Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মাংস, ডিম, দুধ, পশম, চামড়া এবং দুগ্ধ ও পশমজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য কৃষিক্ষেত্রে গৃহপালিত প্রাণীকে প্রাণিসম্পদ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেমন গবাদি পশু এবং ছাগল[1]। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘোড়া প্রাণিসম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়[2]। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতে শুকরের মাংস, গরুর মাংস এবং মেষ শাবককে প্রাণিসম্পদ হিসাবে এবং সমস্ত প্রাণিসম্পদকে লাল মাংস হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনগণের খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে কিছু প্রাণীকে প্রাণিসম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয়। তবে মুরগি এবং মাছ এ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত নয়[3]।
গৃহপালিত পশুর বংশবৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে আহার হিসাবে গ্রহণ আধুনিক কৃষির একটি উপাদান, যা মানুষের শিকারী জীবনধারা থেকে মানবিকতার কৃষিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকে বহু সংস্কৃতিতে প্রচলিত ছিল। দীর্ঘ সময়কাল জুড়ে পশুপালন পদ্ধতি এবং এই সংস্কৃতি বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং অসংখ্য সম্প্রদায়ে এটি একটি বড় অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
অধিক অর্থনৈতিক লভ্যাংশের ফলে প্রাণিসম্পদ চাষের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি আধুনিক পদ্ধতিতে বানিজ্যিকভাবে গরু, ছাগলসহ অন্যান্য গবাদি পশুর খামার গড়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশে ৯৯ শতাংশের বেশি প্রাণিসম্পদ এভাবেই উত্থাপিত হয়েছে[4]। বাণিজ্যিক উপায়ে গড়ে ওঠা গবাদি পশুর খামার অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত করলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের উপর[5]।
সর্বপ্রথম ১৬৫০ থেকে ১৬৬০ সনের মধ্যে একটি প্রাণী হিসাবে প্রাণিসম্পদ ব্যবহৃত হয়েছিল[6]। কখনো গবাদি পশু কিংবা গৃহপালিত পশু নামেও প্রাণিসম্পদকে সূচিত করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আইন নির্দিষ্ট কৃষি পণ্যকে কোনো কর্মসূচী বা ক্রিয়াকলাপের জন্য যোগ্য বা অযোগ্য করার শর্তটিকে সংজ্ঞায়িত করে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের প্রাণীসম্পদ আইন (পিএল ১০৬–৭৮, শিরোনাম ৯) এ কেবলমাত্র গবাদি পশু এবং ভেড়াকে হিসাবে প্রাণিসম্পদ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, ১৯৮৮ সালে দুর্যোগ সহায়তার আইনটিতে এই শব্দটিকে "গবাদি পশু, ভেড়া, ছাগল, হাঁস, মুরগি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে (ডিম উৎপাদনকারী হাঁস-মুরগী সহ), খাবারের জন্য বা খাবারের উৎপাদনে ব্যবহৃত ঘোড়া, খাবারের জন্য ব্যবহৃত মাছ এবং সচিব কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য প্রাণী[7]।
তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই মানুষের আচরনের দ্বারা বা যেকোনো উপায়ে মৃত প্রাণী থেকে মাংস বিক্রি বা প্রক্রিয়াজাত করা অবৈধ[8]।
মানব সভ্যতার শিকারি জীবনধারা থেকে কৃষিজ সম্প্রদায়গুলিতে সাংস্কৃতিক উত্তরণের সময় পশুপালন শুরু হয়েছিল। কোনো প্রাণী যখন তাদের বংশবৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের পরিস্থিতি মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তা গৃহপালিত পশু। সময়ের সাথে, প্রাণিসম্পদের সম্মিলিত আচরণ, জীবনচক্র এবং শারীরবৃত্তিতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
কুকুর সর্বপ্রথম গৃহপালিত পশু। প্রায় ১৫,০০০ বছর আগে ইউরোপ এবং সুদূর প্রাচ্যে গৃহপালিত পশু হিসাবে কুকুর দেখা গিয়েছে[9]। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ১১,০০০ থেকে ৫,০০০ বছর পূর্বে গৃহপালিত পশু হিসাবে ছাগল ও ভেড়ার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে[10]। খ্রিস্টপূর্ব ৮,৫০০ এর ও পূর্বে শূকর এবং খ্রিস্টপূর্ব ৬,০০০ এর সময় চীনে গৃহপালিত পশু ছিল [11]। গৃহপালিত পশু হিসেবে ঘোড়ার অন্তুর্ভূক্তিকরণ হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ সনে[12]। মুরগি এবং অন্যান্য পোল্ট্রি প্রাণী খ্রিস্টপূর্ব ৭,০০০ সালের দিকে পোষা শুরু হতে পারে[13]।
প্রাণিসম্পদ বলতে দরকারী বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাখে এমন জাত বা প্রজাতির বা একটি প্রাণীকে বোঝায়। নিন্মে বিশ্বজুড়ে গৃহপালিদ কয়েকটি পশুর নাম এবং তাদের উত্থান সম্বন্ধে উল্লেখ করা হলঃ
গৃহপালিত পশু-পাখির মালিকেরা বন্য পশুর আক্রমণ এবং চুরির শিকার হয়ে থাকেন। উত্তর আমেরিকাতে ধূসর নেকড়ে বাঘ, গ্রিজলি ভাল্লুক, বন বিড়ালের মতো প্রাণীকে গৃহপালিত পশুর জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকাতে শিকারিদের মধ্যে নেকড়ে, চিতা, বাঘ, সিংহ, বন্য কুকুর, এশিয়ান কালো ভাল্লুক, কুমির, হায়েনা উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ আমেরিকাতে বন্য কুকুর, বাঘ, অজগর এবং ভাল্লুক প্রাণিসম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ। অস্ট্রেলিয়ায় কুকুর, শিয়াল এবং শিকারি ঈগল গৃহপালিত পশুর ক্ষতি করে[14][15]।
প্রাণিসম্পদের যথাযথ পরিচর্যা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে লালন পালন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার প্রদান অপরিহার্য। বিভিন্ন দেশে প্রাণির পরিচর্যার জন্য নীতিমালা রয়েছে। এছাড়াও প্রাণিসম্পদের চিকিৎসার জন্যে প্রতি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে পশু হাসপাতাল, সেবা, পরিচর্যা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র। বিভিন্ন রকমের ফ্লু, অপুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে পশু-পাখির দেহে বিভিন্ন রকম রোগের সৃষ্টি করে[16][17]। প্রাণিসম্পদ থেকে সোয়াইন ফ্লুর মত মানবদেহে সংক্রমিত রোগের সৃষ্টিও হতে পারে[18] । তবে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রদানের ফলে এসব রোগ মোকাবেলা করা সম্ভব[19] । জলবায়ুর পরিবর্তন, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে[20]।
সাধারনত ট্রাক কিংবা লরিতে করে পশু-পাখি পরিবহন করা হয়[21]। উন্নত দেশে এই কাজে ক্ষেত্র বিশেষে ট্রেন এবং জাহাজও ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন দেশে সাধারণ হাট বাজারে কিংবা সপ্তাহের বিশেষ দিনে নির্ধারিত স্থানে পশু-পাখি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসা হয়। মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে বিশেষ করে কোরবানী ঈদের পূর্বে গৃহপালিত পশুর ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। গৃহপালিত পশু-পাখির লালন পালন, পরিবহন, বাজারজাতকরন ও প্রক্রিয়াজাত করনে বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের সুজোগ হয়।
পশুপালন বিশ্বের পরিবেশের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে[22]। বিশ্বের বিশুদ্ধ পানির ২০ থেকে ৩৩% প্রাণিসম্পদ এর লালন-পালন এবং প্রক্রিয়াজাতকরনে ব্যবহার হয়[23]। পশুসম্পদ এর খাদ্য সরবরাহের জন্য পৃথিবীর বরফমুক্ত জমির প্রায় এক তৃতীয়াংশ ব্যবহার করা হয়[24]। প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তি, চারনভূমি মরুভূমিতে রুপান্তর, এবং আবাসস্থল ধ্বংসের প্রমাণ রয়েছে[25]। বন উজাড় করে পাহাড়ী ও বন্যভূমিকে ফসল চাষ এবং পশুচারণের ভূমির জন্য রূপান্তর করে বন্য পশুপাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়[26][27][28][29]।
প্রাণিসম্পদ বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং পণ্য সরবরাহ করে। চামড়া, পশম, ঔষধ উৎপাদনের কাচামাল, পশুখাদ্য, প্রোটিন এবং চর্বির যোগান দেয় প্রাণিসম্পদ[30] । প্রাণির দেহ থেকে আহরিত চর্বি ও মাংস মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির খাদ্যের যোগান দেয়। গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার চামড়া ও পশম থেকে শীত নিবারনকারী পোশাক এবং বিভিন্ন সামগ্রী পস্তুত হয়। বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী ঔষধের যোগান দেয় পশুর হাড় এবং মগজ। এমনকি জবাই করার পর পশু-পাখির অন্ত্রের অংশসমূহ সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। প্রাণিসম্পদ চারণভূমির উর্বরতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। উল্লখ্য, ২০১৩ সালে বৈশ্বিক প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের মূল্য ধরা হয়ে ছিলো প্রায় ৮৮৩ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের[31]। অর্থনৈতিক এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র রাষ্ট্রসমূহের প্রধান হাতিয়ার হতে পারে প্রাণিসম্পদ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.