রাথমিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়[10], তাই এদেরকে প্লাম কেক[11] বা প্লামের তৈরি কেক নামেই ডাকা হয়।[12]
১৭০০ সাল থেকে ইংল্যান্ডে ঐতিহাসিক ভাবে ফ্রুটকেকের প্রাথমিক ধরন হিসেবে প্লাম কেকের উল্লেখ পাওয়া যায়।[13] ১৬৬০ সালের দিকে কিশমিশ ব্যবহার করে যেই কেক বানানো হতো তাকে ইংরেজি ভাষায় প্লাম কেক বলা হতো।[13] লেভ্যান্ট এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সাথে সাথে ইংরেজ রান্নাঘরেও বিভিন্ন শুকনো ফল (আঙ্গুর, কিশমিশ) এইসবের ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, এবং ক্যালিফোর্নিয়া থেকে “ঝামেলা মুক্ত” আমদানিতে সক্ষম হওয়ার পূর্বে “প্রচুর শ্রমিকের সাহায্যে ফল বাছাই করে, শুকিয়ে, ব্যাগে ভরে মোটামুটিভাবে প্রস্তুত করে রপ্তানি করা হতো।"[14]
১৮৮১ সালে কর্নেল হেনরি হার্বার্ট বলেন “একটি ভালো ইংরেজ প্লাম কেক হলো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান।”[15] টমাস কার্লাইল ছিলেন এমন একজন যিনি সবসময় হালকা ধরনের প্লাম কেকের সাথে চা খেতেন, যাতে তিনি কেক চুবিয়ে খেতেন, যাকে তিনি বর্ণনা করেছেন “এখানে সেখানে” কিশমিশ যুক্ত বানের মত।[16] এলিজাবেথ ডেভিড লিখেছেন যে “ফল যুক্ত করে বানানোর জন্য ক্রিসমাসের মাংসের কিমার পাই এবং ক্রিসমাসের প্লাম পুডিং এবং কেক হলো ইংরেজ খাবারের প্রতীক স্বরূপ যেটি দেখলে মনে হবে খাবারে এইগুলো যুক্ত করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।"[17]
ইস্ট ব্যবহারের পরিবর্তে কেক বিটারের মাধ্যমে ভেতরে বাতাস ঢুকিয়ে কেক ফোলানোটা বেশি ভালো।[13] প্লাম কেক এবং পুডিঙের আকার সম্পর্কে ইসাবেলা বিটন এর বিখ্যাত বই বুক অফ হাউজহোল্ড ম্যানেজমেন্টে (প্রকাশ হয়েছিল ১৮৫৯ – ১৮৬১) উল্লেখ আছে।[18] মিসেস বিটন “বেকড প্লাম পুডিং”, “এন আনরিভিল্ড প্লাম পুডিং”, “এ প্লেইন ক্রিসমাস পুডিং ফর চিল্ড্রেন”, প্লাম – পুডিং অফ ফ্রেশ ফ্রুট”, “প্লাম টার্ট”, “ক্রিসমাস প্লাম পুডিং”, “এ পাউন্ড প্লাম পুডিং” এবং “ক্রিসমাস কেক” এর সাথে “এ কমন প্লাম কেক” এবং “এ নাইস প্লাম কেক” এর রেসিপি যুক্ত করেছিলেন।[18] একটি ভারতীয় গৃহস্থালী ব্যাবস্থাপনার বইয়ের একটি মন্তব্যে মিসেস বিটনের বইয়ের পাশাপাশি প্লাম কেক এবং প্লাম পুডিঙের আকৃতির ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। লেখক বলেন, “মিসেস বিটনের রেসিপি সবচেয়ে ভালো হবে যদি এতে খানিকটা পরিবর্তন আনা হয়ঃ ১২টি মানুক্কা কিশমিশ....।”[19]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত প্লাম কেক সহ অন্যান্য কেক রুটির টুকরোর সাথে বেক করা হতো। “বেক হওয়া শুরু হওয়ার পর ছোট কেক বা পেস্ট্রি হয়তো ভেতরে ঢুকানো হতো বা বাইরে বের করে ফেলতে হতো কিন্তু একটি সুরক্ষিত ধার যুক্ত উদ্যত পাই, বা একটি বড় প্লাম কেক রুটির টুকরোর সমান সময়ই নিতো এবং অভিজ্ঞ গৃহবধূরা এমন আকারেই এইগুলো তৈরি করতো।[20]
ইউরোপের মূল ভূখণ্ডেও ইংরেজ প্লাম কেকের উপস্থিতি রয়েছে। যদিও সেখানে প্লাম কেকে সাধারণত বেক করা কেকে শুকনো ফলের পরিবর্তে তাজা ফল বেশি ব্যবহার করা হয়।[21]
ফ্রেঞ্চ রান্নায় ঐতিহ্যবাহী কেক বানানোর পদ্ধতিতে প্লাম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। “যদিও লইরে, ডোরডোং, লোট এবং পেরিগোর্ড জেলায় যে কোনো উৎসব, বিয়ের ভোজ বা উৎসব নেই যেখানে ডেজার্ট হিসেবে মিরাবেল্লে টার্ট থাকে না। ঋতু ভেদে এটি বানানো হয় তাজা বা শুকনো প্লাম বা জ্যাম দিয়ে।[22] মিরাবেল্লে প্লাম একটি নির্দিষ্ট কাল্টিভার যা ‘টার্ট অক্স মিরাবেল্লে’ (প্লাম টার্ট) তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।[23][24] ‘গ্যালাট অক্স ফ্রুটস’ হলো এক ধরনের গ্যালাট যা ইষ্টের মাখানো দিয়ে এবং এর সাথে মেশানো হয় হয় আগেই রান্না করে রাখা মৌসুমি ফল, যেমন প্লাম (অথবা কুইঞ্চেস, আপেল, আপ্রিকোটস)।[25] এইসব টার্ট বা ফ্লেন্সে ব্যবহার করা ফল গুলো সুবিধাজনক মাপে কাটা হয় এবং কেকটি চকচক করে। লাল প্লাম এবং রেউচিনি ফ্লেন্স লাল চকচকে ভাব আনে। হলুদ প্লাম এবং এপ্রিকোট ফ্লেন্স এপ্রিকোট চকচকে ভাব নিয়ে আসে।[26]
জার্মান প্লাম কেক সারা দেশ জুরেই পাওয়া যায়, যা ‘জুইটসচেকেঙ্কুচেন’ নামে পরিচিত, যদিও এটির উৎপত্তিস্থল হলো বাভারিয়া। রবার্ট ক্যারিয়ারের রেসিপি অনুসারে, এর ভিত্তি তৈরি হয় মাঝে মাঝে ব্যবহার হওয়া শর্টক্রাস্ট পেস্ট্রির পরিবর্তে ইস্ট পেস্ট্রি দিয়ে। কারণ ইস্ট পেস্ট্রি “সিক্ত না হয়েও প্লামের রস শুষে নিতে পারে।”[27]
ইটালিতে প্লাম কেক ইংরেজি নামেই পরিচিত, শুকনো ফল এবং মাঝে মাঝে দই ব্যবহার করে ওভেনে বেক করা হয়।[28]
প্লাম কেকের পোলিশ সংস্করণে তাজা ফলও ব্যবহার করা হয় যা ‘প্লেচেকজ স্লিওকামি’ নামে পরিচিত।[29]
ভারতে ক্রিসমাসের ছুটির সময় প্লাম কেক পরিবেশন করা হয় এবং এর সাথে রাম (মদ্য) বা ব্র্যান্ডির মত অন্যান্য উপাদান যোগ করা হয়।[30]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরে প্লাম কেকের উৎপত্তি হয় ইংরেজ ঔপনিবেশিকদের তৈরি ইংরেজ রীতি থেকে।[31] এর আকার শুরু হয় ছোট থেকে, যেমন খ্রিষ্টীয় পর্বরাত্রির বা বড়দিনের অনুষ্ঠানের জন্য, বড় পর্যন্ত, যেমন বিয়ের জন্য।[31] প্লাম কেকের এই আসল ফ্রুটকেক সংস্করণকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আধিপত্য বিস্তারকারী বলা যায় “গৃহযুদ্ধের সময় থেকে আমেরিকার উদযাপনকারী আদর্শ কেক।”[13]
ঔপনিবেশিক আমলে এক ধরনের প্লাম কেককে “ইলেকশন কেক” নামে ডাকা হতো। এটি তৈরি হতো কিশমিশ, গুড় এবং মশলা দিয়ে। পরবর্তীতে এতে ব্র্যান্ডি যুক্ত হয়েছিল।[32] ইলেকশন কেকে সাধারণত ইস্ট দিয়ে খামি তৈরি করা হতো। নবগঠিত ইংল্যান্ডে ১২ পাউন্ড (৫.৪ কেজি) ওজনের বিশাল আকারের ইলেকশন কেক নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষমাণ জনতাকে ঐতিহ্যগত ভাবে পরিবেশন করা হতো।[32] ধারণা করা হয় যে ১৭৯৬ সালে আমেরিকান কুকারিতে সর্বপ্রথম ইলেকশন কেকের রেসিপি দেওয়া হয়।[32]
ফ্রুটকেক রীতির প্লাম কেকের রেসিপি দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন রান্নার বইয়ে পাওয়া যায় এবং প্রকৃতপক্ষে একে প্লাম নামে ডাকা হয়নি।[33] ১৮৩০ এর পর থেকে প্লাম কেককে প্রায়ই ফ্রুটকেক বা কালো কেক নামে ডাকা হতো।[13] ১৮৮৫ সালের একটি প্লাম কেকের বর্ণনা অনেকটা প্লাম পুডিঙের মত শোনা যায়। একে বলা হয়েছিল “মুচিলেগিনাস” – একটি শক্ত, কালো রঙের, ঘন কেক যাতে প্রচুর পরিমাণে প্লাম, কিশমিশ ছড়ানো ছিল।[16]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.