![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/42/Venus_of_Laussel_plate_%25281915%2529.jpg/640px-Venus_of_Laussel_plate_%25281915%2529.jpg&w=640&q=50)
প্রাগৈতিহাসিক ধর্ম
From Wikipedia, the free encyclopedia
প্রাগৈতিহাসিক ধর্ম হল প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতিগুলির ধর্মীয় বিশ্বাস। প্রাগৈতিহাস অর্থাৎ লিখিত ইতিহাসের পূর্ববর্তী পর্যায়টি মানবজাতি বহুসংখ্যক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল; মানব ইতিহাসের ৯৯ শতাংশেরও বেশি অংশ সংঘটিত হয়েছিল কেবলমাত্র পুরাপ্রস্তরযুগেই। প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতিগুলি সমগ্র বিশ্ব জুড়ে পরিব্যাপ্ত ছিল এবং এগুলির অস্তিত্ব বজায় ছিল ২৫ লক্ষেরও বেশি বছর; এই সব সংস্কৃতির ধর্মীয় বিশ্বাসও ছিল বহুসংখ্যক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং এই সব ধর্মবিশ্বাসের বিস্তারিত বিবরণ লিখিত আকারে রক্ষিত না হওয়ায় এগুলি নিয়ে গবেষণা একটি কঠিন কাজ।
![refer to caption](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/42/Venus_of_Laussel_plate_%281915%29.jpg/640px-Venus_of_Laussel_plate_%281915%29.jpg)
ধর্ম বিষয়টিকে বোঝার ক্ষমতা সম্ভবত প্রথম জাগরিত হয়েছিল হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স বা শারীরবৃত্তীয়ভাবে আধুনিক মানুষের মধ্যে। যদিও কোনও কোনও গবেষক নিয়ান্ডারথাল ধর্মের অস্তিত্বের কথা অনুমান করেন এবং অন্ততপক্ষে হোমো নালেডি প্রজাতির মানুষদের মধ্যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বিরল কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। মধ্য পুরাপ্রস্তরযুগের (৩০০,০০০ – ৫০,০০০ বছর আগে) বিরল ও বিতর্কিত প্রমাণগুলিকে বাদ দিলে বলতে হয় যে, ধর্মের উদ্ভব নিশ্চিতভাবে ঘটেছিল প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে অন্তিম পুরাপ্রস্তরযুগে। এই যুগের ধর্ম ছিল সম্ভবত শামান-কেন্দ্রিক, যে ধর্মবিশ্বাসের কেন্দ্রে ছিল গুহ্য আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশেষ ধর্মগুরুদের সমাধি অবস্থায় প্রবেশের বিষয়টি। এই প্রথাগুলির সম্বন্ধে জানা গিয়েছে পুরাপ্রস্তরযুগের শিল্পীদের রেখে যাওয়া সমৃদ্ধ ও জটিল শিল্পকর্মগুলি (বিশেষত তাদের সৃষ্ট বিশদ গুহা শিল্প ও রহস্যময় ভেনাস পুত্তলিকা) নিয়ে চর্চার মাধ্যমে।
খ্রিস্টপূর্ব ১২০০০ অব্দ নাগাদ প্রথম কৃষি বিপ্লব জীবিকানির্বাহের প্রধান উপায় হিসেবে কৃষিব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা দান করে এবং এরই ফলে নব্যপ্রস্তরযুগের সূচনা ঘটে। পূর্ববর্তীয় পুরাপ্রস্তরযুগীয় সমাজের বিপরীতে নব্যপ্রস্তরযুগীয় সমাজে পুরোহিততন্ত্র ও অসাম্যবাদের উদ্ভব ঘটে এবং তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্যেও অনেক পরিবর্তন আনা হয়। নব্যপ্রস্তরযুগীয় ধর্ম সম্ভবত পুরাপ্রস্তরযুগীয় ধর্মের তুলনায় অধিকতর নৈর্মিতিক ও কেন্দ্রীভূত বিশ্বাসে পরিণত হয়েছিল এবং সম্ভবত এই যুগেই পূর্বপুরুষ পূজার উদ্ভব ঘটে। এই পূর্বপুরুষ পূজার মধ্যে ছিল ব্যক্তির নিজস্ব পূর্বপুরুষের পূজা এবং সেই সঙ্গে সমগ্র গোষ্ঠী, উপজাতি বা জনবসতির পূর্বপুরুষের পূজা। নব্যপ্রস্তরযুগীয় ধর্মের একটি বিখ্যাত বৈশিষ্ট্য হল ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের প্রস্তরবৃত্ত, যার স্টোনহেঞ্জ অংশটি বর্তমানে সর্বাধিক পরিচিত। তাম্রযুগীয় ধর্মের মাধ্যমে অন্তিম নব্যপ্রস্তরযুগের বিশেষভাবে সুপরিচিত একটি অংশ হল প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় পুরাণ। এই ধর্মটি ছিল প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয়-ভাষী প্রথম জাতিগোষ্ঠীর ধর্ম। আদি যুগের ইন্দো-ইউরোপীয়-ভাষীদের অনুরূপ ধর্মীয় উপাদানগুলির মাধ্যমে এই ধর্মটিকে আংশিকভাবে পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।
ব্রোঞ্জযুগীয় ও লৌহযুগীয় ধর্মগুলিকে আংশিকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলির মাধ্যমে বোঝা গেলেও, পুরাপ্রস্তরযুগীয় ও নব্যপ্রস্তরযুগীয় ধর্মগুলির তুলনায় অনেক ভালোভাবে বোঝা যায় লিখিত বিবরণের সাহায্যে। ব্রোঞ্জ ও লৌহ যুগে কোনও কোনও সমাজে লিখনপদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং তাদের রচনায় যে সব সমাজে লিখনপদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি তাদের বিবরণও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। আধুনিক পুনর্নির্মাণবাদীরা প্রাগৈতিহাসিক ধর্মের যুগগুলির সংস্কৃতির উপর বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে থাকেন। বর্তমান কালে অনেক প্যাগান ধর্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে প্রত্নৈতিহাসিক ব্রোঞ্জ ও লৌহযুগীয় সমাজগুলির প্রাক্-খ্রিস্টীয় রীতিনীতিগুলির ভিত্তিতে।