![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/49/LuxorTemple03.jpg/640px-LuxorTemple03.jpg&w=640&q=50)
প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য
ফারাওঁনী যুগ থেকে রোম্য আধিপত্যের শেষ পর্যন্ত মিশরের সাহিত্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
মিশরীয় ভাষায় রচিত প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য হল মিশরীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম রচনা সংকলন। এই সাহিত্যের রচনাকাল প্রাচীন মিশরীয় ফ্যারাওদের রাজত্বকাল থেকে শুরু করে সেই দেশে রোমান আধিপত্যের শেষ পর্যায় পর্যন্ত। প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য ও সুমেরীয় সাহিত্যকে একযোগে বিশ্বের প্রাচীনতম সাহিত্য গণ্য করা হয়।[1]
![Inscribed hieroglyphics cover an obelisk in foreground. A stone statue is in background.](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/49/LuxorTemple03.jpg/640px-LuxorTemple03.jpg)
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের শেষ ভাগে অর্থাৎ, মিশরে প্রাক্রাজবংশীয় যুগের অন্তিম পর্যায়ে হায়ারোগ্লাফিক ও হায়রাটিক উভয় আকারেই প্রথম লিখন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে। পুরনো রাজ্যের সমসাময়িক কালে (খ্রিস্টপূর্ব ষড়বিংশ থেকে দ্বাবিংশ শতাব্দী) সাহিত্য বলতে ছিল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত গ্রন্থাবলি, "ইপিসল " (ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে নির্দেশিত বা প্রেরিত চিঠি), সাধারণ চিঠিপত্র, স্তোত্র ও কবিতা এবং বিশিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের কর্মজীবনের স্মৃতিচারণামূলক স্মারক আত্মজৈবনিক গ্রন্থাবলি। মধ্য রাজ্যের প্রথম পর্যায়ের (খ্রিস্টপূর্ব একবিংশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী) আগে সে দেশে আখ্যানমূলক সাহিত্যের উদ্ভব ঘটেনি। রবার্ট বি. পার্কিনসনের মতে, মিশরে আখ্যানমূলক সাহিত্যের উৎপত্তি ছিল একটি "গণমাধ্যম বিপ্লব" এবং তা ছিল বুদ্ধিজীবী লিপিকর শ্রেণির উত্থান, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বিষয়ে নতুন সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা, সাক্ষরতার নজিরবিহীন মাত্রা এবং লিখন উপকরণগুলি সর্বসাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠার ফলশ্রুতি।[2] অবশ্য এই সময় সাক্ষরতার সামগ্রিক হার সম্ভবত মিশরের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম ছিল। তাই সাহিত্য রচনা ছিল অভিজাত শ্রেণির কুক্ষিগত। এই কাজে একচেটিয়া অধিকার ছিল সরকারি কার্যালয় ও শাসক ফ্যারাওয়ের দরবারের সঙ্গে যুক্ত লিপিকর শ্রেণির। অবশ্য প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য রাজসভার সামাজিক-রাজনৈতিক বিন্যাসক্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল কিনা তা নিয়ে আধুনিক গবেষকদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে।
মধ্য রাজ্যের কথ্য ভাষা মধ্য মিশরীয় নতুন রাজ্যের সময়কালে (খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ থেকে একাদশ শতাব্দী) ধ্রুপদি ভাষায় পরিণত হয়। তৎকালীন স্থানীয় ভাষা পরবর্তী মিশরীয় সেই সময় প্রথম সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়। মধ্য মিশরীয় ভাষা তখন পবিত্র চিত্রিলিপিতে লিখিত গ্রন্থাবলির মৌখিক পাঠের ভাষা হিসেবে রয়ে গিয়েছিল। নতুন রাজ্যের লিপিকরেরা সেই ভাষায় লিখিত অনেক সাহিত্যকীর্তি প্রামাণ্যকরণ এবং অনুলিপি করেন। মধ্য রাজ্যের সাহিত্যের কয়েকটি বর্গ, যেমন "উপদেশ" ও আখ্যায়িকা নতুন রাজ্যেও জনপ্রিয় থেকে যায়। যদিও টলেমীয় যুগের (খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ থেকে প্রথম শতাব্দী) আগে ভবিষ্যদ্বাণী-সংক্রান্ত গ্রন্থের ধারাটি পুনরুজ্জীবিত হয়নি। জনপ্রিয় কাহিনিগুলির অন্যতম হল সিনুহের গল্প ও বাগ্মী কৃষক এবং গুরুত্বপূর্ণ উপদেশগুলির অন্যতম হল আমেনেমহাতের শিক্ষা ও আনুগত্যবাদী শিক্ষা। নতুন রাজ্যের যুগে পবিত্র মন্দির ও সমাধির দেওয়ালে স্মারক দেওয়াল লিখন সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র বর্গ হিসেবে বিকশিত হয়ে ওঠে। তা সত্ত্বেও তাতে অন্যান্য বর্গে ব্যবহৃত সূত্রগত রচনাশৈলী ব্যবহৃত হত। অল্প কয়েকটি বর্গের ক্ষেত্রে সঠিক লেখকের নাম উল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল। ছদ্মনামে লেখা "উপদেশ" বর্গের রচনাগুলিকে ভুলভাবে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক চরিত্রের উক্ত বলে চালানো হত।
প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য রক্ষিত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লিখন-মাধ্যমে। এগুলির মধ্যে প্যাপিরাস লেখ্যপট ও মোড়ক যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে চুনাপাথর বা চীনামাটির অস্ট্রাকা (এক ধরনের মৃৎপাত্র), কাঠের তৈরি লেখার বোর্ড, প্রস্তরনির্মিত স্মারক সৌধ ও শবাধারও। আধুনিক প্রত্নতত্ত্ববিদরা খননকার্য চালিয়ে যে সকল গ্রন্থ উদ্ধার করেছেন এবং সংরক্ষণ করে থাকেন, তা প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যিক উপাদানের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। নীল নদের প্লাবন সমভূমি এলাকার আর্দ্র জলবায়ু প্যাপিরাই ও কালিতে লিখিত অভিলেখমালা সংরক্ষণের উপযুক্ত নয়। তাই প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যের একটি বৃহৎ অংশ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে সহস্রাধিক বছর ধরে ভূগর্ভে প্রোথিত সাহিত্যের গুপ্ত ভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়েছে মিশরীয় সভ্যতার শুষ্ক মরুভূমির প্রান্তবর্তী জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে।